জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘সরকারের হাতে টাকা নেই, এলসি খুলতে পারছে না। সরকারের হাতে রিজার্ভ নেই। রিজার্ভের টাকা অন্যখাতে খরচ করা হয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। রিজার্ভের অর্থ বিদেশিদের ধার দিয়েছে, বিমানে ও পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে রিজার্ভের ৮ বিলিয়ন খরচ করা হয়েছে। নিত্যপণ্য, ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। আর এ কারণেই চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবরাহ কম। সকল জিনিসের দাম বেশি আর রিজার্ভ বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। দেশ এখন দেউলিয়াত্বের কাছাকাছি। সরকারের রিজার্ভে যে টাকা আছে দেনা তার চেয়ে বেশি। দেনা পরিশোধ করলে রিজার্ভে কোন টাকা থাকবে না।’
শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর জেলার চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন। এ সময় আগামী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উন্নয়নের স্বার্থে এমএম নিয়াজ উদ্দিনকে ভোট দিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ভোটারদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘রমজান মাস আসছে, এমনিতেই জিনিস পত্রের দাম উর্ধ্বমুখী। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, রমজানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় রাখতে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু জিনিস-পত্রের দাম বেড়েই চলছে। দেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে রোজা রেখে ইবাদত করতে পারে। সরকারকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তাই, পরিবার ভিত্তিক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করুন। অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনুযায়ী রেশন কার্ড দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কম মূল্যে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে হবে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যেন বাড়াতে না পারে সেজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। দায়িত্বশীলরা দুর্নীতি মুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করলে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কেউ বাড়াতে পারবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কম মূল্যে দিতে পারলেই মানুষ বাঁচবে।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যন আরও বলেন, ‘এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার হাজী হজ্জ করতে পারবেন । তিন বার সময় বাড়িয়ে এখন পয়ন্ত এক লাখ হাজী নিবন্ধন করেছেন। এখনো ২৭ হাজার কোটা বাকি আছে। হজ্জ প্যাকেজ এর দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জন্য অসম্ভব। হজ্জের খরচ কমাতে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে হজ্জের খরচ কোথাও আমাদের চেয়ে অর্ধেক আবার কোথাও অর্ধেকের চেয়ে কম। বাংলাদেশে কেন হজে যেতে এতো টাকা খরচ হবে?’
জিএম কাদের বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে অবাধ লুটপাট হয়েছে। ফলে সরকারি হিসেবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ শতকরা ৮ ভাগ। অথচ, আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ। বছরে বিদ্যুত খাতে ১ বিলিয়ন ডলার লস হচ্ছে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে। মেগা প্রকল্পে যে খরচ হয়েছে তার দায়ভার এখন সাধারণ মানুষের ওপর পড়েছে। সেই দায়ভার মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ থেকে দেদারছে অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। লুটপাটের কারণে সরকারের হাতে টাকা নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস বলেছে, বাংলাদেশকে ঋণ দিলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই বাংলাদেশকে ধার দেয়া ঠিক হবে না।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে বিশাল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুটি দলেরই দাবি নিয়ে পিছু হটার সুযোগ নেই। এই দাবিগুলোতে কেউ ছাড় দিলে তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই সংঘাতময় পরিস্থিতির আশংকায় মানুষের মাঝে ভিতি বিরাজ করছে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক। রাজনীতিতে শান্তির সুবাতাস চাই। আমরা রাজনীতির পরিবর্তন চাই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, দলীয়করণ করবে আমরা এর পরিবর্তন চাই। আমরা চাই সরকার সবাইকে সমান চোখে দেখবে। প্রশাসনও সরকার দলীয় অধীন হলে কোন ভালো কাজ হয় না।’
জনসভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘দেশে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। যত বড় প্রকল্প ততবড় দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশর মারাত্মক ক্ষতি করেছে। দুর্নীতি, দুশাসন আর দলীয়করণ ছাড়া দুটি দল আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। এক মন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষ নাকি বেহেস্তে আছেন। আসলে শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীরাই ভালো আছেন। তারা মানুষের কষ্টও বোঝে না।’
জনসভায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘দেশের মানুষের হাতে টাকা নেই। দেশের মানুষ বাজার করতে পারছে না। রমজানে যদি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় তাহলে দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ উন্নয়নের আগে পেটে ভাত চায়। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির লড়াই চলবে। জাতীয় পার্টি মানুষের সকল অধিকার রক্ষা করতেই রাজনীতি করছে।’
গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে জনসভায় মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এম এম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টি মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবদুস সাত্তার মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান। গাজীপুর মহানগরের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মো. জাকির হোসেন, হানিফ মাস্টার, বারি মাস্টার।
মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেনের পরিচালনায় এবং সহ-সভাপতি মো. হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় জনসভায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন - জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মমতাজ উদ্দিন, ভাইস-চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব শামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনাম জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
দেশ দেউলিয়াত্ব জিএম কাদের বিরোধীদল জনসভা
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।