ইনসাইড পলিটিক্স

বার কাউন্সিল নির্বাচন, হট্টগোল-ভাঙচুর করে কী পেলো বিএনপি-জামায়াত?


Thumbnail

সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলে অর্থাৎ সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ৩৭২৫ ভোট ও সম্পাদক পদে আব্দুন নুর দুলাল ৩৭৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন পেয়েছেন ২৯৩ ভোট ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল পেয়েছেন ৩০৯ ভোট। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টার পর সমিতির মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান খান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এই নির্বাচনকে অবৈধ অ্যাখ্যায়িত করে ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিলেন। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩- ২৪ সালের নির্বাচন ছিল ১৫ ও ১৬ মার্চ। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ হিসেবে এ দুই দিন ভোট গ্রহণ অনষ্ঠিত হয়েছে। ঘোষণামতে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি ও জামায়তপন্থী আইনজীবীরা। উপরন্তু নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য তারা ভাঙচুর, হট্টগোল এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, নারী পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) পাঁচ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা যদি ভোট বর্জন করেই থাকে, তবে এতো ভোট কোত্থোকে এলো? তাছাড়া, বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচন বানচালের জন্য জামায়াতপন্থীদের সংশ্লিষ্ট করে যে ধরনের নাশকতামূলক, বেআইনী কর্মকাণ্ড- নির্বাচনের আগের দিন থেকে শুরু করে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে- দুই দিনে ঘটালো, এ থেকে কি লাভ হলো বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের?    

দিনভর হট্টগোল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, ভাংচুর, পাল্টাপাল্টি মিছিল আর শ্লোগানের মধ্য দিয়ে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ মনোনীত নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে এই ভোটগ্রহণ অনষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ভোট প্রদান করলেও ভোট প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। এর আগে বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিল। এসব ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়। 

নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন বিএনপি ও জামায়তপন্থী আইনজীবীরা। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এসময় হট্টগোল সৃষ্টিকারী বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে বের করে দেয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে একাধিকবার বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে বিক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে আসেন। পুলিশ ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে বারবার তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের আশেপাশে ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল ৯টার পর বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা আপিল বিভাগে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার প্রার্থনা করেন। তারপর সকাল ১০টা ১০ মিনিট থেকে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির দপ্তরে যান। এসময় সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসে সুপ্রীম কোর্ট বারে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের প্রবেশমুখে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। এসময় পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয় এবং ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে হট্টগোল ও হইচই চলে। এ সময় চার পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও স্লোগান। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবশেষে বিকেল ৫টায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ।  

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যদি সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বর্জনই করে থাকে, তবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নীল প্যানেল এতো ভোট পাওয়ার কথা নয়। এছাড়া তারা নির্বাচনে হেরে যাবে জেনেই ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।  বিভিন্নভাবে এই নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে তারা। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্যে খবর ছিল, এই নির্বাচনকে বিতর্কিত এবং বানচাল করতে তারা ভাঙচুর এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগেরি দিন রাত থেকে নির্বাচনের দুই দিনে তারা তাই করেছে। কিন্তু নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক ভাঙচুর ও সন্ত্রাস চালিয়ে তারা কী পেলো?- এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত তারা সরকার এবং সরকারের নির্বাচনের ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা কতটুকু হিংস্র হয়ে ওঠে সেটাই এখন দেখার বিষয়।


বার কাউন্সিল   নির্বাচন   হট্টগোল   ভাঙচুর   বিএনপি   জামায়াত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এবার কি ব্যারিস্টার খোকনও বিদায় নেবেন বিএনপি থেকে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে আরও কয়েকজন এবারের নির্বাচনে চমক দেখিয়ে আওয়ামীপন্থী প্যানেলকে ধরাশায়ী করে সুপ্রিম কোর্টে জায়গা করে নিয়েছেন।

এ ধরনের পেশাজীবীদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা একটা বিরাট অর্জন এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সেই অর্জনটি করেছেন। কিন্তু তার এই অর্জনের পরপরই বিএনপির মধ্যে তাকে নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। মাহবুব উদ্দিন খোকন কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন তা নিয়েও বিএনপির কোনো কোনো উগ্রবাদী নেতা প্রশ্ন তুলেছেন। যেখানে বিএনপি সব ধরনের পেশাজীবীদের নির্বাচন বর্জন করছে সেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন খোকন অংশগ্রহণ করল—এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপির কেউ কেউ। 

অবশ্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট কৌশলগত কারণে বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কারণেই তিনি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একজন জনপ্রিয় মুখ। তিনি একাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন। বিএনপির বাইরেও তার একটা প্রভাব বলয় রয়েছে এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি স্রোতের বিপরীতে থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা বিএনপির নেতারাই মেনে নিতে পারছেন না। খোকন যদি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতি হন, তাহলে অনেক বিএনপি নেতাই তার পিছনে চলে যাবে—এ রকম চিন্তা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক চিঠির মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে পদ গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন খোকন যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বেড়ে ওঠা একজন আইনজীবী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে তার এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, তাই তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ সুপ্রিম কোর্ট কোন জাতীয় নির্বাচন নয়। এখানে যে সমস্ত আইনজীবীরা তাকে ভোট দিয়েছেন, তারা সকলেই বিএনপির কর্মীও নন, বরং এখানে বেশ কিছু সাধারণ ভোটার রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কোন দলই সমর্থন করেন না। তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ভোট দিয়েছেন। এখন যদি মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ না করেন সেটা হবে তাদের সঙ্গে প্রতারণা। আর এটি মাহবুব উদ্দিন খোকন করতে চাননি। আর এটি করতে না চাওয়ার কারণে তিনি আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে বিএনপির মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয় সেটাই দেখার বিষয়। 

বিএনপি যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অনেকেই মনে করেন যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং মির্জা ফখরুল বা অন্য নেতারা যদি সংসদে যান তাহলে তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যাবে। সে কারণেই তারেক জিয়া নির্বাচন থেকে তাদেরকে দূরে রাখছেন। একইভাবে যদি মাহবুব উদ্দিন খোকনও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হন সেক্ষেত্রে বিএনপির অনেক অপাঙ্ক্তেয় গুরুত্বহীন অজনপ্রিয় নেতাদের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং তারা খোকনের কাছে ম্লান হয়ে যাবেন—এরকম বিবেচনা থেকে তাকে নির্বাচন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাহবুব উদ্দিন খোকন এটি মানছেন না। এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপির টার্গেট হন কিনা সেটা দেখার বিষয়। অতীতে দেখা গেছে যে, বিএনপিতে যারাই জনপ্রিয় হয়েছেন তাদেরকেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বা দলে কোণঠাসা করা হয়েছে। এবার কি মাহবুব উদ্দিন খোকনের পালা?

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন   সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি   সভাপতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ফ্যাসিবাদী শক্তি পুরো জাতির ওপর চেপে বসে আছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা কঠিন সময়, একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি। ফ্যাসিবাদী শক্তি সমস্ত জাতির ওপর চেপে বসে আছে। আমাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো ব্যর্থ করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে বিএনপির উদ্যোগে ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এক দফার আন্দোলনে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সম্মিলিত করে। আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য কাজ করছি। সে আন্দোলনে বিজয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লাহ্।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে মানুষ আজ মজলুম। পুরো দেশের মানুষ আজ জুলুমের শিকার।

তিনি বলেন, লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। বিজয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লাহ্।

ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক হারুনুর রশিদ, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে আয়োজিত ওই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুল হাই শিকদার, সাহেদা রফিক, বিজন কান্তি সরকার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. রফিকুল ইসলাম, রিয়াজ উদ্দিন নসু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, মুনির হোসেন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ওলামা দলের মাওলানা শাহ নেছারুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ। 

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার, মাওলানা আব্দুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ১২ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার (একাংশ) রাশেদ প্রধান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির লায়ন ফারুক রহমান, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ এলডিপির মো. ফরিদ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের গণদলের এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, এনডিপির কারী আবু তাহের, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার (একাংশ) এস এম শাহাদাত, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, ডা. শামসুল আলম, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান, অপরাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ফাতিমা তাসনিম, হাসান আল মামুন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

এছাড়াও ইফতার মাহফিলে পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, খুরশিদ আলম, ড্যাবের ডা. আব্দুস সালাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইফতার পার্টি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়াকে বিদেশ নিতে নতুন তৎপরতা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।

সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, শামীম ইস্কান্দার সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এই সাক্ষাতে তিনি তার বোন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সরকার যে সব শর্ত দেবে, যে কোন শর্তে বেগম জিয়া বিদেশ দিতে রাজি এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে শামীম ইস্কান্দারের পক্ষ থেকে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শামীম ইস্কান্দার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির কাছে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সব পদ থেকে ইস্তফা দিবেন। তিনি আর কখনও রাজনীতি করবেন না এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন এবং চিকিৎসা শেষ করে দেশে চলে আসবেন। এই তিনটি বিষয়ে বেগম জিয়ার সম্মতি রয়েছে। এর বাইরেও যদি সরকার কোন শর্ত দেয় সেই শর্তটি পূরণ করতেও রাজি আছেন বেগম জিয়া- এমন বক্তব্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই। 

উল্লেখ্য যে, এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া যখন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিল, সেই সময় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসক দল এসেছিল এবং সেই চিকিৎসক দল তার একটা ছোট অপারেশন করে তাকে কিছুটা সুস্থ করেছিল। সেই কারণেই বেগম খালেদা জিয়া সে সময় শঙ্কামুক্ত হয়েছিল। শামীম ইস্কান্দার এবং তার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, সেটি ছিল একটি সাময়িক ব্যবস্থা এবং সেই সময় তারা বলেছিল যে, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আবার তাকে এই ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে এবং এজন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার প্রয়োজন। আর এ কারণেই শামীম ইস্কান্দার এখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। 

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, শামীম ইস্কান্দার এখনকার উদ্যোগ নেওয়ার কারণ ভিন্ন। যেহেতু দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে, নির্বাচনের আগে সরকারের একটি পৃথক অবস্থান ছিল। সরকার মনে করত যে, নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে একটি পরিস্থিতি তৈরি করবেন এবং বিদেশে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন বা সরকারের বিরোধিতা করা বা আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এক ধরনের জনমত তৈরি করার ক্ষেত্রে কাজ করবেন। এজন্য সরকার বেগম জিয়াকে সে সময় বিদেশ যেতে দেয়নি। এখন যেহেতু নির্বাচন হয়ে গেছে এবং স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে সেজন্য এখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তেমন কোন ঝুঁকি নেই। আর এ কারণেই শামীম ইস্কান্দার এখন নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, শামীম ইস্কান্দারের এই তৎপরতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। তারা এ ব্যাপারে কোন কিছু জানেনও না। তবে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আবার খারাপ হতে শুরু করেছে বিএনপির নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়া   শামীম ইস্কান্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না: রিজভী

প্রকাশ: ০৬:৩৫ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি করেন।

নিজের পুরনো স্মৃতি তুলে রিজভী বলেন, “আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া। বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বললো, ‘কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে।’ আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ি পুরনো হলে সেটা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতে দেয়।

রিজভী বলেন, ‘এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বুনন করা যে ফসল সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করবো, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয় সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয় সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পরবে। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হবো না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হব না। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’-এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনাসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, গুম-খুন হওয়া পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রুহুল কবির রিজভী   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

তৃণমূলে তছনছ আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। 

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্কট শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই। বিশেষ করে যখন আওয়ামী লীগের ভিতর হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ছিল এবং দলের তৃণমূল এবং পরীক্ষিত নেতাদেরকে বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই বিভিন্ন পদ পদবী দখল করছিল, সেসময় আওয়ামী লীগে তৃণমূলে বিভক্তি শুরু হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করা এবং বিএনপি-জামায়াত থেকে যারা এসেছেন তাদের বাদ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এভাবে আওয়ামী লীগ একসময় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি হলো পুরনো আওয়ামী লীগ, যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের সাথী। অন্যটি হলো সুবিধাবাদী, চাটুকার আওয়ামী লীগ, যারা ২০০৯ এর পরে বিভিন্ন দল থেকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। 

গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। নির্বাচনের আগে আগে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়। নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তাদেরকে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর এটি আওয়ামী লীগের ভিতর একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতারাই তাদের পরিচয় ব্যবহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। এবং ৫৮ টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ধরাশায়ী করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভিতর বিভেদ এবং অনৈক্য ছড়িয়ে পড়ে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনের পরপরই এই বিভক্তি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একাধিক বক্তৃতায় দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনের বিভক্তি পাশ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এ ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়। এর পর ডাকা হয় বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও বিভক্তি কমে না। 

আওয়ামী লীগের বিভক্তি যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, এর ফলে উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমবে। কিন্তু উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমেনি, বিভক্তি আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় বিভক্তি শুধু প্রকাশ্য রূপই ধারণ করেনি, একটি সহিংস উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্টি করেছে। যেকোন সময় যেকোন উপজেলায় যদি আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের সহিংসতা ঘটে তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। 

আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি মেটানোর জন্য, তৃণমূূলকে সংগঠিত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও এখন দায়িত্ব গুটিয়ে নিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, এখন রোজার সময় এজন্য তারা সাংগঠনিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। কিন্তু ১৫২ টি উপজেলায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই উপজেলাগুলোতে সঙ্কট-সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সহিংসতা কাটাতে না পারলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় সর্বনাশের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   


তৃণমূল আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন