সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দলটির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি জানিয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে দলের নেতৃত্ব তাঁকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় শওকত মাহমুদকে। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ওইদিন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় শওকত মাহমুদ এক প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে বহিষ্কারের এই ঘটনাকে দু:খজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে দল বা সংগঠনে থেকে দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা, দলের সাথে নানা রকম প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত কাউন্সিলের মিটিংয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল বা ছোটখাটো অপরাধ করেছিল, তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। সাধারণ ক্ষমার আওতায় প্রথম সাধারণ ক্ষমার পুরষ্কার পেয়েছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর পর সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং সাংসদ মুরাদ হাসানকেও সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকে সাধারণ ক্ষমার অওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিকে বিএনপির এমন কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাঁরা বলছেন, এর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বিএনপির আরও এক বর্ষীয়ান নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপির সকল অঙ্গ-সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে বহিষ্কৃত হওয়ার আগেই তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে জানান, এর আগে গত বছরের (২০২১ সাল) এপ্রিলে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বিএনপি। তখনও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তিনি পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে একটি সমাবেশ ডেকে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই পটভূমিতে তখন ওই সমাবেশের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে দলটির নেতারা বলেছিলেন। ২০১৯–২০ সালের ডিসেম্বরেও ঢাকায় এ ধরনের দুটি বড় জমায়েত করে রাস্তায় নেমেছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও পেশাজীবী পরিষদ। এরও নেতৃত্বে ছিলেন শওকত মাহমুদ। তখনও তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল দলটি।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, নানা কারণে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কাউকে-কাউকে পদাবনতি করা হয়েছে। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি না পেয়েও বিএনপির অনেক নেতা দলের ওপর মনঃক্ষুণ্ন। অনেকেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। কেউ কেউ দলে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে যে বৃহৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি- তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও মজবুত করছে।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে বর্তমান বিএনপি নামক দলটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুসারীদেরকেও দলটিতে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম একটি বৃহৎ দল বিএনপির ভাঙন দিন দিন চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও বিএনপিতে দিন দিন বাড়ছে পদত্যাগী নেতার সংখ্যা। বিএনপির নির্বাচন বিমুখ সিদ্ধান্তের কারণেই বিএনপির রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার পরও তারা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনমুখী হচ্ছেন। ফলে বিএনপিতে বিদ্রোহী নেতার সংখ্যাও বাড়ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অন্যদিকে সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের অবস্থা এবং অবস্থান দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে দেশের অন্যতম একটি বড় দল বিএনপির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।