‘যে দৈনিকটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে পারে না। স্বাধীন দেশে থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করে কথা বলে, এ ধরনের কোনো গণমাধ্যম এই দেশে থাকার দরকার নেই। এই সরকারের আমলেই প্রথম আলো পত্রিকাটির নিবন্ধন প্রকাশ পায়। তখন থেকেই পত্রিকাটি এই সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করা শুরু করেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করা মানেই ধরে নিতে হবে, এই সরকারের পক্ষে না। আবার বিএনপিকেও সে মাইনাস করার চেষ্টা করেছে। প্রথম আলোর গতিবিধি প্রকাশ পাওয়াটা খুবই দুষ্কর ব্যাপার। আবার হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে নিয়ে কুটক্তি করেছে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটার জন্য আবার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার জন্য সরকারের কাছেও মাফ চায়নি, রাষ্ট্রের কাছেও মাফ চায়নি প্রথম আলো। এটা একটা দূরভিসন্ধি। তাদের হাত কতদূর লম্বা- তা সরকারকেই বের করতে হবে। আমরা চাই এরকম যেন না হয়। এরকম পত্রিকা আমরা চাই না।’- বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনু।
গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম আলো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ও চক্রান্তকারীদের শাস্তি চেয়ে মানব-বন্ধন করেছে স্বাধীনতা-সচেতন নাগিরক সমাজ। এই মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনু। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটাক্ষ করে একজন শিশুর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলো যে সংবাদ পরিবেশন করেছিল, তারই প্রতিবাদে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই মানববন্ধন নিয়েই কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনুর সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন দৈনিকটির স্বাধীনতা ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং দৈনিকটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা। পাঠকদের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের বিশেষ প্রতিনিধি আল মাসুদ নয়ন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল হক মিনু বলেন, যে দেশে থেকে দেশকে অমর্যাদা করবে, এটা আমরা চাই না। এরকম পত্রিকা আমরা চাই না, এরকম পত্রিকা আমাদের রাষ্ট্র যেন দ্রুত বাতিল করে- এটাই চাইব আমরা। কিছুদিন আগে একজন জঙ্গিকে এই পত্রিকা বীর বানিয়েছে। যে ব্যক্তিটি জঙ্গি ছিল, তাকে তারা বীর বানালো। এখন এদের ভাবমূর্তি বোঝা বড় মুশকিল। এরা কোন পথে চলছে, আমার ধারণা হয়, এদের হাতের সংখ্যা কতটুকু আছে, তা জানার দরকার নেই। কিন্তু সরকারকে সচেতন হতে হবে। সরকার যাতে এর হাতটাকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সরকার যেন দেশের স্বার্থে এই সংবাদপত্র থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে। এই পত্রিকা আমরা চাই না।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। আমরা চাই সংবাদপত্র দেশের কথা বলবে, দেশের দুঃখ-কষ্টের কথা বলবে। দেশে কোনো অন্যায় হলে, সে কথা বলবে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে দেশবিরোধী কোনো কথা বলা যাবে না।
আহসানুল হক মিনু বলেন, এই পত্রিকাটির উৎপত্তি কোথা থেকে? পাকিস্তানের একটি পত্রিকার সাথে যুক্ত হয়ে এই পত্রিকাটির উৎপত্তি। পাকিস্তানের ডন পত্রিকার অর্থ হচ্ছে ভোরের আলো। ডন অর্থ হচ্ছে ভোর, সুবহে সাদিক অর্থাৎ আধার কেটে যে আলোটা হয়, সেটা হচ্ছে ভোর। তার সাথে মিল রেখেই কিন্তু এই পত্রিকা প্রথম আলো। এদের সাথেও যুক্ত আছে এরা। আমার সোজাসুজি কথা, দেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস- এসব জাতীয় দিবসগুলোকে বিকৃত করা চলবে না।
তিনি বলেন, শিশু আইনে একটা নিয়ম আছে, শিশুকে নিয়ে যা-তা কিছু করা যায় না। শিশু আইন আছে, শিশুকে নিয়ে কাজ করতে হলে শিশু আইন মেনেই সেটা করতে হবে। একজন শিশুকে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলানোর চেষ্টা করা- এটা খুবই অন্যায়। সেই কাজটিই করেছে এই পত্রিকা। সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো, এই পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল করা উচিৎ। যারা এ ধরনের কাজ করে, এই কাজের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে সরকার। কারণ এই পত্রিকার নিবন্ধন দিয়েছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই যদি কাজ করে, তবে রাষ্ট্র সে বিষয়ে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নিবে। যে কারণে এর প্রকাশনাকে বাতিল করতে পারে। জার্মানিতে যেরকম একটি পত্রিকা জার্মানির বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, সে পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল করেছিল জার্মান সরকার। এরকম পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনু বলেন, প্রথম আলো বাইরে থেকে শিল্পীদের বিভিন্ন উন্নয়ন করছে দেখা গেলেও তারা শিল্পীদের অকল্যাণে কাজ করে। কল্যাণ কোরাইয়া নামের একজন অভিনয় শিল্পীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানোর মূলে প্রথম আলো। এ কারণে কল্যাণ কোরাইয়ার বাবাও দুঃখে-কষ্টে, অপমানে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এই সংবাদপত্রটিকে আইনের আওতায় আনা দরকার বলেই আমি মনে করি এবং এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় শিল্পী আহসানুল হক মিনু প্রথম আলো
মন্তব্য করুন
‘আমাদের যে মূল্যস্ফীতি, গত বছরের যে বাজেট ছিল- তা ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, এই চলমান অর্থ বছরে। ওইটা ছিল প্রস্তাবিত বাজেট। এখন এবার যখন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী, তখন সেটা সংশোধীত বাজেট বলবেন। আগে যেটা বলা হয়েছিল, তার থেকে সংশোধীত বাজেটটা আসলে কত হলো? আমার ধারণা, যেটা সংশোধীত বাজেট হবে, যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল চলমান বছরে (২০২২-২৩)। সেখানে সংশোধীত বাজেটটা কম হবে, কত কম হবে-সেটা আমি জানি না। সেটার তুলনায় এখনকার বাজেটটা কত হবে সেটা এখনও আমি জানি না। তবে প্রকৃত মুল্যস্ফীতি যা আছে, সরকার যা বলছেন, সেটা প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না-ও হতে পারে। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি যা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নূন্যতম বাজেটটা সেরকম হওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে নূন্যতম বাজেটটা ৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। কিন্তু বাজেটটা হওয়া উচিৎ সম্প্রসারণশীল। তার মানে এর চাইতে অনেক বেশি। তবে কত বেশি হহওয়া উচিৎ সেটাও আমি জানি না।’ - বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। গতকাল বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার কেমন হওয়া উচিৎ, অর্থনৈতিক মন্দা নিরসন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর সম্পদ, আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আবাসন, কর্মসংস্থানসহ সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে এবারের বাজেটের আকার কেমন হওয়া প্রয়োজন- এসব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত- এর সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন এবারের বাজেট সম্পর্কে। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের বিশেষ প্রতিনিধি আল মাসুদ নয়ন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে বৈষম্য। বৈষম্যের মধ্যে সম্পদ বৈষম্য, আয় বৈষম্য, পুষ্টি বৈষম্য। পুষ্টি বৈষম্য বলতে আমি বলছি, মানুষ সম্ভবত গত এক বছরে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম- এগুলো ভোগ কমিয়েছেন। এগুলো যেন মানুষ আগের মতোই ভোগ করতে পারেন। তাহলে পুষ্টি বৈষম্য আগের মতোই হবে। সেগুলো যদি ঠিক রাখি- তার সঙ্গে, স্বাস্থ্য বৈষম্য, শিক্ষা বৈষম্য, আবাসন বৈষম্য- এগুলো যদি বিচার করা হয়, তাহলে আদর্শগতভাবে বাজেটটা হওয়া উচিত- এখন যে বাজেটটা আছে- ৬ লক্ষ্য ৭৮ হাজার কোটি টাকা, এটা অনেক বেশি হওয়া উচিৎ। এটা কত বেশি হবে সেটা আমি এখনও জানি না।’
তিনি বলেন, ‘তবে নীতিগতভাবে বৈষম্য যদি প্রধান বিষয় হয়ে থাকে, দ্রব্যমূল্য যদি বড় বিষয় হয়ে থাকে, তবে বাজেটটা অনেক বড় হওয়া দরকার- এটা হলো এক নম্বর বিষয়। দ্বিতয়ত হলো, এই বাজেটে বৈষম্য হ্রাস করার পথ এবং পদ্ধতিগুলো। বাজেট-তো একটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দলিল, এখানে বৈষম্যগুলো হ্রাস করার জন্য পদ্ধতিগুলো বাজেটের মধ্যে প্রতিফলিত হতে হবে। এই প্রতিপ্রফলনটা হওয়া উচিৎ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ রেখে। এই মোট কথা।’
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি থেকে আপনারা একটি বিকল্প বাজেট তুলে ধরেছিলেন, সেখানে যে ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সে প্রস্তাবনার আলোকে এই বাজেট কেমন হলে ভালো হতো?’ - এমন প্রশ্নে ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনার মধ্যে কতগুলো বিষয় ছিল, প্রথম ছিল- বাজেটের ব্যয় খাত কি কি হওয়া উচিৎ। বাজেটের ব্যয় খাতে আমরা পরিষ্কার করে বলেছিলাম যে, জনগণের যে জনচাহিদা- এই জনচাহিদাটা সংবিধানে যে জনচাহিদার কথা বলা আছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিৎ। সেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, সামাজিক নিরাপত্তা,কৃষি সংস্কার, ভূমি সংস্কার ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ। এগুলো ব্যয়ের খাত। দ্বিতীয় হচ্ছে আয়ের খাতে কতগুলো বিষয় থাকা উচিৎ। এর মধ্যে প্রধান চারটি বিষয় হচ্ছে- প্রথমত- সম্পদ কর, দ্বিতীয় হচ্ছে- অতিরিক্ত মুনাফার উপর কর, তৃতীয় হচ্ছে- কালো টাকা এবং তার থেকে প্রাপ্তি, অর্থাৎ কালো টাকা উদ্ধার করতে হবে। চতুর্থ হচ্ছে- অর্থ পাচার রোধ। এগুলো যদি করা হয়, এগুলো হচ্ছে আয়ের খাত। এই আয়ের খাতগুলো বাজেটে চিহ্নিত করা উচিৎ। এবারে এগুলো হচ্ছে কি হচ্ছে না আমি জানি না। যদি এগুলো চিহ্নিত করা হয়, তাহলে বাজেট একটা বৈষম্য নিরসনমুখী, জনগণের কল্যাণের জন্য একটা বাজেট হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সম্পদ, আয়, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা,আবাসন বৈষম্য নিরসনের জন্য এবারের বাজেট হওয়া উচিৎ। কতটুকু কি হচ্ছে তা আমি জানি না। এগুলো বাজেট পেশ করার পর বোঝা যাবে।’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদ
মন্তব্য করুন
‘বিষয়টায় কিছু অ্যাকশন নিতে হবে। আর ওই জায়গায় নিম্ন পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, যেখানে সম্মেলন করার সুযোগ আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই এবং এগুলো আহবায়ক কমিটি সবগুলোই। যেসব কমিটির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে- এরা সবাই আহবায়ক কমিটির লোক। অতএব দ্রুত সম্মেলন করে, যেগুলো বিশ্বাসঘাতক- এগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেই হবে। খুব সহজ কাজ। সম্মেলনের তারিখ দিয়ে এগুলোকে বাদ দিয়ে দিলেই হবে। কোনো সমস্যা নেই।’- বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
‘গাজীপুর নির্বাচন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে প্রকাশ্য রূপ দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আপনি এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে কি রকম চ্যালেঞ্জ মনে করেন এবং কোন্দলটা মোকাবেলায় কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন, আপনার পরামর্শ কি?’ -এমন প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণেই দলীয় প্রার্থীর নাটকীয় পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এসব বিষয় নিয়েই কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সঙ্গে। তিনি বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন এই নির্বাচনে পরাজয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা এবং এই কোন্দল নিরসনে কি করণীয়-সেসব কথা। পাঠকদের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার -এর নিজস্ব প্রতিনিধি।
মির্জা আজম বলেন, ‘এই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তারা নিজেরাও, এমপি, মন্ত্রী যারা আছে, তাদের সাথে নিয়ে একটা পর্যালোচনা বৈঠক সিরিজ, আসছে ১, ২, ৩ তারিখে করবে তারা।’
‘এটাতো হলো গাজীপুর। কিন্তু সারা বাংলাদেশেই এই রকম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই কোন্দলতো আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের একটা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা অনেক বড় দল। এ জায়গায় আসলে কোন্দলটা ঠিক ওইভাবে নাই। গাজীপুরের ব্যাপারটা একটু আলাদা, ভিন্ন। সে জায়গায় আমাদের একজন লোককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে মেয়র ছিল। সবকিছু মিলিয়েই এটা হয়েছে। কিন্তু অন্য জায়গায় যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেটা ছোটখাটো বিষয়। ওই জায়গায় বড় ধরনের কোনো কোন্দল নেই। নোমিনেশন যখন ঘোষণা হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, সবাই একসাথে কাজ করছে, কোনো বিষয় হবে না, ইনশাল্লাহ।’
‘একটা বিষয়- বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে এবং বিএনপি এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করবে বলে তারা জানিয়েছে- এ রকম অবস্থায় আপনাদের প্রস্তুতি কি?’ -এই প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘বিএনপি যেটা নিয়ে আন্দোলন করতেছিল, তাদের আন্দোলনতো এখন অটো ফল্ট করবে। কারণ হচ্ছে, তাদের যে প্রভু, সে প্রভু তাদের যা বলছে, সে অনুযায়ী তাদের আবার কিসের জন্য আন্দোলন। ওদের প্রভুরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করে নাই। তারা বলেছে, যারা নির্বাচনে বাধাদান করবে, তাদেরকেও তারা ভিসা দিবে না। আমরাতো- আমেরিকা যা চাচ্ছে, ওই ধাঁচেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকার পক্ষ থেকে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে ভিসা নীতিতে বিএনপি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য তারা বাধার সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন এক দফা বলেন, সাত দফা বলেন- কিসের জন্য আন্দোলন করবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার? আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেইতো। তাহলে তারা কি নিয়ে আন্দোলন করবে। অতএব, তারা এখন নির্বাচনে আসবে নাকে ক্ষত দিয়ে। কাজেই এই নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা তাদের জন্য এখন বুদ্ধিমানের কাজ।’
‘একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি কি মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে?’- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে- গাজীপুর নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে।’
‘বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়- তাহলে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে আপনারা জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০০৮ সালে, তখনতো কোনো বাধা দেওয়া হয় নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা ২৯ আসন পেয়েছে। এবার নির্বাচন করছে, সুন্দর। ২৯ দু’গুণে ৫৮ আসন পেতে পারে। এর বেশি আমরা আশা করি না।’
‘একটি কথা আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের প্রচুর প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। কারণ যারা গত দুইটা নির্বাচনে এমপি হয়েছেন, তারা অনেকেই এলাকায় যায় না।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘এটা নেত্রী প্রকাশ্যে মিটিংয়ের মধ্যে বলেছেন যে, এবারের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সজাগ থাকবেন এবং যারা এলাকায় জনপ্রিয়- তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে। যারা এলাকায় বিতর্কিত এবং দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে আত্মীয়-স্বজন এবং হাইব্রিডদের নিয়ে পুণর্বাসন করেছে, দলের মধ্যে আবার দল অ্যান্টি দল বানিয়েছে, তাদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না, নেত্রী বলে দিয়েছেন।’
‘গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে কি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো মূল্যায়ন করবে বা এটার ব্যাপারে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে?’- প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে-তো মূল্যায়ন হবেই। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সাথে কথাবার্তায়- তখনতো যার যার অভিমত ব্যক্ত করবেই। যদি সুযোগ থাকে আমরাও আমাদের অভিমত ব্যক্ত করবো। তবে ইতিমধ্যেই জেলার পক্ষ থেকে, মহানগরের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে পরাজয়ের বিভিন্ন মূল্যায়নটা আগামীকাল থেকে টানা তিন দিন- বিভিন্ন থানায় থানায় মিটিং করে, আমাদের এমপি, মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে, পর্যালোচনা করে মূল্যায়নটা করা হবে যে- কি কি কারণে, কি ব্যর্থতার কারণে আমরা ফেল করেছি।’
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম গাজীপুর নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এস এম কামাল হোসেন গাজীপুর সিটি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
‘আমাদের যে মূল্যস্ফীতি, গত বছরের যে বাজেট ছিল- তা ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, এই চলমান অর্থ বছরে। ওইটা ছিল প্রস্তাবিত বাজেট। এখন এবার যখন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী, তখন সেটা সংশোধীত বাজেট বলবেন। আগে যেটা বলা হয়েছিল, তার থেকে সংশোধীত বাজেটটা আসলে কত হলো? আমার ধারণা, যেটা সংশোধীত বাজেট হবে, যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল চলমান বছরে (২০২২-২৩)। সেখানে সংশোধীত বাজেটটা কম হবে, কত কম হবে-সেটা আমি জানি না। সেটার তুলনায় এখনকার বাজেটটা কত হবে সেটা এখনও আমি জানি না। তবে প্রকৃত মুল্যস্ফীতি যা আছে, সরকার যা বলছেন, সেটা প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না-ও হতে পারে। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি যা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নূন্যতম বাজেটটা সেরকম হওয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে নূন্যতম বাজেটটা ৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। কিন্তু বাজেটটা হওয়া উচিৎ সম্প্রসারণশীল। তার মানে এর চাইতে অনেক বেশি। তবে কত বেশি হহওয়া উচিৎ সেটাও আমি জানি না।’ - বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত।
‘বিষয়টায় কিছু অ্যাকশন নিতে হবে। আর ওই জায়গায় নিম্ন পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, যেখানে সম্মেলন করার সুযোগ আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই এবং এগুলো আহবায়ক কমিটি সবগুলোই। যেসব কমিটির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে- এরা সবাই আহবায়ক কমিটির লোক। অতএব দ্রুত সম্মেলন করে, যেগুলো বিশ্বাসঘাতক- এগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেই হবে। খুব সহজ কাজ। সম্মেলনের তারিখ দিয়ে এগুলোকে বাদ দিয়ে দিলেই হবে। কোনো সমস্যা নেই।’- বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি এখন একটা ফানুসে পরিণত হয়েছে, একটা সার্কাসে পরিণত হয়েছে। তারা জনগণের যে অভিব্যক্তি, সেটা বুঝতে পারছে না। গাজীপুরের জনগণ একটি জিনিস প্রমাণ করেছে যে জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সংকল্পের সাথে তারা এক এবং অভিন্ন। যেকারণে বিএনপি এখন নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র জনগণ ব্যর্থ করে দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। ভোটাররা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে বিএনপিকে রেড কার্ড দেখাবে।
‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। যারা অপপ্রচার করেছিল, মিথ্যাচার করেছিল যে, এই সরকারের আমলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায় না। অতীতেও তাদের সে কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গাজীপুরের নির্বাচনে সেটা আরও মিথ্যা প্রমাণিত হলো যে, তারা যে অপ্রপচার করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে, নির্বাচন অবাধ হয় না, সুষ্ঠু হয় না, গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে- সেটা জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের এই মিথ্যাচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। তাদের মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছে।’- বলছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।