বেগম
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজনীতির মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকার তার অবস্থান থেকে এখন পর্যন্ত সরে আসেনি। গতকাল আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ ব্যাপারে
একটি নতুন কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনপত্রটির ব্যাপারে তারা আইনগত দিকগুলো পর্যালোচনা করে দেখছেন। তার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যায় কিনা সেটির আইনগত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন বলেও আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দিনই পাসপোর্ট অধিদপ্তর বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু দণ্ডিত ব্যক্তি এজন্য তার পাসপোর্ট নবায়ন সম্ভব নয় বলেও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে। এর ফলে বেগম
খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকার নমনীয় হচ্ছে বলে আইন মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে যে ধরনের ধারণা
পাওয়া গেছিল সেই ধারণাটি পাল্টে গেল।
দুই
সপ্তাহ হয়ে গেল বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা এবং বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠনের ড্যাবের নেতারা দাবি করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট খারাপ এবং যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে বলেও তার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ কারণেই তারা
বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি তুলছেন। এই দাবিতে তারা
বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এমন হুমকিও দিচ্ছেন যে বেগম খালেদা
জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া হলে
তারা এক দফা আন্দোলন
শুরু করবেন। তবে এ সমস্ত দাবি
দাওয়ার দরকার খুব একটা কর্ণপাত করছে বলে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। সাম্প্রতিক সময়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল বলেও জানা গেছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন
সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে বেগম খালেদা
জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি বিদেশ থেকে চিকিৎসকরা আসতে চান তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে
সরকারের মনোভাব সুস্পষ্ট হয়েছে।
রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক এবং মানবিক দুটো বিষয়ই পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় তাহলে তার রাজনৈতিক পরিণতি কি হবে এটা
নিয়ে সরকারের মধ্যে একটা ভাবনা আছে। সরকার মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গেলেই সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বিবৃতি দেবেন এবং একটি সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঘোষণাও দিতে পারেন। পাশাপাশি তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ইতিমধ্যে নানা ষড়যন্ত্র করছেন। খালেদা জিয়া বিদেশে গেলেই তারেক জিয়ার ষড়যন্ত্রের মাত্রা এবং পরিধি আরো সর্বাত্মক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সম্ভবত এটিই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি না দেয়ার একটি
বড় কারণ। তবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন যে, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব নয়।
সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি দুটি মামলায় দণ্ডিত এবং তার বিরুদ্ধে আরো অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোর অধিকাংশই দুর্নীতি দমন কমিশনের। কাজেই দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় সরকার যদি তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং তিনি যদি ফিরে না আসেন তাহলে ন্যায়বিচার লঙ্ঘিতে হবে। এটি সরকার করতে চাইছে না। তবে বেগম খালেদা জিয়ার শেষ পর্যন্ত যদি কিছু হয় তাহলে তার রাজনৈতিক পরিণতি কি হবে সেটিও সরকারের একটি বড় বিবেচ্য বিষয় বলে জানা গেছে। কারণ এই সরকার বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ দিবেন কি দিবেন না এটা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশের উপর। সরকার তার রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে যদি মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়া হলে রাজনৈতিকভাবে সরকার লাভবান হবে সেক্ষেত্রেই হয়তো বিষয়টি বিবেচনা করলেও করতে পারেন। অন্যথায় বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।