নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
দেশের বামপন্থীরা একটা সময় প্রচার করতো যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জাদুকাঠিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তাবৎ সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), এবং এই ধারাবাহিকতায় দেশে যদি সমাজতন্ত্র কায়েম হয়, তবে আর সাম্প্রদায়িক সমস্যা কিছুই থাকবে না । কিন্তু পরে, পৃথিবীর গোলকায়নের ফলে প্রমাণিত হয় যে, তার মধ্যে বিশেষ সত্যতা ছিল না। এটা ছিল বামপন্থী কর্তৃক ডাহা মিথ্যা কথা প্রচার। সব দেশের মতো রাশিয়াতেও সংখ্যালঘুরা নানা ধরণের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এবং সামাজিক ভয়ভীতির মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সেই চল্লিশের দশক থেকে এ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের ছড়াছড়ি চলছেই! ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়া বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক কোনো ইস্যুতে এখন আর কথা বলছেন না। বললেও যেটুকু না বলে আর পারা যায় না সেটিুকু বলছেন। নীরব থাকছেন। বিষয়টি বিস্তর আলোচনার দাবি রাখে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের তথা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা আলোচনা করার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্বাভাবিকভাবেই নির্যাতিত হয়ে থাকেন, এ কথাটি মনে রেখেই অগ্রসর হওয়া দরকার। সম্প্রতি কুমিল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার একটি অস্থায়ী মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লাসহ সারাদেশে অনেকগুলো মণ্ডপে হামলা চালায় ও নির্যাতন করে একটি কায়েমি গোষ্ঠী। এ ঘটনায় ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে। বিএনপির অন্তরে যাই থাক, মুখে প্রতিবাদ করেছে, যদিও দোষ ক্ষমতাসীনদের ঘাড়ে তথ্য, প্রমাণ ছাড়াই দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যাদের সবচেয়ে বেশি সামনের সারিতে থাকার কথা ছিল, যারা কথায় কথায় সমাজ বদলাতে চায়, সেইসব প্রগতিশীল দলগুলো কোনো এক দৈব কারণে চুপটি মেরে বসে আছেন। এবং এটি শুধু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নয়, অনেকদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে তারা কথা বলছেন না। পিন পতন নীরবতা চলছে তাদের। এর আগে, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করেই। সেখানেও কোনো সক্রিয়তা ছিল না বাম শিবিরের। এরও আগে, ২০১২ সালের শেষ দিকে ফেসবুকে কথিত কুরআন অবমাননার ছবি ছড়িয়ে তাণ্ডব চালানো হয় কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধ বস্তিতে। সে সময় ১২টি বৌদ্ধমন্দির এবং বৌদ্ধদের ৩০টি বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও সহমর্মিতা জানাতে ভুলে গেছে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা লাল শিবিরের দলগুলো। তবে যদি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা প্রেস রিলিজকে সক্রিয়তা ধরা হয়, তবে হাতে গোনা কয়েকটি বাম দলের আছে। কিন্তু এর তীব্র প্রতিবাদ করা, এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া, মাঠে নেমে ঐসকল মৌলবাদীদের প্রতিহত করা, প্রতিরোধ করা, এসব কিছুতে একটি বাম দলও নেই। বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাসদ, বাসদ, ন্যাপ, ওয়ার্কাস পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, সবাই নিজ নিজ তল্পিতল্পা নিয়ে ব্যস্ত। দেশে যে একটা কিছু হয়েছে, তা ইনু-মেননদের সক্রিয়তা দেখে বুঝার জো নেই। সমাজে সংখ্যালঘু, অমুসলমান জনগোষ্ঠীর নানা আবেদন-নিবেদন অনেকদিন ধরেই অগ্রাহ্য করে আসছে এই বামদলগুলো।
`বাম` কি `ইসলাম` রাজনীতির পথে
কিছু দিন আগে পশ্চিম বঙ্গের কয়েকটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছিলেন। পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরো অনেকে। পরে জানা গেল `এটা ছিল রাজনীতির ব্যাপার।` বাম দল `তৃণমূল কংগ্রেস` বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রামনবমীর মিছিল করেছে। প্রগতির কথা দূরে রেখে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মকেই বড় করে দেখেছে দলটি। এর সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে আমাদের দেশের বাম দলগুলোর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে ছিল কয়েকটি বাম দল। ফলে বাম দলগুলো ভোটের রাজনীতিকে আদর্শ থেকে বড় করে দেখে ধর্মের রাজনীতির দিকেও ঝুঁকতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটা বাম দল যখন বলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রে ইসলামের একটি `স্পেস` জরুরি, এবং সেই `স্পেস` দেয়ার দাবি তুলেন, তখন বুঝতে হবে যে দলটি তার আদর্শ ভূলুণ্ঠিত করছে। দলটি তখন সত্য-অসত্যের মিশ্রণে একটি ধোঁয়াটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সত্য হলো এই যে, শুধু রাজনীতি ও রাষ্ট্রে কেবল নয়, পরিবার এবং সমাজেও ইসলাম দোর্দণ্ড প্রতাপে উপস্থিত আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ইসলামের প্রভাবে প্রভাবাধীন। আমাদের রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম। এটি সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টিসহ সমমনা দলগুলো সব সময়ই এর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। আর এখন এদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বাম দলগুলো। তারা একসময় বিপ্লব করে সমাজটাকে বদলানোর কথা বলতেন, এখনো বলেন। তারা মুখে একটি বারের জন্যও বলেন না যে, আমাদের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ গোটা রাষ্ট্রে ইসলাম ধর্মেরই জয়জয়কার। ফলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের `স্পেস` ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। সমস্যাটি বাড়তে বাড়তে এখন তিলে তিলে তিলোত্তমায় পরিণত হয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রদায়িকতা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি প্রশ্নে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বলেছেন যে, সাম্প্রদায়িকতাকে দূর করতে হলে বঙ্গবন্ধু যেই চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানে যেটি বলা হয়েছিল, ধর্মের নামে কোনো রাজনীতি চলবে না। এখানে ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে না যাওয়া ছাড়া এটা করা যাবে না। নির্মূল কমিটি ৩০ বছর ধরে এটা নিয়েই আন্দোলন করে আসছি বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ সম্প্রীতির ইতিহাস হাজার বছরের। বাম দলগুলোর ভোট কম আমরা জানি। তাই বলে মৌলবাদীদের ভোট পাওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে কথা বলবে না, আদর্শের বিচ্যুতি ঘটাবে, এটি মেনে নেয়া যায় না। আজ কার্ল মার্ক্স বেঁচে থাকলে বামদলগুলোর সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে এ ধরণের নির্লজ্জ নিষ্ক্রিয়তা দেখলে তিনি নিশ্চিত বলতেন যে, এই দলগুলো যদি বাম দল হয়, তবে আমি আর যাই হই, বামপন্থী না!
মন্তব্য করুন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জন বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু
হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই
মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয়
নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের
এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র
জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের অনেক নেতা স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভাব্য
প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রচার ও গণসংযোগও করছিলেন। বিশেষ করে রোজার মধ্যে
এবং ঈদুল ফিতরে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, মূলত বেশকিছু কারণে
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত। তার মধ্যে মোটাদাগে চারটি কারণের
কথা বলছেন নেতারা।
কারণগুলো হচ্ছে…
১। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে ক্ষমতাসীনদের
‘হস্তক্ষেপ’
২। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পরিবেশের
প্রতি জনগণের ‘আস্থার সংকট’
৩। গণতন্ত্র না থাকা এবং
৪। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ
সরকার’কে বৈধতা না দেওয়া
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের (সোমবার) আগেই সিদ্ধান্ত বদল করায় জামায়াতের তৃণমূলে
অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, যশোর, সাতক্ষীরা,
চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার
সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন তারা ব্যাপকভাবে
গণসংযোগ করছিলেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যায়।
নির্বাচনে গেলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এটা ভেবে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন দলের
নীতিনির্ধারকরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন, সেটাকেও সম্মান জানাতে চান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জামায়াতে
ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি
বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে সারা দেশে দলীয়
সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ
প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বর্জন করেছে। বিএনপিও এ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই
পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত
নিতে হলো।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের
বিষয়ে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাব
আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক সম্ভাব্য
প্রার্থীরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চলামান রাজনৈতিক
ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের
বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই গত
শনিবার উপজেলা নির্বাচন না করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলে
মৌখিকভাবে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে জামায়াতের
নেতারা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো
পরিবেশ নেই। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা
রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অসংখ্য
রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছে। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী উপজেলা
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নির্বাচনের
আগেই বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব
বিষয়কে বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।
গতকাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক
দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের
জনগণ ভোট দিতে যায়নি। তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সেই জনরোষ এখনো আছে। সুতরাং
যেসব কারণে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছি
না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের প্রতি জামায়াতের দায়বদ্ধতা
আছে। দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াত জনমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যেতে পারে না’।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪টি উপজেলায়
চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয়
প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র
প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে
অংশ নেননি।
উপজেলা নির্বাচন জামায়াত বিএনপি
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে বিজয়কে সুসংহত করার পথে
প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে সন্ত্রাসী এ অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি
৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, বিজয়কে সুসংহত করার পথে প্রতিবন্ধকতা হলো বিএনপির
মতো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী অশুভ শক্তি। এ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আজকের এ দিনে
বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী শক্তি সব অপশক্তিকে, যারা আমাদের বিজয়কে সংহত
করার প্রতিবন্ধক, এদের আমরা পরাজিত করব, পরাভূত করব, প্রতিহত করব। আমাদের লড়াইকে আমরা
এগিয়ে নিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি তো কোনো দাবিকে বিচ্ছিন্নভাবে
কিছু বলতে পারি না। মন্ত্রিসভা আছে, প্রধানমন্ত্রী আছেন। তারা এত বছর পর দাবিটা তুলছেন,
কেন তুলছেন এটাও জানার দরকার আছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমরা শপথ নেব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ধারাবাহিক
লড়াইয়ে আমরা এগিয়ে যাব। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে
যাব, এটাই হোক আমাদের শপথ।
এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্থপতি
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর
প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএনপি মুজিবনগর দিবস ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, মন্ত্রী এবং এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারবে না। তাদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই রকম বার্তা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করাতে মাঠে নেমেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকাতেই এমপিরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।