গত বছর অক্টোবর থেকে বিএনপি যখন সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করেছিল, তখন বিএনপির মধ্যে টাকার উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি নেতারা সারাদেশে সমাবেশের নামে খিচুড়ি উৎসব করেছে। রাতভর বিএনপির কর্মীদেরকে বিনা পয়সায় খিচুড়ি, বিরানী, তেহারী খাওয়ানো হয়েছে। নেতারা দামী হোটেলে থেকেছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মীদেরকে আনার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির এই বিপুল টাকার উৎস নিয়ে সে সময়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছিলেন, লন্ডন থেকে ডলার আসছে এবং সেটি দিয়ে বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত। কিন্তু সে সময়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামীপন্থী অনেক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি- যারা বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছেন, তারাই বিএনপিকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন, যেন ভবিষ্যতে বিএনপি তাদেরকে সহায়তা করে। এরপর সরকার কয়েকজন ব্যবসায়ীকে, যারা নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে দুই পক্ষেই যোগাযোগ রাখছে- তাদেরকে সতর্ক করে। এরপর ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা ছাড়ার লাগাম টেনে ধরেন এবং লন্ডনে টাকা দেওয়া বন্ধ করেন।
আওয়ামীপন্থী একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী- যিনি মিডিয়া ব্যবসার সাথেও যুক্ত, তিনি লন্ডনে টাকা দিয়েছেন- এমন অভিযোগও পাওয়া গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধেও বিএনপিকে টাকা দেওয়ার আভিযোগ ওঠেছিল। এই সমস্ত বিষয়গুলো নজরে আসার পর- তারা আস্তে আস্তে টাকা দেওয়া কমিয়ে দেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেন। কিন্তু আবার বিএনপি বিপুল পরিমাণ টাকা পাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। কোন সূত্র থেকে বিএনপি টাকা পাচ্ছে- তা বোঝা না গেলেও বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচির ব্যাপকতা এবং ঘন ঘন কর্মসূচি দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে যে, বিএনপিকে আন্দোলন করার জন্য কেউ কেউ তাদেরকে গোপনে অর্থ দিচ্ছে।
গত কয়েক দিনে বিএনপি লাগাতার কর্মসূচি করেছে। সারাদেশেই এই সমস্ত কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সাধারণ হিসেবে দেখা গেছে যে, একটি জেলায় এ ধরনের কর্মসূচি করতে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা অন্তত লাগে। ঢাকায় এ ধরনের কর্মসূচি করতে লাগে এক কোটি টাকা। তাহলে এতো টাকা বিএনপি পাচ্ছে কোত্থেকে? কারা তাদের টাকা দিচ্ছে?
বিভিন্ন মহল মনে করছে, কিছু কিছু ব্যবসায়ী যারা আওয়ামী লীগের আমলে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তারাই এখন বিএনপিকে নানা রকম সহযোগিতা দিতে শরু করেছেন। তারা বিএনপির সাথে যোগাযোগও করছেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকারের টানাপোড়েনের পর, অনেকেই এখন বিএনপি নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আর এ কারণেই মাঝখানে টাকার প্রবাহ বন্ধ থাকার কারণে বিএনপির আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। এখন আবার টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। তবে যে সমস্ত ব্যবসায়ী গোপনে লন্ডনে এবং ঢাকায় বিএনপি নেতাদেরকে অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং প্রকাশ্যে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ঘোষণা দেয় এবং সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সবিধা আদায় করে।
দেশে আরেকটি নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি থামাতে গেলে- এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের এই দ্বৈত তৎপরতা বন্ধ করতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।