আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি হলে পাঁচ মাস বাকি। সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই মাস। এর পরই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। ২০২৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে সমন্বয় রেখেই শান্তি সমাবেশ, উন্নয়ন শোভাযাত্রাসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে উত্তাল পরিস্থিতি। এছাড়াও এই নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশে বিদেশি কুটনীতিকদের আনাগোনাও বেশ বেড়েছে। বিএনপি একদিকে যেমন নির্বাচন বয়কটসহ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে আন্দোলন, সভা সমাবেশের নামে জনসাধারণকে নির্বাচন বিমুখ করে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাটছে বিপরীত পথে। আওয়ামী লীগ চাইছে, জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অুনষ্ঠিত করতে। তারই ধারাবাহিকতায় নানামুখী প্রস্তুতি এবং কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, দল এবং দেশকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাঠে নামছেন। আগামী দুই আগস্ট তিনি রংপুর সফর করবেন এবং ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা ডেকেছেন তিনি। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা, উপজেলা এবং থানা পর্যায়ের নেতাদেরকে ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি নীতি নির্ধারণী দিক নির্দেশনা দিবেন বলে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সারাদেশে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে, সে জরিপের কাজটি শেষ করেছে। সে জরিপ অনুযায়ী প্রায় ১শ’ থেকে ১শ’ ৩০ জনের মতো প্রার্থী, যারা বর্তমান সময়ে সংসদ সদস্য রয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না। আর এই মনোনয়ন না পেলে দলের ভেতরে যেন অভ্যন্তরীণ কোন্দল না হয় এবং দল থেকে যেন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থী না হয়, মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেন কেউ কাজ না করেন, সেজন্য শেখ হাসিনা একটি সতর্কবার্তা দিবেন। শেখ হাসিনার বার্তাটি খুব সুস্পষ্ট যে, ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকে যদি বিজয়ী না করা হয়, তাহলে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসবে এবং আওয়ামী লীগের আবার দুঃসময় শুরু হবে। এই বার্তাটি দিয়েই তিনি নির্বাচনের মাঠে নামবেন। আগামী আসস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর- এই তিন মাসে তার বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জনসভা করার কথা রয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের ৩০ জুলাই আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দপ্তরের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দলীয় সূত্রটি জানায়, ৩০ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ বর্ধিত সভাটি ডাকা হয়েছে। এতে জেলা ও মহানগর, উপজেলা ও থানা এবং জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন। দলের নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়ররাও উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদেরকেও এ সভায় থাকতে বলা হয়েছে। আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের যৌথ স্বাক্ষরে সংশ্লিষ্ট নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নামের তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শেখ হাসিনাই হলেন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্র্যাণ্ড এবং আস্থা ও দুঃসময়ের স্বস্থি আনয়নের একমাত্র ব্যক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির নানা কর্মসূচির সাথে সমন্বয় রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই কর্মসূচিগুলোকে সমন্বিত করার জন্য এবং জনগণকে জাগরিত করার জন্যই শেখ হাসিনা নির্বাচনী মাঠে নামছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো গোটা দেশকে নির্বাচনমুখী করা। যদি গোটা দেশ নির্বাচনমুখী হয়, তাহলে বিএনপির আন্দোলন খুব একটা সফল হবে না বলেই সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তাহলে কি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হয়েই গেল! নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এরকম ঢিমেতালে আন্দোলন করবে এবং এই আন্দোলনের ফাঁক দিয়ে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সমঝোতা এবং রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিতে পারে আওয়ামী লীগ এবং তখন বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা এবং বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারে দেশ। এমন একটি সমঝোতার কথা এখন আকাশে বাতাসে শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হওয়ার পর এই গুঞ্জন আরও পল্লবিত হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা এ ধরনের সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন।
বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির একাধিক হেভিওয়েট নেতা দল থেকে বের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কেবল বিএনপির পদে থাকা নেতারা নন, অতীতে বহিষ্কার, পদচ্যুত অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নেতারাও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এসব নেতা দল ছাড়লেও এতদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এখন তারাই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।