ইনসাইড থট

স্বাস্থ্য বাজেট এবং সুস্থ বাজেট


Thumbnail স্বাস্থ্য বাজেট এবং সুস্থ বাজেট

বাংলাদেশের ৫১ তম জাতীয় বাজেট পেশ হয়েছে, যার আকার ৬.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা। বিগত বছরের বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের অংক ১৪.২৪% বেশি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। প্রথম বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত ৫১ তম বাজেটের আকার প্রায় ৮৬৩ গুণ বেশী। সম্পূর্ণ ধংসস্তুুপের উপর দাঁড়ানো একটি সদ্যস্বাধীন দেশের বাজেটের আকার বর্তমানের তুলনায় নগণ্য, কিন্তু সে বাজেটে দেশের পূনগঠন, উন্নয়ন, পূর্নবাসন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পল্লী উন্নয়ন এবং আয় বৈষম্য কমানোর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ছিল। বর্তমানের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৩৬,৮৬৩ কোটি টাকা, বিগত বছরে যা ছিল ৩২,৭৩১ কোটি টাকা। বিগত বছরে স্বাস্থ্য বাজেট ছিল জাতীয় বাজেটের ৫.২%, বর্তমান বছরে অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে (৫.৪%)। স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রস্তাবিত এ বাজেট সন্তোষজনক কিনা বা তা কিরূপ হওয়া উচিৎ, এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞবৃন্দের আলোচনা/প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রচার/প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বাজেট দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির অবস্থা উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কিনা, সেটাই পর্যালোচনার বিষয়। এতে সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া গেলেই স্বাস্থ্য বাজেটকে সুস্থ বাজেট বলা যাবে।

বাংলাদেশের সংবিধান স্বাস্থ্যকে জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানের ১৮(১) উপানুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে “জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী কোন রোগ বা পঙ্গুত্ব না থাকলেই ভালো স্বাস্থ্য বলা যাবে না। ভালো স্বাস্থ্য হচ্ছে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সম্পূর্ণভাবে সামাজিক বিকাশলাভের একটি অবস্থা। তৃতীয় বিশ্বের যে কোন দেশে রোগবিহীন সামাজিক বিকাশলাভের এ অবস্থা তৈরীতে সময় লাগবে, সন্দেহ নেই। তবে স্বাস্থ্য বাজেট ও কর্মসূচিতে এরূপ অবস্থা সৃষ্টির রূপরেখা, ভিত তৈরী এবং ক্রমান্বয়ে তা উন্নয়ন ও দৃশ্যমান করার প্রস্তাবনা ও বরাদ্দ থাকা বাঞ্চনীয়। তাহলেই স্বাস্থ্য বাজেট সুস্থ বাজেট হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে। 

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শুরু থেকেই গলদ। উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা একটা চিকিৎসামূখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পেয়েছি। যেখানে রোগীকে চিকিৎসা করাটাই মুখ্য, কেউ যাতে রোগী না হয় এজন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী সেখানে গৌণ। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এ অবস্থা থেকে আমরা খুব একটা বের হতে পেরেছি, তাও নয়। আমাদের চিকিৎসক ও নার্স সংখ্যা অপ্রতুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র/হাসপাতাল কম, হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা কম, বাজেট কম, এসব কথাই বিভিন্ন আলোচনায় বা প্রকাশনায় প্রতিধ্বনিত হয়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি অপর্যাপ্ত, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কম, স্কুল হেলথ কর্মসূচি খুবই অপ্রতুল বা প্রায় নেই-এ সম্পর্কিত আলোচনা বা প্রকাশনা অনেক কম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট “পাবলিক এক্সপেনডিচার রিভিউ” নামে ১৯৯৭-২০১৪ সময়কালের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় নিয়ে ২০১৫ সালে একটা প্রকাশনা বের করেছিল। অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। পরবর্তী সময়ের তথ্য সম্বলিত প্রকাশনা এখন প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, ছাপাখানায়। ২০১৫ সালের উক্ত প্রকাশনার ব্যয় চিত্রে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যয় ১৯৯৭ সালে ৪৭% থাকলেও তা ২০১২ সালে ৩৬% এ নেমে এসেছে। পরবর্তী সময়কালের চিত্র এ গতিতে নেমেছে না বেড়েছে, তা অচিরেই জানা যাবে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য কর্মসূচির চিত্র বলে না যে এ অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়েছে।

দেশের জনসংখ্যা ১৯৭২ এর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেলেও জন্মহার ও মৃত্যুহার কমেছে, শিশু বয়সী জনসংখ্যা কমেছে, পরিবারের আকার বা জনসংখ্যা কমেছে, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে এবং সংক্রামক রোগ কমেছে। সংক্রামক রোগ কমানোর ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সবচেয়ে ভালো অবদান রেখেছে। স্বাধীনতার পরে যেখানে শিশু বয়সী জনসংখ্যার (০-১৪ বছর) হার ছিল ৪৫.২%, এখন তা ২৬% নেমে এসেছে। বেড়েছে কর্মক্ষম জনসংখ্যা এবং বয়স্ক লোকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই অসংক্রামক রোগের হার বেড়েছে দ্রুত গতিতে, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন প্রয়োজন। অথচ এখানেই আমাদের বাজেট ও কর্মসূচিতে ঘাটতি অনেক বেশি।

অসংক্রামক রোগের মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। বাংলাদেশ হেলথ এন্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে (বিডিএইচএস), ২০১৭-১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ৩৫ বছর ও তদুর্ধ বয়সী নারীর ৪৫% উচ্চ রক্তচাপে এবং ১৪% ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০১১ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ৩২% ও ১২%। এ বয়সী পুরুষের ৩৪% উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, যা ২০১১ সালে ছিল ১১%। যেহেতু এ হার প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তাই বর্তমানের চিত্র আরো অনেক বেশি। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৬৬% পুরুষ এবং ৫০% নারী জানেন না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। যারা জানেন, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রোগ নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না, আর একটি অংশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। শুধুমাত্র ১৫% নারী এবং ৯% পুরুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন। ফলে স্ট্রোক, হƒদরোগ, কিডনী রোগ, ¯œায়ুতন্ত্র ও চোখের রোগ এবং অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব রোগের কারণে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা। চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা বৃদ্ধি এ অবস্থা নিরসনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনবে না। স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরী এবং রোগ প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি ছাড়া এসব লাগামহীন মারণঘাতী রোগের কাফেলাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।

উদ্দীপন নামের এনজিও তাদের ১২৩ টি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা শুরু করেছে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগী সনাক্ত এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার এ কার্যক্রমে প্রোব বাংলাদেশ লি. তাদের ডায়াগনস্টিক সার্ভিস প্রদান করে। গত ১০ মাসে উদ্দীপন ৩৪৬ টি পুলিশ ফাঁড়ি/থানাসহ তৃণমূল পর্যায়ে মোট ১৭,২৬৮ টি স্বাস্থ্য ক্যাম্পে ২,৯৬,৬৪৯ জন মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে। এদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার ৪১% এবং ডায়াবেটিস বা উচ্চ মাত্রার সুগার আছে এমন সংখ্যা ২৫%। উদ্দীপনের স্বাস্থ্য ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের তথ্য প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন আইডিসহ উদ্দীপনের ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে। উদ্দীপনের এ কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারণের বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। তাছাড়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি ইউনিক হেলথ আইডির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও রিপোর্ট সংরক্ষণ করে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করা যেতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির বরাদ্দ ০.৯৫%। এ হার সবসময় জিডিপির ১% এর নীচেই থাকছে অব্যাহতভাবে। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে চিকিৎসায় জনগণের নিজস্ব/ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়ছে। চিকিৎসায় ব্যক্তিগত ব্যয় দক্ষিণ এশিয়া এবং সার্কভূক্ত দেশের মধ্যে আফগানিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজস্ব খরচের হার ক্রমাগত বেড়েছে কয়েক দশক ধরেই । ১৯৯৭ সালে এর হার ছিল ৫৫% যা এখন ৭৪% এ উন্নীত হয়েছে। ডায়াগনস্টিকের প্রয়োজনীয় সকল টেস্ট সরকারি হাসপাতালে করার সুযোগ না থাকা বা কোন কোন ক্ষেত্রে  সংশ্লিষ্ট যন্ত্র খারাপ থাকায় এ খাতে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুপুরের পরে সরকারী হাসপাতালে ল্যাব সার্ভিস পাওয়া যায় না। এসব কারণে রোগীর খরচ বাড়ছে এবং হাসপাতালে অবস্থান দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ভারতসহ অনেক দেশে মাঠ পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালেই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে দিবারাত্রি ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান করে। এতে যেমন খরচ কম হয়, তেমনি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সরকারের বাড়তি খরচ, দূর্নীতি বা অপচয় রোধ এবং মেরামত সংক্রান্ত সময়ক্ষেপণ কমানো য়ায়।

স্বাধীনতার পরে টিএফআর (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) বা একজন মা কতজন সন্তান জন্মদান করেন তার সংখ্যা ছিল ৬.৩। এখন তা ২.২ এর নীচে নেমেছে। নারী শিক্ষা জন্মহার নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রেখেছে । বিডিএইচএস এর  প্রতিবেদন অনুযায়ী নিরক্ষর বা প্রাইমারী পাশ মায়েদের সন্তান সংখ্যা যেখানে গড়ে ২.৬ জন, সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষিত মায়েদের গড় সন্তান সংখ্যা ২.২ জন। খুলনা বিভাগে টিএফআর ১.৯ অর্থাৎ রিপ্লেসমেন্ট লেভেলের নীচে নেমেছে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতো হবেই না, বরং কমবে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে তা একটু বেশী। অথচ স্বাধীনতার পরে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের যে জনবল ছিল, এখনও তা আছে। এ জনবলের একটা অংশকে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নিযুক্ত করা যেতে পারে। বাড়ীতে এখনও ৫০% সন্তান প্রসব হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে প্রসব হয় ৫৩%, অপর ৪৭% অপ্রশিক্ষিত/প্রশিক্ষিত ট্রাডিশনাল বার্থ এটেনডেন্ট বা দাই এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। পরিবার পরিকল্পনা খাতের মাঠ পর্যায়ের জনবলের একটা অংশকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মিডওয়াইফ হিসাবে রূপান্তর, শূন্য পদে মিডওয়াইফ নিয়োগ এবং এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

পুষ্টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য খাত। মাঠ পর্যায়ে বা হাসপাতালে এ খাতের জনবল যেমন নেই, কর্মসূচিও তেমনি দৃশ্যমান নয়। ছোটকাল থেকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরী এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যে স্কুল হেলথ কর্মসূচির কোন বিকল্প নেই। এ কর্মসূচিও খুবই অপ্রতুল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে স্কুল হেলথ কর্মসূচি গ্রহণ এবং এ খাতে বাজেট বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন আছে। এ সকল দিক ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতের অনেক বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ ও উন্নয়নের সুযোগ আছে, যা স্বল্প পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এরূপ কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকলে স্বাস্থ্য বাজেট সুস্থ্য বাজেট হিসেবে অবদান রাখতে সহায়ক হবে।


স্বাস্থ্য বাজেট   বাজেট  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন