ইনসাইড থট

ইউক্রেন, আমাদের অসুবিধা এবং আমরা

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৯ অগাস্ট, ২০২২


Thumbnail ইউক্রেন, আমাদের অসুবিধা এবং আমরা

ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৯৪৪, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের সাথে তার বৈঠকে বলেছিলেন, "পার্সিয়ান তেল আপনার। ইরাক ও কুয়েতের তেল আমরা শেয়ার করবো, আর সৌদি আরবের তেল, সেটা শুধু আমাদের”। এভাবেই পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিশ্চিত করে আসছে। জ্বালানি এবং গ্যাসের উপর তাদের সম্পূর্ণ আধিপত্য পশ্চিমা দেশগুলিকে আরও ধনী হতে সাহায্য করেছে এবং তারা দরিদ্র দেশগুলির উপর তাদের ইচ্ছা আরোপ করতে পারছে। অস্ত্র, গোপন কর্মকাণ্ড বা তাদের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (যেমন বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ) মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের আধিপত্য নিশ্চিত করছে। যারাই তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস করেছিল তাদের নির্মমভাবে নিষ্পত্তি করেছে এবং তাদের নির্বাচিত স্বৈরশাসক বা পুতুল শাসক চাপিয়ে দিয়েছে। অন্য অনেকের মধ্যে, আমি আপনাকে শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি: MI6 এবং CIA ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করে, যিনি তার দেশের জনগণের স্বার্থে তেল কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করেছিলেন। আজও গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার নামে এসব করা হচ্ছে। নৃশংসতা এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাপ্রাপ্ত দেশগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘের নেই। কে বা কোন ক্ষমতাশালীদেশ আমাদের মিত্র এবং বন্ধু হওয়া উচিত, কাকে আমরা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারি, সে বিবেচনা করার আগে আমাদের অতীত ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছায় তা আলোচনা করতে হবে এবং বিজ্ঞতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রাশিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কিন্তু রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে যখন ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে, তখন জোর গলায় অভিযুক্ত করে বলছে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। মজার ব্যাপার হল, মনে হচ্ছে পশ্চিম রাশিয়াকে শাস্তি দিতে পারে কিন্তু রাশিয়ার উচিত নীরব থাকা এবং তাদের পারস্পরিক কিছু করা উচিত নয়। যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমাগত গ্যাস এবং জ্বালানি সরবরাহের দাবি করছে এবং ক্রয় করছে, তখন একই সময় হুমকি এবং শাস্তি সহ নিশ্চিত করছে যেন কোনো উন্নয়নশীল দেশ তাদের অর্থনীতি ও নাগরিকদের বাঁচিয়ে রাখতে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস, জ্বালানি এবং খাদ্য না কিনে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ কি কিছু করতে পারে বা পারছে?
 
আসুন আমরা তাদের ভন্ডামী দেখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ভারত বছরের শুরু থেকে রাশিয়ার উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভাঙছে। তা নিয়ে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্র আমেরিকার ভন্ডামীর কথা বলছিলেন সম্প্রতি ঘটা রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানির উচ্চ-সমুদ্র স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করে। খোলা সাগরে একটি রাশিয়ান ট্যাঙ্কার একটি ভারতীয় জাহাজের কাছে তেল হস্তান্তর করে বলে জানা গেছে, যা পরে ভারতের ওড়িশা রাজ্যে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং অবশেষে সেই প্রক্রিয়াজাত তেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। তিনি বলেন “আপনি জানেন যারা রাশিয়ান তেল কেনেন তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আমাদের তাই বলেছেন। মজার ব্যাপার হল, একটি ভারতীয় জাহাজ খোলা সমুদ্রে একটি রাশিয়ান ট্যাঙ্কার থেকে তেল তুলে নিয়ে গুজরাট রাজ্যের একটি বন্দরে নিয়ে আসে। তেল এই বন্দরে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত পাতনে পরিণত করা হয়। ভারতীয় জাহাজটি আবার মালবাহী বন্দর ত্যাগ করে এবং খোলা সমুদ্রে তার গন্তব্য নিউইয়র্কের দিকে চলে যায়। এভাবে যুদ্ধ কাজ করে আর এইভাবেই তারা নিজেরা নিষেধাজ্ঞা পালন করছে। মজার কথা হল বিদ্রূপাত্মকভাবে আমাদেরকে নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করতে বলছে”। তিনি জাহাজের নাম বলেননি। মার্কিন দূতাবাস কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
 
পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আমরা বিশাল আর্তনাদ শুনেছি যে কীভাবে রাশিয়ান যুদ্ধ আফ্রিকা ও এশিয়ার দরিদ্র মানুষকে হত্যা করছে খাদ্য ঘাটতি এবং দাম বৃদ্ধির কারণে। ইউক্রেনকে অবশ্যই আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলিতে খাদ্য রপ্তানি করার অনুমতি দিতে হবে যেখানে তাদের এটি অত্যন্ত প্রয়োজন। নিউইয়র্ক টাইমস তার পত্রিকায় লিখেছে “এখন পর্যন্ত প্রথম ১৪টি শস্য বোঝাই জাহাজ যেগুলি ইউক্রেন ছেড়ে গেছে তার একটিও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন দেশগুলিতে যাচ্ছে না। এর মূলত কারণ তারা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে কেনা শস্য বহন করছে।” সেসব শস্য, প্রধানত পশু খাদ্য ইউরোপের দেশগুলোতে গিয়েছে।
 
যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ১০% এর উপরে বেড়েছে, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবারগুলি জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের কারণে দারুন চাপের মধ্যে রয়েছে৷ এর আগে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এই সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি ছিল। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুরূপ চিত্র উঠে আসছে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সে দেশগুলোতে নিম্ন আয়ের এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ভুগছে। কর দিয়ে সরকারের আয় বাড়াতে, মানুষকে বেশি মদ পানে উৎসাহিত করছে জাপান সরকার! একটি টাইম বোমা আগুনে ফেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি লক্ষ্য করেছি যে অনেক বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে কথা বলছেন। দুঃখজনকভাবে আতঙ্ক ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। হ্যাঁ আমাদের এই অনিশ্চয়তা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং সবাই মিলে একসাথে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তবে আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, বাংলাদেশ কি বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে নিজেকে কোনো কষ্ট ছাড়াই দূরে রাখতে পারবে? আমাদেরকে, বিশ্বের অন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো, সেই অসুবিধাগুলিকে মেনে নিতে হবে এবং একে অপরকে অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং বেচে থাকতে সাহায্য করতে হবে। আমরা কোভিডের সময় এটি করেছি, আমাদের এখনও কিছু সময়ের জন্য একই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
 
দেখা যাক সম্প্রতি আইএমএফের কর্মীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কী বলেছেন। গভীর বিশ্লেষণের পর তারা বলেছেন "বাংলাদেশ কোনো সংকটের মধ্যে নেই। বাংলাদেশ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। যদিও রিজার্ভ কমে গেছে, তবুও সে রিজার্ভ ৪-৫ মাসের সম্ভাব্য আমদানি মেটাতে যথেষ্ট বেশি। চলতি হিসাব অনুযায় ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলকভাবে কম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সাম্প্রতিকতম আর্টিকেল IV পরামর্শে মূল্যায়ন করা হয়েছে যে বাংলাদেশের ঋণের দৃষ্টিভঙ্গি টেকসই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে; দেশে ঋণ সংকটের ঝুঁকি কম: সরকারি খাতের ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত প্রায় ৬ শতাংশ, বহিরাগত ঋণের সঙ্গে জিডিপি অনুপাত ১৪ শতাংশ। মহামারী থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ভালো করেছে। পুনরুদ্ধার অনেক শক্তিশালী ছিল এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত ছিল। তবে, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তা কিছু কঠিন হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর অর্থনীতি। যদিও দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করেছে, তবুও সেগুলি উচ্চতর এবং অস্থির থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার প্রভাব আমদানিতে পড়বে। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের উপর চাপ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এটি একটি উপযুক্ত মুহূর্ত যে বাংলাদেশ সরকার আগে থেকেই আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে।" এর পর আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কী বলবেন আমি শুনতে চাই।
 
কোভিড এবং ইউক্রেন দ্বন্দ্ব বিশ্বের অনেক দেশেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করছে - ধনী বা দরিদ্র। বাংলাদেশ এর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেনি এবং পারবে না। কিন্তু দেশকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, সবই মুদ্রাস্ফীতি ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারে, বাংলাদেশ এবং এর কর্তাব্যক্তিদের উচিত ছিল ভবিষ্যদ্বাণী করা যে এই সমস্যাটি আসছে এবং যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল যেমন বাংলাদেশ গ্যাস ও জ্বালানি অন্বেষণে বিনিয়োগ করা কারন বাংলাদেশে এটি খুঁজে পাওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। যখন ধনী দেশগুলি উদীয়মান ক্রমবর্ধমান সমস্যা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সাথে মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে তার সীমাবদ্ধতা এবং ধনী দেশগুলির বহিরাগত হুমকির সাথে তার জনসংখ্যার কিছু কষ্ট না করে এ জাতীয় সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারে?

ইউরোপ এখনও রাশিয়া থেকে গ্যাস, জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে, তুরস্ক (একটি ন্যাটো দেশ), ভারত এবং চীন তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে রাশিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। রাশিয়ার জ্বালানি কেনার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার। পশ্চিমী ধনী দেশগুলো তা বন্ধ করতে কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার নামে সেই শক্তিগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে হুমকি দিচ্ছে এবং কষ্ট ও দুর্দশা সৃষ্টি করছে। জোসেপ বোরেল, ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে তাদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য পশ্চিমা দেশগুলির একটি দ্বৈত নৈতিকতা এবং দ্বৈত ব্যবস্থা থাকা দরকার। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আধিকারিক তার সফর কালে আফ্রিকান দেশগুলিকে রাশিয়ার সাথে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বাণিজ্য করার সাহস না করার জন্য হুমকি দিয়েছেন। বাংলাদেশে আমরা দেখছি চাপ বাড়ছে এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কথা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অফিস ও রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে কথা বলছে এবং চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের সকল অসুবিধার এবং ঘাটতির সাথে সবাইকে বিবেচনা করতে হবে, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে, চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জনসংখ্যার জীবন ও জীবিকা উন্নত করার সব চেষ্টা করছে। এমনকি অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেও বাংলাদেশ এখনো লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সমর্থন করে।
 
পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে আঙুল তোলার আগে আমি আমাদের নিজেদের কিছু সুবিধাবাদি নাগরিকের দিকে আঙুল তুলতে চাই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ সফর করছেন (আমি জানি না তিনি ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, মিশর, সৌদি আরব, মায়ানমার বা থাইল্যান্ড সফর করেছেন কি না) এবং আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতারা তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন এবং গর্ব করে বলছেন বাংলাদেশ সরকার ও দেশ খারাপ। দেশে গণতন্ত্র বা কোনো ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। জাতিসংঘকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমি সেই লোকদের জিজ্ঞাসা করতে চাই যদি স্বাধীনতা না থাকে তাহলে তারা কীভাবে তার কাছে ছুটে যেতে পারল এবং গ্রেপ্তার বা জেলে না গিয়ে নির্দ্বিধায় যা বলতে চায় তা বলার সুযোগ পেল! আমি জানি না মিশর বা সৌদি আরব বা পাকিস্তানে তারা তা করতে পারত কিনা। হ্যাঁ, আমি একমত যে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকা উচিত, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে হবে, আমাদের কিছু ঘাটতি আছে এবং আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। তবে আমি বলবো, অনেক ইউরোপীয় এবং আমেরিকায় একই উন্নতি ঘটতে হবে, তাদের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
 
আমি একটি সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সাথে প্রথম আলো প্রতিবেদকের সঙ্গে। কোন পরিবর্তন ছাড়াই তিনি যা বলেছেন ঠিক তাই লিখছি: “হাফিজ উদ্দিন: বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু যারা এই সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মাঠ গরম করতে পারে, তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা সেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারছে না। পরিস্থিতির কারণে তারা শক্তিমান হবে—এখন যাদের দুর্বল মনে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে কম্পমান মনে হচ্ছে। এই সরকার সবই করতে পারে, কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে পারবে না—যদি আইএমএফ টাকা না দেয়। বৈশ্বিক কারণে দ্রব্যমূল্য যদি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন আর বিএনপিকে মোটিভেট করতে হবে না। সাধারণ মানুষ নিজের গরজে মাঠে নামবে হতাশা থেকে। যখন মানুষের পেটে ভাত থাকবে না, তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন বিএনপি কী বলল, ওটার কোনো দরকার হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি মানুষ নেমে যাবে। সে সময়ে সাধারণ মানুষের রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে সরকারের পতন হতে পারে। তখন এর বেনিফিশিয়ারি তো বিএনপিই হবে।”

এই সাক্ষাৎকারটি প্রতিফলিত করে যে কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবী কী ভাবছেন এবং কীভাবে তারা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং একটি কর্দমাক্ত মাঠে তারা খেলার চেষ্টা করছেন। সরকার পতনের জন্য এই মানুষগুলো কি ভাবছে বা করবে। তারা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, দেবপ্রিয়রা, প্রথম আলো এবং গ্যাং কি সত্যিই দেশ এবং এর জনগণের কথা ভাবেন নাকি তারা কেবল ক্ষমতা, প্রভাব এবং পদের লোভী? মনে হচ্ছে বহিরাগত শক্তি দেশের অগ্রগতি ঠেকাতে তাদের সাহায্য করা, দেশের উপর মঞ্জুরি আরোপ করা এবং আইএমএফ যেন ঋণ না দেয় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা সবকিছুই করবে।
 
তবুও আমি খুব আশাবাদী কারণ আমাদের একজন দূরদর্শী নেত্রী, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলে। আমাদের উন্নতি এবং এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তার রাজনৈতিক দক্ষতা এবং সততাকে কখনই অবমূল্যায়ন করবেন না। তিনি অতীতের অনেক উত্থান এবং সমস্যা থেকে বেঁচে ছিলেন, এমনকি তার জীবন হুমকির মুখ থেকেও। তবুও তিনি কখনো হাল ছাড়েনি। আসুন তার উপর বিশ্বাস রাখি। তিনি আমাদের এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে নেতৃত্ব দেবেন এবং আমরা এগিয়ে যাব। অনেক মির্জাফর অতীতে চেষ্টা করেছে, এখনও চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাদের আত্মসম্মান নেই, তাদের দেশের মঙ্গল নিয়ে চিন্তা নেই, তারা আমরা কে বা কী হতে পারি তা নিয়ে গর্বিত নন। তারা শুধু বিশ্বাস করে ক্ষমতায়, আর তা উপভগের। অতীতে আমরা তাদের বন্ধ করেছি, এবং আমরা এখনও করব। আমি অন্য সকলের সাথে বরাবর দাঁড়িয়ে বলবো আমি আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী। অতীতের মতো আমরা বর্তমানের সমস্ত অসুবিধা কাটিয়ে উঠব এবং সফল হব।

ইউক্রেন   রাশিয়া   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বৈশাখে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে। 

১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের নববর্ষ। টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস’, দেখা যাচ্ছে কবির কথাই সত্য। তাপদাহে এই এপ্রিলই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তবে এই এপ্রিল আমাদের বৈশাখি/বৈসাবি/বিজু উৎসবের মাস- খররৌদ্র আর তীব্র ঝড়ের মাস হলেও। বৈশাখকে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ করেছিলেন ‘মোহন ভীষণ বেশে’, দেখেছিলেন ‘অতলের বাণী খুঁজে পাওয়া মৌনী তাপসরূপে’। অন্য কবি লিখেছেন- ‘রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল/আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল/ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল লয়ে অশনি।’ বৈশাখে এই ‘অশনি’র খেলা নিশ্চয় কারো কাছে প্রত্যাশিত নয়।

বিশ্ব পরিস্থিতির সংকট আমাদের বৈশাখি আয়োজনের মধ্যে গরল উগড়ে দিলেও অতি সহজ-সরল, প্রশান্ত কিন্তু উদ্দীপনাময় আয়োজন এবারও। এখন আমরা প্রাণিত, আমাদের চিত্ত আনন্দিত এবং আমাদের চেষ্টা অব্যর্থ। অতীতের মতো এবারও সকালে হালখাতা খুলে দোকানে বসবে ব্যবসায়ী, বৈশাখি মেলায় নাগরদোলা, পুতুলনাচের উৎসবে শিশুদের কোলাহল শোনা যাবে। প্রতিবছর যেসব থিম অনুসারে সারাদেশে মঙ্গলশোভা যাত্রা অনুষ্ঠিত হতো তাও এবার হবে। রমনার বটমূলের প্রত্যুষের ছায়ায় আয়োজিত ছায়ানটের অনুষ্ঠান এবারও হচ্ছে।আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নতুন বছরকে বরণ করার জন্য তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানও শুরু হয়েছে।‘পাচন’ আর ‘পুণ্যাহে’র মতো নানাবিধ ব্রত ও বিধি পালনের সকল প্রথা অনুসৃত হচ্ছে।একসময় ভারতবর্ষে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি ফলনের খাজনা আদায় করা হতো। ফলে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল কৃষিকাজে ফসল না থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা দিতে বাধ্য হতো কৃষকরা। খাজনা আদায়ের সময়টিকে কৃষকদের জন্য সহনীয় করতে প্রবর্তিত হয় ‘ফসলি’ সন। আসলে হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন সনের নিয়ম প্রচলন করা হয়েছিল। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনার শুরু। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। ক্রমান্বয়ে ফসলি সন বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত লাভ করে। 

বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি সূচনা হয় সূর্যোদয়ের প্রত্যুষে। কাজেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব। ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ২০২৩ অবধি ছায়ানটের রমনার বটমূলে বর্ষবরণ আয়োজন হয়ে এসেছে। অন্যদিকে নব্বই দশক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ সকালে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের সূচনা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ার পর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের উৎসাহে ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে চৈত্র সংক্রান্তির দিন পালিত হয় চড়কপূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। একইসঙ্গে ওইদিন গ্রামবাংলায় আয়োজিত হয় চড়ক মেলা।

নববর্ষের সকল আনন্দ, উৎসব ও অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা স্মরণ করেও আমরা আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, সংকটে আক্রান্ত বিশ্বে আমাদের কাছে এখন বেঁচে থাকার গৌরব অত্যন্ত বেশি। নিকট আত্মীয় হোক, দূরের বন্ধু হোক, দিনে হোক, দিনের অবসানে হোক, আমরা এখন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে  চাই। সংকট এলে কী করি, কীভাবে অগ্রসর হই, কোথায় যাই, কোথায় সেবা করে আত্মবিসর্জন করতে হবে, এটাই শান্তচিত্তে আমরা খুঁজছি। ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া নতুন বছরের আগে ছিল কাজ, অকাজ, অকারণ কাজ, যে উপায়েই হোক, জীবনের শেষ নিমেষপাত পর্যন্ত ছুটাছুটি করে, মাতামাতি করে বেঁচে থাকা। ওই কর্ম-নাগরদোলার ঘূর্ণিনেশা আমাদের পেয়ে বসেছে বলেই পৃথিবী হয়েছে শান্তিতে পূর্ণ। অবশ্য দুর্গম হিমালয়শিখরের নিরুদ্বিগ্ন প্রাণিদের জীবন বিপন্ন; জনশূন্য তুষারমরুর বিশ্বস্তচিত্ত সীল এবং পেঙ্গুইনদের নির্বিরোধে প্রাণধারণ করার সুখটুকু বিলীন এখন। বাণিজ্যপুঁজি ও শিল্পপুঁজির দাপটে আফ্রিকা আর দক্ষিণ-আমেরিকার প্রত্যন্ত দরিদ্র অঞ্চলেও আধুনিকতার নামে মৃত্তিকাসংলগ্ন সভ্যতার তিরোধান ঘটেছে। বিচিত্র কর্মের পিছনে মানুষের ছুটে চলার বিপরীতে রয়েছে নির্জন প্রকৃতির স্তব্ধতা। তার রূপ অক্লিষ্ট অক্লান্ত, তার সাজগোজ বিস্তীর্ণ নীলাকাশ থেকে অরণ্যের সবুজে প্রসারিত। প্রকৃতি নিজেকে চিরকাল প্রকাশমান রেখেছে, মানুষের মতো ঊর্ধ্বশ্বাস কর্মের বেগে নিজেকে অস্পষ্ট করে তোলেনি। মানুষের কর্মের চতুর্দিকে অবকাশ ও চাঞ্চল্যকে ধ্রুবশান্তির দ্বারা মথিত করে সে চিরনবীনের বার্তাবাহক। এই একুশ শতকেও গ্রামীণ জীবনের প্রাধান্যের মধ্যে বাঙালি হিসেবে রাতদিনের কর্মযজ্ঞে ইউরোপ-আমেরিকার মতো আমাদের ব্যস্ত থাকার কথা নয়। এখনো প্রকৃতির উদার শান্তি, বিশাল স্তব্ধতার মধ্যে আমরা পরিভ্রমণ করতে পছন্দ করি। এজন্যই বৈশাখের তপ্ত আকাশ, তার শুষ্ক ধূসর প্রান্তরের নীরব মধ্যাহ্ন, নিঃশব্দ রাত্রি অথবা ঝড়ো হাওয়ার আলিঙ্গনে আমাদের জীবন মুখরিত হয়।

আজকের দিনের বহু আড়ম্বর, আস্ফালন, করতালি, মিথ্যাবাক্য, যা আমাদের স্বরচিত, যাকে বাংলাদেশের মধ্যে আমরা একমাত্র সত্য, একমাত্র বৃহৎ বলে মনে করছি, সেই কর্পোরেট কালচারের ঢেউ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ নববর্ষ সকলকে একই কাতারে নিয়ে আসে। সেখানে শ্রমজীবী আর বুদ্ধিজীবী একসঙ্গে চলেন, প্রত্যেকে নিজকে এবং জগৎকে ঠিকভাবে দেখতে পান, উৎসবের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিলনলাভ সম্ভব হয়। উৎসবের আয়োজনে ব্যক্তিগত ভোগের নিবিড়তা নেই বরং বৈশাখি আনন্দ আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশীর মধ্যে ব্যাপ্ত করে দিয়েছে মহত্ত্ব। নববর্ষের আনন্দ আমাদের ঘরকে, মনকে, সমাজকে কলুষের ঘনবাষ্প থেকে অনেকটা পরিমাণে নির্মল করে রাখে, দূষিত বায়ুকে বদ্ধ করে রাখে না এবং মলিনতার আবর্জনাকে একেবারে গায়ের পাশে জমতে দেয় না। পরস্পরের কাড়াকাড়িতে ঘেঁষাঘেঁষিতে যে রিপুর দাবানল জ্বলে উঠে উৎসবে তা প্রশমিত থাকে; কর্মের সঙ্গে শান্তিকে জড়িত করে রেখে বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করে। উৎসব আমাদের শিখিয়েছে মানুষ বড়ো, পদ বড়ো নয়; দারিদ্র্য লজ্জাকর নয়, সকল কর্মে, সকল অবস্থাতেই সহজে মাথা তুলে রাখা যায়। আমাদের দেশে স্বস্থানের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সকলেই আপনার নিশ্চিত অধিকারটুকুর মর্যাদা ও শান্তি লাভ করে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর ধনি হওয়ার প্রচেষ্টা অন্যকে ছোটো করে দেখার দৃষ্টি তৈরি করে দেয় না। এজন্য নববর্ষের উৎসব সর্বজনীন।

এসেছে পহেলা বৈশাখ, ৩০ চৈত্রে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বিদায় নিয়েছে। এজন্য- ‘উড়ে যাক, দূরে যাক বিবর্ণ বিশীর্ণ জীর্ণ পাতা/বিপুল নিঃশ্বাসে।’ রবীন্দ্রনাথ ‘নববর্ষ’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘পুরাতনই চিরনবীনতার অক্ষয় ভাণ্ডার।...নূতনত্বের মধ্যে চিরপুরাতনকে অনুভব করিলে তবেই অমেয় যৌবনসমুদ্রে আমাদের জীর্ণ জীবন স্নান করিতে পায়।’ এই ‘চিরপুরাতন’ হলো আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। আজকের এই নববর্ষের মধ্যে বাঙালির বহুসহস্র পুরাতন বর্ষকে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ সেখানে রয়েছে সম্রাট আকবর কর্তৃক বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিহাস, সেখানে আছে গ্রামীণ বাংলার হালখাতা আর বৈশাখি মেলার আয়োজন, আছে বাঙালি জমিদারদের পুণ্যাহের উৎসব। ফসলের ঘ্রাণে গড়ে ওঠা আমার নববর্ষ শাশ্বত ও গৌরবের। নববর্ষে বৈশাখের খররৌদ্রে অগ্নিস্নানে শুদ্ধ হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র। ‘হে নূতন, এসো তুমি সম্পূর্ণ গগন পূর্ণ করি/পুঞ্জ পুঞ্জ রূপে-/ ব্যাপ্ত করি, লুপ্ত করি, স্তরে স্তরে স্তবকে স্তবকে/ ঘনঘোরস্তূপে।’ ‘ঘনঘোরস্তূপে’ নতুনের এই আহ্বান প্রকৃতপক্ষে সংকট কবলিত বাঙালির জীবনে প্রত্যাশার অভিব্যক্তি। এ মুহূর্তে আমরা পৃথিবীতে যতটুকু কাজ করি তা যেন সত্যসত্যই দায়িত্ব পালনের জন্য করি, ভান না করি। কারণ অক্ষমরা বৃহৎ কাজ করতে পারে না বরং বৃহৎ ভানকে শ্রেয়স্কর জ্ঞান করে। জানে না যে মনুষ্যত্বলাভের পক্ষে বড়ো মিথ্যার চেয়ে ছোটো সত্য ঢের বেশি মূল্যবান। এই সত্য পথে হেঁটে আমরা নববর্ষের চেতনায় সংকট জয় করব। আর এই বৈশাখেই মানবজীবনকে অশান্তি মুক্ত করার শপথ নিতে হবে। কারণ- বৈশাখে ‘মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে’।

লেখক: ড. মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

‘সংখ্যায় আধিক্য মানে অবনমন’


Thumbnail

সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।

সময়ের সাথে সাথে এভাবে পৃথিবীতে প্রায় সবকিছুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়লেও গুণগত মান এবং কার্যকারিতা নিম্নমুখী হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন ভেজাল বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে তবে শিক্ষার মান নিম্নগামী হচ্ছে দিন দিন। শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক এবং সৃজনশীল হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের মননশীলতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ আশানুরূপ হচ্ছে না। চিন্তাশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা অতিশয় প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে।

এক সময় সমাজে হাজীর সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। তবে সমাজে তাদের অনেক সম্মান ছিল। মানুষ তাদেরকে খুব ইজ্জত করতেন। তাদের চলাফেরা এবং আচার-আচরণ সমাজের আর দশজন মানুষ থেকে আলাদা ছিল যা দেখে তাদের খুব সহজেই চেনা যেত। তাদেরকে মানুষ অনুকরণ করতেন। এখন হজ্জব্রত পালন করা মানুষের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে, তবে তাদের ঈমানী শক্তিতে আর আগের সেই ধার নেই। হজ্জ করে আসা ব্যাবসায়ী হজ্জ করে এসে আগের চেয়ে অধিক মুনাফা করছে, ভেজাল পণ্য বিক্রি করছে। সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য রাতারাতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। হজ্জ করে আসা একজন চাকরিজীবী পবিত্র ঘর তাওয়াফ করে এসে আবার আগের মতই ঘুষ, দূর্নীতিতে জড়াচ্ছে। একজন হাজী'র কোনো চারিত্রিক এবং নৈতিক গুণাবলি তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে হাজীদেরকে এখন আর দেখে চেনা যায় না। সমাজে হাজীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সমাজের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক গুণাবলি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে; মানুষের মনুষ্যত্ববোধ দিন দিন লোপ পাচ্ছে। 

ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি মানুষ দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশে বিগত কয়েক বছরে মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এসব শিক্ষার্থী সমাজের মানুষের  ধর্মীয়, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে পারেনি। বরং এরা নিজেরাই অনেকে উগ্র, সাম্প্রদায়িক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষী। ইসলাম যেখানে সহনশীলতা, সাম্য, শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধের বার্তা দেয়, ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত এসব আলেমদের আচরণ ঠিক তার উল্টো! 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার চলার পথে কাঁটা পুঁতে রাখা বুড়ী অসুস্থ হলে তার সেবাশুশ্রূষা করে তাকে সারিয়ে তুলেছেন। যাদের অত্যাচার, নির্যাতন এবং হিংস্রতার কারণে তিনি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত বাধ্য হয়েছিলেন- মক্কা বিজয়ের পর তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অথচ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া আলেম নামধারী কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষ ঈদ এর পরিবর্তে কেউ ইদ লিখলেই তাকে কাফির, নাস্তিক, মুরতাদ আখ্যা দিয়ে তাদের কল্লা কাটার ঘোষণা দেয়! চুন থেকে পান খসলেই এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষোদগার করে, অশালীন ভাষায় মন্তব্য করে। যাকে তাকে যখন তখন ইসলাম বিরোধী, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এরা আসলে কতটা কুরআন এবং রাসূলের অনুসারী! সমাজ, রাষ্ট্রে এমন আলেমের সংখ্যাই বেশি। প্রকৃত আলেমের সংখ্যা খুবই কম। 

সমাজে কেবল এরুপ সাম্প্রদায়িক আলেম নয়, সুশীল নামধারী নিজেকে প্রগতিশীল দাবি করা অনেক শিক্ষিত সাম্প্রদায়িক মানুষ আছে। এরা দাঁড়ি, টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই তাদেরকে সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মান্ধ হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে। এরা দাঁড়ি, টুপীওয়ালা মানুষদের জঙ্গি এবং মৌলবাদী আখ্যায়িত করতে পারলেই নিজেদেরকে প্রগতিশীল ভাবে। দাঁড়ি, টুপি এবং মাদ্রাসার প্রতি এদের এলার্জি সাংঘাতিক রকমের। এরা নিজেদেরকে প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক মনে করলেও আসলে এরা নিজেরাও চরম সাম্প্রদায়িক। এরুপ প্রগতিশীলের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সমাজে দিন দিন এরুপ সাম্প্রদায়িক আলেম এবং প্রগতিশীলতার ভান করা চরম সাম্প্রদায়িক শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরা উভয়ই সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপস্বরুপ।

আগে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, গীর্জার সংখ্যা ছিল কম। যা ছিল তাও বাঁশ, কাঠের বেড়া আর তালপাতা, গোল পাতার ছাউনি ঘেরা নিতান্তই এক একটা কুঁড়ে ঘর। এসি তো দূরের কথা লাইট, ফ্যান ও ছিল না। মানুষের গায়ে তখন দামি পোশাক ছিল না, দামি গাড়ি, আলিশান বাড়ি ছিল না অথচ তখন সমাজে অনেক আদর্শবান মানুষ ছিলেন। যাদের দেশপ্রেম, সততা এবং নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ছিল অনুকরণীয়। আজকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, গীর্জার কোনো কমতি নেই। বাঁশ, কাঠের বেড়া আর তালপাতা, গোলপাতার ছাউনির পরিবর্তে এগুলো এখন একেকটা আলিশান ভবন। টাইলস কিংবা দামি মার্বেল পাথর বাঁধানো এসব ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ( এসি ) এর ছড়াছড়ি। আজকাল এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনালয় মানুষের শরীরকে শীতল করলেও মনকে পরিশীলিত, নরম এবং পরিশুদ্ধ করতে পারছে না। মানুষ এখন দামি পোশাক, অভিজাত গাড়ি, প্রাসাদতুুল্য বাড়ির মালিক। তাদের এখন সব আছে। নেই কেবল সততা, দেশপ্রেম, নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধ।

লেখক- মোঃ নজরুল ইসলাম, তরুণ কলামিস্ট, খুলনা।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশের নির্বাচন: ব্যাপক বয়কট নাকি সর্বজন গৃহীত?

প্রকাশ: ০১:৫৭ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।  

তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।

অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?

দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।

নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।

তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।

তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।  

নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।

তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।

উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।

বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।

দায়বদ্ধতা

এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।

নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।


বাংলাদেশের নির্বাচন   ব্যাপক   বয়কট   সর্বজন গৃহীত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন