‘বঙ্গবন্ধু তো তাঁর সমগ্র জীবনে- তিনি শুধু মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এবং যত দিন যাচ্ছে ততো বেশি- বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য কি করে গেছেন- তা প্রকাশিত হচ্ছে। এক সময় তো আমরা এগুলো জানতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধু সুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে যে বই তিনটি পেয়েছি- এটাতো ইতিহাসের তিনটি আকরগ্রন্থ। এবং ‘কনফিডেন্সিয়াল ডায়েরি অন দ্যা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’- এই যে ১৪ খণ্ডের, ৬২ হাজার পৃষ্ঠার যে অমূল্য সম্পদ- সেখান থেকে ১৪ খণ্ডের মধ্যে ১১ খণ্ড ইতিমধ্যে বের হয়েছে। এখানে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থারা পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুকে প্রতিমুহূর্তে অনুসরণ করতো। এই রিপোর্টগুলো যখন প্রকাশিত হচ্ছে তখন জানা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু এই বাঙালি জাতির জন্য কি কি করে গেছেন এবং তারা (পাকিস্তানিরা) কি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকে। স্কুল, কলেজে যখন পড়তাম- তখন শুনেছি বঙ্গবন্ধুর ঘুমানোর সময় ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই তিনটি আকরগ্রন্থ এবং ‘সিক্রেটস ডকুমেন্টস অন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’- যে ১১ খণ্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে- এগুলো তো আমাদের চোখ খুলে দিচ্ছে। আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানা-শোনার চেষ্টা করেছি। এটার জন্য আমি দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষের সাথে কথা বলেছি, যারা বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন তাদের সাথে কথা বলেছি, সাক্ষাৎকার নিয়েছি।’- বলছিলেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষক সুভাষ সিংহ রায়।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা, কলামিস্ট, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষক সুভাষ সিংহ রায়।- এই পুরষ্কার প্রাপ্তিতে তাঁর অনুভূতি, গবেষণালব্ধ সময়কাল এবং গবেষণা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য- এসব বিষয় নিয়েই বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষক সুভাষ সিংহ রায়- এর সঙ্গে। তিনি বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার প্রাপ্তিতে তার অনুভূতি, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং এই গবেষণার সময়কাল- সে সব বিষয়। পাঠকদের জন্য সুভাষ সিংহ রায় - এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার- এর নিজস্ব প্রতিবেদক আল মাসুদ নয়ন।
সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স যখন ৩৪ বছর তখন শাহ আব্দুল করিম, তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে বাংলার নয়নতারা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স যখন ৩২ বছর, তখন তিনি নয়া চীনে (বর্তমান চীন) আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে তিনি যা যা দেখেছেন এবং যা যা আমাদের করণীয়, কৃষিতে তাদের আগ্রহের জায়গা, শিল্পখাতে আগ্রহের জায়গা, নারীর অংশগ্রহণের আগ্রহের জায়গা, তিনি তা অত্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছেন এবং তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন।- আমরা তো এই অমূল্য সম্পদ আকরগ্রন্থ পেতাম না, যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সে সুযোগ করে না দিতেন।
সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে বাংলায় বকতৃতা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সরকার তখন ক্ষমতাসীন এবং সবেমাত্র ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হলেন (১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি কারাগারে ছিলেন)। কারামুক্ত হয়েই সেপ্টেম্বর মাসে তিনি নয়াচীনে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে গেলেন। সেখানে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দিলেন। সেখানে অনেকের সাথে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেনে একজন বিখ্যাত লেখক মনোজ বসু। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন বাংলায় বক্তৃতা করলেন, তখন মনোজ বসু ছুটে এসে শেখ মুজিবুর রহমানকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘সারা পৃথিবীতে বাংলার মান তুমিই কেবল রেখেছ’।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর সৃজনশীল কূটনৈতিক দক্ষতায় চীনের দুই দু’বার ভেটো দেবার পরও তিনি আমাদের জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করিয়ে দিয়েছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেষনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই ভাষণ এখন সারা পৃথিবীর নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের জন্য এখনও পথ দেখাচ্ছে। তিনি তার ভাষণে যে বলেছিলেন- ‘সবার সাথেই বন্ধুত্ব এবং কারো সাথেই বৈরিতা নয়’। দুই মাস আগেই বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি জাতিসংঘের মুখবন্ধে তারা যুক্ত করেছেন।
এই পুরষ্কারপ্রাপ্তিতে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (যাকে অনুপ্রেরণার উৎস মনে করেন) এবং যারা যারা এই গবেষণায় তাকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবান জ্ঞাপন করেন। আর অনুভূতির কথা যদি বলেন, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। ১৯৮৩/৮৪ সালে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় এই গবেষণা শুরু করেছিলেন, আর প্রাপ্তিটা এলো ২০২৩ সালে বলেও জানান তিনি।
শাহ আব্দুল করিম বঙ্গবন্ধু বাংলার নয়নতারা সুভাস সিংহ রায় বঙ্গবন্ধু গবেষক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার
মন্তব্য করুন
‘আমাদের যে মূল্যস্ফীতি, গত বছরের যে বাজেট ছিল- তা ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, এই চলমান অর্থ বছরে। ওইটা ছিল প্রস্তাবিত বাজেট। এখন এবার যখন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী, তখন সেটা সংশোধীত বাজেট বলবেন। আগে যেটা বলা হয়েছিল, তার থেকে সংশোধীত বাজেটটা আসলে কত হলো? আমার ধারণা, যেটা সংশোধীত বাজেট হবে, যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল চলমান বছরে (২০২২-২৩)। সেখানে সংশোধীত বাজেটটা কম হবে, কত কম হবে-সেটা আমি জানি না। সেটার তুলনায় এখনকার বাজেটটা কত হবে সেটা এখনও আমি জানি না। তবে প্রকৃত মুল্যস্ফীতি যা আছে, সরকার যা বলছেন, সেটা প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না-ও হতে পারে। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি যা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নূন্যতম বাজেটটা সেরকম হওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে নূন্যতম বাজেটটা ৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। কিন্তু বাজেটটা হওয়া উচিৎ সম্প্রসারণশীল। তার মানে এর চাইতে অনেক বেশি। তবে কত বেশি হহওয়া উচিৎ সেটাও আমি জানি না।’ - বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। গতকাল বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার কেমন হওয়া উচিৎ, অর্থনৈতিক মন্দা নিরসন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর সম্পদ, আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আবাসন, কর্মসংস্থানসহ সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে এবারের বাজেটের আকার কেমন হওয়া প্রয়োজন- এসব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত- এর সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন এবারের বাজেট সম্পর্কে। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের বিশেষ প্রতিনিধি আল মাসুদ নয়ন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে বৈষম্য। বৈষম্যের মধ্যে সম্পদ বৈষম্য, আয় বৈষম্য, পুষ্টি বৈষম্য। পুষ্টি বৈষম্য বলতে আমি বলছি, মানুষ সম্ভবত গত এক বছরে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম- এগুলো ভোগ কমিয়েছেন। এগুলো যেন মানুষ আগের মতোই ভোগ করতে পারেন। তাহলে পুষ্টি বৈষম্য আগের মতোই হবে। সেগুলো যদি ঠিক রাখি- তার সঙ্গে, স্বাস্থ্য বৈষম্য, শিক্ষা বৈষম্য, আবাসন বৈষম্য- এগুলো যদি বিচার করা হয়, তাহলে আদর্শগতভাবে বাজেটটা হওয়া উচিত- এখন যে বাজেটটা আছে- ৬ লক্ষ্য ৭৮ হাজার কোটি টাকা, এটা অনেক বেশি হওয়া উচিৎ। এটা কত বেশি হবে সেটা আমি এখনও জানি না।’
তিনি বলেন, ‘তবে নীতিগতভাবে বৈষম্য যদি প্রধান বিষয় হয়ে থাকে, দ্রব্যমূল্য যদি বড় বিষয় হয়ে থাকে, তবে বাজেটটা অনেক বড় হওয়া দরকার- এটা হলো এক নম্বর বিষয়। দ্বিতয়ত হলো, এই বাজেটে বৈষম্য হ্রাস করার পথ এবং পদ্ধতিগুলো। বাজেট-তো একটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দলিল, এখানে বৈষম্যগুলো হ্রাস করার জন্য পদ্ধতিগুলো বাজেটের মধ্যে প্রতিফলিত হতে হবে। এই প্রতিপ্রফলনটা হওয়া উচিৎ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ রেখে। এই মোট কথা।’
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি থেকে আপনারা একটি বিকল্প বাজেট তুলে ধরেছিলেন, সেখানে যে ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সে প্রস্তাবনার আলোকে এই বাজেট কেমন হলে ভালো হতো?’ - এমন প্রশ্নে ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনার মধ্যে কতগুলো বিষয় ছিল, প্রথম ছিল- বাজেটের ব্যয় খাত কি কি হওয়া উচিৎ। বাজেটের ব্যয় খাতে আমরা পরিষ্কার করে বলেছিলাম যে, জনগণের যে জনচাহিদা- এই জনচাহিদাটা সংবিধানে যে জনচাহিদার কথা বলা আছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিৎ। সেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, সামাজিক নিরাপত্তা,কৃষি সংস্কার, ভূমি সংস্কার ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ। এগুলো ব্যয়ের খাত। দ্বিতীয় হচ্ছে আয়ের খাতে কতগুলো বিষয় থাকা উচিৎ। এর মধ্যে প্রধান চারটি বিষয় হচ্ছে- প্রথমত- সম্পদ কর, দ্বিতীয় হচ্ছে- অতিরিক্ত মুনাফার উপর কর, তৃতীয় হচ্ছে- কালো টাকা এবং তার থেকে প্রাপ্তি, অর্থাৎ কালো টাকা উদ্ধার করতে হবে। চতুর্থ হচ্ছে- অর্থ পাচার রোধ। এগুলো যদি করা হয়, এগুলো হচ্ছে আয়ের খাত। এই আয়ের খাতগুলো বাজেটে চিহ্নিত করা উচিৎ। এবারে এগুলো হচ্ছে কি হচ্ছে না আমি জানি না। যদি এগুলো চিহ্নিত করা হয়, তাহলে বাজেট একটা বৈষম্য নিরসনমুখী, জনগণের কল্যাণের জন্য একটা বাজেট হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সম্পদ, আয়, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা,আবাসন বৈষম্য নিরসনের জন্য এবারের বাজেট হওয়া উচিৎ। কতটুকু কি হচ্ছে তা আমি জানি না। এগুলো বাজেট পেশ করার পর বোঝা যাবে।’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদ
মন্তব্য করুন
‘বিষয়টায় কিছু অ্যাকশন নিতে হবে। আর ওই জায়গায় নিম্ন পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, যেখানে সম্মেলন করার সুযোগ আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই এবং এগুলো আহবায়ক কমিটি সবগুলোই। যেসব কমিটির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে- এরা সবাই আহবায়ক কমিটির লোক। অতএব দ্রুত সম্মেলন করে, যেগুলো বিশ্বাসঘাতক- এগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেই হবে। খুব সহজ কাজ। সম্মেলনের তারিখ দিয়ে এগুলোকে বাদ দিয়ে দিলেই হবে। কোনো সমস্যা নেই।’- বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
‘গাজীপুর নির্বাচন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে প্রকাশ্য রূপ দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আপনি এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে কি রকম চ্যালেঞ্জ মনে করেন এবং কোন্দলটা মোকাবেলায় কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন, আপনার পরামর্শ কি?’ -এমন প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণেই দলীয় প্রার্থীর নাটকীয় পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এসব বিষয় নিয়েই কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সঙ্গে। তিনি বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন এই নির্বাচনে পরাজয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা এবং এই কোন্দল নিরসনে কি করণীয়-সেসব কথা। পাঠকদের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার -এর নিজস্ব প্রতিনিধি।
মির্জা আজম বলেন, ‘এই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তারা নিজেরাও, এমপি, মন্ত্রী যারা আছে, তাদের সাথে নিয়ে একটা পর্যালোচনা বৈঠক সিরিজ, আসছে ১, ২, ৩ তারিখে করবে তারা।’
‘এটাতো হলো গাজীপুর। কিন্তু সারা বাংলাদেশেই এই রকম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই কোন্দলতো আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের একটা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা অনেক বড় দল। এ জায়গায় আসলে কোন্দলটা ঠিক ওইভাবে নাই। গাজীপুরের ব্যাপারটা একটু আলাদা, ভিন্ন। সে জায়গায় আমাদের একজন লোককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে মেয়র ছিল। সবকিছু মিলিয়েই এটা হয়েছে। কিন্তু অন্য জায়গায় যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেটা ছোটখাটো বিষয়। ওই জায়গায় বড় ধরনের কোনো কোন্দল নেই। নোমিনেশন যখন ঘোষণা হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, সবাই একসাথে কাজ করছে, কোনো বিষয় হবে না, ইনশাল্লাহ।’
‘একটা বিষয়- বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে এবং বিএনপি এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করবে বলে তারা জানিয়েছে- এ রকম অবস্থায় আপনাদের প্রস্তুতি কি?’ -এই প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘বিএনপি যেটা নিয়ে আন্দোলন করতেছিল, তাদের আন্দোলনতো এখন অটো ফল্ট করবে। কারণ হচ্ছে, তাদের যে প্রভু, সে প্রভু তাদের যা বলছে, সে অনুযায়ী তাদের আবার কিসের জন্য আন্দোলন। ওদের প্রভুরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করে নাই। তারা বলেছে, যারা নির্বাচনে বাধাদান করবে, তাদেরকেও তারা ভিসা দিবে না। আমরাতো- আমেরিকা যা চাচ্ছে, ওই ধাঁচেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকার পক্ষ থেকে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে ভিসা নীতিতে বিএনপি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য তারা বাধার সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন এক দফা বলেন, সাত দফা বলেন- কিসের জন্য আন্দোলন করবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার? আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেইতো। তাহলে তারা কি নিয়ে আন্দোলন করবে। অতএব, তারা এখন নির্বাচনে আসবে নাকে ক্ষত দিয়ে। কাজেই এই নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা তাদের জন্য এখন বুদ্ধিমানের কাজ।’
‘একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি কি মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে?’- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে- গাজীপুর নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে।’
‘বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়- তাহলে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে আপনারা জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০০৮ সালে, তখনতো কোনো বাধা দেওয়া হয় নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা ২৯ আসন পেয়েছে। এবার নির্বাচন করছে, সুন্দর। ২৯ দু’গুণে ৫৮ আসন পেতে পারে। এর বেশি আমরা আশা করি না।’
‘একটি কথা আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের প্রচুর প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। কারণ যারা গত দুইটা নির্বাচনে এমপি হয়েছেন, তারা অনেকেই এলাকায় যায় না।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘এটা নেত্রী প্রকাশ্যে মিটিংয়ের মধ্যে বলেছেন যে, এবারের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সজাগ থাকবেন এবং যারা এলাকায় জনপ্রিয়- তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে। যারা এলাকায় বিতর্কিত এবং দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে আত্মীয়-স্বজন এবং হাইব্রিডদের নিয়ে পুণর্বাসন করেছে, দলের মধ্যে আবার দল অ্যান্টি দল বানিয়েছে, তাদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না, নেত্রী বলে দিয়েছেন।’
‘গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে কি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো মূল্যায়ন করবে বা এটার ব্যাপারে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে?’- প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে-তো মূল্যায়ন হবেই। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সাথে কথাবার্তায়- তখনতো যার যার অভিমত ব্যক্ত করবেই। যদি সুযোগ থাকে আমরাও আমাদের অভিমত ব্যক্ত করবো। তবে ইতিমধ্যেই জেলার পক্ষ থেকে, মহানগরের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে পরাজয়ের বিভিন্ন মূল্যায়নটা আগামীকাল থেকে টানা তিন দিন- বিভিন্ন থানায় থানায় মিটিং করে, আমাদের এমপি, মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে, পর্যালোচনা করে মূল্যায়নটা করা হবে যে- কি কি কারণে, কি ব্যর্থতার কারণে আমরা ফেল করেছি।’
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম গাজীপুর নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এস এম কামাল হোসেন গাজীপুর সিটি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
‘আমাদের যে মূল্যস্ফীতি, গত বছরের যে বাজেট ছিল- তা ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, এই চলমান অর্থ বছরে। ওইটা ছিল প্রস্তাবিত বাজেট। এখন এবার যখন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী, তখন সেটা সংশোধীত বাজেট বলবেন। আগে যেটা বলা হয়েছিল, তার থেকে সংশোধীত বাজেটটা আসলে কত হলো? আমার ধারণা, যেটা সংশোধীত বাজেট হবে, যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল চলমান বছরে (২০২২-২৩)। সেখানে সংশোধীত বাজেটটা কম হবে, কত কম হবে-সেটা আমি জানি না। সেটার তুলনায় এখনকার বাজেটটা কত হবে সেটা এখনও আমি জানি না। তবে প্রকৃত মুল্যস্ফীতি যা আছে, সরকার যা বলছেন, সেটা প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না-ও হতে পারে। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি যা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নূন্যতম বাজেটটা সেরকম হওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে নূন্যতম বাজেটটা ৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। কিন্তু বাজেটটা হওয়া উচিৎ সম্প্রসারণশীল। তার মানে এর চাইতে অনেক বেশি। তবে কত বেশি হহওয়া উচিৎ সেটাও আমি জানি না।’ - বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত।
‘বিষয়টায় কিছু অ্যাকশন নিতে হবে। আর ওই জায়গায় নিম্ন পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, যেখানে সম্মেলন করার সুযোগ আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই এবং এগুলো আহবায়ক কমিটি সবগুলোই। যেসব কমিটির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে- এরা সবাই আহবায়ক কমিটির লোক। অতএব দ্রুত সম্মেলন করে, যেগুলো বিশ্বাসঘাতক- এগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেই হবে। খুব সহজ কাজ। সম্মেলনের তারিখ দিয়ে এগুলোকে বাদ দিয়ে দিলেই হবে। কোনো সমস্যা নেই।’- বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি এখন একটা ফানুসে পরিণত হয়েছে, একটা সার্কাসে পরিণত হয়েছে। তারা জনগণের যে অভিব্যক্তি, সেটা বুঝতে পারছে না। গাজীপুরের জনগণ একটি জিনিস প্রমাণ করেছে যে জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সংকল্পের সাথে তারা এক এবং অভিন্ন। যেকারণে বিএনপি এখন নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র জনগণ ব্যর্থ করে দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। ভোটাররা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে বিএনপিকে রেড কার্ড দেখাবে।
‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। যারা অপপ্রচার করেছিল, মিথ্যাচার করেছিল যে, এই সরকারের আমলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায় না। অতীতেও তাদের সে কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গাজীপুরের নির্বাচনে সেটা আরও মিথ্যা প্রমাণিত হলো যে, তারা যে অপ্রপচার করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে, নির্বাচন অবাধ হয় না, সুষ্ঠু হয় না, গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে- সেটা জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের এই মিথ্যাচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। তাদের মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছে।’- বলছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।