নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিএনপির সমমনা দলগুলোও। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে ওই জোটের দলগুলো নতুন নতুন প্লাটফর্ম দাঁড় করিয়ে নাম দিয়েছে ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট। এছাড়াও সমমনা দল হিসেবে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে পাশে রয়েছে গণঅধিকার পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন নামের একাধিক রাজনৈতিক জোটবদ্ধ সংগঠন। কিন্তু বিএনপির সমমনা দল হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো থেকে এবার সরে দাঁড়াচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্রটি বলছে, ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ওই নৈশভোজে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্বের এক ধরনের সন্দেহ রয়েছে। ফলে নাগরিক ঐক্যের সাথে বিএনপির একটা সন্দেহের ব্যাপার থেকেই যায়। মূলত ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নৈশভোজকে কেন্দ্র করেই বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চের বনিবনা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে সূত্র।
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ খসড়া বিএনপিকে দিয়েছিলেন। লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরাও একমত হয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা চূড়ান্ত করারও কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি বিষয়টিকে খুব একটা বেশি আমলে নিচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ অতিবাহিত হতে চলেছে, কিন্তু বিএনপি ফলপ্রসু কোনো উত্তর দেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ বিষয়ে একাধিকবার সভা করলেও যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে এখনো ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি ও সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রের খসড়া দেওয়া হলেও বিষয়টি এখনও ঝুলিয়ে রেখেছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে নিজেদের মতামত জানাতে সময় নিচ্ছে বিএনপি। কিন্তু সময়ের পর সময় গেলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তাই বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে ভিন্ন পথে হাটছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের দুজন নেতা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের অধিকাংশ বিষয়ের সঙ্গেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা একমত হয়েছেন। দু-তিনটি বিষয় নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আপত্তির বিষয়গুলো বাদ রেখেই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
তারা আরও জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী সব দল ও জোট যুগপৎ কর্মসূচি পালন শুরু করে। প্রথম কর্মসূচির আগেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। সেটি না হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা করতে চেয়েও পারা যায়নি। মূলত বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত না জানানোয় দীর্ঘ সময় চলে গেছে।
সূত্র বলছে, যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির দাবি ১০ দফা এবং রাষ্ট্রমেরামত বা সংস্কারের ব্যাপারে ২৭ দফা প্রস্তাব করেছে দলটি। আর গণতন্ত্র মঞ্চের সংস্কারের রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ ১৪ দফা দাবি দিয়েছে। সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দাবি এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক কর্মসূচি যা দেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবে কিছু পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য দূর করে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক ঘোষণাপত্র তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এতে বিএনপি শুধু কালক্ষেপনই করেছে, কিন্তু কোনো উত্তর দেয়নি।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নৈশভোজকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সন্দেহের চোখে দেখছে। সেখানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেওয়া গণঅধিকার পরিষদসহ অনেক দলের নেতা-কর্মীদেরই দেখা গেছে। ফলে এ ঘটনায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। যেখানে দীর্ঘদিন দলে থাকা নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে অন্যান্য দলগুলোকে অবিশ্বাস করা কঠিন কোনো বিষয় নয়।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, গণতন্ত্র মঞ্চের উচিৎ হবে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে আসা। কেননা সেখানে ইতিমধ্যেই সন্দেহের ডালাপালা ছড়িয়েছে। সন্দেহ আর অবিশ্বাস নিয়ে কোনো আন্দোলন এগিয়ে যেতে পারে না। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নৈশভোজকে কেন্দ্র করে আর কোন কোন দল বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়।
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন গণতন্ত্র মঞ্চ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।