ইনসাইড থট

শেখ কামাল: তারুণ্য যখন মানুষকে মহিমান্বিত করে


Thumbnail শেখ কামাল: তারুণ্য যখন মানুষকে মহিমান্বিত করে

শেখ কামাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রথম পুত্রসন্তান। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৭৩ বছর (জন্ম ৫ আগস্ট, ১৯৪৯)। ঘাতকরা তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের  সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে হত্যা করেছিল। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন আমি বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিছু সময় কাটাচ্ছি শেখ কামালের শৈশবের বন্ধু ইফতেখার হোসেন ডালিমের সঙ্গে তার বাড়িতে। ইফতেখার আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। ১৯৭৪ সালের পর ইফতেখারের সঙ্গে দেখা হলো এবার। দীর্ঘদিন সে প্রবাসে। রাতে শেখ কামালের সঙ্গে কাটানো তার সেই শৈশবকালের স্মৃতি হাতড়ে অনেক কথা বললো। যা অনেকটা ব্যক্তিগত। ইফতেখারের বাবা প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ছিলেন তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কমিশনার ও প্রধান প্রকৌশলী। যমুনা সেতু নির্মাণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ইফতেখারের কাছে জানতে চাই কেমন মানুষ ছিলেন শেখ কামাল? ইফতেখার এক কথায় বলে, তখনকার আর দশটা তরুণের মতো প্রাণোচ্ছল। বলে, ‘নিয়মিত আমি আমাদের বেইলি রোডের সরকারি বাড়ি থেকে বিকালে সাইকেল নিয়ে কামালের বাড়িতে যেতাম। কামালেরও তখন একটা সাইকেল ছিল। দুজনে বের হতাম ধানমন্ডি এলাকায় ঘুরতে। সাথী হতো আরও কয়েক বন্ধু’। একসময় ইফতেখাররা ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে নিজেদের বাড়িতে ওঠে। তখন অনেক সময় সে কামালের সঙ্গে সকাল-বিকাল আড্ডা মারতে তাদের বাড়িতে যেতো। কথা বলতে গিয়ে ইফতেখার কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলো। তাকে আর প্রশ্ন করি না। ফিরে আসি নিজের স্মৃতিতে।

শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক দুই বছর নিচে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। কলাভবনের একই ভবনে আমাদের বাণিজ্য ও শেখ কামালের বিভাগ। শেখ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরিচিত হতে শুরু করে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের বড় ছেলে হিসেবে। তখন  ঊনসত্তরের গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিদিন সভা আর মিছিল। মিছিলে শেখ কামাল প্রায় প্রতিদিন তার বন্ধুদের নিয়ে যোগ দেয়। তবে কোনও বক্তৃতা দিতে কখনও দেখা যায়নি। আর দশ জনের সাথে সভা শেষে আমাদের সাথে মিছিল করেছে। এখনকার দিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হয়তো শরিফ মিয়ার ক্যান্টিনের নাম নাও শুনতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের পেছনে একটি ছোট বেড়ার ঘর। ওপরে টিনের ছাউনি। ভেতরে দুটি টুলে ছয় জন বসতে পারে। এক প্লেট তেহারি আট আনা। দুই প্লেটে দুপুরের খাওয়া হয়ে যায়। বিকালে ঘিয়ের সুগন্ধিওয়ালা সিঙাড়া। শরিফ মিয়ার সহকারী রমজান। খাবার পরিবেশন করে আর কাপ-প্লেট ধুয়ে রাখে। আমার সাথে শেখ কামালের প্রথম দেখা ও কথা সেই শরিফ মিয়ার ক্যান্টিনে। হেঁটে এসে সে দেখে ভেতরে বসার জায়গা নেই। আমি একটু সরে বসে কামালকে পাশে বসতে বলি। জবাবে বলে সে সামনের লাইব্রেরি চত্বরে বসবে। সে তার তেহারি নিতে এসেছে। চলে যাওয়ার পর শরিফ মিয়া একটু উঁচু গলায় বলে ‘দুই টাকা’। কামাল হাত দেখান। এই হলো শেখ কামাল, যাকে আলাদা করে চেনার উপায় নেই। তবে তাকে চেনার একটা উপায় ছিল, তিনি প্রায়শ দেখতাম একটা লাল জিপ চালাতেন। পরে জেনেছি সেটি ছিল তার বন্ধু ইকবাল মাহমুদ টুকুর। পরে টুকু বিএনপিতে যোগ দিয়ে জ্বালানিমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিএনপি আমলে সুযোগ পেলেই সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে শেখ কামালের চরিত্র হনন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। বড় বড় নেতা টিভিতে এসে বলতো, শেখ কামাল বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করতে গিয়েছিলেন। একবার এই টুকু টিভিতে সত্যটি বলেন ‘ওই দিন ওই গাড়িতে (যেটার ওপর পুলিশ গুলি ছুড়েছিল) আমিও ছিলাম। আমরা কোনও ব্যাংক ডাকাতি করতে যাইনি। পুলিশ ভুলবশত আমাদের গাড়িতে গুলি চালালে কামাল আহত হয়েছিল’। কামালকে দেখতাম মাঝে মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে আসতেন। তখন আমার বিকালটা কাটতো খেলার মাঠে। সেখানে অন্য আরও অনেক ছাত্রীর সাথে সুলতানা আসতেন দৌড় প্র্যাকটিস করতে।

সুলতানা ছিলেন বেশ ফুটফুটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন একজন ভালো দৌড়বিদ হিসেবে। তাকে বলা হতো পূর্ব পাকিস্তানের গোল্ডেন গার্ল। কামাল সুলতানার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলে আবার চলে যেতেন। দুজনেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল।  পরে সুলতানার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই। মেহদির দাগ না শুকাতেই ১৫ আগস্ট সুলতানাকেও  হত্যা করেছিল ঘাতকরা।

শেখ কামালকে কেন মানুষ মনে রাখবেন? বঙ্গবন্ধুর সন্তান বলে?  সেটা তো তার জন্মগত সূত্রে পাওয়া । তা নিয়ে তার বা তার ভাইবোনদের কারও কোনও পৃথক অহমিকা কখনও ছিল বলে মনে হয় না। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে শেখ জামাল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে পড়তেন। জামাল বেশ দুরন্ত ছিলেন। অনেক দিন পর ছোট ভাই জেনেছে ও শেখ মুজিবের ছেলে। শেখ কামালকে মানুষ অনেক কারণে মনে রাখবেন। শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধুর সন্তান বলে শেখ কামালের কোনও অহংকার কখনও ছিল, তা তার শত্রুও বলতে পারবে না। তার বন্ধুর সংখ্যা দেখেছি অগুনতি। সবসময় একসাথে ক্যাম্পাসে ঘোরাফিরা করতো। কালো ফ্রেমের মোটা চশমা। বেশ বাহারি গোঁফ। কিছুটা কোঁকড়ানো ঘন কালো চুল। বলেছি আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কখনও নেতা হতে চায়নি বা কোনও পদপদবি দখল করতেও না। তবে একসময় তাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল আরও কয়েকজনের সাথে। এমন ছাত্রলীগ কর্মী কি এখন পাওয়া যাবে?

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেকটা পরিবারের অগোচরেই চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে। বাবা তখন পাকিস্তানের কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে কি ঘরে বসে থাকতে পারে? একইভাবে একদিন শেখ জামালও যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম সেনা অফিসার রিক্রুট আর ট্রেনিং হবে ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির মূর্তি ট্রেনিং ক্যাম্পে। ৬১ জনকে বাছাই করা হলো। শেখ কামাল তাদের একজন। বঙ্গবন্ধুর সন্তান বলে সে কোনও বাড়তি সুবিধা কখনও পায়নি। ভারতের সেনা অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য যেই বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এই ৬১ জনকেও তা-ই করতে হয়েছিল।

এই ৬১ জন বাঙালি তরুণের জন্য ক্যাম্পে তৈরি হলো বাঁশের ব্যারাক ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে। কোনও বিদ্যুৎ বাতি নেই। মশার উপদ্রব মারাত্মক। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও খুবই সাদামাটা। চারদিকে জোঁকে কিলবিল করছে। সেখানে ভারতীয় সেনা প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কঠিন প্রশিক্ষণ চলছে। অক্টোবরের ৯ তারিখ বাংলাদেশের প্রথম ৬১ জন সেনা অফিসারের কমিশন হলো। কমিশন প্যারেডে সালাম নিলেন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তারপর সকলে গেলো যুদ্ধের ময়দানে। শেখ কামালকে পদায়ন করা হলো বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে।

দেশে ফিরে শেখ কামাল কিছু দিন পর ফিরে গিয়েছিলেন বেসমারিক জীবনে। নতুন দেশে কত কাজ তখন শুরুর বাকি। কামাল বুঝতেন সব কাজ সকলকে দিয়ে হয় না। তার প্রথম অগ্রাধিকার দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সংগঠিত করা। শেখ কামালের দাদা ও বাবা দুজনই ক্রীড়া অনুরাগী ছিলেন। শেখ কামালের একটু সুবিধা ছিল তার দেহের উচ্চতার কারণে। আমার বন্ধু ইফতেখার জানালো, শাহীন স্কুলে পড়ার সময় ভালো বাস্কেট বল আর  ক্রিকেট খেলতেন কামাল। ক্রিকেটের প্রতি তার টানটা সম্ভবত একটু বেশি ছিল। তখনকার দিনের আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে ঢাকা লীগেও খেলেছেন শেখ কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তহল প্রতিযোগিতায়ও নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। বাবার মতো কামালও বিশ্বাস করতেন সংগঠন ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে সামনের দিকে বেশি যাওয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধের আগেই, ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৮ সালে ধানমন্ডি ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ কামাল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী ক্লাবের গোড়াপত্তন করেন শেখ কামাল, যেটি আজ দেশের একটি সেরা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান।

সম্ভবত শেখ কামালই এই উপমহাদেশে প্রথম একজন বিদেশি ফুটবল কোচ বিল হার্টকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছিলেন। এক কথায় বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনের আধুনিকায়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল শেখ কামালের হাত ধরেই।

শেখ কামালের বিচরণ শুধু যে ক্রীড়াঙ্গনে সীমাবদ্ধ ছিল তাই নয়, তিনি একজন সংগীতানুরাগীও ছিলেন। বড় বোন শেখ হাসিনার মতো ভর্তি হয়েছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত বিদ্যালয় ছায়ানটে। তালিম নিয়েছিল সেতার বাদনে। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শেখ কামালের ঘরে গেলে দেখা যায় তার বাজানো সেতারগুলো। একজন ব্যক্তির নিজ কক্ষ তার রুচির যে অনেক পরিচয় দেয় তা বুঝা যায় শেখ কামালের নিজ কক্ষ দেখলে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে মঞ্চনাটকের জগতে এক বিপ্লব ঘটে গেলো। আগে হতো অফিসপাড়ার নাটক। সৌখিন নাট্যচর্চা ছিল সীমিত। কামাল আর বন্ধুরা মিলে গড়ে তুলেছিল ‘ঢাকা থিয়েটার’।

এই থিয়েটারের হয়ে নাটকেও অভিনয় করেছিল শেখ কামাল। শেখ কামাল মেয়ে শিল্পীদের কতটুকু সম্মানের চোখে দেখতেন তা একদিন বলেছিলেন ঢাকা থিয়েটারের তখনকার একজন নামকরা কর্মী ডলি জহুর।

ফিরে যাই সেই পুরানো দিনের স্মৃতিতে। কি না হতে পারতেন বা করতে পারতেন শেখ কামাল, জনক যখন জাতির পিতা আর দেশের রাষ্ট্রপতি? শেখ কামালকে অন্যদের সাথে হত্যা করার পর ক্ষমতা দখলকারী জিয়া অনেক চেষ্টা করেছে শেখ কামালের কোনও ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি বা বড় ধরনের কোনও ব্যবসাপাতি আছে কিনা খুঁজে বের করতে। পাননি তো কিছুই। শুধু কিছু খেলার সরঞ্জাম আর কয়েকটি সেতার। জিয়ারও একজন সন্তান এখনও জীবিত। শেখ কামালের সাথে তার কি কোনও তুলনা কেউ করতে পারেন? অথবা বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা কি কেউ একজন শেখ কামালের পাশে নিজেদের দাঁড় করিয়ে নিজেদের পরিমাপ করতে পারবে? আমাদের এই বয়সে বলতেই হয়- না, সেই প্রজন্ম আর কোনোদিন ফেরার সম্ভাবনা দেখি না। ব্যতিক্রম ক’জন থাকতে পারেন। এখন তো সুযোগ-সুবিধা অনেক। কিন্তু তারপরও একজন শেখ কামাল খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, যুগের সাথে সাথে সবকিছু পাল্টে গেছে। এখন বিত্তবৈভব মানুষকে সমাজে সমাদর করে, চরিত্র না। প্রতিভার কদর তো অনেক দিন আগেই বিদায় নিয়েছে এই ঘুণে ধরা সমাজ হতে।

শেখ কামালের এই জন্মদিনে কোনও কেক কাটা হবে না। শেখ হাসিনা শেখ কামালকে বলবেন না ‘শুভ জন্মদিন কামাল’। মা ফজিলাতুন নেছা ছেলের জন্য ভালোমন্দ কিছু রান্না করবেন না। বাবা বলবেন না ‘জন্মদিনে বাড়িতে থেকো। মুরুব্বিরা দোয়া করতে আসবে না। ছোট বোন রেহানা আবদার করবেন না ‘ভাইয়া আমাদের খাওয়াতে হবে কিন্তু’। আর ছোট রাসেল সকলের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করবে না বাড়িতে আজ কী হচ্ছে!

এই দিনে শেখ কামালের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। প্রত্যাশা করি, এই প্রজন্ম শেখ কামালের প্রজন্মের কাছ হতে কিছুটা হলেও শিখবে।

শেখ কামাল   তারুণ্য  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন