ইনসাইড থট

বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ – অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক


Thumbnail বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ – অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক

প্রায় সতেরো বছর আগের ঘটনা। ড্রয়িংরুমে বসে অস্ট্রেলিয়ান বন্ধুদের সাথে টেলিভিশন দেখছি। আফ্রিকান কোন একটা শহরের ছবিতে কয়েকটা ইটের তৈরি ভবনের ছবি দেখে এক অস্ট্রেলিয়ান বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, বাংলাদেশে এরকম ভবন আছে? বন্ধুর প্রশ্নে আমি খুব একটা অবাক হই নি। কারণ তখন অধিকাংশ অস্ট্রেলিয়ানের কাছে বাংলাদেশ মানে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ-কবলিত দরিদ্র একটা দেশ।

এখন দিন বদলেছে। সারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইমেজ বদলে গেছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়ন বিস্ময়! অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নের সকল সূচকে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে।  বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন বাংলাদেশের অভাবিত এই উন্নয়নের রহস্য উন্মোচনে বিশ্ব উন্মুখ, আরেকদিকে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নেও অনেক দেশের আগ্রহ বেড়েছে। এই তালিকায় এখন যোগ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাম।

পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়নের সকল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কটা যেন তার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌছাতে পারছিল না। এই নিয়ে দুই দেশেরই পারস্পরিক আগ্রহে বোধ হয় ঘাটতি ছিল।  অথচ পশ্চিমা বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াই স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ওডারল্যান্ডকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশী যিনি মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাব উপাধি পেয়েছিলেন।  তবে আশার কথা হলো, গত কয়েকবছরে এই সম্পর্কের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান সরকারসহ নীতিনির্ধারকদের ধারণা অনেক বদলে গেছে।  দুইদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এখন নিয়মিত যোগাযোগ হয়। গত ৩১ অক্টোবরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হওয়া  জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। এই সাক্ষাতটা অস্ট্রেলিয়ার অনরোধের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগে যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও ট্রেডের (ডিফাট) বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারটাই মূলত উল্লেখ থাকতো, সেখানে ২০২০-২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ‘কী পার্টনার কান্ট্রি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই একই প্রতিবেদনে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, নেপাল এবং পাকিস্তান সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে মানবাধিকার ও মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিনিয়োগে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ বেড়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক এই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়া গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা)’ শীর্ষক একটা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভবিষ্যতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজ, অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউট, লোয়ি ইন্সটিটিউটের মত বিখ্যাত নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোও আজকাল বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছে। এদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি একাধিক নিবন্ধ লেখা হয়েছে। ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে ডিফেন্স অ্যাটাশের অফিস খোলার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে। এছাড়াও শিক্ষাখাত, ভিসা সহজীকরণ, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক আমদানিসহ বহুমুখী খাতে দুইদেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সিডনি-ঢাকা সরাসরি বিমান যোগাযোগের ব্যাপারেও আমাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।  এসব কিছুই বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের উন্নতিকেই নির্দেশ করে।

দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্ক উন্নয়নের মূলে রয়েছে দুই দেশেরই সরকারী পর্যায়ে এ ব্যাপারে আগ্রহ। বিশেষ করে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্ট্রেলিয়া সফরের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্ক বিনির্মাণের প্রচেষ্টাগুলো অধিক গতি পায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আর এই সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত কাজি ইমতিয়াজ হোসেন এবং বর্তমান রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ক্যানবেরায় সরকারী অফিসে কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার কাছে আমি শুনেছি, আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান অস্ট্রেলিয়ান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরার ব্যাপারে এবং স্বার্থরক্ষায় খুবই তৎপর। তার এই কর্মতৎপরতার ফলও আমরা পাচ্ছি। কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে সুফিউর রহমান বলছিলেন, ‘ড. মিল্টন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের তত্ত্বাবধানে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আপনারা তার কিছু ফলও পেয়েছেন। আরো অনেকগুলো বীজ রোপন করেছি, তারও ফল ইনশাআল্লাহ আপনারা দ্রুত পাবেন।’  

রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানের কথার প্রতিফলন আমরা অস্ট্রেলিয়ায় বসে দেখতে পাচ্ছি।  কেবল অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কই নয়, আমরা বাংলাদেশের দূতাবাসের নিয়মিত কর্মকাণ্ডেও অনেক পরিবর্তন দেখছি। দূতাবাসের সেবামূলক কর্মকাণ্ড আগের চাইতে অনেক বেশী পেশাদারীত্বপূর্ণ ও সন্তোষজনক হয়েছে। তাদের কাজের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাও অনেক বেড়েছে। জবাবদিহিতার অংশ হিসাবে ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে আগের মাসের কনসুলার সেবার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। সাম্প্রতিক একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাঁচ হাজারের বেশী মেশিন রিডাবল পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৯.৪ ভাগ আবেদনেরই সফল নিষ্পত্তি হয়েছে।  যে বত্রিশটা পাসপোর্ট আবেদন সফল হয় নি, সেটাও বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান আইনের আবশ্যকতা পূরণ না করার কারণে হয় নি।  অতীতে আমরা দূতাবাসের কন্সুলার কর্মকাণ্ডে কিছুটা অনিয়ম লক্ষ্য করেছি, যা বর্তমান রাষ্ট্রদূত এসে কঠোর হাতে দমন করেছেন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাসের একটা নিজস্ব ভবন হবে। আমাদের সেই আশাও আজ পূর্ণ হবার একেবারে দ্বারপ্রান্তে, আশা করি অচিরেই এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সিডনিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সম্পত্তি সিডনিতে দূতাবাসের একটা অফিস খোলা হয়েছে।  সিডনির কনসুলেটটার অবস্থান ও কার্যক্রম ইতোমধ্যেই কমিউনিটির প্রশংসা অর্জন করেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরেও নিয়মিত কন্সুলার ক্যাম্প আয়োজন করা হচ্ছে, যার ফলে বাঙালি কমিউনিটি উপকৃত হচ্ছে।

আজ অস্ট্রেলিয়া দিবস। আর্থর ফি-লিপের নেতৃত্বে ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি সিডনির জলসীমায় বৃটিশ পতাকাবাহী যে প্রথম নৌবহরটা এসেছিলো, সেটাই অস্ট্রেলিয়ায় বৃটিশ উপনিবেশের সূচনা করেছিল। এই দিনটাকেই বর্তমানে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া দিবস উপলক্ষে পালন করা হয়।  যদিও আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানসহ অনেকেই এই দিনটাকে অস্ট্রেলিয়া দিবসের পরিবর্তে ‘ইনভেশন ডে’ বা দখলদারিত্বের দিন হিসেবে মনে করেন।  আপাতত এই বিতর্কে না গিয়েও প্রশান্তপাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে সবাইকে এই বিশেষ দিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা। বাংলাদেশ – অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তিতে আমরা আশা করবো, আগামীতে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের আরো উন্নতি হবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার সক্রিয় অংশীদার হিসেবেও বাংলাদেশের সম্মান উজ্জ্বলতর হবে। চিয়ার্স মেটস।

বাংলাদেশ   অস্ট্রেলিয়া   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

যাঁর আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ


Thumbnail

নিপীড়িত, নিষ্পেষিত আর অধিকার বঞ্চিত বাঙালিকে নির্মম শাসন- শোষণ, অমানবিক নির্যাতন,সর্বোপরি দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে যিনি মুক্ত করেছিলেন, তিনিই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের এই সুজলা - সুফলা, শস্য - শ্যামলা স্বাধীন দেশটি তাঁরই স্বপ্নের ফসল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের আজকের দিনে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন।আজ জাতির পিতার  ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী।  তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন। মাতা সায়েরা খাতুন। এই দম্পতির চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী;তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

টুঙ্গিপাড়া নামক  অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম নেয়া শেখ পরিবারের সেই ছোট্ট খোকাই হয়ে উঠেছেন একটি জাতির মুক্তির মহানায়ক।

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের ইতিহাস। ২৩ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম ও দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের সোনালি অর্জন স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ডানাতে  ভর করেই বাঙালি বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের জন্মভূমিকে জায়গা করে দিয়েছে। পরাধীনতার এই শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার অদম্য সাহস জুগিয়েছিলেন জাতির পিতা।  রাজনৈতিক জীবনের প্রথম লগ্ন থেকেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন দেশের জন্য। দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই ছিল তার প্রধান ব্রত। তাঁর এই দেশপ্রেম তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত করে বিশ্বব্যাপী। ৫৫ বছরের সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। যা তাঁর জীবনের সিকিভাগ। জেল-জুলুমের অমানবিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এবং ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে তিনি পরিণত হন জাতির জনক ও বিশ্ব নেতৃত্বে।জাতির পিতার সমগ্র শৈশব পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তিনি তাঁর শৈশব অতিবাহিত করেছেন এ বাংলার জল, কাদা আর পানিতে।মানুষের অত্যন্ত কাছাকাছি থেকেছেন সেই শিশুকাল থেকেই।শৈশব থেকেই তিনি মানুষের হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।যার প্রতিফলন আমরা তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে লক্ষ্য করি।   শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু উপাধি পান। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বলেন, '... জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি ... আজ থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশ।'৭১- এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁরঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন - "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম;এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"। বঙ্গবন্ধুর ঐ ডাকে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে প্রস্তুত হয়েছিল।তাঁরই প্রেরণায় এবং বজ্রকণ্ঠে অনুপ্রাণিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালি আমজনতা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।  ২৬ মার্চ পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সাগরে উদিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য। কয়েক লক্ষ মা-বোনের লুণ্ঠিত সম্ভ্রম ও কোলশূন্য আর্তনাদে বিষাদময় আকাশে-বাতাসে উড্ডীন হয় স্বাধীন সোনার বাংলার লাল সবুজের পতাকা।

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি মুক্তি লাভ করল। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার তাদের কারাগারে রাখতে পারল না। বন্দিজীবন থেকে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্যই হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পাকি সরকারের বন্দিশালা থেকে সদ্য মুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন-  " আপনি যে আপনার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন সেই দেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপ! তখন বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, "আমার বাংলার মানুষ যদি থাকে, বাংলার মাটি যদি থাকে, একদিন এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই আমি আমার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শস্য- শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব"।

বঙ্গবন্ধু সারাটি জীবন দেশের  মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের তাগিদে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি মনে - প্রাণে চেয়েছিলেন এদেশের খেটে খাওয়া,মেহনতি  মানুষ যেন সুখে থাকে, পেটে অন্ন থাকে, হাতে পয়সা থাকে। এককথায় বাঙালির জীবন যেন হাসি- খুশিতে ভরপুর থাকে। বঙ্গবন্ধু এমন একজন স্বাপ্নিক সত্ত্বা যিনি স্বপ্ন দেখতেন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্জন দিয়ে সাফল্য লাভ করবে। এমনকি পৃথিবীর বুকে নিজস্ব - অর্জন, সম্পদ,কৃতিত্ব দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। জাতির পিতা শোষণহীন- বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত ভাবতেন বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। দারিদ্র্যের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে, বেকারত্ব ঘুঁচে যাবে,সমূলে উৎপাটন হবে  দুর্নীতির বিষদাঁত।সদ্য স্বাধীন দেশকে সোনার বাংলায় পরিনত করতে স্বপ্ন দেখেছেন।উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করতে বহুমুখী পরিকল্পনাও করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু চিরকাল মানুষকে  যোগ্য  সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার কথা অকপটে বলে গেছেন। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করতে তাইতো বলেছেন, "এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে,পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো আত্মা তৃপ্তি পাবে। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করা খুব জরুরি "।শেখ মুজিবুর রহমান আপাদমস্তক একজন সত্যিকারের বীর বাঙালি। তিনি চেয়েছিলেন সম্মানের সঙ্গেই  বাঙালি জাতি বেঁচে থাকবে। বাংলার  মানুষ প্রতিনিয়ত  বিভিন্ন ভাবে প্রাপ্ত সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে  অফিস,আদালতসহ সরকারি - বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে। সাধারণ জনগণ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন  কর্মচারীর কাছে ইদানিং যেভাবে অপদস্থ হচ্ছে সেটা জাতির পিতাও  পছন্দ করতেন না।তাঁর এই উক্তিতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। " সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করে বলেন, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন"।

বঙ্গবন্ধু বাংলার সাধরণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলে কখনো স্বাভাবিক থাকতেন না। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর,চোরাকারবারীদের কারণে বাংলার সহজ সরল মানুষগুলো যখন দুর্ভোগ পোহায় তখন অভিভাবক হয়ে এটা মানতে পারতেন না। তাই তো তিনি বলেছিলেন, " দীর্ঘ ৩ বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি,আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরে নাহি শুনে  ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আর না। বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই"।বঙ্গবন্ধু এমনই ছিলেন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর মন হু হু কাঁদত।বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেছিলেন, " আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।জনগণের ভোটে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চালায়, এর মধ্যে কারও কোনো হাত থাকা উচিত নয়"।

যুগে যুগে ধর্ম নিয়ে বহুদেশে হানাহানি,সংঘাত,রক্তপাত এমনকি জীবনও দিতে হয়েছে মানুষকে। জাতির জনক সবসময় একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। " আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়।মুসলমান তার ধর্ম- কর্ম করবে, হিন্দু তার ধর্ম- কর্ম পালন করবে বুদ্ধিস্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না"।বাঙালি এই কথায় বঙ্গবন্ধুর চোখে  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্নই দেখতে পেয়েছিল।  বাংলা,বাংলার ইতিহাস ও শেখ মুজিবুর রহমান তিনটি অবিচ্ছিন্ন সত্ত্বা। একটি ছাড়া অন্যটি যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি একটি ছাড়া অন্যটি ব্যাখ্যা করা যায় না।অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেন নি।বঙ্গবন্ধু যে সবসময়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন, তা ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি শাসকদের মদতে পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষ করে ঢাকায় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।সেই দাঙ্গাতে হিন্দু পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়ার মাধ্যমে তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিচয় আমরা পাই । এই যে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারীদের সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা এগুলো অসাম্প্রদায়িকতার চমৎকার উদাহরণ। বাংলার কৃষক,মজুর আজ বেশি লাঞ্চিত ও অবহেলিত। একশ্রেণির মুনাফালোভী, কালোবাজারী স্বার্থান্বেষী মহলের ন্যায্য মূল্য না দেয়া নামক  বিষাক্ত ছোবলে অতিষ্ঠ আমার কৃষক ভাইয়েরা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা সেদিনই হবে  যেদিন থেকে বাংলার কৃষক ভাইয়েরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। মনে রাখতে হবে কৃষক বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। কৃষকই দেশের আসল নায়ক। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের মুখের অন্ন জোগায়। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো। তাই তিনি সার্বিক কৃষিখাতকে বেশি গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

নারীর প্রতি যথাযথ আস্থা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে তিনি অধিক জোর দিয়েছিলেন। পুরুষের সফলতা বা কোন অর্জনে কোন না কোন নারীর ভূমিকা থাকেই।একজন পুরুষের জীবনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের দিকে দৃষ্টপাত করলেই সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। বঙ্গবন্ধু পুরুষদের উদ্দ্যেশে তাই বলেছেন, " পুরুষ ভাইরা আমার যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে "।শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। শিক্ষার মাধ্যমেই সত্যিকার উন্নতি সম্ভব।  এই মহান নেতা দেশের মানুষকে  সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে,উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার স্বপ্ন দেখতেন।নকল করে শিক্ষিত না হয়ে, বরং প্রকৃৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে শিক্ষিত হওয়ার কথা বলেছেন। তাই ছাত্রদের এবং অভিভাবকদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেছেন,  " ছাত্র ভাইয়েরা লেখাপড়া করেন। আপনাদের লজ্জা না হলেও আমার মাঝে মধ্যে লজ্জা হয় যখন নকলের কথা শুনি"।অভিভাবকদের উদ্দ্যেশে বলেন, " আমি খবর পাই বাপ- মা নকল নিয়া ছেলেদের - মেয়েদের এগিয়ে দিয়ে আসে। কত বড় জাতি! উঁহু!  জাতি কত নিচু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু নকল মুক্ত শিক্ষার স্বপ্ন দেখতেন।বঙ্গবন্ধুর দেশে কোন বেকার থাকুক এটা  তিনি কোনভাবেই মানতে পারতেন না। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুবক ভাইদের মুক্ত করার চেষ্টা উনি প্রতিনিয়ত করেছেন। তিনি বলেছিলেন, "এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়"। বাংলার যুবকরা বেকারত্বের হিংস্র থাবায় নিঃশেষ হোক এমনটা জাতির পিতা কখনো চাননি। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা  দুর্নীতি, চুরি, লুটপাট, অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন।দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন।

বঙ্গবন্ধু তাই বলেছিলেন, "এখনো কিছু সংখ্যক লোক এত রক্ত যাওয়ার পরেও যে সম্পদ আমি ভিক্ষা করে আনি, বাংলার গরিবকে দিয়ে পাঠাই, তার থেকে কিছু অংশ চুরি করে খায়।... এই চোরের দলকে বাংলার মাটিতে শেষ করতে হবে "। অত্যন্ত  দুঃখজনক এই যে, চুরি ও  দুর্নীতিমুক্ত দেশ আজও আমরা পাইনি। চুরি, দুর্নীতি নামক অপছায়া আজও বাংলার মাটিতে  জিইয়ে আছে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনেপ্রাণে তরুণ বাঙালি। অন্যায়ের কাছে তিনি কোনোদিন মাথা নত করেননি। শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তিনি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি উৎখাত করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন একাধিক বক্তৃতায়।সামাজিক বৈষম্য কমাতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার নির্মূল করতে। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে স্বীকার করতেন তিনি একজন বাঙালি, তার ভাষা বাংলা এবং দেশ বাংলাদেশ'।

৭৫- এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে আমাদের স্বাধীনতার স্থপতিকে পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয়।জাতির পিতার হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন ঘাতক বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে আত্মগোপন করা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদকে ঢাকার মিরপুর থেকে আটক এবং তার ফাঁসি কার্যকর মুজিববর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। তিনি আজ জীবিত থাকলে হয়তো খুবই খুশি হতেন।

জাতির পিতার অসামান্য আত্মত্যাগ আর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা দেখেছি আলোর মুখ।মূলত তাঁরই আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ।

"তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি মহৎ/তাই তব জীবনের রথ /পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার /বারম্বার/তাই/চিহ্ন তব পড়ে আছে, তুমি হেথা নাই "।- (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

তিনি নেই ঠিকই কিন্তু তাঁর আদর্শ,তাঁর চেতনা,তাঁর মহৎ কীর্তি, তাঁর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে,  পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন।হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন।বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নাই। পিতা মুজিবের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলা দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, দারিদ্র্যতা দূর করেছেন।তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনেও সফল। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে,২০২১ সালের ডেল্টা প্ল্যানের মত মেগা প্ল্যান হাতে নিয়েছে। পদ্মা সেতু,মেট্রোরেল, বঙঙ্গবন্ধু টানেল,এলিভেটেড এক্সপ্রেস,৪ লেনের মহাসড়ক  সর্বোপরি জাতির পিতার প্রদর্শিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।

"সাবাস বাংলাদেশ / এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে-পুড়ে ছারখার /তবু মাথা নোয়াবার নয় "।- (সুকান্ত ভট্টাচার্য)।

জাতির পিতার বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নোয়ায়নি আর নোয়াবেও না।

 আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের কাণ্ডারি হয়ে যে যার অবস্থান থেকে দেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করবে। তাই আজ আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহস ও প্রজ্ঞায় অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো বঙ্গবন্ধু হয়ে বাংলার মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবো।আমরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে জাতিকে উপহার দিতে পারি অর্থনৈতিক মুক্তি, দিতে পারি মানবিক মূল্যবোধের প্রকৃত স্বাধীনতা, নির্মূল করতে পারি জঙ্গিবাদ আর দূর করতে পারি হানাহানি।একই সঙ্গে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁর সুযোগ্য কন্যাকে সহায়তা করবো।জাতির পিতা জন্মদিনে এই হোক প্রত্যয় এই হোক অঙ্গীকার।

মো.আহসান হাবিব

তরুণ কলামিস্ট, সদস্য
বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম
সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১৭ মার্চ: বাঙা‌লি জাতি ও ইতিহাসের কালজয়ী এক মহাপুরুষের আনন্দ আগমণ


Thumbnail

এমন মহাপুরুষ একটি যুগে, একটি কালে, একটি দেশে, একটি জাতির পথ প্রদর্শক রূপে , সর্বোপরি পৃথিবীর ইতিহাসের আলোকিত সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে একজনই আসেন।

“ইতিহাসের মহানায়ক “ হওয়ার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ সর্বকালের , সব যুগে জন্ম গ্রহন করেন না  । যুগ যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতে গোনা দু-একজন মানুষই শুধু  “ইতিহাসের মহানায়ক “ হতে উঠতে পারেন । ইতিহাস তার আপন গতিতেই সৃষ্টি করে মহানায়কের ।আর সেই মহানায়কই হয়ে উঠেন তার কালের প্রধান কারিগর ও স্হপতি । বঙ্গবন্ধু ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী মহাপুরুষ । যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন । আবার সেই স্বপ্নের “ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন । বাঙালির মহান মু‌ক্তিদাতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, কালজয়ী মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এই মহাপুরুষ। কোমল অথচ তেজস্বী বাংলা মায়ের মতোই তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ, ১৭ মার্চ বাঙা‌লির এক অপার আন‌ন্দের দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মের সাথে সাথে বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্মের সূচনা হয়েছিল সেই দিনই।

বাঙালির অধিকার-স্বাধীনতা-মুক্তির লড়াইয়ে আত্মপ্রাণ নিবেদিত এবং আত্মত্যাগী-অক্লান্ত-অকুতোভয় তিনিই এই বাংলায় একজন। তিনি বাঙালি জাতির জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছেন, তাঁর জাদুতে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছিল ঐশ্বরিক শক্তি, তাঁর প্রচেষ্টাতেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল অবস্থান।

মহৎপ্রাণ মহাপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ব্রত ছিল দুঃখিনী বাংলার মুখে হাসি ফোটানো, বাংলার মানুষের যোগ্য সম্মান-প্রাপ্য অধিকার আদায়, তাতে নিজের লাভ বা কারো ক্ষতির চিন্তাও তার চেতনায় ছিল না কখনো।  যতদিন পৃথিবীর নশ্বর বুকে ছিলেন তিনি ততদিন বাঙালি অবাঙালি সর্বোপরি সমগ্র মানবজাতির শুভকামনা নিয়ে দাপিয়ে-কাঁপিয়ে ছিলেন জগৎময়।

আজ জাতি আনন্দ-‌বেদনায় উদযাপন কর‌ছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপ‌তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্ম‌দিন। ১৯৯৭ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

১৯৩৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলাএ কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে সাহসী উপস্থাপনায় সহপাঠী ও বিদ্যালয়ের ন্যায্য দাবি আদায়ে নেতৃত্ব দি‌য়ে যি‌নি কি‌শোর ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন । ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষে অজস্র সহায়হীন  মানুষেরপ্রাণ বাঁচা‌ন তিনি । ১৯৪৬ এর দাঙ্গা প্রতিরোধে অগ্রণী যে কণ্ঠস্বর, ১৯৪৮ ও ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত বাংলার প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুখের বুলিতে নতুন করে জন্ম নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু । ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৩ অবহেলিত বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের একুশ দফায় থেকে স্বাধীনতার সূর্য হয়ে তিনি জন্মেছেন । ‘৫৮, '৬৬, '৬৯, '৭০, '৭১ এই যে ধারাবা‌হিক সংগ্রা‌মের ইতিহাসে বাংলার মানুষের স্বাধীনতা-স্বাধিকারে বেঁচে থাকার প্রতিদি‌নের অনুপ্রেরণা হ‌য়ে মিশে আছেন তিনি ।

১৯৭১ সাল। স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।অসহযোগ আন্দোলন চলমান। ১৯৭১-এর ১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছিল । তাঁর কণ্ঠ বেদনার্ত হয় একপর্যায়ে। তিনি বলেন, "আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এদেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন।অন্যের খেয়ালে যে-কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু ।"

নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনোদিন আলাদা করে ভাবার কোনো প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর মনে এক ভাবনা, মানবতার কল্যাণ কামনা । তাঁর জন্মদিনে তাঁর কাছ থে‌কে মানবতার সেবা ও জয়গান আমাদের প্রাপ্তি। শৈশবে রাস্তার পাশে শীতে কাতর হওয়া বৃদ্ধের গায়ে  নিজের চাদর জড়িয়ে দিয়ে, দুর্দশা পীড়িত মানুষের মনে সাহস যোগাতেন তিনি। ১৯৩৭ সালে  মুষ্টিভিক্ষা করে 'মুসলিম সেবা সমিতি'র মাধ্যমে গ‌রিব ছাত্র-ছাত্রী‌দের পা‌শে দাঁড়ান তিনি । জন্মদিনে এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, "আপনার ৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড়ো ও পবিত্র কামনা কী ?  উত্তরে বঞ্চিত বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার দ্বিধাহীন উত্তর, "জনগণের সার্বিক মুক্তি।"  প্রতিটি মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়, মুক্তির প্রতিটি নিঃশ্বাসে জন্মে থাকেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

এক জনসভায় বক্তৃতা কালে তিনি বলেছিলেন, "একজন মানুষ আর কী চাইতে পারে- আমি যখন ভাবি দূরে এক জনশূন্য পথের ধারে আলো-ছায়ায় এক লোক লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমাকে এক নজর দেখবে বলে, তখন মনে হয়, একজন মানুষের পক্ষে আর কী চাওয়া-পাওয়ার থাকতে পারে ।" অবহেলিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত, অত্যাচারিত প্রতিটি মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা । সেটি প্রতিফলিত হয়েছে, তাঁর প্রতিটি কর্মে এবং চিন্তায়।


তিনি শুধুই যে বাঙালির জন্য ভাবতেন তা নয় । তার চিন্তা-চেতনা-বোধ ছিল বিশ্বজনীন । ইনিই তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েও সরকারি বাসভবনে থাকতেন না। খুব সাধারণ ৩২ নম্বরের বাড়িটিতেই আমৃত্যু থেকেছেন। ধানমন্ডিতে যখন প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় তখন ভালো একটি প্লট নেয়ার জন্য সবার শত অনুরোধ সত্ত্বেও বলেছিলেন, "আগে সবাইকে দাও, তারপর যদি থাকে তখন দেখা যাবে।" আবার বঙ্গবন্ধুই  ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বক্তৃতায় বলেছিলেন, "বিশ্ব আজ দু'ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে ।"

বঙ্গবন্ধু এমন বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন যার হৃদয়তলে আমরা দাঁড়াতে পারি, কিন্তু সমকক্ষ হতে পারি না কেউ। ইতিহাসে অনেক নন্দিত নেতার নাম আছে, কেউ কি আছেন মানব কল্যাণে এত বিস্তৃতভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই অমর অবিসংবাদিত সেই সংগ্রামী নেতা যিনি বলেন, 'একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি ।একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায় । এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা - অক্ষয় ভালোবাসা- যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে ।'

১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক পত্রিকা শেখ মুজিবুর রহমানকে “রাজনীতির কবি” বলে আখ্যায়িত করে লিখেছিলেন, “তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেন, সমাবেশে এবং আবেগময় বাগ্মিতায় তরঙ্গের পর তরঙ্গে তাঁদের সম্মোহিত করে রাখতে পারেন । তিনি রাজনীতির কবি।” পুরোবিশ্ব তাঁর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছে । বিশ্বব্যাপী তাঁর মানবতার জয়গান শোনা যায়।

কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বকে হিমালয় পর্বতমালার সাথে তুলনা করে বলেন, ' আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ । বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব । ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়াজ। আই হ্যাভ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ ।' 

২০০৪ সালের বিবিসি বাংলা সারা বিশ্বে জরিপ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করে । ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কূটনীতিকেরা তাকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড' আখ্যা দেয় ।

বিশ্ব শান্তি পরিষদের সাবেক মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বলেছিলেন -‘শেখ মুজিব ছিলেন একজন শান্তির মানুষ, একজন স্বাধীনতার মানুষ এবং একজন বিশ্বমানব। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু (বাংলাদেশের বন্ধু) নন, তিনি বিশ্ববন্ধুও (বিশ্ববন্ধু)।’

বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। যারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তারা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে । কিন্তু চক্রান্তকারীরা জানে না, বঙ্গবন্ধু কখনো মরেন না । সেদিন বঙ্গবন্ধুর শরীর থেকে যে রক্ত ওরা ঝরিয়েছে সেই রক্তেই আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। হন্তারকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ থেকে রক্ত গ‌ড়ি‌য়ে গ‌ড়ি‌য়ে বাংলার অবারিত প্রকৃ‌তি, প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি শ্বাসে-প্রশ্বাসে আরও বেশি করে জে‌গে উ‌ঠেছেন তিনি ।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে আমাদের সকলকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে । সেটাই হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ওসম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো মৃত্যু নেই, তিনি শুধুই জন্ম নেন,  ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে আজকের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত তিনি আছেন এবং থাকবেন ততদিন পর্যন্ত যতদিন পৃথিবীতে শুভ কর্ম ও চিন্তার জন্ম থাকবে । মানু‌ষের মঙ্গল ও শুভচিন্তার কুঁড়িতে তাঁর অবস্থান । কুঁড়ি প্রস্ফুটিত মানবতার ফুলে মর্ত্যে সর্বক্ষণ হেসে থাকেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে তিনি প্রতিটি শুদ্ধচর্চায় বেঁচে থাকবেন অন্ততকাল।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন যেমন দেখেছিলেন তেমনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার প্রচেষ্টায় তিনিই ছিলেন সদাসচেষ্ট। ১৯৭১সালে পাকিস্তানি জান্তার ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা বাংলাকে '৭২থেকে '৭৫ এর প্রতিটি দিনের পরিশ্রমে নতুন জীবন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখনও পর্যন্ত তার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে । বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে । বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতাও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে ।

আজকের এই ১০৩তম জন্মদি‌নে গভীর শ্রদ্ধা জানাই কালজয়ী মহাপুরুষ বাঙা‌লির মু‌ক্তির মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।


লেখক : মাহবুবউল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
বাংলা‌দেশ আওয়ামী লীগ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

সুভাষ সিংহ রায়ের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’

প্রকাশ: ১০:২১ এএম, ১৬ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু গবেষক হিসেবে ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, গবেষক ও রাজনীতিবিদ সুভাষ সিংহ রায় (জন্ম ১৯৬৬-)লিখেছেন বহুল আলোচিত বিষয় ‘বাকশাল’ নিয়ে ‘‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’’ শিরোনামে ২৪০ পৃষ্ঠার একটি নতুন বই।আমরা যারা বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাঁর গবেষণা কাজের সঙ্গে পরিচিত তারা এক কথায় বলতে পারি তিনি যথার্থভাবেই একজন একাডেমিশিয়ান।সুভাষ সিংহ রায় যখন কথা বলেন তখন যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত যথাস্থানে, যথা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন।তাঁর ব্যক্তিগত বিশাল গ্রন্থাগারে অসংখ্য বই রয়েছে।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো বিষয়ে রেফারেন্স দিয়ে কথা বলতে শুনবেন শ্রোতৃমণ্ডলী কিংবা পাঠকসমাজ তাঁর লেখায় ব্যবহার করতে দেখবেন নতুন প্রকাশিত বিখ্যাত বইয়ের উদ্ধৃতি নির্দ্বিধায়, অবলীলায়। স্মৃতিশক্তির প্রখরতায় তিনি মেধা ও মননের অনন্য পরিব্রাজক।লেখাবাহুল্য, তিনি আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন লেখক।সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে।

ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী কর্মী ও নেতা সুভাষ সিংহ রায় সমকাল সচেতন এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইতিহাসের গতিমুখ সম্পর্কে  সত্যান্বেষী। এজন্য বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তা, তাঁর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন ও শাসনকাল এবং দেশ-জাতি নিয়ে তাঁর ভাবনা-বিশ্বাস সম্পর্কিত রচনা, বক্তব্য-ভাষণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রন্থসমূহ নিবিড়ভাবে পাঠ করে সাধারণ পাঠকের জন্য নিজের লেখনি দাঁড় করিয়েছেন তিনি। ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’গ্রন্থটি পাঠ করলে সুভাষ সিংহের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার পরিধি মাপা সম্ভব। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেবল এ গ্রন্থটি নয় তাঁর  প্রকাশিত ২৫টি গ্রন্থের মধ্যে আরো রয়েছে- ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পরিবার’, ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা’, ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িকতা’, ‘পাঠক বঙ্গবন্ধু লেখক বঙ্গবন্ধু’ প্রভৃতি। এছাড়া তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়ে সর্বাধিক গ্রন্থের রচয়িতাও।‘‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’’-এর ফ্ল্যাপে বইটির পরিচয় রয়েছে এভাবে-‘স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধি হয়েছিল, ‘‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে।” যার ফলে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বহু লালিত স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচির মাধ্যমে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত কার্যকরী মাধ্যম ছিল জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি মাত্র রাজনৈতিক দল ‘বাকশাল’। জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে তখনকার বিশ্ব বাস্তবতায় একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মসূচিকে ঈপ্সিত লক্ষাভিমুখী দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ‘‘উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে পর্যন্ত বিলুপ্ত করে সব দলের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ’ বা ‘বাকশাল’ গঠন করেন বঙ্গবন্ধু।’’ বাকশালের মূল লক্ষ্য ছিল একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও শোষিতের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা; যা ছিল জনগণের যুগ যুগের লালিত স্বপ্নের মহত্তম আকাঙ্ক্ষার গৌরবময় বহিঃপ্রকাশ। বাকশাল কর্মসূচিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক. রাজনৈতিক, দুই. আর্থ-সামাজিক, তিন. প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা- এই বইটিতে যার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকশাল গঠনের পূর্বে ও পরে পার্লামেন্ট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা এবং গণভবনে জেলা গভর্নর ও বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই ভাষণগুলোর সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ এবং এতে নিহিত বাকশাল কর্মসূচির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে বইটিতে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং দেশি-বিদেশি কায়েমী স্বার্থবাদীরা পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, যাতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে দেশ অগ্রসর হতে না পারে। এই বইটিতে ইতিহাসের সেই অধ্যায়কেই পাঠকের নিকট তুলে ধরা হয়েছে, যা পনেরোই আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার ভেতর দিয়ে পরিসমাপ্ত হয়েছে।’

আলোচ্য গ্রন্থের প্রতিপাদ্য অনুধাবনের জন্য গ্রন্থ-পরিচিতির এই অংশটি পাঠকদের জন্য সহায়ক। প্রকৃতপক্ষে সুভাষ সিংহ রায় বাকশাল কি এই পরিচয় দিয়ে শুরু করে বাকশাল গঠনের উদ্দেশ্য, বাকশালের ধারাসমূহ, সংবিধানের ধারা, কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রভৃতির অনুপুঙ্খ বিবরণ উপস্থাপন করেছেন।লেখকের ভাষ্য-‘তারিখটা ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫। বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছিল, দেশে একটা পরিবর্তন আসন্ন। আওয়ামী লীগ সংসদীয় দল ও কার্যনির্বাহী পরিষদের যৌথসভায় জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব সার্বিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ওপর অর্পণ করা হয়। নয়া ব্যবস্থার রূপকাঠামো কী হবে তা পরিষ্কার উল্লেখ না করেও আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস দিয়ে আসছিলেন। সন্দেহবাদীদের সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সত্যিই এলো প্রতীক্ষিত সেই দিন। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্ট ঘোষণা করলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা। তিনি বললেন, জনাব স্পীকার, আজ আমাদের শাসনতন্ত্রের কিছু অংশ সংশোধন করতে হলো। আপনার মনে আছে, যখন শাসনতন্ত্র পাস করা হয়, তখন আমি এ হাউজের পক্ষ থেকে বলেছিলাম, এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি দরকার হয়, তবে এই সংবিধানেরও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হবে।’ (পৃ ৫৭)

অন্যত্র- ‘সংসদের চৌহদ্দির মধ্যেই নয়, নেতা এলেন এবার জনতার মাঝে, সরাসরি কথা বলতে। ১৯৭৫, ২৬ মার্চ, স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেখানে সেদিন মানুষের ঢল নেমেছিল। জীবনের শেষ জনসভায় ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অগ্নিঝড়া সেই কণ্ঠস্বর শেষবারের মতো মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন জাগ্রত করেছিল। তিনি বললেন। মানুষ শুনলেন।’ (পৃ ৭৪)

অন্যদিকে ‘‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’’ গ্রন্থে পর্যায়ক্রমে আছে, পার্লামেন্টে ভাষণ : বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক, দ্বিতীয় অধ্যায় হলো-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষণ, তৃতীয় অধ্যায়ে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন। ‘বঙ্গভবনে বাকশাল প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে বিশদ আলোচনা। একদলীয় ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ ও দেশ-বিদেশে অভিনন্দিত করার বিবরণের ঘটনাপঞ্জি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বিস্তৃত পরিসরে।

বঙ্গবন্ধু গবেষক সুভাষ সিংহ রায়ের লেখনির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সহজ গদ্যে সংহত কথন। ‘কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু’ অংশে তিনি দেখিয়েছেন ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির ওপর।তাই সেই কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসেছিলেন চেয়ারম্যান শেখ মুজিব। কর্মসূচি ব্যাখ্যা করার সঙ্গে সঙ্গে সচেতন করে দিয়েছিলেন তাদের দায়িত্ব সম্পর্কেও।বঙ্গবন্ধুর সেদিনকার ভাষণের মাঝে ছিল দ্বিতীয় বিপ্লব পরিচালনার কর্মসূচি, যার চুম্বক অংশ নিম্নরূপ- ‘১. নতুন পদ্ধতি। ৬০ জেলার প্রত্যেকক জেলায় একজন করে গভর্নর থাকবে; ২. স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। এখানে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, ‘‘সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুভাবে বসবাস করা আমাদের কর্তব্য। কোনো যুদ্ধজোটে আমাদের যোগদান করার কথা চিন্তা করাও জঘন্য পাপ। কারণ আমাদের বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য সাহায্য করা দরকার।”৩. একতা মঙ্গলের পথ; ৪.  আত্মসমালোচনা চাই- আত্মসমালোচনা না থাকলে আত্মশুদ্ধি করা যায় না; ৫. ডেডিকেটেট ওয়ার্কার চাই; ৬. নতুন করে গড়তে হবে- সমবায় পদ্ধতি চালু; ৭. ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকবে না; ৮. অর্থনৈতিক অগ্রগতি- সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চাই; ৯. শোষণহীন সমাজ গঠনের পথ; ১০. দুর্নীতিমুক্ত দেশ।’(পৃ ১০৬)

লেখক জানিয়েছেন, একটা গণতান্ত্রিক প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা ছিল দ্বিতীয় বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে সারাদেশকে ৬১টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। নিযুক্ত হন ৬১ জন গভর্নর।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

পশ্চিমাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের উদাহরণ ড. ইউনূস


Thumbnail

নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ড. ইউনূস সারা বিশ্বেই একজন পরিচিত মুখ। আমাদের দেশেও অবশ্যই তিনি পরিচিত। সম্প্রতি তাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্বের ৪০ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক খোলা চিঠি লিখেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে গত ৭ মার্চ এ খোলা চিঠিটি প্রকাশিত হয়। নোবেল পুরষ্কার দেয়ার পেছনে; বিশেষ করে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেয়ার পেছনে যে রাজনীতি কাজ করে ড. ইউনূস তারই একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। আমেরিকাতে যেমন টাকা দিয়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা যায় নোবেল দেয়াও এখন অনেকটা লবিস্ট নিয়োগের মত। পার্থক্য হল, টাকার পরিবর্তে তাদের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়।

ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আইন অনুযায়ী ২০১১ সালে যখন ড. ইউনূসকে বয়সজনিত কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে পাঠানো হয়। এ নিয়ে তিনি নানা রকম আইনি প্রক্রিয়া, এমনকি বিদেশীদের শরণাপন্ন হলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। এখন পত্রিকায় জায়গা কিনে ৪০ জন কেন ৪০ লক্ষ লোকও যদি বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে কি তাদের কথামত বাংলাদেশের আইন পরিবর্তন করতে হবে?

বর্তমানে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগ তদন্তাধীন। গ্রামীণ টেলিকমের ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কীভাবে অন্য অ্যাকাউন্টে গেছে সেটিও দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। এই তদন্ত থেকে বাঁচতেই মূলত তিনি লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। যারা এই এই ৪০ জনকে একত্রিত করেছে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, আইন সবার জন্য সমান এবং বাংলাদেশের আইন বাংলাদেশের মতই চলবে। লবিস্ট দিয়ে আইন পরিবর্তন করা যাবে না কিংবা আইনি কার্যক্রমও বন্ধ রাখা যাবে না। 

আনেক আগে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল যার নামে সেই সায়দাবাদী হুজুর একটি পাউডার আবিষ্কার করলেন। সেই পাউডারের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলেন স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের অনেক মন্ত্রীরা। সেই সময় এটি নিয়ে বিদেশে অনেক সমালোচনা হয়। আমার মতে এই ৪০ জন যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন তারা সেই সায়দাবাদী হুজুরের পাউডারের মডেলের মত। মডেলদেরতো পশ্চিমারা অনেকে অনেক চোখে দেখেন। তাহলে এদেরকে আলাদাভাবে দেখবেন কেন? আমি মনে করি এটি পশ্চিমাদের এমন ডবল স্ট্যান্ডার্ড ছাড়া কিছু নয়। 

সাংবাদিকদেরও অনেক সময় প্রভাবিত করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ কিন্তু কোনটা বিজ্ঞাপন কোনটা খবর সেটা আলাদা করতে পারে না। তারা মনে করে ওয়াশিংটন পোস্টে এসেছে। কিন্তু আসলেতো ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন এসেছে। যে কেউ টাকা থাকলেই বিজ্ঞাপন দিতে পারে। যেসব লোকের নামে বিজ্ঞাপন এসেছে তাদের প্রতি আমার দুঃখবোধ হয় যে, তারা একটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না রেখেই একটি বিবৃতি দিয়ে দিলেন? বাংলাদেশ কি তাদের প্রজা? একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হত। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে যাচ্ছি। সুতরাং এই বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। আপনারা এমন খেলা আগেও অনেক খেলেছেন। যতটুকু সম্মান আছে সেটা যদি রাখতে চান তাহলে এসব বন্ধ করুন। 

তারা পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্রে কোন কাজ হয়নি। পদ্মাসেতু ঠিকই হয়েছে এবং আমার মনে হয় ড. ইউনূসও পদ্মা সেতুতে ঠিকই উঠেছেন। সুতরাং, বাংলাদেশকে এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে অবমূল্যায়ন করার কোন সুযোগ নেই। কিছুদিন আগেও আলেস বিলিয়াতস্কি নামের একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ীকে চোরাচালানের দায়ে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। নোবেল পাওয়া মানেই যে কেউ আইনের উর্ধে নয় এটিই তার প্রমাণ। এই ৪০ জন বরেণ্য ব্যক্তি কিভাবে ড. ইউনূসের বিজ্ঞাপনের মডেল হবার জন্য রাজি হলেন সেটিই আমার বোধগম্য নয়। অবশ্য পশ্চিমাদের দিয়ে সব সম্ভব। কারণ তাদের একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ‘মানি’ (অর্থ)। টাকা হলে তাদের পক্ষে সব সম্ভব। আমি সবাইকে অনুরোধ করব যে, আপনারা আপনাদের সীমারেখা যতই ভং করুন না কেন তাতে বাংলাদেশকে কিছুই করতে পারবেন না। বাংলাদেশ যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তা কারো কাছে নত হবে না। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বাংলাদেশ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এসব বিজ্ঞাপনে আমরা দেশের সাধারণ মানুষেরা বিন্দুমাত্র ভীতু নই। বরং আপনাদের হুঁশিয়ার দিতে চাই যে, আপনাদের এখন সময় এসেছে আয়নাই নিজেদের চেহারা দেখার। আয়না না থাকলে বাড়িতে বড় আয়না কিনুন। কারণ আয়নাই এখন আপনাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সুতরাং, আমি আপনাদের আয়না বেগম অথবা আয়না সাহেব নাম দিতে চাই।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

পশ্চিমা মিডিয়া তারা কি সত্যিই স্বাধীন

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১০ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

ইদানিং কালে আমি পড়ছি বা দেখছি কিছু ব্যক্তি বা সামাজিক মিডিয়া সহ মিডিয়া সংস্থা উচ্চকণ্ঠে প্রচার করছে যে বাংলাদেশে নাকি বাক বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, জনগন বা সাংবাদিকরা সরকারের বিরুদ্ধে কোন কিছু, এমনকি সত্য কথা বলতে বা লিখতে পারে না। আমি প্রতিদিন বাংলাদেশের প্রায় ৬টি পত্রিকা অনলাইনে পড়ি বা টিভি টকশো শুনি, যারা সরকারের বিরুদ্ধে কোন রাখঢাক ছাড়া, অবাধে এবং কোন কোন সময় অশ্লীল ভাষায় অনেক মিথ্যা কথা বলছেন। কিছু দিন আগে আমি টিভি টকশোতে একজন অবসরপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবকে বলতে দেখলাম, তিনি বলছিলেন যে “বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত মাটিতে দাঁড়াতে না পারায়, এর কোন শক্ত ভিত্তি নেই, তাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তথাকথিত মেগা প্রকল্পগুলো স্ফীত বেলুন। বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই” (এমনকি আইএমএফ যখন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে ঋণ দিতে দ্বিধা করছে, তখন আইএমএফ স্বল্প সময়ের মধ্যে ন্যূনতম বিধিনিষেধ এবং পরিবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশকে অর্থ সরবরাহ করেছে। কারণ তারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সম্ভাবনার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারা নিশ্চিত যে তারা সময়মতো তাদের টাকা ফেরত পাবে। অবসরপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের অত্যন্ত নেতিবাচক মূল্যায়ন এবং মিথ্যা কথা সঠিক হলে আইএমএফ কখনই এত সহজে বাংলাদেশে অর্থ দিত না)। এই সমস্ত মিথ্যা এবং নেতিবাচক কথাবার্তা সত্ত্বেও, আমি দেখতে পাচ্ছি না যে বাংলাদেশে হাজার হাজার সাংবাদিক বা তথাকথিত টক শো হোস্ট বা অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেখছি তারা খুব আরামে বসবাস করছে (আমি জনগণকে সিঙ্গাপুরের প্রাথমিক শাসকদের ইতিহাস এবং এর দ্রুত বিশ্বমানের উন্নয়ন পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করব)। আমি দেখিনি খুব বেশি সোচ্চার আমেরিকান বা অন্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের তালিকা সরবরাহ করেছেন!! তবুও তারা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা বন্ধ করেননি। তারা আমাদের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয় তাদের সেই বক্তৃতা দেওয়া বন্ধ করেনি। তাদের ১০০ বছর আগের ইতিহাসের কথা বাদ দিলাম, সাম্প্রতিক ইতিহাসে অনেক দেশগুলিতে বেআইনি আক্রমণ এবং ব্যাপক ধ্বংস এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করার কথার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি তাদের এ সম্পর্কে কথা বলার মতো নৈতিক কর্তৃত্ব আছে কি না? গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষার নামে তারা অবৈধভাবে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন আক্রমণ ও ধ্বংস করেছে। ইরাকের আবু ঘরায়েব এবং আফগানিস্তানের বুর্গামে তাদের যাকে তাদের ইচ্ছার বন্দীদের নির্যাতন করা বা কোনো বিচার বা বিচারের সুযোগ ছাড়াই মানুষকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে ২০ বছরেরও বেশি সময় আটকে রাখা, হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে ড্রোন হামলার মাধ্যমে হাজার হাজার নিরিহ মানুষকে হত্যা করা কি গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও ছড়িয়ে দেয়ার পশ্চিমা কৌশল?

অনুকূল অবস্থান পেতে পশ্চিমা মিডিয়া কোন প্রশ্ন ছাড়াই তাদের সরকারের দেয়া মিথ্যা প্রচার করছে। পশ্চিমা সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা তাদের কথিত বর্ণনাকে চ্যালেঞ্জ করার এবং সত্য বলার সাহস করছে না। কোন পশ্চিমা সাংবাদিক কি কখনও লিখতে বা অনুসন্ধান করার সাহস করেছে যে সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশগুলির মধ্যে কোনটি গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা বাক স্বাধীনতা বা মানবাধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে? সম্পূর্ণ সম্মানের সাথে অবশ্যই আমি স্বীকার/বিশ্বাস করি যে কিছু সাহসী এবং সৎ সাংবাদিক এখনও আছে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব কম, যারা সাহস করেছেন, মিথ্যা প্রকাশ করেছেন, সত্য বলেছেন কিন্তু কেউ কেউ একই তথাকথিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার রক্ষকদের দ্বারা কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছেন। আমি আশা করি আমরা জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জের কথা ভুলে যাব না, যিনি পশ্চিমা শক্তির মিথ্যা ও প্রতারণাকে উন্মোচিত করেছিলেন, এখন তিনি পশ্চিমা শক্তির রুক্ষ দিকের মুখোমুখি।

বুধবার আমি হল্যান্ডে আসলাম, আমার ক্যান্সারে ভোগা মরণাপন্ন অনেক কাছের বন্ধুকে শেষ বারের মত দেখার জন্য। চলার পথে লোকেদের সাথে কথা বলার সময় আমি ইউক্রেন যুদ্ধের নিয়ে বার বার একই গল্প শুনলাম যা পশ্চিমা মিডিয়া দ্বারা বর্ণিত হচ্ছে। তারা অন্য মিডিয়া শোনে না বা দেখে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যা বলেন তা সত্য ছাড়া আর কিছুই নয়, রুশ সরকার যা বলে সবই মিথ্যা। আমি অবাক হয়ে গেলাম এই যুদ্ধ এবং পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি কীভাবে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলিতে বিশাল মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনছে তার কোন ধারণা তাদের নেই বা জানার বা শুনার আগ্রহ নেই। আমি তাদের কাছ থেকে যা শুনলাম, তা হল তাদের সংবাদপত্র এবং টিভিতে যা লিখছে বা বলছে। তাদের তথ্যের উৎস এবং মতামত সিএনএন, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, স্কাই নিউজ, আল জাজিরা বা জার্মানির ডি,ডব্লিউ চ্যানেল এবং তাদের জাতীয় সংবাদপত্রগুলির উপর ভিত্তি করে। আমার মনে হল তারা যেন এই মিডিয়া দ্বারা সমানভাবে মগজ ধোলাই হয়েছে, যেমন তারা অন্যদের মগজ ধোলায়ে অভিযুক্ত করে। আমরা প্রশ্ন করতে পারি এই সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলগুলো কতটা সত্যবাদী এবং স্বার্থের কোনো সংঘাত ছাড়াই তারা ক্ষেত্রবিশেষে ঘটনা বর্ণনা করছে? আমরা কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে তারা আগ্রহী পক্ষের কাছ থেকে প্রকৃত সত্য তথ্য পাচ্ছে? অথবা আগ্রহী পক্ষের উদ্দেশ্য হল তাদের নিজের স্বার্থ সংরক্ষণে সত্য বা মিথ্যার প্রচারের জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। এই মিডিয়া গুলো কি সক্ষম বা এমনকি জানতে ইচ্ছুক, আগ্রহী পক্ষগুলি কতটা প্রকাশ করছে এবং তারা কী গোপন করছে? মিডিয়া গুলোর কি কোন উপায় আছে সত্য যাচাই করার? এটি সম্পর্কে আরও আলোচনা করা যাক।

আপনার কি এখনও মনে আছে, পেন্টাগন সেইসব তথাকথিত টিভি ও সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের যুদ্ধ অঞ্চলে যেতে অনুমতি দিয়েছিল যারা পেন্টাগন বা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে ইমবেডেড হতে রাজি ছিল (সমালোচকরা বলবে যে তারা তাদের সাথে একই বিছানায় রাজি ছিল)। সুতরাং, তারা আক্রমণকারী বাহিনী দ্বারা দেখানো যুদ্ধ এবং এর ধ্বংসকে গৌরবান্বিত করেছেন, খারাপ লোকদের নির্মূল হিসাবে তাদের হত্যাকাণ্ডের ন্যায্যতা দিয়েছে। এই সমস্ত তথাকথিত মুক্ত সংবাদ চ্যানেলগুলি তাই লিখেছে এবং প্রতিফলিত করেছে যেমনটি হানাদাররা চেয়েছিল সাংবাদিকরা দেখুক ও শুনুক আর তাদের বলা/তৈরি করা সত্য ছড়িয়ে দিতে। এটাকে বলা হয় পশ্চিমা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা।। ২৪ ঘন্টা সংবাদের জন্য সংবেদন প্রয়োজন, প্রয়োজন সাসপেন্স তৈরি করা এবং তারা যা বলতে চান তা বিশ্বাস করার জন্য একই কথা পুনরাবৃত্তি করা। মার্কিন বা ন্যাটো সেনাবাহিনীর মাদার অফ অল বোমা বা ইউরেনিয়াম ক্ষয়প্রাপ্ত বোমা ফেলাকে একটি মহান অর্জন এবং সাফল্য বলে প্রচার করা। কিন্তু তাদের বিধ্বংসী প্রভাব, হাজার হাজার নিরহ মানুষ হত্যা সম্পর্কে একটি শব্দ না করা। যখন বাগদাদে ক্রুস মিসাইলের বৃষ্টি হচ্ছিল, সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছিল, তখন অন্ধকার রাত আগুন এবং প্রচণ্ড ধাক্কায় জ্বলছি, তখন সিএনএন ২৪ ঘন্টা নিউজ চ্যানেলের অ্যাঙ্কররা অনেক আনন্দের সাথে বলেছে, "বাগদাদের আকাশকে আতশবাজির একটি দুর্দান্ত সুন্দর প্রদর্শনের মতো দেখাচ্ছে"। পশ্চিমী চ্যানেলগুলির কিছু বিশেষজ্ঞরা একের পর এক অনেক গর্ব এবং আনন্দের সাথে ব্যাখ্যা করছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কীভাবে সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তি এবং নির্ভুলতা পূর্ণ মার্কিন এবং ন্যাটো ট্যাঙ্ক, যুদ্ধ বিমান এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি খারাপ লোকদের হত্যা এবং তাদের অবকাঠামোকে ধ্বংস করছে!! এই হল পশ্চিমা ভাবধারার তথাকথিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।

 

আমাদের এখনও মনে আছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি টেস্ট টিউব ধরে তাদের সম্মানিত গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কথা বলেছিলেন। সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, তথাকথিত পশ্চিমা মুক্ত সংবাদপত্র সেই মিথ্যাকে কিনে নিয়েছিল এবং সেই মিথ্যা ঘন্টার পর ঘন্টা প্রচারের করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের জন্য জনমতকে সংগঠিত করেছিল। পার্লামেন্টে টনি ব্লেয়ার গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, ৪৫ মিনিটের মধ্যে ইরাক লন্ডনে গণবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে পারে। আবার, সংবাদপত্রগুলি এটিকে ফ্ল্যাশ করেছিল এবং তথাকথিত শিক্ষিত পশ্চিমা লোকেরা এটি বিশ্বাস করেছিল এবং আতঙ্কিত হয়েছিল। আতঙ্কে থাকা লোকেরা পশ্চিমের যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করে। এরপরেও আমরা এখনও বিশ্বাস করি পশ্চিমা সংবাদপত্র গুলো মুক্ত এবং সর্বদা সত্য বলে, সত্য ছাড়া আর কিছুই বলে না। হ্যাঁ, আমি একমত, পশ্চিমা দেশগুলিতে কিছু ভাল সত্য সন্ধানকারী সাংবাদিক আছে, তাদেরকে কিন্তু রুশ ও চীনের প্রতিনিধি বা কমিউনিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কেউ কেউ প্রাণনাশেরও হুমকিও পাচ্ছে। রাশিয়ান টিভি স্টেশন আরটি বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলিতে নিষিদ্ধ। কারন তথাকথিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রেমী ও প্রচারকরা , মনে করেন আরটি মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে, তারা আরটিকে ভয় পায়। আমি আশ্চর্য হই যে এর অর্থ কি পশ্চিমা তথাকথিত শিক্ষিত লোকেরা এতই বুদ্ধিহীন যেন তাদেরকে একটি মিডিয়া স্টেশন দ্বারা সহজেই বোকা বানানো যায়। মিথ্যা তথ্য থেকে সত্যকে আলাদা করার মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা তাদের নেই, যখন তারা আরও বড় পশ্চিমা মিডিয়া দ্বারা ২৪ ঘন্টা বোমাবর্ষিত হচ্ছে!!

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনে প্রথম জয়-পরে পরাজয়ের নির্বাচনে পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া গুলো দুই গ্রুপে বিভাগ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে, বড় বিভেদ, বিভাজন এবং শত্রুতা শুরু হয়। কিছু মিডিয়া চ্যানেল ট্রাম্প সমর্থন করেছিল এবং এখনও সমর্থন করে, অন্যরা ক্লিনটন এবং বাইডেনকে সমর্থন করে এবং চায় না ট্রাম্প ফিরে আসুক। সুতরাং, এই দলগুলোর মেরুকরণ হয়ে গেছে এবং তারা কোন আপস করবে না। তারা তাদের তথ্যের লাইন ধরে রাখতে এবং অন্যকে আক্রমণ করার জন্য সবকিছু করবে। তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু বলবে বা করবে না, সত্যকে আড়াল করতে এবং মিথ্যা প্রচার করতে দ্বিধা করবে না। সিএনএন, সিএনবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস বা বিবিসি বা স্কাই এমন কিছু প্রকাশ করবে না যা বাইডেনকে ক্ষুণ্ন করবে বা তার ইউক্রেনীয় যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে সন্দেহজনক, বিতর্কযোগ্য করতে পারে, যা বাইডানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প বা সমমনা গ্রুপ মিডিয়াকে সুবিধা প্রদান করতে পারে। এই বিভাজন সত্যের কফিনে মৃত্যুর পেরেক ঠেকিয়েছে। এটাই বাস্তবতা। সমস্ত মিডিয়ার অন্যান্য বাস্তবতা হল তাদের বেঁচে থাকা জন্য বিজ্ঞাপন এবং দর্শক সংখ্যার উপর নির্ভর করতে হয়, তাই তাদের অবশ্যই গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সহ সরকারী সংস্থাগুলির প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে, তাদের নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে এবং তাদের মুখপত্রের অংশ হতে হবে, তথ্য পেতে বা রাষ্ট্রপতি বা বড় অফিসিয়াল মিশনে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। যারা সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করে না তাদের এমনকি হোয়াইট হাউস বা সরকারী প্রেস ব্রিফিংয়েও অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। বাংলাদেশের কথাই ধরুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম আলো ডিজিএফআইর দেওয়া মিথ্যা তথ্য নিয়ে কীভাবে শেখ হাসিনা সম্পর্কে লিখেছিল তা আমরাও দেখেছি। তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করতে পারি যে পশ্চিমা মিডিয়া সরকারী প্রোপাগান্ডা মেশিনের অংশ নয়। তাহলে বলুন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখন কোথায়?

 

নর্থ স্ট্রীম পাইপলাইনে সন্ত্রাসী হামলার কথা বলি। বিস্ফোরণের পরপরই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল, এটি পুতিন এবং রাশিয়ার একটি খারাপ কাজ। যখন এটি স্পষ্ট হতে শুরু করে যে পশ্চিমা দেশগুলি জড়িত ছিল, তখন পশ্চিমা মিডিয়া সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যায়। এত বড় একটা ঘটনা যেন কিছুই না। সুইডেন এবং ডেনমার্ক একটি তদন্ত চালিয়েছে (অথবা আমার কি সাহস করে বলা উচিত যে তারা তদন্তের নামে তৃতীয় দেশের জড়িত থাকার সমস্ত প্রমাণ আর আলামত পরিষ্কার করেছে বা সরিয়ে দিয়েছে) এবং এটিকে নাশকতার একটি কাজ হিসাবে বলেছে (হাস্যকর হল, এটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলছে না - কারণ সেখানে কোনও মুসলিম সন্ত্রাসীর সংযোগ ছিল না)। কিন্তু তারা তাদের ফলাফল বা কোন তথ্য কারো সাথে শেয়ার করছে না। মিডিয়াও তা পাবার জন্য কোন প্রচেষ্টা নিচ্ছে না। কল্পনা করুন যে তারা যদি রাশিয়ান উপকরণ বা ক্রিয়াকলাপের কোনও ক্ষুদ্র নমুনা খুঁজে পেত তাহলে তা অবিলম্বে হাজার হাজার মিডিয়ার উপস্থিতির সাথে প্রকাশ করা হত, ঘন্টার পর ঘন্টা। রাশিয়া কতটা মন্দ তা জানাতে শত শত বিশেষজ্ঞ তাদের মতামত দেওয়ার জন্য মিডিয়া গুলোতে লাইনে দাঁড়াতেন। এটি সমস্ত সংবাদমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতে জুড়ে থাকত। যখন এটি প্রমাণিত হয়েছিল যে রাশিয়া জড়িত ছিল না, তদন্তের পর কিছুই বলা হল না, সম্পূর্ণ নীরবতা, কারণ তারা অন্যথায় প্রমাণ পেয়েছে। যখন বিশ্ব পরিচিত সাংবাদিক, সেমুর হার্শ তার অনুসন্ধান নিয়ে এসেছিলেন এবং অনেক বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে প্রকাশ করেছিলেন যে আমেরিকা নরওয়ের সহায়তায় এটি করেছে (মনে রাখবেন বাউডেন, জার্মান চ্যান্সেলরের উপস্থিতিতে এবং ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বিস্ফোরণের আগে বলেছিলেন যে তারা নর্থ স্ট্রীম পাইপলাইন বন্ধ করতে পারে এবং করবে)। মাই লাই গণহত্যা, আবু ঘ্রাইব নির্যাতন, বা মার্কিন নাগরিকের উপর সিআইএ গুপ্তচরবৃত্তি সম্পর্কে সেমুর হার্শের প্রতিবেদনের মতো, সরকারি কর্মকর্তারা তার নর্থ স্ট্রীম পাইপলাইন ধংসের অনুসন্ধানকে মিথ্যা বলে উপহাস করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের মার্কিন প্রভুর কথা মতো সময় নষ্ট না করে একই কথা বলেছে। কোন সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেল, তথাকথিত সত্য বলা গন মাধ্যম এটি তুলে ধরেনি বা এটি নিয়ে কথা বলেনি। তারপর হঠাৎ করেই নিউইয়র্ক টাইমস একটি বর্ণনা নিয়ে আসে। নিবন্ধে বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন যা কিছু সরকারী কর্মকর্তা দেখেছেন, দেখায় একটি ইউক্রেনীয় গ্রুপ পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের মনে থাকতে পারে খুব সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জেফরি স্যাক্স বলেছিলেন যে এই পাইপলাইনগুলি কতটা শক্তিশালী আর কঠিন কারন এটি একটি বহু স্তর বিশিষ্ট কাঠামো। এই পাইপ লাইন ধংস করার জন্য অত্যন্ত পরিশীলিত অস্ত্র আর অতি দক্ষ লোকের প্রয়োজন হবে। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র রাশিয়া, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেই কাজ করার জ্ঞান এবং উপায় রয়েছে। এখন প্রশ্ন থেকে যায় সুইডেন এবং ডেনমার্কের অত্যন্ত অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থাকে ফাকি দিয়ে সঠিক জাহাজ, সব ধরণের সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ছাড়াই কিছু অপেশাদার দল কি চারটি পাইপ লাইনের মধ্যে তিনটি পাইপ লাইন একই সময় ক্ষতি করতে পারে? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যে নিউইয়র্ক টাইমস এই নিবন্ধটি লিখেছে এমন একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে যার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অ্যাক্সেস ছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের সেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কোনো অ্যাক্সেস ছিল না। প্রতিবেদনে খধূর্তভাবে বলা হয়েছে যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি এবং তার মন্ত্রক জড়িত ছিলেন না (আমি নিউইয়র্ক টাইমসের নিয়মিত গ্রাহক এবং আমি এটি প্রতিদিন পড়ি। আমি সাবস ট্র্যাকের গ্রাহক এবং সেমুর হার্শের রিপোর্টও পড়েছি)। অবিলম্বে জার্মান মিডিয়া একই প্রতিফলন প্রকাশ করে এবং সমগ্র পশ্চিমা মিডিয়া এটি একটি সত্য ছাড়া আর কিছুই না বলে প্রচার করা শুরু করে। সাম্প্রতিক জার্মান চ্যান্সেলর হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সাথে দেখা করার পরই নিউ ইয়র্কের প্রতিবেদনটি মজার ব্যাপার। এটি একটি কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে তবে সমালোচকরা বলবেন, যেহেতু উভয় দেশই এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ধরা পড়েছিল এবং সেমুর হার্শের নিবন্ধটি ব্যাপক আলোচনায় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায়, উভয়ই মিলে সেমুর হার্শের দাবিকে হ্রাস করতে নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রকাশনার পরিকল্পনা করেছিল। যেমন কলিন পাওয়েলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে টেস্ট টিউব নিউজ হয়েছিল ঠিক একই ভাবে, নিউ ইয়র্ক টাইমসও একই গোয়েন্দা গোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে নিবন্ধটি লিখেছে এবং পশ্চিমা মিডিয়া বিশ্বকে তাদের বক্তব্যে বিশ্বাস করার চেষ্টা করছে। একই সরকারি তথ্য নিয়ে, কোনো বিশ্লেষণ ছাড়াই তথাকথিত সত্যবাদী পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করছে। পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এখন যা বলছে বা প্রকাশ করছে তার সবকিছুই কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি? কিন্তু কখনই অবমূল্যায়ন করবেন না পশ্চিমা মিডিয়ার অবিশ্বাস্য শক্তি এবং প্রভাব। তাই দুঃখজনকভাবে আমি পর্যবেক্ষণ করছি যে বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্র পশ্চিমা মিডিয়া থেকে নিয়ে হুবহু ঠিক একই সংস্করণের প্রতিফলন বা পোস্ট করছে।

আমি বিশ্বাস করি আমরা আমাদের নিজেদের বিশ্বাস এবং কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল তা বিচার করার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কথায় আছে "আপনি কিছু দিন কিছু মানুষকে বোকা বানাতে পারেন, কিন্তু কখনই আপনি প্রতিদিন সবাইকে বোকা বানাতে পারবেন না"। তাই আমি এই বিবেচনা আপনার নিজের সিদ্ধান্ত এবং বিচারের উপর ছেড়ে দিলাম।

Prof Monir Islam, MBBS, FRCOG, MPH
Senior Specialist
International Centre for Migration, Health and Development
Former Senior Specialist, Maternal and Newborn Health 
Liverpool School of Tropical Medicine, Liverpool, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন