রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পল্লীবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে স্বাভাবিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু, বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধিনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনকে সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় বা এমন কাঠামোতে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা এমনই রাখবে নাকি কিছু পরির্বতন করবে তা আমরা এখনই জানি না। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্বাচনের আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
সোমবার (২০ মার্চ) বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর জন্মদিনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পল্লীবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট শুরু হয়ে গেছে। দুটি দল নিজের অবস্থানে অটল আছে। এমন অবস্থা থেকে তাদের বেরিয়ে আসার কোন উপায় নেই। দল দুটি মনে করছে, তারা ছাড় দিলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা ভাবছে, ছাড় দিলে নির্বাচনে তারা টিকবে না এবং তাদের রাজনীতি টিকবে না। তাই, সামনের দিকে বাঁচার জন্য দুটি দল জীবনপণ লড়াই করবে। দেশে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছে।’
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘দেশ চালানো হচ্ছে গোঁজামিল দিয়ে। অগ্রগতির কথা বলে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থের অভাবে দেশের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসীদের আয় এবং রফতানী থেকে যে আয় হয় তার চেয়ে দেশের ব্যয় অনেক বেশি। দেশের রিজার্ভ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। এ কারণেই আমরা আমদানি করতে পারছি না, আমদানী অর্ধেক হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। একারণে, সরকার আমদানী কমিয়ে দিয়ে, ধার-কর্য করছে এবং বাকিতে মালামাল কিনছে। এটাকে আমারা গোঁজামিল দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে বলে মনে করছি।’
জিএম কাদের বলেন, উন্নয়নের নামে আমরা যা দেখছি- বিশাল বিশাল অবকাঠামো হচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। এর সুফল আমরা এখনো দেখিনি। গেলো বাজেটের সময় ঋনের ভার জনপ্রতি ছিলো প্রায় ১ লাখ টাকা। এখন ঋনের বোঝা আরো বাড়বে। সরকারের হাতে টাকা নেই। এমন বাস্তবতায় সরকার নতুন করে ১ লাখ কোটি টাকা ছাপাচ্ছে। এজন্য দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি ও মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। ডলার সংকট চলছে। সরকার রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে তা আইএমএফ এর হিসেব অনুযায়ী অনেক কম। সরকার বলেছে রির্জাভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। আইএমএফ বলছে এখানে অন্তত ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার নেই। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় ঋণ দেয়া হয়েছে এবং লগ্নি করা হয়েছে। সেই হিসেবে রির্জাভের পরিমাণ ২২ দশমিন ৫ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা। কিন্তু, এ বছর ঋণ ও আসল পরিশোধ করতে হবে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সরকারি হিসেবে বকেয়া ১৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি এবং ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে এখনই শোধ করতে হবে। অতীতের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে সরকারের হাতে কোন টাকা থাকার কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ঋণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, তারা আমাদের ঋণ না দিলে দেশ যে কোন মুহুর্তে দেউলিয়াত্বের মধ্যে চলে যেতে পারে। উন্নয়নের নামে বড় বড় মেগা প্রকল্প হয়েছে, গুটি কয়েক মানুষ লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য অশুভ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার জোড়াতালি দিয়ে এবং ধার করে দেশ চালানোর চেষ্টা করছেন। উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলে প্রতিদিন দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের সুপারিশমালা আছে আমরা তা সময় মত জানাবো। আমাদের শুপারিশমালা যদি গ্রহণ করার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবেই আমরা সুপারিশমালা দেবো। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। অনেক শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য মানুষ প্রতিদিন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা হচ্ছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বর্তমানে দেশে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে তার বীজ বপন করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় সংস্কারক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, উত্তরের আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু , এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আকতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, আতিকুর রহমান আতিক প্রমুখ।
এদিকে দুপুরে চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছেন। এসময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর মহানগর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া রচিত ‘রাজনীতির ষাট বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বিরোধীদল উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।