ইনসাইড থট

ওরা নাকি টিকা নেয়নি!

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২


Thumbnail ওরা নাকি টিকা নেয়নি!

গতকাল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে যারা মারা গেছেন তাদের ৭০% শতাংশের বেশি টিকা নেননি। মনে হচ্ছে পরোক্ষভাবে তারা বলছে ওনারা সময় মত টিকা নিলে বা ওনাদের সময় মত টিকা দেয়া হলে আমরা কিছু জীবন বাঁচাতে পারতাম। যদিও সংক্রমণের এই ৪র্থ তরঙ্গে মৃত্যু গত কয়েকদিন ধরে ৩০ বা তার উপরে, হয়ত এর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে, তবুও প্রতিটি মৃত্যু শুধুমাত্র একটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয়, তবে তারা কারও মা বা বাবা, বা ছেলে বা মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রী, বা কোনও আত্মীয়। তাই প্রতিটি মৃত্যু একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা এবং আমাদের অবশ্যই সব সময় অনুসন্ধান/বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে আমরা কি কিছু সেই জীবনগুলিকে বাঁচাতে পারতাম, আমরা কি অন্য কোন ভাবে তা সম্ভব করতে পারতাম? যেমন তারা পরোক্ষভাবে বলছে টিকা দিয়ে কিছু জীবন বাঁচানো যেত। আমরা জানি কোভিডের কারণে বিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গতকাল (২রা ফেব্রুয়ারি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৯৯৯ এবং যুক্তরাজ্যে ৫৩৪ জন কোভিডের কারণে মারা গেছে। বিভিন্ন দেশে এই জীবন হারানোর কারণ শুধুই কি তারা টিকা নেয়নি তার কারণে কিংবা কিছুটা আমাদের ব্যর্থতা এবং নেতৃত্বের অভাবের কারণে? তাই আমাদের কি বলা উচিত যে যারা মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে শুধু তারা টিকা নেয়নি তার কারণে? বরং আমাদের উচিত অনুসন্ধান করে কেন তারা টিকা নেয়নি বা নিতে পারেনি বা অন্যান্য কারণে টিকা দেওয়া হয়নি তা জানার চেষ্টা করা। কোভিড টিকাদানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো করছে, তাই কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয় বরং আমরা কীভাবে আমাদের টিকাদান কর্মসূচিকে আরও উন্নত করতে পারি তা খুঁজে বের করার জন্য এই অনুসন্ধান করা উচিত। আমরা সবসময় অতিরিক্ত প্রচেষ্টার সাথে আরও ভাল করতে পারি। কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঠেকানো যাবে না বা যায় না, এমনকি সমস্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলোতেও তা সম্ভব না। তাই সব ব্যবস্থা সত্ত্বেও কিছু মৃত্যু ঘটবে। তবে আমাদের অবশ্যই আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় এবং এই অসম্ভাব্যতাকে এড়াতে, অন্যকে বা অন্যকিছুকে দোষারোপ না করে আমাদের উচিত, প্রতিটি মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন বাঁচাতে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও কিভাবে উন্নত করা যায় তার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সরকার, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সততার সাথে তাদের প্রচেষ্টা নিবেদন করছে। তাদের আমি সম্মান করি আর আন্তরিক সালাম জানাই।

আমার অতীতের নিবন্ধে আমি গৃহকর্মীদের দুর্দশা উল্লেখ করেছিলাম। লিখছিলাম, হয়ত সাধারণ আমলাতান্ত্রিক কারণে বা অকার্যকর, অবাস্তব কৌশল যা মাঠের বাস্তবতাকে বিবেচনা করে না, তার কারণে অনেক গৃহকর্মী হয়তো কোভিড ভ্যাকসিন নিতে পারছেন না বা তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশে এখন ১২ বছরের বেশি বয়সী যে কোনও ব্যক্তিকে কোভিড টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং/অথবা জন্ম সনদপত্র সহ ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের নিবন্ধন করার পর টিকা নিতে পারছেন। টিকা পাওয়া সহজ করার জন্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও জানিয়েছে যে লোকেরা কেবল তাদের জন্ম সনদপত্র নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসতে পারে এবং টিকা নিতে পারবে। খুব ভাল প্রচেষ্টা এবং তা প্রশংসা করা আবশ্যক। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, বাংলাদেশে কতজনের জন্ম সনদ নেই, তাই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রও থাকতে পারে না। আমার কাছে সর্বশেষ তথ্য অনুসারে (যদি ভুল হয়, আমাকে সংশোধন করবেন) বাংলাদেশের প্রায় ৬০% মানুষ তাদের জন্ম নিবন্ধন করেছে এবং তারা তাদের জন্ম সনদপত্র পেয়েছে বা তাদের আছে। ৪০% এর জন্ম সনদপত্র নেই। আমরা কি জানি সেই দুর্ভাগা গোষ্ঠী (অর্থনৈতিক এবং লিঙ্গ) কোনটি যাদের জন্ম সনদপত্র নেই? আমি আমার জন্ম সনদপত্র পাওয়ার গল্প বিস্তারিত লিখব অন্য একদিন। যখন আমি নেদারল্যান্ডে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তখন তারা বাংলাদেশ রেজিস্ট্রি থেকে আমার প্রকৃত জন্ম সনদপত্র দাখিল করতে বলেছিল, যা আমার কাছে কোনদিন ছিল না। আমার ম্যাট্রিক সার্টিফিকেট বা আমার বাংলাদেশ পাসপোর্টে যা লেখা আছে তা তারা গ্রহণ করতে রাজী হয়নি। সুতরাং, আমাকে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রি অফিসে আমার জন্ম নিবন্ধন করতে হয়েছিল।
 
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (BFTUC) এবং Uxfam এর মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১.৬৯ মিলিয়ন (১৬লাখ ৯০ হাজার) গৃহকর্মী রয়েছে যাদের বয়স ১৫ বছরের বেশি। আরও ৪২০,০০০ হাজার ১৫ বছর বয়সের নীচের মেয়ে বা ছেলে গৃহকর্মী রয়েছে। সকল গৃহকর্মীর ৮৩%ই নারী। তাদের মধ্যে কত শতাংশের জন্ম সনদ আছে তা জানার চেষ্টা করেছি, যে পরিসংখ্যান আমি খুঁজে পাইনি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারা একটি অপরিহার্য কর্মী হিসাবে বিবেচিত হতে পারে এবং কোভিড মহামারী গতিশীলতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দল হতে পারে। আমরা কি জানি সেই ১৬ লাখ ৯০ হাজার গৃহকর্মী, যাদের ১৫ বছর বা তার বেশী বয়স, যাদের ৮৩% নারী, তাদের মধ্যে কতজনকে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বা হয়নি? ১৫ বছরের নিচের ৪২০,০০০ গৃহকর্মীরা কি টিকা পাচ্ছেন? অবশ্যই অনেকেই টিকা পেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের বর্তমান টিকা নীতির কারণে তারা নিবন্ধন করতে পারেননি বা নিয়োগকর্তা তাদের টিকা পাওয়ার জন্য সাহায্য করেননি বা তাদের জন্ম সনদপত্র নেই তার কারণে। কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষের এই দলের যদি কেউ মারা যায়, তবে তারা কি শুধু একটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান হয়ে যাবে এই বলে যে তারা ভ্যাকসিন নেয়নি। সমাজ তাদের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? তাদের পরীক্ষা করার কি সুযোগ রয়েছে, সংক্রমিত হয়ার পর বিচ্ছিন্নতা পালন করার কারণে, তাদের আয় বা বেতন হ্রাস বন্ধ করার বা তাদের ভোগান্তি এবং মৃত্যু কমাতে আমরা কি পদক্ষেপ নিয়েছি? সমাজ কি এই হতভাগাদের কথা ভাবছে? আমি জানি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে টিকা দিচ্ছে। কেন আমরা সেইসব গৃহকর্মীকে জন্মসনদ ছাড়া টিকা নেওয়ার অনুমতি দিতে পারি না, যাদের জন্ম সনদপত্র নেই তাদের নিয়োগকর্তার মাধ্যম নিবন্ধিত হয়ে কেন টিকা নেওয়ার পদ্ধতি চালু করা যাবে না? গর্বের সাথে বলতে পারি, বাংলাদেশে আমরা উদ্ভাবনী ধারণা তৈরিতে অনেক ভাল, তবে কেন আমরা প্রধানত মহিলাদের এই হতভাগ্য গোষ্ঠীর টিকা দেওয়ার একটি উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে পাচ্ছি না বা চেষ্টা করছি না! আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এবং অন্যান্য শহরগুলোতেও, অনেক গ্রামীণ এবং উপকূলীয় মহিলা এবং মেয়েরা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তাদের কাছে উপলব্ধ কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে একটি হিসাবে গৃহকর্মে ঝুঁকছে। তারা বেশিরভাগ বস্তিতে বসবাস করে। সহজেই তারা সংক্রামিত হতে পারে এবং অজান্তে তাদের নিজের পরিবারের লোকজনকে বা তারা যে বাড়িতে কাজ করেন সেখানে সংক্রামিত হতে বা ছড়াতে পারে। তারা দরিদ্র হতে পারে, কিন্তু সংবিধান তাদের জন্ম সনদপত্র সহ বা ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে এখন কোভিড ভ্যাকসিনের কোনও অভাব নেই। আমি সত্যিই চাইবো মন্ত্রণালয় এই মানুষ গুলো যেন কোভিড টিকা পেতে পারে তা জরুরীভাবে বিবেচনা করবে (আমাকে ক্ষমা করবেন, যদি তাদের টিকা প্রদান ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে থাকে, তাহলে)।

আরেকটি সমস্যা, আমি পড়লাম স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিলাপ করছে যে লোকেরা বুস্টার ডোজ দেওয়ার জন্য নাকি এগিয়ে আসছে না। কিন্তু কেন তারা আসছে না তার কারণ গুলোকি আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি এবং যা করলে তারা তাদের বুস্টার পেতে আমরা কি সেই ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি? দুঃখজনক কিন্তু সত্য হল যে বাংলাদেশে মানুষের জীবন এবং জীবিকা সংরক্ষণের জন্য আমাদের কেবল মাএ মাস্ক পড়া আর টিকা ছাড়া আর অন্যকোন কার্যকরী উপায় নেই।

সুখবর, সংক্রমণের হার কমছে। গত ১৪ দিনে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ার কারণে আজকাল মৃত্যুর হার যদিও একটু বেশির দিকে (এখনও এটি গত বছরের জুলাই/আগস্টে ডেল্টার কারণে মৃত্যুর সংখ্যার এক দশমাংশ)। আমি মনে করি শীঘ্রই মৃতের সংখ্যাও কমতে শুরু করবে। আমি আরও মনে করি এবং আশা করি বাংলাদেশ কোভিডের ৪র্থ তরঙ্গ হয়ত তার শিখরে পৌঁছেছে। ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিরভাবে কোভিড পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। ডেনমার্ক এবং অন্যান্য অনেক দেশ সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সঠিক কারণে (যদিও সবকিছুই এর সঠিক এবং জোরদার বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করে) কিছু বিধিনিষেধ আরও ২ সপ্তাহ বাড়িয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে, আমার মনে হয় আতঙ্কে, স্কুলগুলি বন্ধ করা হয়েছে এবং আরও দুই সপ্তাহের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে। আমি মনে করি না যে এটি শিক্ষার্থী বা তাদের পরিবার বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করেছে বা করবে। আমি আশা করি আমরা এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাবগুলি বিবেচনা করছি। আমি আশাবাদী এবং আস্থাশীল সরকার মাঠের বাস্তবতার ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

ওমিক্রন এবং এর বৈকল্পিক চাচাতো ভাইয়ের রূপ BA.2 এখনও ন্যূনতম দুর্ভোগ এবং মৃত্যুর সাথে ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু আমরা হয়তো মহামারীর শেষ দেখতে পাচ্ছি। তবে কোন ভুল করবেন না, এটি এখনও শেষ হয়নি। COVID-19 একটি স্থানীয় রোগ হিসাবে আমাদের সাথে কিছু সময়ের জন্য থাকবে এবং আমাদের প্রতি বছর বুস্টার ডোজ দেওয়ার এবং পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস বলবে, সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর সুষম কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। আমি মনে করি এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন