ইনসাইড থট

টেকসই জীবনযাপন: চাই প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতি


Thumbnail টেকসই জীবনযাপন: চাই প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতি

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতি বছর ৫ জুন সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। এটি পৃথিবীকে সংরক্ষণ, পরিবেশগত কর্মকান্ড এবং রূপান্তরমূলক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘একটাই পৃথিবী’ (Only One Earth), প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতিতে টেকসই জীবনযাপনের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা। ৫০ বছর আগে ‘একটি পৃথিবী’ স্লোগান নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছিল। পাঁচ দশক পরে, এটি এখনও সত্য কারণ পৃথিবী এখনও আমাদের একমাত্র বাড়ি এবং মানবজাতিকে অবশ্যই এর সীমিত সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং টেকসই জীবনযাপনের জন্য নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং চাহিদা ও পছন্দগুলোর রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশ্ববাসীকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ধারণাটি ৫০ বছর আগে ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলনে জন্ম হয়েছিল। এটি এই উপলব্ধি থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিল যে বায়ু, মাটি এবং পানি রক্ষার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে, যার উপর আমরা সবাই নির্ভরশীল। ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস বার্ষিকভাবে পালিত হচ্ছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির পরিবেশগত মাত্রার অগ্রগতি তুলে ধরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করার জন্য বিশ্বব্যাপী সমষ্টিগত, রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস আয়োজক দেশ সুইডেন। সেখানে ২ ও ৩ জুন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) এবং অংশীদারদের সহায়তায় ‘স্টকহোম+৫০: সকলের সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্থ গ্রহ - আমাদের দায়িত্ব, আমাদের সুযোগ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরা হয়েছে। 

বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন আজকের বিশ্বে জিডিপি সমৃদ্ধি পরিমাপের সঠিক উপায় নয়। বিশ্বে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উত্তরের অংশ হল অর্থনৈতিক শক্তির পরিমাপ হিসাবে জিডিপি ত্যাগ করা। তিনি এটিকে একটি অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম হিসাবে চিহ্নিত করেছেন যা ‘দূষণ এবং বর্জ্যকে পুরস্কৃত করে’ এবং জি-২০ সরকারগুলিকে ‘একটি বৃত্তাকার এবং পুনর্জন্মমূলক অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত হওয়ার’ আহবান জানিয়েছেন। আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন “আমাদের অবশ্যই পরিবেশের উপর সত্যিকারের মূল্য দিতে হবে এবং মানুষের অগ্রগতি এবং কল্যাণের পরিমাপ হিসাবে মোট দেশীয় পণ্যের বাইরে যেতে হবে। আমাদের ভ’লে যাওয়া চলবে না যে আমরা যখন একটি বন ধ্বংস করছি, তখন আমরা জিডিপি তৈরি করছি। যখন অতিরিক্ত মাছ খাই, তখন আমরা অতিরিক্ত জিডিপি তৈরি করি।”

মহাসচিব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় ১৭টি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাসÍবায়নের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের জন্য আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার  উপর জোর দেন। তিনি জি-২০ নেতৃবৃন্দকে কয়লা অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলা, ২০৩০ সালে ওইসিডি (Organisation for Economic Co-operation and Development) দেশগুলিকে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে অন্য সকলকে সম্পূর্ণ ফেজ-আউটের আহবান জানান । জীবাশ্ম জ¦ালানীতে অর্থায়ন ত্যাগ করে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানীতে বিনিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহবান জানান।

মহাবিশ্বে কোটি কোটি ছায়াপথ, আমাদের ছায়াপথে রয়েছে কোটি কোটি গ্রহ, কিন্তু আছে একটাই পৃথিবী। আসুন এটির যত্ন নেওয়া যাক। জাতিসংঘের মতে বর্তমানে পৃথিবী তিনটি সংকটের মুখোমুখি: জলবায়ু খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, বাসস্থানের ক্ষতি এবং অন্যান্য চাপে তিন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ এবং আনুমানিক এক মিলিয়ন প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে, দূষণ আমাদের বায়ু, ভ’মি এবং পানিকে বিষাক্ত করে চলেছে, যা প্রতি বছর প্রায় নয় মিলিয়ন অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের অর্থনীতি এবং সমাজকে তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং প্রকৃতির সাথে আরও সংযুক্ত করার মাধ্যমে রূপান্তর করা। আমাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীর ক্ষতি করা থেকে, এটি নিরাময়ের দিকে যেতে হবে। আশার খবর হল সমাধান এবং প্রযুক্তি বিদ্যমান এবং ক্রমবর্ধমান সাশ্রয়ী মূল্যে। 

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী সময় ফুরিয়ে আসছে এবং প্রকৃতি জরুরী অবস্থায় চলে এসেছে। এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এই দশকের মধ্যে বায়ু দূষণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রবাহিত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রায় তিনগুণ হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে, কেবল একটাই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে টেকসই জীবনযাপনের উপর ফোকাস করা, যা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। 

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বায়ু দূষণ এবং প্লাস্টিক  বর্জ্যরে ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। এসব বর্জ্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ার আগে এক হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী অবস্থায় থাকতে পারে। সমুদ্রে প্লাস্টিক অতি ক্ষুদ্র টুকরায় ভেঙ্গে যায়। এসব টুকরা মাছ খায় কিন্তু হজম হয় না। মাছের পেটে জমা হতে থাকে এবং তা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। ১৯৫০ দশক থেকে বিশ্বে উৎপাদিত প্লাস্টিকের পরিমাণ মোট ৮.৩ বিলিয়ন মেট্রিক টন। যার মধ্যে বর্জ্য হচ্ছে ৬.৩ বিলিয়ন মেট্রিক টন। এবর্জ্যরে নয় শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা এবং বার শতাংশ পোড়ানো হয়েছে। বাকি বর্জ্য ভ’মি ভরাট বা প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেলা হয়েছে।

প্লাস্টিক দূষণ আমাদের নদী, সাগর ও ভ’মিকে বিষাক্ত করছে, সামুদ্রিক জীবন ক্ষতিগ্রস্থ করছে  এবং জনস্বাস্থ্য, জনজীবন ও পরিবেশে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন সামগ্রী এবং পলিথিন ব্যাগের অধিকাংশই পুনর্ব্যবহার, পুনঃচক্রায়ন না করে  প্রাকৃতিক পরিবেশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে খাল, নদী, সমুদ্রে জমা হচ্ছে। সেখান থেকে জলজ প্রাণী তা গ্রহণ করছে। এসব প্রাণীর মাধ্যমে তা আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে।

জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকার আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এই আইনের কোন বাস্তবায়ন নেই। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার দুই শত কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরী হচ্ছে। এগুলোর বেশীর ভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটির বেশী পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে সকল বা যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন সহজলভ্য বিকল্প তৈরি না হওয়ায় পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই পলিথিন নিষিদ্ধের আইন প্রণয়নের পর তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে বিকল্পের চাহিদা দেখা দেয় এবং তা বাজারে চলে আসে। আইনের প্রয়োগে শিথিলতায় বিকল্পের চাহিদা কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তা শূণ্যের কোটায় নেমে আসে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ হলে বিকল্পের চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং তা বাজারে চলে আসবে। যে সব সুবিধার অপব্যবহার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন করা হচ্ছে তা দেখভাল করার দায়িত্বও তাঁর মন্ত্রণালয়াধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের।

পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তায় বর্তমানে সারা দেশে পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং জবাবদিহিতার অভাবে বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা। পাশা পাশি রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব। 

বাংলাদেশ পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধকারী প্রথম দেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর প্রসংশা কুড়িয়েছে। পলিথিনের বিকল্প হিসাবে জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে কাগজের ব্যাগ, প্যাকেট ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ, চটের ব্যাগ, পাটের বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে চলে আসে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এসব বিকল্পের পাইকারি দোকান গড়ে ওঠে। এছাড়াও জনগণ বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। বিকল্প তৈরিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে গ্রামীন নারীদের। পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এর ফলে জনজীবন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে। আইন প্রয়োগে শিথীলতা এবং জনসচেতনতা ধরে রাখার ব্যর্থতার কারণে পলিথিন সমহিমায় আবার তার পূর্বের অবস্থান ফিরে আসে। এমনকি আগের চেয়েও বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এবছরসহ গত কয়েংক বছর একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা মহানগরীতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম প্রধান কারণ পলিথিন প্লাস্টিক। এগুলো পানি চলাচল ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে।

আসুন আমরা জনগণ বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাই, খাদ্য সরবরাহবারীকে নন-প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবহারে চাপ প্রয়োগ করি, পানির বোতল কেনা এড়িযে চলি, নিজের বোতল সঙ্গে রাখি, প্লাস্টিক কাটলারি বর্জন করি। নিজেদের এবং পরবর্র্তী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণের সংগ্রামকে আরো বেগবান করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রতিদিনই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে ৮ বিলিয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং আমরা আমাদের বর্তমান জীবনধারা বজায় রাখতে ১.৬ পৃথিবীর সমতুল্য সম্পদ ব্যবহার করছি। আমাদের জীবনধারা সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের দুই তৃতীয়াংশের সাথে যুক্ত। গবেষণায় দেখা যায় যে টেকসই জীবনধারা এবং আচরণ ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের নির্গমন ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ কমাতে পারে। টেকসই ব্যবহার এবং উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে চালিত করতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করতে পারে, স্বাস্থ্য ও দূষণকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং দারিদ্র্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে। ২০৬০ সালের মধ্যে নি¤œ ও মাঝারি আয়ের দেশগুলিতে ১১ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে ৪ শতাংশ সম্ভাব্য আয় বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবনের লাগাম টেনে ধরতে হবে, উন্নয়নশীল বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবনের প্রতিযোগীতা থেকে সরে আসতে হবে এবং স্বল্পোন্নত ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জীবনমান উন্নয়নে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি হ্রাস, নদী-খাল-বিল-হাওর দখল-ভরাট-দূষণ, বনাঞ্চল দখল-হ্রাস, ভ’গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা, পানি ও বায়ু দূষণ এর বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন ও পরিবেশকে পরস্পরের মুখোমুখি দাড় করানো কোনোভাবেই সমীচিন নয়। উন্নয়ন ও পরিবেশ একে অন্যের সম্পূরক, পরিপূরক। পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হলে তা টেকসই হবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে।

এমুহূর্তটি আমাদের সকলের - বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। আমরা সময় ফিরিয়ে দিতে পারি না। তবে আমরা গাছপালা জন্মাতে পারি, আমাদের শহরগুলো সবুজ করতে পারি, আমাদের বাগানগুলো পুননির্মাণ করতে পারি, আমাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপক’ল পরিষ্কার করতে পারি। জীবন ও জীবিকার জন্য প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সর্বস্তরের জনগণের বিশেষ করে যুব সমাজের সক্রিয় অংশ গ্রহণ।

পরিবেশ   বিশ্ব পরিবেশ দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন