জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাত হচ্ছে দুর্নীতির বড় আখড়া। দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট আমলা ও ব্যবসায়ীরা লক্ষ-কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। করোনা মোকাবেলায় সাফল্যের চেয়ে দুর্নীতি বেশি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। কোভিড মোকাবেলায় আমরা নাকি প্রাইজ পেয়েছি। বিদেশ থেকে পুরুস্কার কীভাবে আসে আমরা তা জানি। দেশের মানুষ কী আপনাদের পুরুস্কার দিয়েছে? বিদেশি প্রাইজের কথা বলে দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, কোভিডের কথা বলেও কিছু মানুষ হাজার-হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সকল খাত থেকেই লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে জড়িত ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছে। দুর্নীতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী ডাক্তার নেই এই কথা সংসদে বললে ঐ হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা আরো কমে যায়। বাথরুমের সামনেও রোগী থাকে যেনো নারকীয় পরিবেশ।’
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. জাহিদুল বারীর নেতৃত্বে শতাধিক চিকিৎসক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় ‘জাতীয় চিকিৎসক পরিষদ’নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান দলে যোগ দেয়া চিকিৎসকদের স্বাগত জানিয়ে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও জাতীয় পার্টি রিচার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট উইং এর আহবায়ক মনিরুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে যোগদান অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা খাতে হ-য-ব-র-ল চলছে। দেশের মানুষ কখনোই চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। দেশের বেশির ভাগ মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালে ডাক্তার নেই, সেবা নেই, যন্ত্রপাতি নেই। দেশের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। সংখ্যা কম থাকায় চিকিৎসকদের ওপর বাড়াবাড়ি রকমের দাবি থাকে সাধারণ মানুষের। যেটা অনেক সময় চিকিৎসকরা ম্যানেজ করতে পারে না। এ কারণেই অনেক সময় সংঘাত সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স এবং যন্ত্রপাতি থাকেনা হানপাতালে। যন্ত্রপাতি যা দেয়া হচ্ছে তা চলছে না।’
তিনি বলেন, ‘বড় বড় অবকাঠামো বা বিল্ডিং বানানো হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় উন্নয়ন করা হচ্ছে। সকল উন্নয়নের পেছনে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কোন উন্নয়ন করা হচ্ছে না। ডাক্তার দেয়া হলে তাদের সাহ্যায্য করার লোক নেই। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের একটাই লক্ষ্য কি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে না। চিকিৎসা খাতে কোন সাফল্য নেই।’
জিএম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে কারো নিরাপত্তা নেই। বাবা তার ছেলেকে বা স্বামী তার স্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। মানুষের জীবনের, সম্পদের, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। পুরো সমাজই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ যা খুশি তাই করছে, কোন জবাবদিহিতা নেই।’
জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে আসা চিকিৎসকদের বিভিন্নভাবে বাঁধা দেয়া হয়েছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান রাজনীতির অধিকার দিয়েছে। স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার। এই সংবিধান অর্জনের জন্য জীবন দিয়ে মানুষ দেশ স্বাধীন করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করাই এখন কালচার হয়ে গেছে। আমরা এমন বাস্তবতা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে প্রতিটি উপজেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল জরুরি। বর্তমানে সরকার সংবিধানের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সংবিধানের বাইরে নির্বাচন তারা চায় না। একইভাবে বিএনপিও এক সময় সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধীতা করেছিলো। এখন বিএনপি তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করছে। আসলে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোন সমাধান নয়। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন করতে পারলেই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা , প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, কেন্দ্রীয় নেতা লে কর্ণেল তসলিম উদ্দিন, ড. জাফর সিদ্দিকী, যোগদানকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. জাহিদুল বারী, ডা. মোস্তাকিমুল ইসলাম, ডা. খালেদ সুফিয়ান প্রমুখ।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বিরোধীদল উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।