আজ রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরের এই মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কার জন্য ভোট চেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় রংপুরের ঐতিহাসিক জিলা স্কুল মাঠ ছিল- নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়কের দু’দিকেও অবস্থান নেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা। আজ বুধবার রংপুরে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
অথচ গত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা (ডালিয়া) জামানাত হারিয়েছিলেন। তাঁকে মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হতো। অর্থাৎ তাঁকে অন্তত ৩৪ হাজার ৩৯৩ ভোট পেতে হতো। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। রংপুরের সিটি করপোরেশনে মোট বৈধ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬। রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়েছিলেন মোট ৯ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জামানত টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন। তাই প্রশ্ন ওঠেছে, আজ বুধবার আওয়ামী লীগের যে মহাসমাবেশ হলো, তাতে জনতার ঢল কিভাবে নেমে এলো? তবে কি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে হানা দিলো আওয়ামী লীগ?
আজ বুধবার রংপুরের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়, কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমরা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করবো।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর মহোমুগ্ধ বক্তব্য, উন্নয়ন প্রচার এবং নানা রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রংপুরের জনসাধারণকে মুগ্ধ করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা যেখানে জনপ্রিয়তার দিক থেকে আওয়ামী লীগ শূণ্যের কোটায়, সেখানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে জনতার ঢল নেমে আসার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে কিছু পেয়েছেন এবং কিছু আশা করেন বলেই সমাবেশে সশরীরে হাজির হয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ দিন থেকেই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চল। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮-এর নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মহাজোটের মাধ্যমে যে নির্বাচনগুলো করেছে, এসব নির্বাচনে সব সময় রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। রংপুরের সবগুলো আসনেই জাতীয় পার্টির আধিপত্য রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রংপুরে কয়েকটি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তারপরও এখনও জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবেই বিবেচনা করা হয় রংপুর অঞ্চলকে। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রংপুরে গিয়ে যে জনসমুদ্রে ভাষণ দিলেন এবং বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিলেন, তাতে রংপুরের জাতীয় পার্টির দুর্গে আওয়ামী লীগের হানা হলো কিনা, সেটা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ওঠেছে।
কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং বিন্যাস হতে যাচ্ছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি আলাদা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করবে। রংপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর নির্বাচনী এলাকা জাতীয় পার্টির হাতে ছেড়ে দিতে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা রাজি না। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী রংপুরের মাধ্যমেই তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন বলে অনেকেই মনে করছেন। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি অংশগ্রহণও করে, তবুও জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে অনেকেই মনে করেন। কারণ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, তারা এককভাবেই তিনশ’ আসনে অংশগ্রহণ করবেন। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর রংপুরের আসনগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে বড় ক্যাক্টর হয়ে ওঠতে পারে। সে কারণেই জাতীয় পার্টির দুর্গ তছনছ করে দেওয়ার মিশনে আওয়ামী লীগ আজকের জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে তার পদক্ষেপ গ্রহণ করলো।
তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, আসলে জাতীয় পার্টি এই সময়ে প্রকাশ্যে এবং গোপনে সরকার বিরোধী তৎপরতায় জড়িত রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের যোগাযোগ- এমন গুঞ্জন প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টি সরকারকে নিয়ে কোনো কোনো সময় বিএনপির চেয়েও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করছে। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর রংপুর অভিযান বলে অনেকেই মনে করছেন।
তবে যে কারণেই হোক প্রধানমন্ত্রীর আজকের জনসভা এবং রংপুরেরর জনসাধারণের উম্মাদনা দিয়ে এটা স্পষ্ট হলো যে- জাপার দুর্গে আওয়ামী লীগ ভালো মতোই হানা দিল।
জাতীয় পার্টি দুর্গ আওয়ামী লীগ হানা
মন্তব্য করুন
ঢাকা-৮ আসন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তাহলে কি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হয়েই গেল! নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এরকম ঢিমেতালে আন্দোলন করবে এবং এই আন্দোলনের ফাঁক দিয়ে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সমঝোতা এবং রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিতে পারে আওয়ামী লীগ এবং তখন বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা এবং বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারে দেশ। এমন একটি সমঝোতার কথা এখন আকাশে বাতাসে শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হওয়ার পর এই গুঞ্জন আরও পল্লবিত হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা এ ধরনের সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন।
বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির একাধিক হেভিওয়েট নেতা দল থেকে বের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কেবল বিএনপির পদে থাকা নেতারা নন, অতীতে বহিষ্কার, পদচ্যুত অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নেতারাও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এসব নেতা দল ছাড়লেও এতদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এখন তারাই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।