নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২১
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, একজন বিচারকের রায় শতভাগ সঠিক হবে, এটা ধারণা করাই ভুল। একজন বিচারকের রায় অনেক সময় কিছুটা ভুল হতে পারে। কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভুলও হতে পারে। তবে তিনি যে রায় দিয়েছেন সেটা আমাদের বিচার ব্যবস্থা বা ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মৌলিক নীতির পরিপন্থি। কারণ ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে, অপরাধের কোন তামাদি হয় না। অপরাধ সংঘটিত হলে মামলা করার ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। অপরাধের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই একটা মৌলিক নীতি হচ্ছে, অপরাধের ক্ষেত্রে কোন ধরনের তামাদি হয় না, অর্থাৎ তামাদি আইন তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।
সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া বিচারকের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতিকে আইনমন্ত্রীর দেয়া চিঠি সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, তামাদি আইন সাধারণত দেওয়ানী বিষয়ে প্রযোজ্য হয়। আইনের দুইটা শাখা, ফৌজদারি ও দেওয়ানী। দেওয়ানী হচ্ছে অধিকার সংক্রান্ত, এটা সম্পত্তি হতে পারে, চাকরী হতে পারে, অর্থ হতে পারে। আর ফৌজদারি হচ্ছে অপরাধ সংক্রান্ত, কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তার ন্যায়বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত। অপরাধ আইনে, যেটাকে আমরা ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম বলি, সেখানে তামাদির কোন সুযোগ নাই এবং তামাদিও নাই। ফৌজদারি আইনে ১০০ বছর পরেও বিচার হতে পারে। যেমন- বঙ্গবন্ধু হত্যায় মামলাই হয়েছে ২১ বছর পরে। ১৯৭৫ সালের পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মামলাই গ্রহণ করা হয়নি। সুতরাং এমন তিনদিনের মধ্যে, সাতদিনের মধ্যে ধর্ষণের জন্য মামলা করতে হবে, নাহলে নেয়া যাবে না এটা আইনের মৌলিক নীতির পরিপন্থি। একজন জেলা জজের এইটুকু আইনী জ্ঞান না থাকলে সে কিসের বিচারক? এখানে পুরো সিস্টেমটাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকারান্তরে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে। এই রায়ে তো ধর্ষকদের আরো প্রমোট করা হয়েছে, তাদের আরো সুযোগ করে দেয়া হলো। একজন জেলা জজের রায় যে সবাই গ্রহণ করবে তা তো নয়। এই অবজারভেশন যদি আপিল বিভাগ থেকে করা হতো তাহলে একটা কথা ছিল। আমি আশ্চর্য হয়েছি, একজন বিচারক এমন উদ্ভট, ভয়ংকর, মধ্যযুগীর রায় কিভাবে দেয়?
সেলিম মাহমুদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা স্থগিত করেছে। পাশাপাশি সরকারও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনমন্ত্রী মহোদয় এই বিচারপতির বিচারিক ক্ষমতা স্থগিত রাখার জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন। কেননা এই রায়ের ফলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এ ভূমিকা রাখার জন্য আইনমন্ত্রীকে আমি বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই বিষয়ে সরকার যথার্থ কাজ করেছে, তা বলতেই হবে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টও সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যথার্থ কাজ করেছেন। সরকার এই কাজটি করেছে মূলত পাবলিক পারসেপশানের কারণে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিচারিক স্থিতিশীলতাসহ ন্যায় বিচারের বিষয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতির পরিবর্তে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। সুতরাং তার সরকারের সময় বিচার বিভাগ নিয়ে এ ধরণের অস্থিরতা সরকার গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণেই সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন। এর ফলে সরকার যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্টও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বলবো এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও তড়িৎ গতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। তারাও জনমতের এবং সরকারের মতামতকে প্রধান্য দিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। আমি মনে করি যে এটাও ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন সম্পর্কিত জনগণের যে প্রত্যাশা, সে প্রত্যাশার অনেকটা পূরণ হয়েছে। একজন বিচারক ভুল করতেই পারে। তবে এত বড় ভুল কাম্য নয়। কিন্তু ভুল শোধরানোর ব্যবস্থাও আছে। বিচারক যদি কোনো ধরণের ভুল রায় দিয়ে থাকে উচ্চতর আদালত রয়েছে সেগুলো সংশোধনের জন্য। এটা কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় ছিল না। এটা ছিল জেলা জজ আদালতের। তার উপর হাইকোর্ট বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ রয়েছে। দুটো স্তর রয়েছে। তার পরে আবার রিভিয়্যু রয়েছে। এতে করে আমাদের সার্বিক ন্যায় বিচার প্রত্যাশার জায়গাটি কোনো ভাবেই বাধাগ্রস্থ হবে না।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমি এর কোনো সম্ভাবনা দেখি না। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর যে সন্দেহের প্রাচীর তৈরি হয়েছে তাতে সে সম্ভাবনা নেই। তবে এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল শেষ চেষ্টা হিসেবে তফসিল পেছানোর জন্য তৎপরতা চালাতে পারে। কিন্তু তফসিল পেছানোর নামে যদি আবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে কেউ প্রশ্ন বিদ্ধ করে ফেলে তাহলে আরেকটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কাজেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ বিপন্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তবে তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা দেখি না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি জনমত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যায় তাহলে চলমান যে সংঘাতময় পরিবেশ চলছে সেটাকে আরও উস্কে দেওয়া হবে। সেটা সাধারণ জনগণের জন্যও ভালো হবে না, সরকারের জন্যও ভালো হবে না। দেশের সাধারণ মানুষ এখন একটা সংকটের মধ্যে আছে। দ্রব্যমূল বৃদ্ধি সহ দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা আগামীতে অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্রতর করতে পারে এমন আভাস অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জনমত উপক্ষো করে এবং নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকাণ্ড যেমন গ্রহণযোগ্য হবে তেমনি আমাদের দেশের সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যেভাবে আমেরিকা চাচ্ছিল যে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতও যেন আমেরিকার সাথে একই সুরে কথা বলে কিন্তু সেটা যে হবে না তা পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত যে আমেরিকার কথা শুনবে না সেটি তারা স্পষ্ট করেছে। এখন আমেরিকা কি করবে সেটা তারা ভালো জানে। তবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমেরিকা সারা বিশ্বের মধ্যে প্রচন্ড সমালোচনার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ইস্যুতে তারা প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। আমেরিকা তার নিজ দেশেই প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, অনেক দিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। রাস্তা-ঘাট বন্ধ না করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। সাধারণত নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কি করবে না করবে, নির্বাচনী ইশতেহার কেমন হবে ইত্যাদি। কিন্তু রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে হরতাল-অবরোধ করা কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর উচিত না।