আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিনটি ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই নিয়ে গত ক’দিন থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দুই দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম তিন সংগঠন এবং বিএনপির এই সমাবেশ রাজধানীতে একটি সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপির আবেদন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি এবং আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের আবেদন বায়তুল মোকাররম গেটে সমাবেশের অনুমতি। কাছাকাছি এই দুই স্থানে প্রধান এই দুই দলের সমাবেশের কারণে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করেছেন অনেকে।
এছাড়াও নয়াপল্টন এবং বায়তুল মোকারমের মতো স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলে- এসব অঞ্চলে আশেপাশের এলাকার মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে, সৃষ্টি হতে পারে অসহনীয় যানজট। এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে শেষ পর্যন্ত প্রধান দুই দলের কাউকেই তাদের প্রত্যাশিত স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পরে দুটি দলই মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নির্ধারণ করেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বদলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছের গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের পরামর্শ দেয় পুলিশ। বিএনপি সেই অনুমতির প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার গোলাপবাগ মাঠে এই সমাবেশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে শুক্রবার ছুটির দিনে নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় দলটি। তারা সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেল পৌনে চারটার দিকে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা বিএনপিকে গোলাপবাগে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছি।’
তবে পুলিশের পরামর্শে গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করবে না বলে জানায় বিএনপি। তারা নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায়। প্রয়োজনে বিএনপি শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সমাবেশ করতে রাজি আছে। মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার (২৬ জুলাই) রাত সোয়া ৮ দিকে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির মিটিং চলছে। মিটিং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’ মিটিংয়ের পর বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শুক্রবার সমাবেশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) শান্তি সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। সে জন্য তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের অনুমিত দেয়নি ডিএমপি। এজন্য আমরা বিকল্প হিসেবে জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।’
বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে ধানমন্ডি ৩/এ বৈঠক থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে সেই স্থান পরিদর্শনে যায় প্রতিনিধি দল। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল জানান, তারা মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছেন। পছন্দ হলে গণমাধ্যমকে জানাবেন। পরে তিনি জানান, আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে শুক্রবার এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচন আসলে নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস, তাণ্ডব, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব মোকাবিলা করতে হবে। আবার সভা-সমাবেশ করা যেহেতু রাজনৈতিক দলের অধিকার, তাই তাদের অনুমতি দিতে হবে। অনুমতি দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরু দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমনটা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নয়া পল্টনের পরিবর্তে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছে ডিএমপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠ বা মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করার কথা বলেছে ডিএমপি। আর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। তাদের অন্য কোনো দিন সমাবেশ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ডিএমপির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। দলটি পুরানা পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি যদি সমাবেশ নয়া পল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সরিয়ে নেয় সেক্ষেত্রে যুবলীগও সমাবেশ সরিয়ে নেবে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই নয়া পল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমনকি যুবলীগকেও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকেই ভিন্ন ভেন্যুর জন্য বলা হয়েছে। ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সমাবেশের এসব বিষয় নিয়ে দিনভর নানা বৈঠক করা হচ্ছে। দফায় দফায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা যা করা দরকার তাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ও জনভোগান্তি এড়াতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপির একাধিক গোয়েন্দা ও ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মূল নজর থাকবে তিনটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে। দল তিনটি হলো- বিএনপি, যুবলীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য কাল একযোগে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন থাকবেন। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। প্রস্তুত রাখা হবে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় ব্যবহৃত ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, র্যাকার গাড়ি। চেক পোস্টগুলোয় সক্রিয় তল্লাশি ও নজরদারি থাকবে। যানজট তৈরি হবেই, তা ধরে নিয়ে বিকল্প রুটগুলো সচল রাখার আগাম প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের ঠিক পাঁচ মাস আগে রাজধানীতে একাধিক দল একযোগে সমাবেশ কর্মসূচি ডাকায় নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে ডিএমপি। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল থাকবে। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কারণে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা ছাড়াও র্যাব সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বাংলা ইনসাইডারকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বলেছেন, মার্কিন ভিসা নীতি কতটা কার্যকর- তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি কম্বোডিয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে। কম্বোডিয়ার নির্বাচনের দিন দু’একের মাথায় দেশটির নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে বসলেন। সেই অুনমান বা অনুসিদ্ধান্ত ধরে আমরা যদি ২৭ জুলাই, পরস্পর বিরোদী দুই দলেরর যে, সমাবেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে- তা অহিংস থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করা যায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলোর প্রত্যাশা, যারাই নির্বাচনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ভিসা নীতির আওতায় পড়ে যেতে হবে। সেজন্য এই ভিসা নীতি সকল পক্ষের জন্য সহিংসতা ঠেকাতে একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। আমার অনুমান শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক সমাবেশ- তার পরিণতি পাবে।
দুই দল সমাবেশ শক্তি পরীক্ষা আওয়ামী লীগ বিএনপি শুক্রবার
মন্তব্য করুন
নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তাহলে কি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হয়েই গেল! নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এরকম ঢিমেতালে আন্দোলন করবে এবং এই আন্দোলনের ফাঁক দিয়ে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সমঝোতা এবং রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিতে পারে আওয়ামী লীগ এবং তখন বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা এবং বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারে দেশ। এমন একটি সমঝোতার কথা এখন আকাশে বাতাসে শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হওয়ার পর এই গুঞ্জন আরও পল্লবিত হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা এ ধরনের সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন।
বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির একাধিক হেভিওয়েট নেতা দল থেকে বের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কেবল বিএনপির পদে থাকা নেতারা নন, অতীতে বহিষ্কার, পদচ্যুত অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নেতারাও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এসব নেতা দল ছাড়লেও এতদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এখন তারাই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।