জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। তার মা জায়েদা খাতুন গতকাল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন, তৈরী করেছেন ইতিহাস। জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে আজীবন বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এই নির্বাচনের পর নানা হিসেব-নিকাশ চলছে। গাজীপুরে এখন জাহাঙ্গীর একটি বড় ফ্যাক্টরে পরিণত হয়েছেন। এটা তিনি প্রমাণ করেছেন। তাই আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, জাহাঙ্গীর কি আবার ফিরবেন আওয়ামী লীগে?
জাহাঙ্গীরকে ফিরিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের একটি মহল সক্রিয়। নির্বাচনকালীন সময়ে তারা গোপনে জাহাঙ্গীরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের অনুগত আওয়ামী লীগের একটি বিশাল কর্মীবাহিনী যারা এই নির্বাচনে গোপনে জাহাঙ্গীরকে সমর্থন দিয়েছে। কাজেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বাইরে জাহাঙ্গীরকে রাখা কতটুকু লাভজনক হবে সেই হিসেব-নিকেশ এখন কষতে বসেছে আওয়ামী লীগ।
জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ছাত্রলীগের মাধ্যমে। কিন্তু জুট ব্যবসার মাধ্যমে তিনি বিত্তবান হয়ে উঠেন এবং তারপরেই রাজনীতিতে তার নাটকীয় উত্থান ঘটে। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আস্তে আস্তে গাজীপুর আওয়ামী লীগের মূল নেতায় পরিণত হন। তার নিজস্ব একটি কর্মীবাহিনী তৈরি করেন। প্রত্যেকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে তিনি জাহাঙ্গীর লীগ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে একারণেই দলের ত্যাগি ও পরিক্ষীত নেতা আজমত উল্লার বদলে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। জাহাঙ্গীর আলম সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু কর্তৃত্বপরায়ণনীতি, দূর্নীতি, অনিয়ম এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানা কটুক্তির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার আপত্তিকর কিছু মন্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ আসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে। এবং এরপর জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিষ্কার করে।
শুধু আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েই জাহাঙ্গীরের শাস্তি শেষ হয়নি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীরকে তার সিটি করপোরেশন মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করে। এরপর শুরু হয় জাহাঙ্গীরের এক সঙ্কটকাল। কিন্তু এই সঙ্কটকালেও জাহাঙ্গীর ধীর-স্থির ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রেখেছে। কর্মীদের সঙ্গেও সম্পর্কে ছেদ ঘটতে দেয়নি জাহাঙ্গীর আলম। এবছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসেন জাহাঙ্গীর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অন্যান্য বহিষ্কৃতদের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরকেও ক্ষমা করা হয়। আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন এবং মনোনয়ন বোর্ডের কাছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র পদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দেয়। এই নির্বাচিনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেনি তাই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকের কাছে সহজ হিসেব ছিলো যে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হউক না কেনো তিনি বিজয়ী হবেন। কারণ গাজীপুরে আওয়ামী লীগের একটি নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের এই সহজ-সরল হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাড়ান এবং তার মাকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে দেন। জাহাঙ্গীর আলম জানতেন যে শেষ পর্যন্ত তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা সম্ভব নাও হতে পারে। একারণেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মা কে প্রার্থী করেছিলেন। এখানে জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ তার মা কে যদি প্রার্থী না করতেন তবে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দীতাহীন হতো। শেষ পর্যন্ত তার মা বিজয়ী হলেন। এই নির্বাচনের পর গাজীপুরে এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে একটি বিষয় আলোচনা হচ্ছে তা হচ্ছে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর এখন একটি ফ্যাক্টরে পরিণত হয়েছে। তার নিজস্ব একটি কর্মিবাহিনী রয়েছে, জনগণের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যেভাবে ভোটযুদ্ধে জাহাঙ্গীর বিজয়ী হয়েছে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় বিস্ময়। আর একারণেই আওয়ামী লীগ নতুন করে ভাবছে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে আবার আওয়ামী লীগে নিয়ে আসার। কারণ আগামী নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। এমন বাস্তবতায় জাহাঙ্গীরকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ গাজীপুরে কতটুকু দাড়াতে পারবে সেই হিসেব-নিকেশ করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলছেন আদর্শটাই বড়, জয়-পরাজয় বড় না। জাহাঙ্গীর যে কাজটি করেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এক ধরনের স্পর্ধা। এই ধরণের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড রক্ষা করা কঠিন হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি রাষ্ট্রপতি আদালত সরকার ফৌজদারি সংবিধান
মন্তব্য করুন
সরকার খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া রাজনীতির খবর বিএনপি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
আগামী
এক মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অক্টোবর মাসে অনেককিছু ঘটতে
পারে। আবার অক্টোবর মাস
পার করতে পারলে নির্বাচনের
রোড ম্যাপ চূড়ান্ত হবে। নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণা করা হবে। এরকম
একটি সমীকরণে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অক্টোবর মাসে
সবকিছু ঠিকঠাক মতো সামাল দিতে
চাইছে। আর এ কারণে
গোটা অক্টোবর মাস জুড়ে আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি
ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল
আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন এবং
সেখানে একাধিক বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে
রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে আওয়ামী লীগের জন্য অক্টোবর মাসে
৫টি শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের যে প্রধান লক্ষ্য,
সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারীর মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু
নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা, সেই লক্ষ্য
বাধাগ্রস্ত হতে পারে ৫টি
ঘটনায়। আর এই শঙ্কাগুলোর
মধ্যে রয়েছে:
১. অর্থনৈতিক সংকট: আওয়ামী লীগের জন্য এখন সবচেয়ে
বড় সংকট হিসেবে উপস্থিত হয়েছে
অর্থনৈতিক সংকট। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত
৪১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয়
এসেছে সেপ্টেম্বরে। রপ্তানি আয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত
হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতিতে একটি শঙ্কার কালো
মেঘ দানা বেঁধে উঠেছে।
এটি আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের।
পাশাপাশি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতি জনজীবনে অস্বস্তি ফেলেছে।
এই সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ মনে করে
যে আগামী এক মাস অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার
ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যথেষ্ট তৎপর হতে হবে
এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগ মনে করে
যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং দলের ভেতরে
নানামুখী সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ
করে ছাত্রলীগের বেপরোয়া হয়ে ওঠা ও কিছু কিছু স্থানীয়
পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিপদসীমা অতিক্রম করা আওয়ামী লীগের
জন্য একটি বড় ধরনের
শঙ্কার কারণ।
আওয়ামী
লীগের নেতারা মনে করেন যদি
দল ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কোন
সমস্যাই আওয়ামী লীগকে কাবু করতে পারে
না। আর কারণে দলকে
ঐক্যবদ্ধ রাখাটা আগামী একমাস আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
৩. ব্যর্থ
মন্ত্রীদের দায়: আওয়ামী লীগের জন্য আগামী এক
মাস ব্যর্থ মন্ত্রীদের দায় বহন করা
একই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
এই মন্ত্রীদের ব্যর্থতার কারণেও আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে
অনেকে মনে করেন।
অর্থনৈতিক
সংকট ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয় দেখা
দিয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার পেরিয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন
না। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও সংকট দেখা দিচ্ছে।
যে সমস্ত মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে অক্ষম তাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
৪. বেগম খালেদা জিয়ার
শারীরিক অসুস্থতা: বেগম খালেদা জিয়ার
শারীরিক অসুস্থতা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড়
চ্যালেঞ্জিং বিষয়
হয়ে দাঁড়াতে পারে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। কারণ
বেগম খালেদা জিয়ার যদি শেষ মুহুর্তে
কোনো কিছু হয়ে যায়
সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
যদিও
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন তেমন
কিছুই হবে না। এর
আগেও বেগম খালেদা জিয়ার
গ্রেফতারের সময় এই ধরনের
শঙ্কার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই
হয়নি। এবারও কিছুই হবে না।
৫। আন্তর্জাতিক চাপ: এই সময়ের
মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের জন্য শঙ্কার কারণ বলে রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকে
মনে করছেন যে এই সময়ের
মধ্যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে
সামাল না দেওয়া যায়
তাহলে তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের কোন
পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারে।
এই ৫ শঙ্কা কাটিয়েই
আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচন মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামী
লীগের নেতারা বলছেন যে এই মাসটা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেই সব
সংকট কেটে যাবে।
মন্তব্য করুন
বেশকিছু দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে রাজনীতি সরগরম। বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মতামতের জন্য সেই আবেদন পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে আইন মন্ত্রণালয় সেটি নাকচ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুর্কির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি।
আইন মন্ত্রণালয় যখন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন, তখন ধারণা করা হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সব পথ হয়তো বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়নি। এখনও তার বিদেশে যাওয়ার একটি সহজ সুযোগ রয়েছে এবং সেই সহজ সুযোগটি হল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।