ইনসাইড থট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস- সবিনয়ে কিছু প্রশ্ন?


Thumbnail

২৩ আগস্ট ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিবাস থেকে সেনাবাহিনীর অফিসাররা শিক্ষকদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন চোখ বেঁধে। সেই থেকে বিগত ১৫ বছর দিনটি কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এর আগে ২০ আগস্ট ২০০৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একটি বাকবিতন্ডা ও কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি আইন জারির পরে সেনাবাহিনী সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং দেশের রাজনৈতিক নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে সেনাসদস্যরা কেউ কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নিপীড়ন, নির্যাতন করতে থাকে। উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মাঝে সামরিক রাজনীতির আভাস ছাত্র-শিক্ষকরা দেখতে পায়।

শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো সারা দেশে। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিথ্যা সব মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও জেলে নেয়া হয়েছিল। সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিলো বাংলাদেশ। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উপস্থিতি সকলকে অনুপ্রাণিত করছিলো বোধহয়। সারা দেশবাসী চিরাচরিত ভাবে তাকিয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মুখের দিকে। একটা কিছু করো যদি সামরিক শাসনের অবসান চাও। তারা যেভাবে স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলিত করেছে সেটা থেকে মুক্ত হও। ২০ আগস্ট এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মইন তার ক্ষমতা দখলের বাসনাকে দমিত করলেও শিক্ষকদের গ্রেফতারের করে নিজের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। আরও শক্তভাবে তিনি দেশ চালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি ব্রিটিশ, পাকিস্তানিদের তাড়িয়েছে। তারা জিয়া এরশাদকে বিতাড়ন করেছে। সেই জনগণকে সামরিক কায়দায় দমন করে ক্ষমতায় থাকার বাসনা চুরমার করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ও ২৩ আগস্টের ঘটনা। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিজয় অর্জিত হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সুস্থ একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেরই আশা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার আমূল পরিবর্তন হবে এবার। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানকে সরকার যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে। আমাদের সেই আশা কি পূরণ হয়েছে?

যদি আমরা ঢাকা সেনানিবাসে যাই তবে সেখানে আছে আরেক বাংলাদেশ। কেন সেখানে শৃঙ্খলা আছে আর আছে উন্নয়ন। আর কেন গণতন্ত্রের সূতিকাগার শতবর্ষেও অবহেলিত?

আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানেরা যায় সেনাবাহিনীর স্কুলে। কিন্তু কেন? আমাদের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র পে স্কেল চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন ঘোষণায় সেটা উল্লেখ ছিল। তবে কেন ২০১৫ সালের বেতন স্কেল এ শিক্ষকদেরকে দুই ধাপ নামিয়ে দেয়া হলো?

পত্রিকার পাতায় দেখি গণরুমের খবর। কেন আজও আমরা সকল ছাত্রের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে পারিনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন একটি বড় পাঠাগার বিগত ৪০ বছর নির্মিত হয়নি?

১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে সিট পাইনি। তখন হলদখল রাজনীতি ছিল। ফলে হলে সিট পেতাম না। বন্ধুরা ছাত্রদল এবং ছাত্র সমাজের খাতায় নাম লিখিয়ে সিট পেয়ে যেত। আমার প্রয়াত বন্ধু তার সিটে আমাকে থাকতে দিয়েছিলো। এভাবে কেটেছে তিন বছর। একদিন আমাদের হলের আবাসিক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক আসাদুজ্জামান স্যার আমার সিট নেই জেনে হলের অফিসে যেতে বললেন এবং তিনি তক্ষনি একটি সিট আমাকে দিলেন। ৪০ বছরে কেন আজ ছাত্রদেরকে গণরুমে থাকতে হবে?

সমাজবিজ্ঞানের আ ক ম অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আমার রুমে সিট পেলো। কিন্তু ছাত্রদলের নেতা তাকে উঠতে দেবে না। আমাকে অনুরোধ করলো কিছু একটা করতে। আমার বিভাগের ছাত্র। আমার অনুরোধে সে জামালকে রুমে থাকতে দিলো। আমার প্রশ্ন আমাদের এতো এতো উন্নয়ন- কিন্তু আজও কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গণরুমে থাকে এবং নিপীড়নের শিকার হয়?

সেদিন গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। সেখানে একটি ছোট্ট রুমে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়েছে। কেন আমরা একটি বিশাল লাইব্রেরি করতে পারিনি বঙ্গবন্ধুর নামে? আমাদের সমাজ র‍্যাংকিং নিয়ে ভাবে। সেটা খুবই আশার কথা। কিন্তু তারা কেন বলে না- গণরুম আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নকে পাশের জাদুঘরে পাঠিয়ে দাও! তারা কেন বলে না- শিক্ষকদের মর্যাদা দাও স্কুলে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও পদ সচিবদের নিচের রেখে এবং স্কুল শিক্ষকদেরকে কেরানির বেতন ও পদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণরুম থেকে মুক্তি যেদিন হবে, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবাসনের জন্য নিপীড়নের শিকার হবে না, যেদিন হলে একটি সিটের জন্য রাজনীতি করতে হবে না সেদিন বলা যাবে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছে। সেদিন আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে যে স্বাধীনতার কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন।

আমাদের অনেক সাফল্যও আছে। যেমন নিজেদের টাকায় আমাদের সরকার পদ্মা সেতু বানিয়েছে। ১৯৯০ সালে যেখানে ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এখন সেখানে ৫৪ টি। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। তাই আমাদের সন্তানদেরকে গণরুমে নির্যাতিত হতে হয়। এই নির্যাতন শেষ হবে কি?বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হোক যাতে তারা সকলের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্রায়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদেরকে বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন। বিনীতভাবে জানতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত হল বানিয়ে দিবেন কি? গণতন্ত্রের মুক্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্ররা যে মহান অবদান রেখেছে তার বিনিময়ে তারা হলে অন্তত: একটি সিট পেতে পারে কি? ছাত্রদের এই সামান্য দাবিটি কি জাতির কাছে খুবই ভারী? প্লিজ!


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার খোঁজে

প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

গেল সপ্তাহে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক উন্নয়ন তৎপরতা তথা সাফল্যকে হেয় করে দেখার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। উপরন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও বেশ কিছু সংস্থার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।তবে দৈনিক পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগকে সরল করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’’ এখানে কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড়ানোর কথা নয়।এজন্য স্বাধীনতা দিবসের প্রতিবেদন নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত প্রথম আলোর সাংবাদিক মো সামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।সংবিধানে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলভিত্তি যেমন বাক-স্বাধীনতার উপর প্রতিষ্ঠিত, তেমনি বাক্-অসংযম গণতন্ত্রের মূলোচ্ছেদকারী।

২৭ মার্চ (২০২৩) প্রকাশিত একাত্তর টিভির ‘স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর সেই ছবি পুরোটাই ভুয়া’ শিরোনামে সংবাদে জানানো হয়েছে, দৈনিক প্রথম আলোর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাইরাল হওয়া খবরের ছবি ছিলো, ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে এক শিশু। নাম জাকির হোসেন। শিশুটির উদ্ধৃতি ছিলো এমন- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’ জাকির নামটি ভুল ছিল। আসলে সাত বছরের সবুজ নামে ওই শিশুর হাতে দশ টাকা দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ছবি তুলেছেন বলে দাবি ওই শিশু ও তার পরিবারের। সাভারের কুরগাঁও পাড়ায় সবুজের বাড়ি। তার মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সবুজের নাম কিভাবে জাকির হোসেন হলো, আর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে কেনো দিনমজুর বলা হলো তাতে তিনি অবাক হয়েছেন। রাজমিস্ত্রী বাবা আর মা’র আয়ে সংসার চলে।অন্যদিকে ছোট সবুজ কেমন করে জানল বাজারের দ্রব্যমূল্যের খবর-সেটাও বিস্ময়কর।স্বাধীনতা দিবসে এমন খবরকে ১৯৭৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জাল পরানো বাসন্তীর ছবির মতোই চক্রান্ত বলা হচ্ছে বিশিষ্টজনদের দৃষ্টিকোণ থেকে।

উল্লেখ্য, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের নামে একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যায় নি। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেওয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থী। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।একটি বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বলেছেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জাল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উক্ত বাসন্তীকে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাজানো হয়েছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত সংবাদপত্র ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।’

প্রথম আলোর প্রতিবেদক সামসুজ্জামান শামস সম্পর্কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে শামস এবং অন্যান্য অভিযুক্তরা ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে এমন মিথ্যা এবং মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে অপরাধের চেষ্টা করেছে বা সমর্থন করেছে।’ প্রকৃতপক্ষে এর আগেও দ্রব্যমূল্য নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। এমনকি দিনমুজুর, রিক্সাওয়ালাদের ভাষ্যে তাদের ভাষা প্রকাশ করেছে।কিন্তু ২০২৩ সালে এসে আগের মতোই বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে- তা স্পষ্ট।কারণ দিবসটা ছিলো আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবসে সরাসরি স্বাধীনতাকে শিশুর মুখ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক। একটা বাচ্চা ফুল হাতে উদাস নেত্রে স্মৃতিসৌধে শহীদের দুয়ারে ফরিয়াদ করছে- এভাবে মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দেবার চেষ্টা হয়েছে- এটা অপরাধ। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে কিনা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।তবে এ সত্য প্রকাশের জন্য ছলচাতুরি বা ‘প্রিপেয়ার্ড ক্যান্ডিডে’র দরকার হয় না। আর একজন দিনমুজুর সরাসরি স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলবে সেটা কতটা বাস্তব তা পত্রিকা পাঠক মাত্রই বুঝতে সক্ষম।ছবিটা যে তৈরি করা সেটা পরিষ্কার। তাই এটা অপরাধ।স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দরিদ্র মানুষের অনুভূতি খুঁজতে যাওয়াকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অসংখ্য বিশিষ্টজন। স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাওয়া একটা পুরনো প্রজেক্ট। এর পিছনের ইতিহাস অনেক গভীরে নিহিত। ১৯৭২-৭৫ জুড়ে সেই চেষ্টাই ছিলো। ‘প্রথম আলো এই প্রজেক্টের বর্তমান ফেইজের একজন ডিরেক্টর’- এভাবেই লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন একজন কবি।

অতীতে প্রথম আলো একাধিক মিথ্যা ছবি বা সংবাদ প্রকাশ করেছে।জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন মিথ্যা সিঁদুর পরিয়ে ছবি ছাপিয়েছে।প্রথম আলোর সম্পাদক এর আগে কতবার মাফ চেয়েছেন তা সকলেরই জানা। প্রথম আলো সম্পাদক মাইনাস টু ফর্মুলার একজন কারিগর। মাইনাস টু ঘটনার সমস্তটাই সকলে মনে রেখেছেন আশা করি। জনগণ সেদিন তার তৎপরতাকে মেনে নিতে পারেনি।মূসা ইস্যুতে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে জাতিকে বোকা বানিয়েছিল তারা। তারা নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিজেরাই নষ্ট করেছে। মনে রাখতে হবে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে অন্যান্য পত্রিকাগুলো সিরিজ রিপোর্ট করছে। কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।তবে বাধা দেওয়া হবে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করলে। সরকার আর রাষ্ট্র এক না। রাষ্ট্র আমাদের জীবনে সবসময়ই সত্য। একারণে রাষ্ট্র আর তার সংবিধানকে মিথ্যা প্রমাণের স্বাধীনতা চাওয়া হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা স্বাভাবিক। কেউ কেউ ‘গুরুতর হুমকির মধ্যে মুক্ত চিন্তা’ বলে উপসম্পাদকীয় লিখছেন। কিন্তু সাংবাদিক দোষ করলে, তারা অপরাধী হলে যে গৃহীত ব্যবস্থা যৌক্তিক এটা বলছেন না। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা যে প্রয়োজন এটা স্বীকার করার মানসিকতা থাকাও জরুরি।১৭৮৯ সালে Declaration of the Rights of man- এ বলা হয়েছে- No one should be called to account for his opinions so long as their manifestation does not upset public order as established by law. জনশৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত না করলে কাউকে তার মতামতের জন্য জবাবদিহি করতে বলা উচিত নয়।১৭৯১ সালের French constitution-এ বাক্ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু প্রণীত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানেও ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে।কিন্তু বাকস্বাধীনতা ও মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতার যে মৌলিক অধিকার প্রদত্ত হয়েছে তা নানাবিধ কারণে যুক্তিসংগত বাধানিষেধের অধীন।আসলে চিন্তা ও বিবেক সম্বন্ধে রাষ্ট্র কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ করবে না সত্য কিন্তু প্রয়োজনমত নিয়ন্ত্রণ করবে চিন্তা ও বিবেকের প্রকাশকে। সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতার অধিকার আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধের অধীন। এগুলো হলো- রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্বার্থে, জনশৃঙ্খলার স্বার্থে, শালীনতার স্বার্থে, নৈতিকতার স্বার্থে, আদালত অবমাননা সম্পর্কে, মানহানি সম্পর্কে এবং অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে- প্রভৃতি।প্রথম আলোর উক্ত সাংবাদিক সংবিধানের এসব ধারার দ্বারা অপরাধী হিসেবে গণ্য হলে তার শাস্তি পাওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা।

লেখাবাহুল্য, করোনা উত্তরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করছেন বিশ্বের অনেকেই।উন্নয়নের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সরকার সচেষ্ট এটাও এখন দৃশ্যমান।অবশ্য একথা সত্য প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি আইনের শাসন পরিপন্থী কাজ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সব সময় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত ও সতর্ক। যেসব ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করতে পারে সে ধরনের কাজ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরত থাকতে সচেষ্ট।কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান যখন সাংবাদিকদের বলেছেন শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারণ তার প্রতিবেদন ‘মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’- তখন পুলিশি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণটা স্বাভাবিক।লেখাবাহুল্য, সাংবাদিকরা আইনের উর্ধ্বে নন। একারণে জানুয়ারি ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২২ এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোট ১৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মোট ২৮০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।সরকারের তরফ থেকে এক দু’জন হলেও অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো হয়েছিল।মনে রাখা দরকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করে চলেছে। তাদের উদ্দেশ্য হল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য যা অর্জন করেছেন তার অসম্মান করা।

মূলত একটি শিশুর হাতে দশ টাকা ঘুষ দিয়ে তার নাম করে একটা সংবাদ পরিবেশন করা তাও আবার স্বাধীনতা দিবসে এবং যা দেশের জন্য ক্ষতিকর-তা সত্যিই নিন্দনীয়। এটা যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অবাককাণ্ড হচ্ছে, বিদেশিদের তরফ থেকে অপরাধীদের পক্ষ নেওয়ার ঘটনা। সাংবাদিক হলেই সব অপরাধ মাফ, আর অপরাধী ধরলে হিরো হয়ে যাওয়া-এই বাস্তবতা দুঃখজনক। মহান স্বাধীনতার অবমাননা করা, শিশুকে ঘুষ দিয়ে অপব্যবহার করা,  শিশুর জীবনকে শঙ্কিত করে দেওয়া- এটা অমার্জনীয় অপরাধ। ক্লাস ওয়ানে পড়া একটা শিশুকে ব্যবহার করে নিউজ আইটেম বানিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে যারা, তারা জঘন্য অপরাধ করেছে। এই জঘন্য অপরাধের জন্য তাদেরকে গ্রেফতার করলে বিদেশিরা ঝাঁপ দিয়ে পড়ে কেন-সেটা আমাদের বোধগম্য হয় না। যেসব দেশ বিবৃতি দিয়েছে সেসব দেশে কোনো একটি শিশুকে যদি এভাবে এক্সপ্লয়েট করা হতো তারা কি করতো? কি ব্যবস্থা নিতো? তাদের কাছে জানতে চাওয়া হোক।

জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে এক মেয়াদ এবং ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও যখন নাস্তানাবুদ অবস্থার সম্মুখীন, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ যখন দেউলিয়া অবস্থায় পতিত, এমন পরিস্থিতিতেও শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবেলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উক্ত সংবাদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কারণ দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ও সাফল্যের সহযাত্রী।

লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস,  অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ 

email-drmiltonbiswas1971@gmail.com


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাসন্তী থেকে সবুজ: এ কেমন অবুঝ সাংবাদিকতা!

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

৪৮ বছর আগের কথা। সবে মাধ্যমিক পাশ করেছি, খণ্ডকালীন কাজ শুরু একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রুফরিডার হিসেবে,সপ্তাহে দু ঘন্টার কাজ, ১০ টাকা আয়, সময়টা খারাপ যাচ্ছিলো না, একদিন কাকডাকা ভোরে সম্পাদকের তলব, বেশ রাগত স্বরে জানালেন কি কাজ করেছি, এ বলে গত রাতে প্রকাশিত পত্রিকা ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোনো বড়ো ভুল হয়েছে কিনা, জানালেন এ এক কপি ছাড়া সব পত্রিকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে কোনো এক সুহৃদ পাঠকের অনুসন্ধানী ফোনকল এর রিপোর্টের ভিত্তিতে। অভিযোগ মারাত্মক। আমার শহরতলীর এক মাদ্রাসাতে ওয়াজ মাহফিলের একটা সংবাদ তাদের অনুরোধে ছাপা হয়েছে।নিচের লাইনে লেখা থাকার কথা, " উক্ত ওয়াজ মাহফিলে দেশের বিশিষ্ট আলেমগণ ওয়াজ নসিহত করেন।" পত্রিকার কম্পোজার আর মেশিনম্যান এক হিন্দু ব্রাহ্মণ, কম্পোজ করতে গিয়ে ওই লাইন এ আলেমগণের পরিবর্তে ছাপা হলো, " উক্ত ওয়াজ মাহফিলে দেশের বিশিষ্ট জালেমগণ ওয়াজ নসিহত করেন।" এই দেখে তো আমাদের সবাই ভয় পেয়ে গেছি, নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জেলে থাকার কথা।

গণতন্ত্রের নতুন ভাষ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক,যিনি প্রতি দিন শাসক দলের নেতাদের হাঁটু ছুঁয়ে সম্মান জানান। যদি কেউ দাসত্ব স্বীকার করে নিতে পারেন,তা হলে তিনিই শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক; নানা অভিযোগে কণ্টকিত হয়েও সরকারের শীর্ষব্যক্তিত্বের গুডবুকে থাকতে পারবেন। এটাই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ‘নিউ নর্মাল’। কিন্তু সে তুলনায় প্রথম আলো পত্রিকাটি বেশ ব্যতিক্রম। একসময় মতি ভাই (সম্পাদক মতিউর রহমান) কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, একতা নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে হাতে খড়ি, সালটা হবে ১৯৭৮, দেশে সামরিক শাসন চলছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ ভাসমান সম্পাদক হাতে পেলেন আলাদিনের চেরাগ, সাবের হোসেন চৌধুরী পত্রিকা বের করবেন, নাম দেয়া হলো ভোরের কাগজ। ঐ সময়ে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শাহেদ আহমেদ দৈনিক আজকের কাগজ নামের একটা পত্রিকা চালাতেন, নতুন ধারার পত্রিকা, ঐ পত্রিকা সহ আরো সব টগ বগে তরুণ সাংবাদিককে নিয়ে জড়ো করা হলো, চালু হলো মতিউর রহমান সম্পাদিত ভোরের কাগজ। বেশ নাম করেছিল ঐ পত্রিকা। একদিন মতি ভাই সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন, ট্রান্সকম গ্রুপ এর মালিক লতিফুর রহমান কিনে নিলেন, ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি ষ্টার, সম্পাদক হলেন মাহফুজ আনাম, প্রফেসর এস এম আলীর মতো সম্পাদককে হটিয়ে দিয়ে, আমি অনেকবার ঐ অফিসে লেখা জমা দিতে গেছি, ধানমন্ডির ৪ নাম্বার সড়কে ছিল অফিস। কিছুদিন পর লতিফ সাহেবের টাকার খেলায় চালু হলো প্রথম আলো, মতিউর রহমানকে করা হলো সম্পাদক।

২০০০ সালের গোড়ার দিকে ফেনীর সন্ত্রাস নিয়ে টিপু সুলতান বলে এক ফেনী প্রতিনিধি তৎকালীন ফেনীর গডফাদার জয়নাল হাজারীকে নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করলো,গডফাদার এর আদেশে টিপুর উপর চালানো হলো অমানবিক শারীরিক নির্যাতন, তা নিয়ে দেশে বিদেশে হৈ চৈ পড়ে গেলো, প্রথম আলো তখন অন্য সব পত্রিকাকে ছাপিয়ে হয়ে উঠলো এক নাম্বার সংবাদপত্র। নির্যাতিত টিপু আমেরিকার প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার পেলো।সময়ের আবর্তনে প্রথম আলো আরো বেশি লাইম লাইট -এ এলো ২০০৭ সালের সামরিক শাসনের আমলে, মাইনাস টু ফর্মুলার প্রবক্তা হয়ে। প্রচার সংখ্যা কয়েক লক্ষ, কর্মীর সংখ্যাও হাজারের উপর।সরকারি বিজ্ঞাপন না হলেও চলার ক্ষমতা রাখে প্রথম আলো।অনেক ভালো ভালো সংবাদ সাহস করে ছাপিয়ে পাঠকের মন জয় করে চলছিল।

এবার আসি গেলো কয়েকদিনে প্রথম আলো পত্রিকাকে নিয়ে বিভিন্ন তর্ক বিতর্ক নিয়ে। মহান স্বাধীনতা দিবসে একজন দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলো যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি মিথ্যা ও ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড’।একটা বাচ্চার হাতে ১০ টাকা দিয়ে স্বাধীনতা নিয়ে তার মন্তব্য নেওয়া হয়েছে।ছেলের নাম সবুজ।তাকে বানানো হয়েছে জাকির হোসেন।ছেলে স্কুলের ছাত্র, তাকে বানানো হয়েছে দিনমজুর। এটি কোন সাংবাদিকতা? এত বড় মিথ্যাচার, মিথ্যা রিপোর্ট করা, সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? এটা একটা সংগঠিত অপরাধ।দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার দায় প্রথম আলো-কে নিতে হবে। ২০১৩ সালে রানা প্নাজা ধসে হাজার হাজার মানুষ যে দিন নিহত হয়, সে দিন সন্ধ্যায় প্রথম আলো-মেরিল পুরস্কারে নাচ-গান করা, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ছাত্রকে নিকটবর্তী উন্নত হাসপাতালে ভর্তি না করে দূরের এক হাসপাতালে ভর্তি করা ও তার মৃত্যু ঘটা এবং এখন স্বাধীনতা দিবসে শিশুর নাম দিয়ে মিথ্যা লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা -এ সবের কি বিচার? স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে এভাবে কটাক্ষ করে যে সংবাদ প্রচার করা এবং একটা শিশুকে ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেটি বলানোর চেষ্টা করা সে না বললেও সেটিকে ছাপানো- এটি কি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি নয়? সে জন্যই এটার প্রচন্ড সমালোচনা হয়েছে, এটি ঠিক নয় বিধায় আপলোড হওয়ার পরে সেটি তারা সরিয়েও ফেলেছিলো। কিন্তু সেটির ‘স্ক্রিনশট’ তো বিভিন্ন জায়গায় ছিলো, অনেকে শেয়ার করেছে, সেগুলো রয়েও গেছে।সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে, ঘুরছে। এতদপ্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মামলা করেছে, মামলার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।পুলিশের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে এবং আইনের গতিতে আইন চলবে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার আগে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি ছিলো, এখনো জালের অনেক দাম।কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে প্রকাশ করা হয়েছিল। অনেকে বলছে, ২৬ মার্চে প্রথম আলোর এ ঘটনাটি বাসন্তীকে জাল পরানোর মতোই। রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এ ধরণের অসত্য পরিবেশন সর্বমহলের মতে একটি অপরাধ, ডিজিটাল অপরাধ। অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক জিনিস নয়, কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করে তার কি শাস্তি হবে না? কেউ যদি অপসাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং একটি ছেলের হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তার নামে অসত্য লেখে, চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন করে, সেটার কি বিচার হবে না? আমরা কি কেউ বিচারের উর্ধ্বে, আইনের উর্ধ্বে? তা তো নয়। বিশ্বের দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদাহরণ আছে, এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ এন্ড রেগুলেশন ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ এন্ড পানিশমেন্ট এবং এ ধরণের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদন্ড এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারো মৃত্যু হয়, তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।

*(ছবিতে ১৯৭৪ সালে বাসন্তীকে মাছধরার জাল পরিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক যে ছবি ছাপিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিলো, সে ছবি আর ২০১৭ সালের সে বাসন্তী (বয়স ৭৫)*



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মাঠ দরকার, না দোকান

প্রকাশ: ০৪:৫৬ পিএম, ৩১ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

খেলোয়াড় সৃষ্টির প্রথম প্রয়োজন হলো মাঠ। কলকাতায় গড়ের মাঠ আছে; ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রেসকোর্স বেশ কিছু ক্লাব এই গড়ের মাঠ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা খেলাপ্রিয় জাতি, স্বাধীনতার আগে আগাখান গোল্ড কাপ হতে দেখেছি। ঢাকার ফুটবল কর্তারাই এই গোল্ড কাপের আয়োজন করতেন। আরসিডি ফুটবল এখানে হয়েছে। দর্শক অপেক্ষা করত দামি তারকাদের ফুটবল কলা দেখার। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় না বা ফেডারেশন কর্তারা এই ফুটবল আয়োজন না করে বসে বসে ক্রিকেট দেখেন। ঢাকা স্টেডিয়াম পাকিস্তানিরা তৈরি করে। পুরো স্টেডিয়াম হয় দোকানসহ। অথচ পাকিস্তানের কোনো স্টেডিয়ামে দোকান নেই। এই যে দোকানসহ স্টেডিয়াম, এতে প্রথম পরাজিত হয় খেলার পরিবেশ। ঢাকায়ই আর্মি স্টেডিয়াম রয়েছে। দোকান না থাকায় খেলার পরিবেশ দারুণ। পুরানা পল্টন ছিল ঢাকাবাসীর সন্ধ্যাবেলার স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় অবগাহন করে সারা দিনের কাজের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার এক নিয়মিত ঠিকানা। মহাপণ্ডিতরা এখানে সালামি আর দোকানের মাসিক ভাড়ার লোভে দোকানসহ বানালেন স্টেডিয়াম। দোকান যত বেশি, তত আয়। তাই স্টেডিয়ামটা বড়ই হলো। দেওয়া হলো হকিকে। মাঠ থেকে পশ্চিম গ্যালারি এত দূরে যে ওখান থেকে ছোট হকি বল ভালোভাবে দেখাই যায় না। আর বিকেলের খেলায় সূর্য চোখের ওপর পড়ায় খেলা দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হবেই। আমাদের মাঠের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অনুশীলনের জন্য। ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপ হকি হয়েছিল। বাংলাদেশ হকি দল ছিল হোটেল পূর্বাণীতে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম খেলার ভেন্যু হওয়ায় সেখানে অনুশীলন করতে দেওয়া হতো না। হকি দল অনুশীলনে যেত বুয়েট মাঠে। ১৯৮৫ থেকে ২০২৩। মাঠ সমস্যার কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়নি কর্তাদের মানসিকতায়। এক গড়ের মাঠ কলকাতার খেলার অগ্রগতির স্টিম ইঞ্জিনের কাজ করছে। আমরা ধুঁকছি মাঠ খুঁজে বের করতে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি ইউনিটের মাঠ আছে। কী সুন্দর পরিকল্পনা। আর আমরা খেলার পরিবেশ নষ্ট করে শুধু দোকানের জন্য স্টেডিয়াম বানাই। যখন পল্টন ময়দানে হকি স্টেডিয়াম হয়নি তখন এই মাঠে ক্রিকেট হতো, হকি অনুশীলন হতো। হ্যান্ডবল, কাবাডি—সব খেলাই ছিল। ‘স্পেস’ বন্ধ করে এক অপ্রয়োজনীয় স্টেডিয়াম বানিয়ে ‘আমও গেল, ছালাও গেল’ অবস্থা তৈরি করা হলো।

মালয়েশিয়ায় দুই-তিনটা ম্যাচ খেলেছি যে স্টেডিয়ামে, সেখানে মাঠের মাঝ বরাবর বসার টিনশেড আর পুরো মাঠ দেয়ালবিহীন। তারা এগোচ্ছে খেলায় আর আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘মার্ক টাইম’ করছি। স্টেডিয়াম দোকানসহ এই দোকানের সেলামি আছে, ভাড়া আছে। এই টাকা যায় কোথায়? ফেডারেশনগুলোতে টাকার অভাব আছে। স্টেডিয়ামে যখন দোকান আছেই, এই ভাড়া বা সেলামি ফেডারেশনগুলোকে দেওয়া যায় না? আমাদের রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বঙ্গবন্ধু এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। এখানে ফেডারেশনগুলোর দেখভাল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে কী করে আরো সক্রিয় করে তোলা যায় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখার সুযোগ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায়। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কার্যকর করতে হবে। 

আমরা কথায় কথায় বিদেশি কোচ আনি। আমি হকির কথাই বলি। হারুন, মামুনসহ বেশ কিছু বিদগ্ধ কোচ আছেন। আম্পায়ার আছেন আন্তর্জাতিক মানের। সমস্যা একটাই, তাঁদের ওপর আমাদের কর্তাদের আস্থা নেই।

দেশের ক্রীড়া নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথম আলোচনা হওয়া উচিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থাকা দরকার কি না? ফেডারেশন কর্তারা নির্বাচনে জিতে এসে এই পরিষদের জন্য তাঁদের কাজ স্বাধীনভাবে করতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হন।

ক্রীড়ার সবচেয়ে বিস্ময়, স্বাধীনতার এত বছরেও সরকারি বিকেএসপির মতো লেখাপড়ার সঙ্গে একাডেমি গড়ায় ব্যর্থতা।

বসুন্ধরা গ্রুপ স্পোর্টস কমপ্লেক্স করেছে। এটি দেশের ক্রীড়ার ভবিষ্যৎ গড়ার এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা। আজ বিপথগামী যুবসমাজকে পথে ফেরাতে ক্রীড়াঙ্গনকে এগোতেই হবে। সেমিনারসহ টিভি চ্যানেলে ক্রীড়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা কতখানি শক্তিধর হতে পারি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার প্রমাণ। খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করুন, তাঁরা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবেই।

 লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দলের অধিনায়ক


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একদিনের বাঙালি, বাংলাদেশ: আমার দুঃখ

প্রকাশ: ১২:০১ পিএম, ৩১ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে বছরে কয়েকটি দিন আসে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, স্মরণীয় আর শ্রদ্ধার দিন। ১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। সেইদিনই বলা যায় শুধু আমাদের পরিচয়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করা নয় সাথে সাথে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজ রোপণ করা হয়েছিল। বাঙালি বিভিন্ন নিপীড়ন, প্রতিবন্ধকতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ অতিক্রম করে, ভাষার জন্য যারা তাদের জীবন দিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেছিল। সেই থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা সবাই শহীদ মিনারে একত্রিত হই, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। আজ মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার লড়ায়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ এই লড়াইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন সেই বাঙালিদের বিশ্ববাসী জানে এবং শ্রদ্ধা করে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে এলে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে তারা যাবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার অর্জনের ঠিক কয়েকদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্য ভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের স্মরণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির পরের প্রজন্মের সন্তানরা যাতে স্বাধীনতার মুল্য বুঝতে পারে আর স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন কথা না ভুলে যায় তার জন্য জয়লাভের পর ঢাকায় একটি অপুর্ব বিস্ময়কর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। সেইদিন অনেক নেতা, দল আর মানুষ সেখানে যায়। আমি বিশ্বাস করি যদি জায়গাটি উপযুক্ত করা হয়, তাহলে সেখানে প্রতিদিন দেশী, বিদেশী দর্শনার্থীসহ সব বর্ণের মানুষ যেতে চাইবে।।

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল সাভারে আমাদের জাতীয় শহীদ সমৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের আত্মত্যাগের গল্প বলার তীর্থস্থান। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফরে আসলে সেখানে যান তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ২৬শে মার্চ এই জায়গাটি হাজার হাজার মানুষের সাথে পূর্ণ হয়ে ওঠে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুঃখজনকভাবে তার মৃতদেহ তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। ঘাতক ও সামরিক শক্তি বিদ্রোহের ভয়ে তাকে ঢাকা থেকে অনেক দূরে টঙ্গী পাড়ায় সমাহিত করে। সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকাকালে কবরটি অবহেলিত ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও কবরটি অবহেলিত থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার প্রতি সঠিকভাবে অনেক মনোযোগী হয়।মানুষ যাতে আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার অবদান, স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়ন এবং তার আত্মত্যাগ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণ করতে পারে তার জন্য একটি সম্মানজনক সহজ কিন্তু মহিমান্বিত জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। জাতীর পিতার জন্মদিন ছাড়া অন্য দিনে আমার মত দেশের প্রতিটি কোণ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে হাতে গনা কিছু লোক প্রতিদিন সেখানে যান।

আমি এখানে কেবল উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের আলোকপাত করছি। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যাই। তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি ছয়টি মহাদেশের ১১৫টি দেশে কাজ করার এবং দেখার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি দেশে আমি ইতিহাসের স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ, তাৎপর্যপূর্ণ সমাধি দেখার চেষ্টা করি। যা দেখে নাগরিক এবং দর্শনার্থীরা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আমি দেখেছি সেসব দেশের সরকার সেই জায়গাগুলির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যতাযত বিনিয়োগ করেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েছে। এই জায়গাগুলি সপ্তাহ এবং বছরের প্রতিটি দিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সেই জায়গাগুলোতে যান। সব সময় কিছু না কিছু উৎসবের আয়োজন করা হয় সেসব জায়গায়। সেই জায়গাগুলো অনেক স্বেচ্ছাসেবক সহ সশস্ত্র বাহিনী পাহারা দেয়। স্কুলের বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে তারা তাদের ইতিহাস এবং সংগ্রাম দেখতে, বুঝতে, শিখতে পারে এবং সম্মান দেখাতে পারে। বিদেশী দর্শনার্থীরাও সেসব স্থান পরিদর্শন করে এবং সেই দেশ, এর মানুষ এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতিটি পর্যটন বইয়ে সেই স্থানগুলিকে অবশ্যই দর্শনীয় স্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে যাবার পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার এবং ২০১৭ সাল থেকে আমি বছরে অন্তত একবার বাংলাদেশ সফর করি (যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের জন্য আমি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি)। আমি যখন বাংলাদেশে যাই, আমি সবসময় চেষ্টা করি ওই চারটি এলাকা ঘুরে দেখার জন্য। গত কয়েক দশকে অসাধারণ উন্নয়ন দেখতে আর জানতে আমি প্রতিবার ঢাকার বাইরে আমাদের গ্রামীণ এলাকাতেও যাই। ওই চারটি এলাকা পরিদর্শন করে, অবহেলা দেখে আমার দারুন মন খারাপ হয়। হ্যাঁ, জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে যান, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নেতাদের শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কারণেই সেই জায়গাটি সারা বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত রাখা হয়। তবুও আমি এর চেয়ে অনেক বেশি আশা করি।

২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ মিনার রং করা হবে, পরিষ্কার করা হবে, আল্পনা আঁকা হয় এবং সেইদিন বিভিন্ন দলের নেতা আর হাজার হাজার মানুষের মধ্যে লড়াই হয় কে প্রথমে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে তাই নিয়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারির পরের দিন, জায়গাটি অবহেলিত এলাকা বলে মনে হয়। আমি দেখেছি সেই জায়গাটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা, কোন পাহারাদার নেই, রক্ষণাবেক্ষণের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?

বধ্য ভূমি স্মৃতিসৌধ (শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ), একটি চমৎকার জায়গা কিন্তু এটিও একদিনের স্মরণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে - শুধুমাত্র একদিনের সহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। আমি সেখানে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। দেখেছি কিছু তরুণ দম্পতি এখানে-সেখানে বসে রোমান্টিক সময় পার করছে। এক কোণায় অলসভাবে বসে আছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?

সৌভাগ্যবশত সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ একটি ভাল দর্শনীয় স্থান, তবুও শুধুমাত্র ২৬মার্চ নয় জায়গাটি সারা বছর আরো ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা যেতে পারে। আমি সেখানে এমন কোনো ট্যুরিস্ট গাইড দেখিনি যিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা স্থাপত্যের অর্থ বর্ণনা করতে পারেন।

 

বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন যাতে আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গর্বিত জাতি হতে পারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি দেশ পুনর্গঠন শুরু করেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের আহ্বানে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। অর্থনীতি দ্রুত গতিতে উঠতে শুরু করে। উৎপাদন বাড়াতে শুরু হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমতে থাকে। আশায় উদ্বুদ্ধ, লোকেরা স্বাধীনতার সুবিধাগুলিকে প্রতিটি দরজায় ধাপে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। ঠিক তখন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিলে মিথ্যা ও নোংরা প্রচারণা ছড়ানো আর কিছু বিশ্বাসঘাতক সামরিক কর্মকর্তা, কিছু বিদেশী শক্তি এবং বাংলাদেশের কিছু মিরজাফরদের সহায়তায় জাতির পিতাকে সপরিবারের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ঘোষণা করা হয় সামরিক আইন। গণতন্ত্র হরণ করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং কয়েক দশক ধরে দেশ শাসন করে। স্বাধীনতা আর মুক্তির সব নিদর্শন কেড়ে নেওয়া হয, জাতির পিতার কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। আমাদের অতীত বা জাতির পিতাকে স্মরণ করার মতো কোনো প্রতীক বা স্থান আমাদের কাছে ছিল না। তাই আজ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ একটি চমৎকার স্থান, একটি দুঃখ, শান্তি, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এলাকা। এটা আমাদের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার জায়গা, আমাদের ভবিষ্যতের জায়গা। সেখানের জাদুঘরটি আমাদের জাতির পিতা এবং সংগ্রামের গল্প বলার চেষ্টা করে। তবুও আমি অনুভব করি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ আরো অনেক বেশি সম্মানের যোগ্য। এটি শুধুমাত্র তার জন্মদিনে দেখার জায়গা হতে পারে না। জাতির পিতার সমাধি হল ইতিহাস, ত্যাগ ও সংগ্রামের স্থান, শুধুমাত্র জন্মদিনে এটি দর্শন হতে পারে না। এটা বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য প্রতিদিন মনে রাখার জায়গা। আমার জন্য এটি একটি তীর্থস্থান। বেড়াতে যেতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আসার জন্য কেন ডেডিকেটেড পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস নেই। তাহলে মানুষ সেখানে যাবে কিভাবে? দুর থেকে আশা মানুষের রাত কাটার জায়গা সেখানে নই। সামরিক খুনি ও স্বৈরশাসকরা এটাই চেয়েছিলেন, যাতে মানুষ সেখানে না যেতে পারে এবং দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও কোন মনোযোগ দিচ্ছি না। ভবিষ্যত প্রজন্মের সেখানে যাওয়া সহজ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না! আমরা ভর্তুকি প্রদান করছি, এমনকি লোকসানকারী প্রতিষ্ঠানকেও কিন্তু কেন এই প্রচেষ্টায় বরাদ্দ করতে পারছি না!

আমি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী হতে চাই, আমি আমাদের গর্বিত ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং আমাদের আত্মত্যাগের কথা প্রতিটি দিন স্মরণ করতে এবং বলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুযোগ দেওয়া হলে, সক্রিয়ভাবে দেশব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের জনগণ, বৃদ্ধ এবং যুবক, নারী বা পুরুষ তাদের শ্রদ্ধা জানাতে সেই স্থানগুলিকে স্মরণের জায়গা হিসাবে পরিদর্শন করতে যাবে। তারা ইতিহাসকে আলিঙ্গন করে প্রতিশ্রুতি করবে কখনই কউকে আমাদের দমন করতে, আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেব না। বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীরা সে জায়গা দেখার জন্য কৌতুহলী হবে এবং সেখানের যাবার ইচ্ছা করবে এবং আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। যা আমি অন্য অনেক দেশে দেখেছি, তাই ভাবি কেন আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ, বিমান বাহিনী এবং বিডিআর বাহিনী তাদের সেনানিবাসের মতো তেমন সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণের ধারাতে এই চারটি জায়গায় স্থায়ীভাবে তাদের স্টেশন স্থাপন করে, সরকারী সহায়তায় এই স্থানগুলি পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে না? আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তি এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। কথার কথা তারা সেখানে সবচেয়ে অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় প্রহরী পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারে, লোকেরা তাদের দেখতে যাবে এবং একই সাথে তাদের শ্রদ্ধা জানাবে। কেন আমি বিমান বন্দরে এই চার সৌধের ছবি দেখি না? কেন রাজনৈতিক দল, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যায়ক্রমে ছাত্রদের এই জায়গায় যাওয়ার আয়োজন করে না? আমরা কেন ইতিহাসের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু অর্থ ব্যয় করতে পারি না? কেন যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সেখানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না? মনে রাখতে হবে, এই জায়গাগুলো আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথায় ছিলাম এবং আজ কোথায় আছি। আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে কেন আমাদের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য লড়াই করতে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। বার বার সতর্ক করবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আমাদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সাহস দেবে কেন আমাদের জাতি, আমাদের ভাষা এবং আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করা উচিত।

আমি যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরের স্থান পরিদর্শন করার সচেতনতা এবং ইচ্ছা, তখন আমি খুব বিস্মিত এবং গর্ব বোধ করি। সামাজিক মিডিয়াগুলো তাদের দুঃসাহসিক গল্পে পূর্ণ। তারা তাদের বাড়ির চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, তারা এখন আরও মোবাইল, তাদের সামাজিক ও আর্থিক উপায় বাড়ছে, তারা বিভিন্ন জায়গা দেখতে চায়, আমাদের ইতিহাস জানতে চায়। এখন অন্তত সেই চারটি জায়গাগুলিকে দেখার জন্য, সময় কাটানোর জন্য আরও আকর্ষণীয় করার দায়িত্ব আমাদের, সরকারের, সবার।আমি বিশ্বাস করতে চাই শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ শুধুমাত্র একটি দিনের জায়গা নয় বরং প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা ও স্মরণের জায়গা হক। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মাতৃভাষা, যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের জাতির পিতাকে বিশ্বাস করি তবে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে, আপনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, সেই বিশ্বাসে আমাদের অবশ্যই একসাথে থাকতে হবে। আমরা একদিনের জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী হতে চাই না। আমরা বাঁচতে চাই এবং সমৃদ্ধ হতে চাই, আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের অতীত, বর্তমান নিয়ে গর্বিত হতে চাই এবং আমরা আমাদের আরো উন্নত ভবিষ্যতে বিশ্বাস করতে চাই। চিরদিন আমরা সবাই মনে প্রানে বাঙ্গালী, বাংলাদেশী হয়েই বাঁচতে চাই।

Prof Monir Islam, MBBS, FRCOG, MPH
Senior Specialist
International Centre for Migration, Health and Development
Former Senior Specialist, Maternal and Newborn Health
Liverpool School of Tropical Medicine, Liverpool, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

চুনোপুঁটি নয়, রাঘব বোয়ালকেই ধরতে হবে


Thumbnail

দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা সকলেই চাইব যে আইন সবার জন্য সমান থাকবে। কিন্তু খুব অবাক লাগে যখন দেখি একই অপরাধে একজন কারাগারে এবং আরেকজন স্বাধীনভাবে বাহিরের হাওয়া বাতাস খাচ্ছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হলে গতকাল বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শুধু শামসুজ্জামান নয়। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও বুধবার মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হল, শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার পর তাকে গ্রেফতার করা হলে মতিউর রহমানকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? এর কারণ কি?

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ছিলেন এক-এগারোর ষড়যন্ত্রকারী এবং এখনও তিনি দেশের বিরুদ্ধে যে নিয়মিত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন আরেকটি বড় উদাহরণ হল ২৬ মার্চের সেই প্রতিবেদন। ভাবতে অবাক লাগে যে, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিলেন এবং তার কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বাধীন বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল, তারপরও দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন ষড়যন্ত্র করার পরও ষড়যন্ত্রকারীরা কিভাবে এখনও জেলের বাইরে। এটা শুধু আমি না, দেশের সাধারণ জনগণও জানতে চায়। সুতরাং অবিলম্বে তাকে আইনে সপর্দ করা হোক। পরবর্তিতে তিনি যদি বেইল পাওয়ার যোগ্য হন, তিনি বেইল পাবেন। বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু যদি এই তওবা সম্পাদককে অবিলম্বে জেলে না নেওয়া হয়, তাহলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিরা জয়ী হয়ে যাবে।

আজ দার্শনিক শেখ হাসিনা শুধু একজন ব্যক্তি নন, শুধু একটি দলের প্রধান নন কিংবা শুধুমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, একসময় যেমন বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ বোঝাত এখন শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। মতিউর রহমানের মত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যদি কঠিন হস্তে দমন না করা হয় তাহলে তারা একের পর ষড়যন্ত্র করেই যাবে। এর আগেও নানা রকম মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। যার জন্য আগে তওবা করতে হয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদককে। ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান’, কবিতার এই বাক্যের মত বার বার তওবা করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এই তওবা করাই তাদের ভাষা। এভাবেই যদি তারা বারবার ছাড় পেয়ে যায় তাহলে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। 

প্রথম আলোর সম্পাদক, যিনি তওবা সম্পাদক হিসেবেই বেশি পরিচিত এবং বাংলাদেশকে যেহেতু তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেছে তাদেরকে অতি শীঘ্রই বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটা ১৯৭৫ সাল না, এটা ২০২৩ সাল। বিদেশীদের দিয়ে কিছু মন্তব্য করালাম আর হয়ে গেল, এত সহজ নয়। চুনোপুঁটিকে ধরে রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দিবেন, এটা এখন আর সম্ভব নয়। এবার রাঘব বোয়ালকেই ধরতে হবে।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন