ইনসাইড থট

ইউক্রেনের সংঘাত, দেশীয় রাজনীতি এবং ভবিষ্যত (২য় পর্ব)

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৭ জুলাই, ২০২২


Thumbnail ইউক্রেনের সংঘাত, দেশীয় রাজনীতি এবং ভবিষ্যত (২য় পর্ব)

সাম্প্রতিক একটি CNN সাক্ষাত্কারে, যুদ্ধবাজ, ইরাক আর আফগানিস্তানের সরকার পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ এবং মুসলিম বিরোধীদের একজন প্রবক্তা পরিকল্পনাকারী, জন বোল্টন গর্ব করে বললেন "আমি এমন যে কেউ যিনি অভ্যুত্থানের (coup d’etat) পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছি - এখানে (USA, ৬ই জানুয়ারি) নয় কিন্তু, আপনি জানেন অন্যান্য দেশে - অভ্যুত্থানের (coup d’etat) জন্য অনেক কাজ আর পরিকল্পনাকা করতে হয়..." এটি একটি বিস্তৃত এবং সাধারণ জ্ঞান যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আমেরিকার সিআইএ আর যুক্তরাজ্যের MI6 ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেক-এর মতো অনেক বিশ্বনেতাকে উৎখাত করেছে, এমনকি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদেরও হত্যা করেছে এবং শাসন পরিবর্তনের জন্য অভ্যুত্থান ঘটাতে সাহায্য করেছে, অগণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্মম স্বৈরশাসকে (যারা তাদের কোলের কুকুর হয়ে থাকবে) চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা আরো জানি প্রায় ৫০০০০০ থেকে ১২০০০০০ লাখ ইন্দোনেশিয়ান মানুষকে সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকারের প্ররোচনায় কমিউনিস্ট এবং অবিশ্বাসীদের থামানোর নামে গণহত্যা করা হয়েছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা ন্যাটো দেশগুলি দ্বারা সমর্থিত ছিল। ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণরা (যারা তাদের প্রতিটি কর্মদিবস ব্যয় করে গণতন্ত্রের আমেরিকান মূল্যবোধ, মানবাধিকারের বর্ণনা বজায় রাখার নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জন্য হুমকি হিসাবে দেখা সরকারগুলিকে দুর্বল করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে) বোল্টনের এই সত্য স্বীকার আর প্রকাশের জন্য দারুন রাগান্বিত, অসন্তুষ্ট, অনুমানযোগ্যভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জন বোল্টন বলেন, অভ্যুত্থান ঘটাতে তারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তার মধ্যে একটি হলো সেই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অশান্তি, জীবনমানের অবনতি, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সংবাদপত্র ব্যবহার করে গুজব মিথ্যাচার ছড়ানো এবং ভয় অস্থিরতা সৃষ্টি করা। ইদানিং কালের কিছু ঘটনা আর আলামত বিশ্লেষণ করে আমি আশ্চর্য হয়েছি যে আমরা কি এখন বাংলাদেশেও তেমন কিছু ঘটতে দেখছি? আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি এটি যেন না হয়।

 

চীনের বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে (যদিও চিনের বিনিয়োগ জাপান বা বিশ্বব্যাংকের চেয়ে কম); ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাশিয়ার খোলাখুলি সমালোচনা না করা, জাতিসংঘের প্রবিধানে তাদের পক্ষে ভোট না দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিছু চুক্তি বা জোট চুক্তিতে রাজি না হওয়া, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে সাহস সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা; অর্থনীতি এবং মানব উন্নয়নের সাথে আরও ভাল হওয়া এবং পশ্চিমা হুকুম মেনে না নেওয়ার কারনে সেই শক্তি কিছু ঘটনা ঘটার পরিকল্পনা করছে কি!!! যেমন তারা ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে খাদ্য আমদানি করতে না দিয়ে বাংলাদেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। আমি শুনেছি বিএনপি দলের স্বেচ্ছাসেবক শাখার একজন নেতা ১৫ আগস্টের গণহত্যার কথা উল্লেখ করে "আরেকটি ১৯৭৫হুমকি দিয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মম, অতি নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, এমনকি তার ছোট সন্তানকেও রেহাই দেয়নি। "আরেকটি ১৯৭৫ তৈরি করার" হুমকি ছিল একটি নির্বাচনে পতিপক্ষ দলকে পরাজিত করার চেষ্টা না করে রক্তস্নানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার সম্ভাব্য প্রচেষ্টার একটি স্পষ্ট নির্দেশক। বিএনপির প্রধান সহযোগী জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে। সারা দেশে গ্রামে গ্রামে কমিটি করেছে। অনেকেই মনে করেন, জামায়াত গত বছর দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছিল, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছে বা করছে। কিছু দল আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা বার বার দেখছি চিনের ভয় দেখিয়ে ক্রমবর্ধমান মিথ্যাভাবে শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

 

বাংলাদেশের ৭টি অনলাইনে পাওয়া পত্রিকা সহ, প্রথম আলো ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ আমি প্রতিদিন পড়ি। ইউটিউবের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের টিভি টক শো গুলো দেখি। সেদিন ডা: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের লেখাবড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যপ্রবন্ধটি পড়লাম। তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই, যখন বাংলাদেশ কখনো ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি, ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কার কথা বলে বিভ্রান্তি ভয় তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। আমি এখানে ব্যাখ্যা (paraphrasing) করছি, তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ না নিলে বাংলাদেশ আরেকটি শ্রীলঙ্কায় পরিণত হবে। যখন উন্নত দেশগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দেশে ক্রমবর্ধমানে অর্থ প্রেরণ করবে?! স্বাভাবিকভাবেই রেমিট্যান্স একই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রাখছে না কিন্তু এখনও তা খারাপ নয়। আমরা দুই ঈদেই রেমিট্যান্স বাড়তে দেখেছি। বাংলাদেশ সরকার হুন্ডি বন্ধে প্রণোদনা বাড়িয়েছে। সেইসাথে প্রায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করছে। বাংলাদেশ কল্পনাপ্রসূত প্রকল্পে যাত্রা করেনি কিন্তু সেগুলিতে বিনিয়োগ করেছে যা ভবিষ্যতে সম্পদ তৈরি করবে। ডা: ভট্টাচার্যের IMFএর একজন ভাড়া করা লবিস্টের মতো বাংলাদেশকে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন যদিও এর আগের দিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আইএমএফ থেকে কোনো ঋণের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেননি বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণ নিলে, ঋণের বোঝা আরো বাড়ালে বাংলাদেশ কিভাবে তা ফেরত দেবে। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে IMF অনেক সময়ে অর্থ ঋণ দেয় যাতে দেশগুলো সেই টাকা দিয়ে তাদের চলতি ঋণ আর ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারে, যাতে করে তারা ঋণ খেলাপি না হয়, অধিকাংশ সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করার জন্য নয়। IMF এর দেয়া টাকা আরেকটা ঋণ, যা সুধ আর প্রশাসনিক খরচ সহ শোধ করতে হবে। এই ঋণ অনেক কঠোরতা ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। আমি আশা করি তিনি বিশ্বব্যাংক আইএমএফ কর্তৃক আরোপিত কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির (Structural Adjustment Programme) কথা ভুলে যাননি। আমি তখন ডেন হেগে, নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল সম্পর্কে পরামর্শ দিতে একজন সিনিয়র জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছিলাম এবং আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল কিভাবে গরিব আর উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের উপর আরোপিত কঠোরতা কর্মসূচির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত সহ অন্যান্য সামাজিক খাতগুলো। তাই দেবপ্রিয়র এই IMF থেকে ঋণের উপদেশ, ঋণ পরিশোধে ধাক্কা আর অসুবিধা সম্পর্কে তিনি আগে যা বলেছেন তার বিপরীত।

 

আমি দেবপ্রিয়কে চিনি এবং তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি অবশ্যই স্বীকার করবে যে প্রাথমিকভাবে আমরা তার ব্যক্তি হিসেবে আকর্ষণ দেখে গর্বিত ছিলাম। তিনি একজন কমনীয় ব্যক্তিত্ব সম্পুর্ণ লোক এবং খুব মসৃণ বক্তা। যখন আমি জেনেভাতে ডব্লিউএইচও-তে ছিলাম, তিনি বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনের প্রধান এবং হাইকমিশনার হিসেবে এসেছিলেন। অনেকবার আমি তার এবং তার পরিবারের সাথে আমাদের বাড়িতে এবং অন্যদের বাড়িতে ব্যক্তিগত ডিনার খেয়েছি, সময় কাটিয়েছি। আনেক বার তিনি আমাদেরকে তাঁর সরকারি বাসভবনেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার (গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা নয় আমি বলি সামরিক অভ্যুত্থানের নেতাদের) দ্বারা তার চাকরি পেয়েছিলেন এবং তিনি সেই সময়টিকে খুব ধূর্ততার সাথে ব্যবহার করেছিলেন নিজেকে পরিচিত করতে। তিনি নিজেকে দুর্দান্তভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে প্রচার করেছিলেন। তিনি এখন পরিচিত, জেনেভা পোস্টিং তাকে সে ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছে। তিনি একজন পেশাগত কূটনীতিক নন, কিন্তু আমি ভাবছি যে তিনি কখনও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা এই সুযোগটি পেতেন কিনা। অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে কোনো পরামর্শ না দিয়েই, এখন তিনি শুধু বাংলাদেশ সরকার কী ভুল করছে তা নিয়ে কথা বলেন এবং আমরা এখন পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তা নিয়ে গর্ব করে খুব কম কথা বলেন। তিনি দাবি করেন তিনি একজন স্বাধীনচেতা চিন্তাবিদ। ভাবছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাখতেন তাহলে তিনি কী বলতেন বা লিখতেন!

 

তারপর প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক শরফুদ্দিন আহমেদের লেখাটিলোডশেডিংয়ের তো জাদুঘরে থাকার কথা, বাইরে এল কেমনে?” পড়লাম। এটি ভয় এবং নেতিবাচকতায় পূর্ণ, বিশৃঙ্খলার অনুভূতি দেয় এই কথা বলে যে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। হ্যাঁ বাংলাদেশের দামি গ্যাস জ্বালানি কিনতে সমস্যা হচ্ছে, ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। দাম বাড়ছে, সরকারকে লোড শেডিং এবং বিদ্যুতের সময়সীমা চালু করতে হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং এখন .৫৬%; টাকার কিছুটা অবমূল্যায়ন হচ্ছে, সন্ধ্যা ৮টার পর দোকান বন্ধ করতে এবং আলো নিভিয়ে দিতে হচ্ছে। আগেও ছিল, এখনও সব খাতে দুর্নীতি বাড়ছে। লেখাটা পড়ে মনে হবে বাংলাদেশ যেন একটা দ্বীপে অবস্থিত দেশ, আর আমরা সেখানে বসবাস করছি এবং সেখানে বাহ্যিক পরিবর্তন যেমন কোভিড বা ইউক্রেন যুদ্ধ, বা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আমি এই লেখককে চিনি না, তাই তিনি আসলে কে সে সম্পর্কে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। তবুও বলব, এই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের জন্য আমার একটি নাম আছে কিন্তু সুশীল হিসেবে থাকার জন্য আমি এখানে তা লিখব না। বহু বছর ধরে আমি আমার আন্তর্জাতিক আনেক কাজে দেখেছি কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীকে টাকা দিয়ে কেনা বা বেচা যায় কারণ তাদের অনেকেরই কোনো দেশ প্রেম, আত্মমর্যাদা, বোধগম্যতা, গর্ব অনুভূতি বা সততা নেই। ভদ্যলোক মনে হয় সইচ্ছায় বলেননি বা ব্যাখ্যা করেননি কি কারনে আর শুধু কি বাংলাদেশেই এই পরির্বতন আর অসুবিধা গুলো হচ্ছে? আসুন অন্যান্য দেশে কী ঘটছে তা দেখা যাক।

 

আরেকটি এই তথাকথিত কিছু দল আর বুদ্ধিজীবীদের অভিযোগ আর তাদের মিথ্যা প্রচারের বিষয় হল, মূল খরচ থেকে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তারা জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এই বলে যে সরকার যেন জেনেশুনে ইচ্ছা করে দুর্নীতি করার জন্য তা করছে। যেন কোভিড এবং লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ পণ্য পরিবহনের ঘাটতি সময় আর খরচ বৃদ্ধির কোন কারন নয়। আমরা কি জানি আজকাল একজন ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য কতমাস অপেক্ষা করতে হবে - সরবরাহ-চেইন সমস্যার কারণে নজিরবিহীন অন্তত কয়েক মাস বিলম্ব করতে হবে। আমি বলছি না, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আর ব্যবস্থাপনার কোনো দোষ নেই। আমি একমত যে সরকারকে অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে কিন্তু এটি কি কেবল বাংলাদেশেই ঘটছে। এখানে সুধু একটি উধারন উল্লেখ করি। সুরক্ষা পরীক্ষা এবং সংকেত সিস্টেমের সমস্যাগুলির কারণে বিলম্বিত, এমনকি মহামারী শুরু হওয়ার আগে, লন্ডনের ক্রসরাইল সাড়ে তিন বছর দেরিতে খুলেছে এবং মোট খরচ ১৮. বিলিয়ন পাউন্ড (২৩. বিলিয়ন ডলার) যা বাজেটের চেয়ে বিলিয়ন পাউন্ডেরও (২১.%) বেশি (কতটা পদ্মা সেতু তৈরি করার খরচের সমান তা)

 

বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে কী ঘটছে সে সম্পর্কে কথা বলা যাক। সম্প্রতি জেনেভায় আমরা আমাদের গাড়ি জন্য পেট্রোল কিনতে গিয়েছিলাম। আমরা যখন কাউন্টারে পেমেন্ট করতে গেলাম, উচ্চ মূল্য এবং বেশ মোটা খরচের বিল দেখে বললাম, "দুঃখিত এটা আমাদের বিল হতে পারে না পেট্রোল পাম্পের দোকানদার শুধু মুচকি হাসলেন। জ্বালানি দাম এত বেড়েছে ভাবতেই অবাক লাগছে। কূটনৈতিক অবস্থার কারণে আমাদের সুইজারল্যান্ডে কোন ট্যাক্স বা ভ্যাট দিতে হয়না। তাই যারা ট্যাক্স বা ভ্যাট দেয়, তাদের খরচ এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করুন তো? জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে গেছে দেখে আমরা সম্পূর্ণ বিস্মিত হয়েছি। ভাবতে পারেন বাংলাদেশ সরকার যদি সেই অনুযাযী জ্বালানি আর বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, তাহলে কেমন অস্থিরতা বাড়বে! রাজনৈতিক দল এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে লিখবেন এবং টকশোতে বলবেন? কিন্তু যদি তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো পরিণতির জন্য বিশ্বের সবার মত আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিনামূল্যে কিছুই আসে না তাই আমাদের হয়ত জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে।

 

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ আমি লিভারপুলে ছিলাম, দেখলাম খাবার এবং নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আগের সমান খরচে মাএ অর্ধেক ট্যাংক ভরতে পারলাম। আমি ভাবছিলাম নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি এই বৃদ্ধির সাথে কিভাবে মোকাবিলা করছে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যাদের বাড়ি ভিত্তিক সহায়তা প্রদানের জন্য তাদের গাড়ি ব্যবহার করতে হয় তারা পেট্রোল খরচ আর বহন করতে পারছে না। যদিও এখনও তারা শুধু কিছু ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে যখন জ্বালানির দাম অর্ধেক ছিল সেই হারে। তাদের মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশাল ঋণের কারণে ঋণের সুদ পরিশোধ গত মাসে বেড়ে £১৯. বিলিয়ন হয়েছে, গত বছরের জুনের তুলনায় £১০. বিলিয়ন বেশি এবং ১৯৯৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ - অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র মাসিক সুদ প্রদান, আমাদের সরকারের মাসিক বা বাৎসরিক বাজেট পরিমান কি তা ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুন সুধু মাএ সেই পরিমান মাসিক সুদ দিয়ে আমরা কত পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারতাম। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, পরিবারের আর্থিক পতন এবং ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসের জন্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দুর্ভাগ্যবশত এখনও সরকারকে আরো ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি এখন .% শ্রমিকের ঘাটতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট যুক্তরাজ্যের আরও অনেক রেস্তোরাঁকে তাদের দরজা বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। রেল, বিমান, চিকিৎসা খাতের কর্মচারির পাশাপাশি আইনজীবীরা ধর্মঘট করছেন। উচ্চ জ্বালানি খরচের প্রতিবাদে মহাসড়কে কিছু গাড়ি রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় রাজনৈতিক মাথাব্যথা কারন হয়ে উঠছে।

 

ঘরে বসে সরকারের অনুদান পাওয়ায় আর কম ব্যয়ের জন্য মার্কিন পরিবারগুলি মহামারীর আগের তুলনায় আরও আরামদায়ক আর্থিক অবস্থানে রয়েছে, তবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সেই লাভগুলিকে ক্ষয় করতে শুরু করেছে, নিরাপত্তাহীনতা এবং মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ক্ষোভের অনুভূতি জাগিয়েছে। এক বছরের আগের তুলনায় আর্থিকভাবে ভালো থাকার কথা বলে পরিবারের অনুপাত ২০২১ সালের মে ৪২% থেকে ২০২২ সালের মে মাসে ৩৭% নেমে এসেছে। যারা বলছে তারা খারাপ অবস্থায় আছে ২২% থেকে লাফিয়ে ৪৬%হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ২৮.৪৩ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি % কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অনুসারে, ২০২১ অর্থবছরের জন্য সরকারী ঋণের সুদ $৪১৩বিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ২০৩১ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী যা $৯১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছাবে। আপনি যদি ২০২১ সালে ৩৩২. মিলিয়ন লোকের (ইউএস সেন্সাস ব্যুরো) মার্কিন জনসংখ্যার অনুমান নেন, তবে $২৮.৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ঋণের বোঝা $৮৬,০০০-এর বেশি সমতুল্য হবে।

 

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি .% এই সমস্ত দেশ জনগণকে তাদের বাড়ি গরম করার সিস্টেম এবং গ্যাসের শিল্প ব্যবহার কম বা বন্ধ করতে বলছে। বন্ধ করা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আবার শুরু করছে (আমি শুনেছি জাপান সম্প্রতি বাংলাদেশে দ্বিতীয় মেগা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই সম্মত ঋণ দিতে অস্বীকার করেছে) ফ্রান্স তাদের বন্ধ করে দেওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালু করছে। সুইজারল্যান্ড একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এতে বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান থেকে শক্তি সাশ্রয়ের আহ্বান, যেমন দোকানের জানালার লাইট এবং হিটার বন্ধ করা, প্রায় ৩০,০০০ বৃহৎ শক্তির শিল্প গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ রেশন করা। সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা হিসাবে দিনে চার থেকে আট ঘন্টা পর্যন্ত দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ বন্ধের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। বিদ্যুতের ঘাটতি হলে পরিকল্পনাটি কার্যকর করা হবে, সুইস ইলেকট্রিসিটি কোম্পানির অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান (ভিএসই), মাইকেল ফ্রাঙ্ক তা জানিয়েছেন।

 

সুইডেন প্রায় ১০% মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও পেনশনধারীরা এখন বেশি পেনশন ভাতা পাচ্ছেন কিন্তু অনেকের মতো পরিষেবাধারীরা খুব কম বেতন বৃদ্ধি এবং কোনো ভর্তুকি ছাড়া জীবনযাত্রার সংকটের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবেলা করতে লড়াই করছে। এমনকি তুলনামূলকভাবে উচ্চ বেতনের কর্মকর্তা বলছেন "এটি অসহনিয় এবং মাথা খারাপের কারন হয়ে দাডিয়েছে"

 

গত সপ্তাহে জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী দেশটির গ্যাসের ব্যবহার কমাতে জরুরি পদক্ষেপের একটি নতুন তরঙ্গ ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের ফলে ক্রমাগত সরবরাহ শৃঙ্খলের ঘর্ষণ, অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ শক্তি এবং উচ্চ পণ্যমূল্যের পরিস্থিতিতে, জার্মান অর্থনীতিকে একটি প্রযুক্তিগত মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উচ্চ বিদ্যুতের দাম এবং গ্যাসের ঘাটতির হুমকি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। কোম্পানিগুলি আগামী মাসগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ ব্যবসায়িক কার্যকলাপের ভবিষ্যদ্বাণী করছে।

 

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং চীনের কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউনের জন্য দায়ী বিশ্ব অর্থনীতির উপর ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা, জাপানের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী, টেকসই প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দিয়েছে।

 

পাউন্ড এবং ইউরোর মূল্যও মার্কিন ডলারের বিপরীতে হ্রাস পাচ্ছে। ভারতীয় রুপিও তার মূল্য হারাচ্ছে, এখন প্রতি ডলার ৮০ রুপি। পাকিস্তানি রুপিও দ্রুত মূল্যায়ন হয়ে আজ তা প্রতি ডলারে ২৩১ রুপি। ভারতীয় মুদ্রাস্ফীতি আজ .০৪% এবং পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি ২১.৩২% বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন মন্দার পূর্বাভাসের সাথে বাংলাদেশে এর প্রভাব পরবে তা তো স্বাভাবিক। ভবিষ্যতের জন্য জনগনকে জানাতে এবং প্রস্তুত করতে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিথ্যা, গুজব আতঙ্ক ছড়াবেন না।

 

প্রশ্ন আর সমাধান বাংলাদেশে শাসন বা সরকার পরিবর্তন বা কোনো অভ্যুত্থানে নয়, বরং পশ্চিমা শক্তিকে তাদের আধিপত্য, দ্বৈত নৈতিকতা ভণ্ডামি বন্ধ করতে হবে। আধিপত্য আধিপত্যের কথা ভুলে যেতে হবে এবং ইউক্রেনের এই প্রক্সি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। রাশিয়া পশ্চিমকে বসতে হবে এবং যুদ্ধ নৃশংস নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলি যদি ভারত বা চীন বা সৌদি আরবের মতো সস্তায় যেখানেই জ্বালানি খাদ্য কিনতে চায়, তাকে হুমকি দেবেন না। পশ্চিমা দেশগুলি কিছু সময়ের জন্য এই দুর্দশা সহ্য করতে পারে তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির সেই ক্ষমতা এবং বিলাসিতা নেই। রাশিয়া এবং পশ্চিম দয়া করে এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ করুন। আসুন কিছু স্বাভাবিকতায় ফিরে যাই, আসুন আমরা সম্প্রীতির সাথে একসাথে বাস করি। এই সংকটময় মুহূর্তে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে বাঁচাতে হবে। আসুন আমরা নিজেদেরকে বিক্রি করে, কঠোর সংগ্রাম করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অর্জন করা আমাদের দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করি। আমরা অবশ্যই এবং শীঘ্রই একসাথে এই জটিল পরিস্থিতি এবং কষ্ট কাটিয়ে উঠব। আসুন একটি স্বাধীন গর্বিত জাতির গর্বিত মানুষ হই।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন