বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সোমবার (৬ মার্চ) বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটি জানায়, আবেদনে এবারও সাজা মওকুফ ও শর্ত শিথিল করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মতামতের জন্য আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইনি মতামতের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
এদিকে শর্ত সাপেক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আবেদনে তাঁর (বেগম জিয়ার) মুক্তির শর্ত শিথিল করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠেছে- বেগম জিয়া কি তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন? বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দিবে কি সরকার?
তবে সূত্রগুলো বলছে, বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা রয়েছে। সে সমঝোতার ভিত্তিতেই এবারের আবেদনটি সরকার বিশেষ বিবেচনা করতে পারে। তার মানে হচ্ছে আবেদনে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে- বিশেষ করে বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারটি এবার সরকার আমলে নিতে পারে। কেননা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বুধবার (৮ মার্চ) বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত মতামত দিয়ে শিগগিরই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ছয় দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন এসেছে। আমি জানতে পেরেছি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার (খালেদা জিয়া) ভাই শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। সেই ফাইলটি আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে আমার কাছে এখনও আসেনি। আমাদের মতামত দেওয়ার পরই সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। আমি যেটা মনে করি আগে যে শর্ত ছিল সেটিই থাকবে। তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন আসে নাই।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আগের শর্তে নেই। তার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে যে সংবাদ এসেছে সেটিও সত্যি নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের, সরকারের না। প্রথমবার যখন আবেদন করা হয়েছিল তখন প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণেই নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়াকে দণ্ডাদেশ স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’
তার মুক্তিতে দুটি শর্ত রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটি হচ্ছে ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। আরেকটি হচ্ছে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। সবশেষ যখন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল সেখানেও সেই শর্ত ছিল। আমি মনে করি যে শর্ত ছিল সেই শর্তই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। যখন ফাইলটি আমার কাছে আসবে তখন আমি আপনাদের (সাংবাদিক) অবশ্যই জানাবো।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে যে সংবাদ এসেছে সেটিও সত্যি নয়’- আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে উদ্ধৃতি করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু এই সংবাদটি সত্য নয়, মানে মিথ্যা। তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বেগম জিয়ার পরিবার থেকে যে শর্ত দিয়ে আবেদন করা হয়েছে, সে শর্তগুলো এবার নিশ্চয়ই মেনে নিচ্ছে সরকার। এখানে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের একটি বিষয় থাকতে পারে। বিএনপির ১০ দফার ৪ নম্বর দফাটি হচ্ছে বেগম জিয়ার মুক্তি। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তিও দিতে পারে সরকার তথা সরকারে মাননীয় রাষ্ট্রপতি। সেক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে বলা হতেও পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে ছয় মাসের মুক্তি দেয়। ২৫ মার্চ কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। শর্তের প্রথমটি হলো খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এরপর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় ৬ মাস করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। সরকারের নির্বাহী আদেশে তার এ সাজাও স্থগিত করা হয়।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তাদের এমন মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে সরকারের প্রভাবশালী দুজন মন্ত্রী বলেন, মুক্তির শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে চেয়ারপারসনের রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের অতি উৎসাহকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। এ ইস্যুতে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, সময় হলেই খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বরাবরের মতো এবারও তাঁদের আবেদনে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ চাওয়া হয়েছে। এবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতিও দিতে পারে সরকার। এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী বিএনপির একটি অংশ।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানান জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। সবশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
বেগম জিয়া বিদেশ চিকিৎসা অনুমতি সরকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি চালু করার পরও তাদের কোনো শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাঁরা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। তবে তাদেরকে সরে আসতেই হবে।’
বুধবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস আয়োজিত আলোচনা সভায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে এটা স্পষ্ট করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাদের কোনো সমর্থন নাই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটিই তাঁরা চায়। এবং যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেবে বা নির্বাচন প্রতিহত করবে তাদের বিরুদ্ধে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। কিন্তু এর পরও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই।’
অপরদিকে সরকারের সব সময় শুভবুদ্ধি আছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং আমরা চাই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করুক। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন হোক এবং তার মাধ্যমে দেশের জনগণ আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক। সেটিই সরকার চায়, সেটিই জননেত্রী শেখ হাসিনা চায়, সেটিই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায়।’
এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিচারের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বিরূপ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমান সাহেব আর টুকু সাহেবের মামলা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। এই মামলা আওয়ামী লীগ দায়ের করে নাই। সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছিলো। তাঁরা হাইকোর্টে গিয়েছিলো, হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রেখেছে। আবার গয়েশ্বর বাবুসহ আরো অনেকে গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ একইসাথে সেখানে পুলিশ ও জনতার ওপর হামলা পরিচালনা করা সত্ত্বেও তারা যে আগাম জামিন পেয়েছে এতেই তো প্রমাণ হয় আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। এর চেয়ে আর বড় প্রমাণ তো দরকার নেই।’
‘রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়’
‘এক সময় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন, রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন আর এখন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলতে চাই, দুর্নীতি দমন কমিশন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যতা পেয়েছে বিধায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কারণ শ্রমিক কর্মচারিদের যে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা সেটি না দিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা শ্রমিক কর্মচারিদের নেতাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে ঘুষ হিসেবে। সে জন্য মামলায় তাঁর সাথে নেতারাও আসামী হয়েছেন। এখানে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে সেটিই দুদক বলছে এবং সেজন্য মামলা হয়েছে।’
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আর তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছেন যারা মানুষের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকেন তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল করা সহজ নয়। রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়, সাধারণ মানুষের সাথে থাকতে হয়। নিজের পরিবারের চেয়েও সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। সেটি যারা করতে পারে না, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি করা সম্ভবপর নয়। তারা কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন কিন্তু রাজনীতিবিদ বা গণমানুষের নেতা হওয়া তাদের পক্ষে কখনো সম্ভবপর নয়।’
‘মাদক চাষের চেয়ে খাদ্য ফলানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ’
এর আগে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য ‘উই নিড ফুড, নট টোব্যাকো’ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয় খাদ্য ফলান’ উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তামাকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি সারা জীবন একটিও সিগারেট বা তামাক গ্রহণ করিনি। পৃথিবীতে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ আছে। মাদক চাষের চেয়ে তাদের জন্য খাদ্য ফলানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাদক চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি যদি আমরা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে, দেশ, জাতি, সমাজ, বিশ্ব উপকৃত হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। কোনো পরিবারে যদি কেউ মাদকাসক্ত থাকে সেটি শুধু তাকে নয়, পুরো পরিবারকে ভোগায়। এটি একটি মারাত্মক ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাধি। এটি থেকে সমাজকে আসলেই মুক্ত রাখা দরকার। এ জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পামাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও গণমাধ্যমে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে আরো সচেতন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।’
‘মানস’ সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী মোহম্মদ নূরুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগ বিএনপি ভিসা নীতি ড. হাছান মাহমুদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মন্তব্য করুন
মার্কিন ভিসানীতির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে প্রভু মেনে প্রকারন্তে তার কাছেই অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এই দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনছে তাতে মূলত ভিসানীতি লঙ্ঘনের অভিযোগটি মুখ্য করে আনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ
এ পর্যন্ত ১৬টি অভিযোগ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ দিয়েছে ৩২টি। আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আরাফাত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের
কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছেন। এই অভিযোগে তিনি মার্কিন
ভিসানীতি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিএনপি নেতারা কি কি কর্মকান্ড করছেন তার ফিরিস্তি তুলে
ধরেছেন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ
পাঠিয়ে বলেছেন যে, তারা নির্বাচন হতে দেবেনা বলে উচ্চারন করেছেন এবং নির্বাচন বানচাল
করার জন্য কাজ করছেন। এটা নতুন মার্কিন ভিসানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য যে,
গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু অবাধ
নিরপেক্ষ হয় সেজন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই নতুন ভিসানীতিতে মার্কিন ইমিগ্রেশন
অ্যাক্টের ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা প্রয়োগ করা হবে বলে বলা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী
কোন ব্যক্তি যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাগ্রস্থ করতে চায়, ভোট করচুপি করতে চায়,
নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে
ভিসা দেবে না। একইভাবে ওই ধারায় বলে হয়েছে যে, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দান
করা, গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধা দান করার ক্ষেত্রেও ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে এবং যারা
এতে বাধা প্রদান করবে তাদের ভিসা দেয়া হবে না। মার্কিন নীতিমালা অনুযায়ী যেকোন সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি এই ভিসানীতির আওতায় পড়বে এবং তাকে ভিসা প্রদানে অপারগতা জানাতে পারবে মার্কিন
প্রশাসন।
এই নীতিমালার
দ্বিতীয় অংশ দিয়ে অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি এ পর্যন্ত ৩২টি অভিযোগ পাঠিয়েছে।
এর মধ্যে নিপুন রায় চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে, তিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন
এবং সেখানে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে
বাধাদান ভিসানীতির লঙ্ঘন।
বিএনপি’র দুই
নেতা আমানউল্লাহ আমান এবং ইকবাল মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ নিয়েও বিএনপি’র পক্ষ
থেকে করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যে, ‘ফরমায়েশি রায় দিয়ে নির্বাচনে আযোগ্য করার জন্যই
এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যা মার্কিন ভিসানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।‘ এছাড়া পটুয়াখালীসহ
বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র সমাবেশে বাধাদানের ঘটনাকেও অভিযোগ আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলোকে সরকার বাধা দিচ্ছে।
যার ফলে বিরোধীমত দমন করা হচ্ছে এবং আবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা প্রদান করা
হচ্ছে।
এই অভিযোগ পাল্টা
অভিযোগের ফলে বাংলাদেশের রাজনীর নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু
প্রশ্ন হল এরকম অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ বিএনপি’র কি লাভ হবে। নাকি শুধুমাত্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী হবে?
মন্তব্য করুন
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজনীতিতে এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন হবে কি হবে না। এই লড়াইকে আরও উস্কে দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি। উভয় দলই মার্কিন ভিসা নীতিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে, নিজেকে এই ভিসা নীতির সুবিধাভোগী হিসেবে মনে করছে। কিন্তু যাই হোক না কেন এই ভিসা নীতি যে রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
আন্দোলন জমাতে পারছে না বিএনপি। সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর নেই। জনমনে অনিশ্চয়তা, আতঙ্কও নেই। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন করতে সরকারকে বেগ পেতে হবে না। আর তাই বিএনপিকে দ্রুত আন্দোলনে গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সুশীলরা। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্র মেরামত কাঠামো চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া এবং জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করার জন্য চাপ দিচ্ছে সুশীলরা। আর এটি না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহানুভূতি প্রত্যাহার হয়ে যেতে পারে এমন কথাও বলছেন সুশীলরা।
জামায়াত নতুন করে তৎপর হয়েছে। সম্প্রতি তারা ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে চেয়েছিল। সেখান থেকে কয়েকজন জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নেই। কাজেই তাদের সমাবেশ করার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। পুলিশের এই বক্তব্য হল সমাবেশের অনুমতি নিতে যারা এসেছিল তারা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। কাজেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে জামায়াত চুপচাপ বসে নেই। আগামী চারটি সিটি করপোরেশনে জামায়াতের প্রায় ৪০ জন নেতা প্রার্থী হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি চালু করার পরও তাদের কোনো শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাঁরা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। তবে তাদেরকে সরে আসতেই হবে।’
মার্কিন ভিসানীতির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে প্রভু মেনে প্রকারন্তে তার কাছেই অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এই দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনছে তাতে মূলত ভিসানীতি লঙ্ঘনের অভিযোগটি মুখ্য করে আনা হচ্ছে।