নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে বিএনপি। আজ এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট মহাসড়কে রোডমার্চ করেছে দলটি। কিন্তু এক দফা আন্দোলনের যে গতি থাকা উচিত, একদফা আন্দোলনে যে জাগরণ হওয়া উচিত সেটি এখন পর্যন্ত বিএনপি অর্জন করতে পারেনি।
বিএনপির
নেতারা বলছেন যে, টানা কর্মসূচির
পরও আন্দোলনটা শুধুমাত্র কর্মী সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। দলের একান্ত অনুগত
নেতাকর্মীরা ছাড়া সাধারণ জনগণ এই সমস্ত
কর্মসূচিকে এখন পর্যন্ত আমলে
নিচ্ছে না। এই সমস্ত
কর্মসূচি সাধারণ জনগণের জীবনযাপনেও কোন প্রভাব ফেলছে
না। আর এ কারণেই
শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন কতটুকু
সফল হবে তা নিয়ে
বিএনপিতে শঙ্কা রয়েছে।
তবে
আন্দোলনের সাফল্য ব্যর্থতার সংখ্যার চেয়েও, এই আন্দোলন এগিয়ে
নেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি বড় বাধার মুখোমুখি
হচ্ছে বিএনপি। আর এই সমস্ত
বাধাগুলো পেরিয়ে একদফা আন্দোলনকে নির্বাচন পর্যন্ত কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেটি বিএনপির জন্য
এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
যে পাঁচটি শঙ্কা বিএনপিতে ঘনীভূত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
১। নেতাকর্মীদের জেল মামলা: বিএনপির
অধিকাংশ নেতাকর্মী মামলা ভারে ভরাক্রান্ত। একেকজন
নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একশো থেকে সাড়ে
চারশো পর্যন্ত মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো মোকাবিলা
করার জন্য তাদের প্রতিদিনই
কোর্ট কাছারিতে যেতে হচ্ছে। যখনই
আন্দোলনের গতিবেগ বাড়ানো হচ্ছে তখন এই মামলাগুলো
নতুন করে সচল করা
হচ্ছে। এই সমস্ত মামলাগুলো
বিএনপির জন্য বড় শঙ্কার
কারণ।
ইতিমধ্যে
বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী
গ্রেফতার হয়েছেন। আন্দোলনের গতি বাড়লে সামনের
দিনগুলোতে আরো নেতাকর্মীরা গ্রেফতার
হতে পারেন। ফলে আন্দোলনকে এগিয়ে
নেয়া বিএনপির জন্য একটি কঠিন
চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে
বলেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন।
২। নেতাদের অসুস্থতা: অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শরীরের অবস্থা ভালো না। সেটি
তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদেরকে বলেছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠতম স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ
হোসেন অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজনৈতিক
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। বিএনপির আরেক
নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে
অংশগ্রহণ করেন না।
বাকি
যে সমস্ত নেতাকর্মীরা আছেন তারাও অসুস্থ
এবং নানা রোগে আক্রান্ত।
দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন এবং রাজপথের আন্দোলন
করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য এবং
প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এমনিতেই
বিএনপির প্রধান দুই নেতা নেতৃত্বে
নেই। বাকি নেতারা কিভাবে
বিএনপির এই আন্দোলনকে এগিয়ে
নেবে এটাই এখন একটি
বড় চ্যালেঞ্জ।
৩। জনসম্পৃক্ততা: বিএনপির আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়
হচ্ছে, জনগণ এই আন্দোলনের
সঙ্গে এখন পর্যন্ত সম্পৃক্ত
হতে পারছেন না। জনগণের জনগণের
মধ্যে এই আন্দোলন নিয়ে
কোন ইতিবাচক বিষয়তো নেই বরং কোনো
ক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা
না থাকলে গণ আন্দোলন গড়ে
তোলা যায় না এটা
বিএনপির নেতারা ভালো মতোই অনুধাবন
করেন।
৪। সরকারের প্রলোভন: ইতিমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রলোভন
দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ
করে নেতারা যারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়
আছেন তাদেরকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে কি দেওয়া
হবে না দেওয়া হবে
সে ব্যাপারে নানা রকম কথাবার্তা
বলা হচ্ছে। আর এই সমস্ত
প্রলোভন এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত কতজন
নেতা নীতির প্রশ্নে অটুট থাকবেন সেটাই
একটা দেখার বিষয়।
৫। তারেকের দুর্ব্যবহার: বিএনপির জন্য এখন সবচেয়ে
বড় মাথা ব্যথার কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে তারেক জিয়া। তারেক জিয়া প্রতিদিনই দলের সিনিয়র নেতাদের
সাথে দুর্ব্যবহার করেন। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং ন্যূনতম
সম্মান কাউকে করেন না।
বিএনপির
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন,
একটি রাজনৈতিক দল এভাবে চলতে
পারেনা। এটি কোন লিমিটেড
কোম্পানি না এবং তারেক
জিয়াও তার এমডি নন।
আর এ কারণেই বিএনপির
মত অনেক নেতাকর্মী এখন
নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির
সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ
উদ্দিন, আবদুল্লাহ আল নোমান ইতিমধ্যেই
তারেক জিয়ার অশালীন এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত
আচরণের কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন।
এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে
তাহলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপির আরো নেতারা হতাশ
হয়ে নিষ্ক্রিয় হতে পারেন। শঙ্কা
কাটিয়ে একদফা আন্দোলনকে বিএনপি কতটুকু এগিয়ে নিতে পারে সেটাই
দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রওশন এরশাদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ঢাকা-৮ আসন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল হল আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনৈতিক জোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরকে নিয়ে এই জোট গঠন করেছিল। এই জোটের তত্ত্বাবধানেই আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ১৪ দল এবং মহাজোট করেছিল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। অবাধ, সুষ্ঠু হচ্ছে না। এই অর্থহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে না। এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়।এরপর শুরু হয় নাটক। সেই সময় আওয়ামী লীগের পাশে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তার নাম রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদ এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন এবং রওশন এরশাদের অনুসারীরা এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টির আংশিক হলেও নির্বাচনে থেকেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর রওশন এরশাদ হয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা।
তাহলে কি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হয়েই গেল! নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এরকম ঢিমেতালে আন্দোলন করবে এবং এই আন্দোলনের ফাঁক দিয়ে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সমঝোতা এবং রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিতে পারে আওয়ামী লীগ এবং তখন বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা এবং বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারে দেশ। এমন একটি সমঝোতার কথা এখন আকাশে বাতাসে শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হওয়ার পর এই গুঞ্জন আরও পল্লবিত হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা এ ধরনের সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন।