কিছু কিছু দিন আছে- যা নানভাবে আমাদের স্মরণে আসে- এসব দিনগুলো কখনও ঘৃণায়, আমরা বলি কালো দিবস; কখনও ভালোবাসায়, আমরা বলি শোক দিবস অথবা কখনও আনন্দে, আমরা বলি বিজয় দিবস। এমন কিছু কিছু দিন আছে, যা আমাদের পাওয়া, না-পাওয়ার হিসেবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। অনেক বছর পর যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে করে দেখি, আসলে আমরা কী করেছিলাম, কী চেয়েছিলাম আর কী পেয়েছিলাম। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এমনই একটি দিন। ওই দিন এই বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছিল। কিন্তু আসলে জিতেছিল কে বা কারা, সেই জিজ্ঞাসার জবাব এখনও খুঁজছে বাঙালি, বাংলাদেশ।
আজ ২০ মার্চ। স্বৈরাচার সরকার হিসেবে খ্যাত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর জন্মদিন। এরশাদের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টি দলীয় কার্যালয়ে স্থাপিত এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সেইসঙ্গে তার জন্মদিনে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ-সংগঠনগুলো কেক কেটে জন্মদিন পালন করে। তার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া-মাহফিল আয়োজন করে। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে পরিচিত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলের ইতিহাস, স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে ৯ বছর সরকারে টিকে থাকা এবং গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে গদিনশিন করেন। ওই দিন বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, ‘জনগণের ডাকে সাড়া দিতে হইয়াছে, ইহা ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’ তিনি বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। এই ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরন করেন।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। সে সময় জেনারেল এরশাদ সেনাপ্রধান ছিলেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সে সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন এবং তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু সেই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
সে সময়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ে উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের দু’মাস পরই জেনারেল এরশাদ কয়েক জন জেনারেলকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে মন্ত্রীদের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন এবং এভাবে দেশ চলতে পারে না বলে বার্তাও দিয়েছিলেন। সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, বিচারপতি সাত্তারকে বার্তা দেয়ার পর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ জেনারেল এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন।
সামরিক শাসন জারির পরপরই তৎকালীন আওয়ামী লীগপন্থী দৈনিক বাংলার বাণী এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে সমর্থন দিয়েছিল। শেখ ফজলুল করিম সেলিম সম্পাদিত এই দৈনিকে মোনাজাতরত এক মহিলার ছবি ছাপা হয়। সামরিক আইন জারি হওয়ায় তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন। তখন হয়তো আওয়ামী লীগ মনে করেছিল যে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি তো গেল, এটাই লাভ।
বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদের নয় বছরের শাসনের পতন হলেও তিনি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছেন। তিনি সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টি নামে দল গঠন করেন। তবে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে অন্য সব দলের বিরোধীতার বিষয়টি ছিল তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। জেনারেল এরশাদের শাসনের সময় ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আনা হয়।
১৯৮২ সালের সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় এসে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। ক্ষমতা ছেড়ে দিলে দুর্নীতির মামলায় বিএনপি সরকারের আমলে জেল খাটেন তিনি। জেলে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই (রোববার) সকালে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি চালু করার পরও তাদের কোনো শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাঁরা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। তবে তাদেরকে সরে আসতেই হবে।’
বুধবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস আয়োজিত আলোচনা সভায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে এটা স্পষ্ট করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাদের কোনো সমর্থন নাই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটিই তাঁরা চায়। এবং যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেবে বা নির্বাচন প্রতিহত করবে তাদের বিরুদ্ধে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। কিন্তু এর পরও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই।’
অপরদিকে সরকারের সব সময় শুভবুদ্ধি আছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং আমরা চাই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করুক। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন হোক এবং তার মাধ্যমে দেশের জনগণ আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক। সেটিই সরকার চায়, সেটিই জননেত্রী শেখ হাসিনা চায়, সেটিই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায়।’
এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিচারের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বিরূপ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমান সাহেব আর টুকু সাহেবের মামলা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। এই মামলা আওয়ামী লীগ দায়ের করে নাই। সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছিলো। তাঁরা হাইকোর্টে গিয়েছিলো, হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রেখেছে। আবার গয়েশ্বর বাবুসহ আরো অনেকে গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ একইসাথে সেখানে পুলিশ ও জনতার ওপর হামলা পরিচালনা করা সত্ত্বেও তারা যে আগাম জামিন পেয়েছে এতেই তো প্রমাণ হয় আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। এর চেয়ে আর বড় প্রমাণ তো দরকার নেই।’
‘রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়’
‘এক সময় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন, রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন আর এখন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলতে চাই, দুর্নীতি দমন কমিশন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যতা পেয়েছে বিধায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কারণ শ্রমিক কর্মচারিদের যে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা সেটি না দিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা শ্রমিক কর্মচারিদের নেতাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে ঘুষ হিসেবে। সে জন্য মামলায় তাঁর সাথে নেতারাও আসামী হয়েছেন। এখানে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে সেটিই দুদক বলছে এবং সেজন্য মামলা হয়েছে।’
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আর তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছেন যারা মানুষের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকেন তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল করা সহজ নয়। রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়, সাধারণ মানুষের সাথে থাকতে হয়। নিজের পরিবারের চেয়েও সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। সেটি যারা করতে পারে না, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি করা সম্ভবপর নয়। তারা কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন কিন্তু রাজনীতিবিদ বা গণমানুষের নেতা হওয়া তাদের পক্ষে কখনো সম্ভবপর নয়।’
‘মাদক চাষের চেয়ে খাদ্য ফলানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ’
এর আগে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য ‘উই নিড ফুড, নট টোব্যাকো’ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয় খাদ্য ফলান’ উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তামাকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি সারা জীবন একটিও সিগারেট বা তামাক গ্রহণ করিনি। পৃথিবীতে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ আছে। মাদক চাষের চেয়ে তাদের জন্য খাদ্য ফলানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাদক চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি যদি আমরা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে, দেশ, জাতি, সমাজ, বিশ্ব উপকৃত হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। কোনো পরিবারে যদি কেউ মাদকাসক্ত থাকে সেটি শুধু তাকে নয়, পুরো পরিবারকে ভোগায়। এটি একটি মারাত্মক ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাধি। এটি থেকে সমাজকে আসলেই মুক্ত রাখা দরকার। এ জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পামাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও গণমাধ্যমে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে আরো সচেতন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।’
‘মানস’ সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী মোহম্মদ নূরুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগ বিএনপি ভিসা নীতি ড. হাছান মাহমুদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মন্তব্য করুন
মার্কিন ভিসানীতির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে প্রভু মেনে প্রকারন্তে তার কাছেই অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এই দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনছে তাতে মূলত ভিসানীতি লঙ্ঘনের অভিযোগটি মুখ্য করে আনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ
এ পর্যন্ত ১৬টি অভিযোগ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ দিয়েছে ৩২টি। আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আরাফাত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের
কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছেন। এই অভিযোগে তিনি মার্কিন
ভিসানীতি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিএনপি নেতারা কি কি কর্মকান্ড করছেন তার ফিরিস্তি তুলে
ধরেছেন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ
পাঠিয়ে বলেছেন যে, তারা নির্বাচন হতে দেবেনা বলে উচ্চারন করেছেন এবং নির্বাচন বানচাল
করার জন্য কাজ করছেন। এটা নতুন মার্কিন ভিসানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য যে,
গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু অবাধ
নিরপেক্ষ হয় সেজন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই নতুন ভিসানীতিতে মার্কিন ইমিগ্রেশন
অ্যাক্টের ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা প্রয়োগ করা হবে বলে বলা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী
কোন ব্যক্তি যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাগ্রস্থ করতে চায়, ভোট করচুপি করতে চায়,
নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে
ভিসা দেবে না। একইভাবে ওই ধারায় বলে হয়েছে যে, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দান
করা, গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধা দান করার ক্ষেত্রেও ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে এবং যারা
এতে বাধা প্রদান করবে তাদের ভিসা দেয়া হবে না। মার্কিন নীতিমালা অনুযায়ী যেকোন সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি এই ভিসানীতির আওতায় পড়বে এবং তাকে ভিসা প্রদানে অপারগতা জানাতে পারবে মার্কিন
প্রশাসন।
এই নীতিমালার
দ্বিতীয় অংশ দিয়ে অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি এ পর্যন্ত ৩২টি অভিযোগ পাঠিয়েছে।
এর মধ্যে নিপুন রায় চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে, তিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন
এবং সেখানে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে
বাধাদান ভিসানীতির লঙ্ঘন।
বিএনপি’র দুই
নেতা আমানউল্লাহ আমান এবং ইকবাল মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ নিয়েও বিএনপি’র পক্ষ
থেকে করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যে, ‘ফরমায়েশি রায় দিয়ে নির্বাচনে আযোগ্য করার জন্যই
এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যা মার্কিন ভিসানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।‘ এছাড়া পটুয়াখালীসহ
বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র সমাবেশে বাধাদানের ঘটনাকেও অভিযোগ আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলোকে সরকার বাধা দিচ্ছে।
যার ফলে বিরোধীমত দমন করা হচ্ছে এবং আবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা প্রদান করা
হচ্ছে।
এই অভিযোগ পাল্টা
অভিযোগের ফলে বাংলাদেশের রাজনীর নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু
প্রশ্ন হল এরকম অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ বিএনপি’র কি লাভ হবে। নাকি শুধুমাত্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী হবে?
মন্তব্য করুন
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজনীতিতে এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন হবে কি হবে না। এই লড়াইকে আরও উস্কে দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি। উভয় দলই মার্কিন ভিসা নীতিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে, নিজেকে এই ভিসা নীতির সুবিধাভোগী হিসেবে মনে করছে। কিন্তু যাই হোক না কেন এই ভিসা নীতি যে রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
আন্দোলন জমাতে পারছে না বিএনপি। সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর নেই। জনমনে অনিশ্চয়তা, আতঙ্কও নেই। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন করতে সরকারকে বেগ পেতে হবে না। আর তাই বিএনপিকে দ্রুত আন্দোলনে গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সুশীলরা। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্র মেরামত কাঠামো চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া এবং জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করার জন্য চাপ দিচ্ছে সুশীলরা। আর এটি না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহানুভূতি প্রত্যাহার হয়ে যেতে পারে এমন কথাও বলছেন সুশীলরা।
জামায়াত নতুন করে তৎপর হয়েছে। সম্প্রতি তারা ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে চেয়েছিল। সেখান থেকে কয়েকজন জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নেই। কাজেই তাদের সমাবেশ করার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। পুলিশের এই বক্তব্য হল সমাবেশের অনুমতি নিতে যারা এসেছিল তারা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। কাজেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে জামায়াত চুপচাপ বসে নেই। আগামী চারটি সিটি করপোরেশনে জামায়াতের প্রায় ৪০ জন নেতা প্রার্থী হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি চালু করার পরও তাদের কোনো শুভবুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাঁরা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। তবে তাদেরকে সরে আসতেই হবে।’
মার্কিন ভিসানীতির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে প্রভু মেনে প্রকারন্তে তার কাছেই অভিযোগের পসার সাজাচ্ছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এই দুটি রাজনৈতিক দল পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনছে তাতে মূলত ভিসানীতি লঙ্ঘনের অভিযোগটি মুখ্য করে আনা হচ্ছে।