১৯৮০ এর দশকে আমি তখন বতসোয়ানায় ছিলাম। জেলার সিনিয়র প্রধান মেডিকেল অফিসার হিসাবে জেলার মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্বে কাজ করছিলাম। আমাদের জেলার মেডিকাল দল একটি অত্যন্ত সফল যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় দেশে ভিতর আর বাহিরে অনেকের মনোযোগ সৃষ্টি করেছিল। একদিন একজন মার্কিন পরামর্শদাতা আমার দপ্তরে আমাদের প্রোগ্রাম এবং তার সাফল্য সম্পর্কে আরো জানতে আসেন। তিনি একজন আফ্রিকান আমেরিকান ছিলেন। আমি সত্যিই অবাক হয়ে শুনলাম তিনি আমাকে তার পরিচয় দেওয়ার প্রথমে জোর দিয়ে বললেন “আমাকে একজন আমেরিকান, আফ্রিকান আমেরিকান হিসাবে বিবেচনা করবেন। আমাদের নামে চালানো অনেক কিছুর জন্য আমি দায়ী নই”। আমি তার চোখে আমেরিকায় একজন আফ্রিকান হওয়ার কারণে তার দ্বন্দ্ব এবং কষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম।
আমরা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকার ইতিহাস এবং আফ্রিকান দাসদের সংগ্রামের কথা জানি, আরো জানি সমান অধিকার পাওয়া আর তাদের মানুষ হিসেবে সমানভাবে বিবেচনা করার জন্য তাদের লড়াই ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১৭ এবং ১৮ শতক জুড়ে, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে মানুষ অপহরণ করা হয়েছিল, আমেরিকায় আর আমেরিকান উপনিবেশগুলিতে দাসত্বে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের তামাক এবং তুলার মতো ফসল উৎপাদনে কাজ করার জন্য অমানবিক আচরণ আর শোষণ করা হয়েছিল।১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, আমেরিকার পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণ এবং বিলুপ্তি আন্দোলন দাসপ্রথা নিয়ে একটি মহান বিতর্ককে উস্কে দিয়েছিল যা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে। যদিও ইউনিয়নের বিজয় দেশটির চার মিলিয়ন ক্রীতদাস মানুষকে মুক্ত করেছিল, আশ্চর্যজনক বিষয় হল আজও দাসত্বের উত্তরাধিকার আমেরিকার ইতিহাসকে প্রভাবিত করে চলেছে, মুক্তির এক শতাব্দী পরে আজও তাদের সমান নাগরিক অধিকারের আর আচরনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। আজও সেখানে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য রয়েছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা বিখ্যাত টিভি সিরিজ, “রুটস” দেখে বোঝার চেষ্টা করতাম এবং নিজেদেরকে প্রশ্ন করতাম কীভাবে তথাকথিত সভ্য বিশ্বে এমন মানবিক অসম্মান ঘটতে পারে! কি করে একটি তথাকথিত সভ্য সমাজ এমন কাজ করতে পারে! আমরা এই বিবেচনায় বড় হয়েছি যে প্রতিটি মানুষ সমান এবং প্রত্যেকেরই সমান অধিকার রয়েছে। সেই চিন্তা ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমার এখনও মনে আছে স্কুলে থাকাকালীন আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রোডেশিয়ায় (জিম্বাবুয়ে) বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলাম। আমি নামিবিয়ার মুক্তির জাদুঘরে, বাংলাদেশ পতাকা আর পুলিশের পোশাক দেখে গর্বিত হয়েছিলাম যারা ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের অধীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ কালো মানুষের স্বাধীনতার জন্য প্রথম সংসদীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়েছিলেন।
যখন আমরা মার্টিন লুথার কিংকে দেখি - আমরা মানবতা, সমান অধিকার এবং সমতা দেখি - প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণের গুরুত্বের সংগ্রাম দেখি। যখন আমি একজন আফ্রিকান আমেরিকানকে দেখি, আমি ন্যায়বিচার এবং সমান আচরণ এবং সুযোগের জন্য সংগ্রাম এবং লড়াই করার বিষয়ে অবিচল হই। আমি যখন দেখি যে কোনও আফ্রিকান আমেরিকান, যেহেতু তিনি ধনী শক্তিশালী দেশ থেকে এসেছেন বলে, কারও মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব এবং সমান অধিকারকে ক্ষুণ্ণ বা হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে তখন আমি বিস্মিত হই এবং তা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
কয়েক বছর আগে যখন আমি নামিবিয়ায় WHO প্রতিনিধি হিসেবে ছিলাম, তখন অনেক রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনারের সাথে কাজ করার এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। তাদের সাথে এখনও যোগাযোগ করি। তাদের কাছে কূটনীতির শিল্প আর কীভাবে একজন কূটনীতিকের আচরণ করা উচিত তা শিখেছি। আমি তাদের সম্মান করেছি এবং সমানভাবে তাদের সম্মান অর্জন করেছি। আমার বাসায় আমেরিকান, ব্রিটিশ, রাশিয়ান, চীন, ভারতীয়, স্পেনীয়, জার্মান, ব্রাজিলিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান এবং কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনার এবং তাদের সহধর্মিদের সাথে সবাই একসাথে খাবার টেবিলের চারপাশে বসে আমার রান্না করা বাংলাদেশী খাবার উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি, ঘন্টার পর ঘন্টা ভাল সময় কাটার সুযোগ পেয়েছি। সেই সমস্ত রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারা তাদের বাসভবনে প্রাইভেট ডিনারে সমানভাবে আমাকে অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাদের সাথে মিশে আমি কূটনীতি, আচরণ এবং শালীনতার ভাষা শিখেছি। আরো শিখেছি কীভাবে মাস্টার হিসাবে নয় সমান অংশীদার হিসাবে, কোন দেশের সরকার, নিয়ম এবং সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হয়। সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হয়।
আজকে যখন দেখি বাংলাদেশে শক্তিশালী এবং ধনী দেশের কিছু রাষ্ট্রদূত নির্বাচন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছেন, তখন আমি অবাক হই। হ্যাঁ, প্রত্যেকেরই তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে, কিন্তু তা করবেন কূটনৈতিক শালীনতা এবং নিয়মের মধ্যে। তারা যে সকল মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগ তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম নেই তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারেন। একটি স্বাধীন ও গর্বিত জাতি হিসেবে সরকার তাদের পরামর্শ এবং সমর্থন স্বাগত জানায়। মানবাধিকারের উন্নয়ন, বাক স্বাধীনতা, তথ্য আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কূটনীতিকরা পরিবর্তন আনতে মাস্টার হিসাবে নয়, সমান অংশীদার হিসাবে সরকারের সাথে কাজ করতে পারেন। আরও ভাল করার জন্য, আদেশ বা হুমকি না দিয়ে একজন অংশীদার হিসাবে সরকারি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারেন দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। হ্যাঁ, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল জাতি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের মতো সম্মান ও মর্যাদার সাথে কোনো হুমকি, হস্তক্ষেপ ও হুকুম ছাড়াই নিজের ভালোটা বিবেচনা করে নিজের মত বাঁচতে চায়।
আমি অনুরোধ করবো আপনি বাংলাদেশের দিকে আঙুল তোলার আগে দয়া করে আপনার দিকে তাকান। আফগানিস্তান, লিবিয়া আর ইরাকে আগ্রাসন ও ধ্বংস, সেটা কি আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং সার্বভৌম অধিকারকে সম্মান জানিয়ে করা হয়েছিল? বিশ্বব্যাপী পরিবেশন ( rendition - সন্ত্রাসবাদে সন্দেহভাজন বিদেশী নাগরিকদের জর্ডান, ইরাক, মিশর, ডিয়েগো গার্সিয়া, আফগানিস্তানে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ সুবিধায় নেয়া), আবু ঘরায়েবে বন্দীদের নির্যাতন, গুয়ানতানোমো বে কারাগারে বছরের পর বছর মানুষদের পশুর মতো বিচার অধিকার ছাড়া বন্দী করা, তাদের অধিকারের কী হবে? ২০০১ সাল থেকে দেশপ্রেমিক আইন (patriot act) কীভাবে সংবাদপত্র এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রতিফলিত করে? কিছু তেল সমৃদ্ধ দেশের মত একটি অগণতান্ত্রিক, যেখানে মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অনুপস্থিত সেই দেশকে কীভাবে আপনারা সমর্থন করতে পারেন? মিশর বা থাইল্যান্ডে সামরিক স্বৈরশাসককে কেন সমর্থন করেন? সে দেশ গুলোতে আপনার সমর্থনের নৈতিক ব্যবস্থা আর শর্তাবলী নির্দেশ করার সাহস কেন করেন না? আপনার নিজের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য ভেনেজুয়ালা থেকে আপনার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করার সাথে সাথে আপনি কীভাবে অন্যান্য দেশকে হুমকি বা নির্দেশ দেওয়ার নৈতিক কর্তৃত্ব রাখেন? আপনি কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেন যখন অনেক আফ্রিকান বা অশ্বেতাঙ্গদের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, যখন পরাজিত ব্যক্তি এখনও দাবি করেন যে ভোট কারচুপি বা চুরি হয়েছে? হ্যাঁ, আমরা আপনাদের মতামতকে সম্মান করি। আমরা সবার সাথে সমান অংশীদারের হিসাবে এবং পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদার সাথে কাজ করতে চাই।
কিন্তু আমাদের সাথে রাষ্ট্রদূতদের আচরণ আর সাহস দেখে রাষ্ট্রদূত আমি আপনাদের দোষ দেই না। আমি নিজেদের দোষারোপ করি যখন আমি দেখি আমাদের অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা, নাগরিক সমাজের সদস্য, বুদ্ধিজীবীরা বার বার দৌড়ে সমর্থনের জন্য আপনাদের দরজায় কড়া নাড়ছেন এবং আপনাদের হস্তক্ষেপের অনুরোধ করছেন। আমি যখন দেখি আমাদের সাংবাদিকরা আপনাদের আমন্ত্রণ পেয়ে এবং আপনাদের উপস্থিতিতে পার্টিতে যোগ দিতে এত গর্বিত বোধ করেন। আমরা আমাদের নিজেদের লড়াই নিজেরা চেষ্টা না করে, আমাদের নোংরা কাপর ধোয়ার জন্য আপনার জায়গায় ছুটে যাই। আমরা যদি নিজেদেরকে সম্মান না করি, আমদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট বা গর্বিত বোধ না করি এবং স্বাধীন গর্বিত দেশের নাগরিক বলে গর্ববোধ না করি, এমনকি আমাদের গর্ব এবং মর্যাদা বিক্রি করতে দ্বিধা না করি তখন আমি কীভাবে আপনাদের দোষ দিতে পারি?
তবুও আমি আপনাদের অনুরোধ করব আমাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করুন এবং দয়া করে কূটনৈতিক সুবিধার সুযোগ গ্রহণ করবেন না। আপনার দ্বৈত নৈতিকতা পরিত্যাগ করুন। অনুগ্রহ করে আপনার স্বার্থ এবং মুনাফা পেতে শুধুমাত্র যারা দরিদ্র বা দুর্বল তাদের উপর আপনাদের ইচ্ছা এবং নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেবেন না। আমরা আপনাদের বাণিজ্য দেই এবং আমরা আপনাদের দেশে বাণিজ্য করি। আমরা আপনাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের যেমন আপনাদের প্রয়োজন, আপনাদেরও আমাদের প্রয়োজন। আসুন আমরা সমর্থনকারী বন্ধু হই এবং স্বৈরশাসক না হই। আমরা আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নই, আমরা একটি গর্বিত জাতি। দয়া করে আমার ঘাড়ে আপনার হাঁটু রাখবেন না এবং দয়া করে আমাকে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে দিন। সমানভাবে এবং মর্যাদার সাথে বাঁচতে দিন। সমান অংশীদার হিসাবে একসাথে সমৃদ্ধি এবং বিকাশ করতে দিন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি। আর বার বার কোভিডের "নতুন তরঙ্গের" কারনে কোভিড সংক্রামিত মানুষের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কথা সম্ভবত কেউ আর শুনতে চায়নি। কি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল সাম্প্রতিক বাংলাদেশের তথ্য ইঙ্গিত করছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট, BA.4 এবং BA.5-এর সাবলাইনেজ, সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও একটি নতুন তরঙ্গ শুরু করেছে।
আজকাল এখন আর কোভিডের তথ্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশন সংবাদের বড় শিরোনাম নয়, মহামারীটি আর সংবাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে না যেভাবে কিছুদিন আগেও তা করেছিল, তবুও আমরা কোভিড নিয়ে কোথায় আছি এবং আমাদের কী করা দরকার তা নিয়ে জরুরিভাবে আলোচনা আর মূল্যবান সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমাদের আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় বরং নতুন তরঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের জাতীয় কৌশল কী হওয়া উচিত সবাই বসে তা নিয়ে আলোচনা করা আর জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আজ ২৮শে জুন সরকার ২০৮৭ জনের সংক্রামিত হওয়ার এবং ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তাই বলে আতঙ্কে, আমাদের তাড়াতাড়ি এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
সুসংবাদ, ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলি খুব একটা গুরুতর নয়, তবে সমস্যা হল ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলির লোকেদের পুনরায় সংক্রামিত করার সক্ষমতা রয়েছে, এমনকি যারা পূর্বে ওমিক্রনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, বা যারা সম্পূর্ণ টিকা পেয়েছেন বা যারা বুস্টার ডোজও পেয়েছেন তারাও সংক্রামিত হতে পারেন। ফাইজার ভ্যাকসিনের পর পর তিনটি ডোজ পাওয়ার পরেও আমি খুবই হালকা দুই দিনের লক্ষণগুলি সহ ওমিক্রনে সংক্রামিত হয়েছি এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছি। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে "হার্ড ইমিউনিটি" (যেখানে পর্যাপ্ত লোকদের টিকা দেওয়া হয়েছে বা যারা ইতিমধ্যে সংক্রামিত হয়েছে সেখানে আরও সঞ্চালন বন্ধ করা জন্য প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা) পৌঁছানো সম্ভবত অসম্ভব। সাংহাই এবং বেইজিং শহরে চীনা কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত লকডাউনের পরেও ওমিক্রনের বিস্তার বন্ধ করতে সেখানে অসুবিধার কথা আমাদের ভবিষ্যতের কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য বিবেচনা করতে হবে।
যদিও ইদানিং বাংলাদেশে কোভিড রোগের দ্রুত সঞ্চালন উদ্বেগের কারন হতে পারে, কিন্তু সবচেয়ে আশ্বাসের বিষয় হল কোভিডের মুখোমুখি এবং যুদ্ধ জয়ে আজ আমাদের কাছে মোতায়েন করার জন্য প্রচুর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়াও, গবেষণা বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে ওমিক্রন প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে ডেল্টার চেয়ে হালকা। বেশিরভাগ মানুষের জন্য, কোভিড-১৯ মৌসুমী ফ্লু থেকে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলিতে, কম প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ সফল টিকা দেওয়ার পরে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ মাত্রার অনাক্রম্যতা অর্জন করেছে। তবে, বিপুল সংখ্যক লোক সংক্রামিত হওয়ার কারণে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ পরিণতি হওয়ার পরিনিতি, সফল আর সময় মত এর পরিচালনা, চিকিত্সা যত্নের প্রাপ্যতা এবং বিশাল ব্যয় সম্পর্কে আমাদের এখনি নজর দেওয়া দরকার।
অবশ্যই, এই রোগের সাথে সম্পর্কিত দীর্ঘকালের নেতিবাচক স্বাস্থ্যের ফলাফলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কথা বিবেচনা করে আমাদের সকলের এবং সরকারের উচিত হবে বারবার কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এড়ানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। বড় চ্যালেঞ্জ হল জীবন ও জীবিকার মধ্যে আমরা কতটা বা কিভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি এবং কি ভাবে কোভিডকে সম্পূর্ণরূপে এড়াতে পারি? মজার বিষয় হল, এই রোগের বাহক আর সংক্রমণের কারন হল আমাদের চেনা জানা অন্যান্য লক্ষণহীন সংক্রামক মানুষ, যাদেরকে আমরা দেখতে, যাদের কাছাকাছি থাকতে, কোলাকুলি করতে, সমাজিকতা বজায় রাখতে বা কাজের কারণে তাদের সম্পর্কে আসাটা আমরা উপভোগ করি। মানুষ হল সামাজিক প্রাণী, এবং তাই অনেক লোকের জন্য আমাদের জীবনের মানের একটি বড় অংশ হল অন্যদের সাথে স্বাধীন ভাবে মেশা - যেমনটি উত্সব, উদযাপন এবং সামাজিক ইভেন্টগুলিতে দ্রুত ফিরে আসা এবং সেই সময় গুলো উপভোগ করা। আর এই কারণেই ভাইরাসটি শীঘ্রই আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না, অদূর ভবিষ্যতেও নয়। আমরা ভাইরাসটির সাথে কীভাবে ভালো ভাবে বাঁচতে পারি তা আমাদের শিখতে হবে। কারন একই সাথে আমরা বেঁচে থাকতে এবং আমাদের জীবিকা বজায় রাখতে চাই।
মুখোশ এবং বায়ুচলাচল এখনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা যা আমরা মেনে চলতে পারি। একটি মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক পরা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি কার্যকর উপায়, বিশেষ করে জনাকীর্ণ সমাবেশ গুলোয়। আপনি যদি এমন একটি জায়গায় যান, বা চলাচল করেন বা যাএি হন যেখানে অনেক লোক একসাথে আপনার সাথে থাকবে, যা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপুর্ন সেখানে যাবার আগে হয় আপনার পকেটে বা হ্যান্ডব্যাগে বা ব্রিফকেসে মাস্ক রাখবেন এবং সেখানে থাকাকালিন মুখোশ পরে থাকবেন। এখন থেকে আমরা ভবিষ্যতের বাঙ্গালী সামাজিক আদর্শ হিসাবে এটি গ্রহণ করা শিখতে পারি। আর আমাদের সঠিক এবং পর্যাপ্ত ইনডোর বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে। যাদিও, একমাএ উপযুক্ত বায়ুচলাচল ব্যাবস্থা দ্বারা সংক্রমণের একটি তরঙ্গ বন্ধ করার সম্ভাবনা কম, তবুও আমাদের ইনডোর এবং বদ্ধ পরিবেশে উপযুক্ত পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশের চমৎকার প্রচেষ্টা এবং বিপুল ব্যয়ের জন্য ধন্যবাদ, দেশটি তার বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে কার্যকর কোভিড ভ্যাকসিনের দুই ডোজ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ সমান সংখ্যক লোককে বুস্টার ডোজ প্রদানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল করছে। ভবিষ্যতে বিশেষ করে শুধু মাএ জনসংখ্যার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষকে আবারও বুস্টার ডোজ (বার্ষিক হতে পারে) প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সব রকম পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি থাকতে হবে।
কোভিড টিকা দেওয়ার প্রাথমিক অসাধারণ সাফল্য পর, ভবিষ্যতে আবারও কোভিড ভ্যাকসিনের গণ টিকা প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি আরও আলোচনার এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করব। ধনী দেশ এবং কোম্পানিগুলোর মেধা সম্পত্তি অধিকার (intellectual Property Right) মওকুফ করতে সম্মত হওয়ার অপেক্ষায় থাকাকালীন পুনরায় এই জাতীয় সমস্ত জাতি প্রশস্ত টিকা প্রদানের বহুল ব্যয়ের কৌশলের কার্যকারিতা বিবেচনা করতে হবে। অন্যান্য অবকাঠামোগত বিকাশ অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার হতে হবে। আমি পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি আমঅবকাঠামোগত বিকাশে বিনিয়োগ আমাদের জীবিকা নির্বাহ এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। আজ সমৃদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলো ধার নিতে এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থ কোভিড প্রোগ্রামে ব্যয় করতে পারে কারণ তারা তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমঅবকাঠামো শক্ত ভাবে তৈরি করেছে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যমান সক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশের সেই ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে এবং তারা সল্প ব্যায়ে তা উৎপাদন করতে পারে, এবং তার ফলে টিকা প্রদানের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। আসুন সেই ধনী দেশগুলি এবং সংস্থাগুলিকে দরিদ্র দেশ এবং তাদের নাগরিকদের জীবন আর জীবিকার ব্যয়ে প্রচুর মুনাফা করার বিরুদ্ধে সজাগ হই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং গাভিকে অবশ্যই মেধা সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করা নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে এবং অপ্রাকৃত মুনাফা অর্জনের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলতে হবে।
যখন আমরা আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি সে সময়ে আমাদের কৌশল কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমি আমার পূর্ববর্তী নিবন্ধে "পরীক্ষা এবং চিকিত্সা" কৌশল গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সমস্ত ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার জায়গা গুলোতে ফাইজার এবং মার্কের অ্যান্টিভাইরাল সরবরাহ করা উচিত, যাতে একটি "চিকিৎসা করার জন্য পরীক্ষা" স্কিম চালু করা যায়, যেখানে কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার পরেই, সবাই বিশেষ করে যারা দুর্বল এবং বয়স্ক গোষ্ঠী, যাদের ভ্যাকসিনগুলি কম কার্যকর হতে পারে, তারা কার্যকর চিকিত্সার সেই ওষুধগুলি আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছাড়া পান। এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হ্রাস করবে না তবে জীবন বাঁচাবে এবং জীবিকা নির্বাহ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বজায় রাখবে।
জনস্বাস্থ্য হল এমন সমস্ত বিষয় যা জনগনকে সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। জীবন এবং জীবিকার সুষম কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। যখন আমাদের "কোভিডের সাথে বাঁচতে পারি" বা “ বাঁচতে পারবো কিনা” সে বিষয়ে জোরালো মতামত প্রকাশ করা অব্যাহত রয়েছে, বাস্তবতা হল এই গ্রহের প্রায় প্রতিটি দেশই, ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ এই মহামারী দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মানুষ বা দেশ হিসাবে আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত সমস্যাগুলির মুখোমুখি হই, অন্যান্য সমস্ত সমস্যাগুলির মধ্যেও এই ভাইরাস বিষয়ে আমরা প্রতিদিন আরও শিখছি এবং এই সংক্রমণ দ্বারা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিশাল সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে কার্যকর শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের একমত হতে হবে, কোভিড পরিস্থিতি জটিল, এর কোনও দ্রুত এবং সহজ প্রতিকার নেই। না, আমরা এখনও কোভিড-১৯ সমাধান করি নি, তবে আমরা এই রোগটি পরিচালনা করতে আরও চৌকস এবং আরও ভাল হয়ে উঠছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ দূত ডাঃ ডেভিড নাভারো কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে বলেছেন: “এখন আমাদের অনেকের জন্য, কোভিড-১৯ এর অসুস্থতা জীবন হুমকির পরিবর্তে একটি সাধারন অসুবিধার কারণ হবে, তবে মনে রাখবেন, কিছু লোক বিশেষত দুর্বল, যারা অন্যান্য সহ-অসুস্থতার সাথে বসবাস করছেন এবং এখনও টিকা নিতে অস্বীকার করছেন বা কোন কোভিড ভ্যাকসিন পাননি, কোভিড এখনও তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।”
আসুন কোভিড নিয়ে বাঁচতে শিখি, মাস্ক ব্যবহার করি, যত সম্ভব ভিড়ের পরিবেশ এড়িয়ে চলি, যখন আমাদের কোভিডের লক্ষণ থাকে, অবিলম্বে পরীক্ষা করি এবং যদি আমাদের ইতিবাচক পরীক্ষা করা হয় তবে নিজেকে আলাদা করি, মানুষকে আমাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করি। আসুন জাতীর আর আমাদের প্রজন্মের উন্নত ভবিষ্যৎ আর জীবন আর জীবিকার উন্নতির জন্য এক সাথে কাজ করি। আমরা একটি গর্বিত জাতি এবং আমরা বারবার প্রমাণ করেছি যে আমরা এটি করতে পারি।
(এই নিবন্ধটি অন্যান্য প্রকাশনাগুলির সহায়তায় প্রস্তুত করা)
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রায় স্তিমিত করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বাড়ছে মহামারীর স্থায়িত্বকাল। মারণঘাতী করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী চলছে আড়াই বছর। জনজীবন, অর্থনীতি, জীবিকাসহ সবকিছু প্রায় লণ্ডভণ্ড। জনজীবন যখন একটু সচল হওয়া শুরু করেছে, তখনই আছড়ে পড়েছে সংক্রমণের নতুন ঢেউ। চলতি জুলাই মাসের প্রথম ০২ দিনের সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ৩০০০...
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি ড. ইউনূসের পক্ষে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। এতে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত আইনের নানা ভুল ব্যাখ্যা এবং অসত্য তথ্য দেয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংক কোন বেসরকারি ব্যাংক নয়, এটি একটি statutory public authority বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ/প্রতিষ্ঠান। সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বলতে সে সকল প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়, যে প্রতিষ্ঠান কোন নির্দিষ্ট আইনের দ্বারা সৃষ্ট এবং আইনে উল্লেখিত বিধানাবলীর আলোকে ঐ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়...
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন সকালে আমার আশি উর্ধো বয়সী মা’র ফোন পেলাম। সালাম বিনিময়ের পর মা বললেন, ‘বাবা, পদ্মাসেতু দেখতে যামু’। আমি বললাম, ‘এখনতো ভীড়, কয়েকদিন পর যাই, মা’। উত্তরে মা বললেন, ‘কাইল-পরশু চলো পদ্মাসেতু দেখতে যাই। গাড়ী দিয়া পদ্মা পার হইয়া বাপের বাড়ি যামু, তোমার দাদা বাড়ি যামু’। আমার মা আবেগ তাড়িত হয়ে স্মৃতিপট থেকে তুলে এনে জানালেন, মা’র বিয়ের পর প্রথম যখন আমার বাবার সাথে ঢাকা আসেন তখন আমি তার কোলে, ১০ মাসের শিশু আমার বড় ভাই আবুল হোসেন ৪ বছর বয়সে ডায়ারিয়া হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। তাই তড়িঘড়ি করে আমাকে নিয়ে ঢাকা আসা।
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি।
সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির পরদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। '২৫ জুন পর্যন্ত হরতাল বা নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না!' দেশের সমসাময়িক রাজনীতির ধারা হিসাব করলে এমন সম্ভাবনা আসলেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তারপর কি হলো? ৫ জুন পাবনার বেড়ার কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি। ৬ জুন রাজধানীর বছিলার জুতার কারখানা। ১০ জুন রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায়...