আগামী ১২ জুন
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বরিশালের
জয় ছিনিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের উদ্যোগ ছিল, আগ্রহও আছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের যারা বরিশাল নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন, তাদের মধ্যে এক ধরণের উদাসীন ভাব
লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও রহস্যজনক। তার ভোটের আগেই
প্রশ্ন উঠেছে বরিশালে কি আওয়ামী লীগ হাল ছেড়ে দিল?
আওয়ামী লীগ
সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে তার কঠোর অবস্থান
জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আর যাই হোক কোন কারচুপি করা যাবে না, প্রশাসনকে
ব্যবহার করা যাবে না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানো যাবে
না। আর এই বার্তা স্থানীয় মাঠ প্রশাসনেও দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন অবস্থাতেই যেন ভোটে কোন
অনিয়ম না হয়, নির্বাচন নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না উঠে সে ব্যাপারে তিনি কঠোর সতর্কবার্তা
দিয়েছে। আর এ কারণেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিল। বরিশালেও যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
একই ভূমিকা পালন করে তাহলে বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের
বিজয় সেখানে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বরিশাল সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চমক আনে। বর্তমান মেয়র সাদিক
আবদুল্লাহর বদলে মনোনয়ন দেয়া হয় তার চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে। খোকন সেরনিয়াবাত আবুল
হাসনাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই। কিন্তু ছোট ভাই হলেও তার মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি মেনে নেননি
আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার ছেলে। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নিজেও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন
বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন। ওই মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও তিনি করেছিলেন
এবং শেষ পর্যন্ত সাদিক আবদুল্লাহকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয় সেজন্য নানা রকম যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু তার চেষ্টা সফল হয়নি। বরিশালে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান খোকন সেরনিয়াবাত।
সাদিক আবদুল্লাহকে
মনোনয়ন না দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে তার স্বেচ্ছাচারিতা,
উশৃঙ্খলতা এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। আর একারণেই আওয়ামী লীগ আসা করেছিল যে, খোকন
সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের জন্য তা ইতিবাচক হবে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের
ভাবমূর্তি যেমন উন্নত হবে, তেমনি জনগণ তাকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহী হবেন। কিন্তু
এই নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়া পর পরই বরিশালের রাজনীতিতে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয়। আবুল
হাসনাত আবদুল্লাহ এবং তার পক্ষের লোকজন এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত নিরবতা পালন করছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে কেউ কেউ নির্বাচন প্রচার অভিযানে নামমাত্র অংশগ্রহণ করছেন।
কিন্তু শেখ পর্যন্ত তারা আসলে কি ধরণের ভূমিকা গ্রহণ করবেন তা নিয়ে খোদ খোকন সেরনিয়াবাতেরই
সংশয় রয়েছে।
এই নির্বাচনে
ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন
জমে উঠেছে। বিভক্ত আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে পেরে উঠবে কিনা
সেটি নিয়েও বরিশালে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে।
এখন পর্যন্ত
আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যাপারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে প্রেনি। জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার চেয়ে
নিজেদের হতাশার বিষয়টি নিয়েই তারা আলাপ আলোচনা করছে। দলের ভেতর বিভক্তি এমন প্রকাশ্য
রুপ নিয়েছে যে, এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপর আক্রমণ পর্যন্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে
আওয়ামী লীগের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। অনেকেই মনে করছেন যে
নির্বাচনের আগেই হয়ত আওয়ামী লীগ বরিশালে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের
একাধিক নেতার সাথে কথা বলে দেখা গেছে তারা বরিশালে জয়ের চেয়ে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ
নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে হার জিত কোন
বিষয় না। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চায় যে, বর্তমান
সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর তা প্রমানের জন্যই এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু
করা গুরুত্বপূর্ণ। জয়ী হওয়া নয়।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।