বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সোমবার (৬ মার্চ) বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটি জানায়, আবেদনে এবারও সাজা মওকুফ ও শর্ত শিথিল করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মতামতের জন্য আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইনি মতামতের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
এদিকে শর্ত সাপেক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আবেদনে তাঁর (বেগম জিয়ার) মুক্তির শর্ত শিথিল করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠেছে- বেগম জিয়া কি তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন? বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দিবে কি সরকার?
তবে সূত্রগুলো বলছে, বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা রয়েছে। সে সমঝোতার ভিত্তিতেই এবারের আবেদনটি সরকার বিশেষ বিবেচনা করতে পারে। তার মানে হচ্ছে আবেদনে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে- বিশেষ করে বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারটি এবার সরকার আমলে নিতে পারে। কেননা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বুধবার (৮ মার্চ) বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত মতামত দিয়ে শিগগিরই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ছয় দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন এসেছে। আমি জানতে পেরেছি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার (খালেদা জিয়া) ভাই শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। সেই ফাইলটি আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে আমার কাছে এখনও আসেনি। আমাদের মতামত দেওয়ার পরই সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। আমি যেটা মনে করি আগে যে শর্ত ছিল সেটিই থাকবে। তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন আসে নাই।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আগের শর্তে নেই। তার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে যে সংবাদ এসেছে সেটিও সত্যি নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের, সরকারের না। প্রথমবার যখন আবেদন করা হয়েছিল তখন প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণেই নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়াকে দণ্ডাদেশ স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’
তার মুক্তিতে দুটি শর্ত রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটি হচ্ছে ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। আরেকটি হচ্ছে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। সবশেষ যখন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল সেখানেও সেই শর্ত ছিল। আমি মনে করি যে শর্ত ছিল সেই শর্তই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। যখন ফাইলটি আমার কাছে আসবে তখন আমি আপনাদের (সাংবাদিক) অবশ্যই জানাবো।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে যে সংবাদ এসেছে সেটিও সত্যি নয়’- আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে উদ্ধৃতি করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু এই সংবাদটি সত্য নয়, মানে মিথ্যা। তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বেগম জিয়ার পরিবার থেকে যে শর্ত দিয়ে আবেদন করা হয়েছে, সে শর্তগুলো এবার নিশ্চয়ই মেনে নিচ্ছে সরকার। এখানে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের একটি বিষয় থাকতে পারে। বিএনপির ১০ দফার ৪ নম্বর দফাটি হচ্ছে বেগম জিয়ার মুক্তি। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তিও দিতে পারে সরকার তথা সরকারে মাননীয় রাষ্ট্রপতি। সেক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে বলা হতেও পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে ছয় মাসের মুক্তি দেয়। ২৫ মার্চ কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। শর্তের প্রথমটি হলো খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এরপর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় ৬ মাস করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। সরকারের নির্বাহী আদেশে তার এ সাজাও স্থগিত করা হয়।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তাদের এমন মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে সরকারের প্রভাবশালী দুজন মন্ত্রী বলেন, মুক্তির শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে চেয়ারপারসনের রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের অতি উৎসাহকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। এ ইস্যুতে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, সময় হলেই খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বরাবরের মতো এবারও তাঁদের আবেদনে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ চাওয়া হয়েছে। এবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতিও দিতে পারে সরকার। এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী বিএনপির একটি অংশ।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানান জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। সবশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
বেগম জিয়া বিদেশ চিকিৎসা অনুমতি সরকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।