কোভিড ১৯ মহামারী বাংলাদেশের তরুণদের সামনে নতুন ও কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। কোভিড ১৯ মহামাররির সময় দেখা দেয় জনজীবনে এক চরম অনিচয়তা। মানুষ তখন নতুন করে ধর্মমুখী হয়ে যায়। বিশেষ করে তরুণদের স্বপ্নভরা দুনয়নে নেমে আসে অন্ধকার।
তরুণরা উন্নত প্রযুক্তির যুগের মানুষ।করোনার আগে তাদের ভাবনা সনাতনী ভাবনা থেকে ভিন্নতর ছিল।কিন্তু মহামারীর প্রকোপে তাদের চিন্তা চেতনায় রেখাপাত ঘটে। তারা অনেকেই মানবতার খাতিরে হয়েছিল মানবপ্রেমিক নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে।করোনাকালে তাদের লেখাপড়া শিক্ষা কার্যক্রম হয়েছে চরমভাবে বিঘ্নিত।এক অজানা ভয় ও অনিচয়তা থেকে তারা মুক্তির পথ খুঁজেছে।অনেকেই তখন ধর্মকে বেছে নিয়েছে বাঁচার অবলম্বন হিসেবে।এসময় আমাদের তরুণদের অনেকেই ধর্মকে আলিঙ্গন করে জীবন যাপনের পথ নির্বাচন করেছেন। এরকম একটি পরিবর্তন আমাদের সমাজকে এমন ভাবে প্রভাবিত করেছে যে ধর্মব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় সক্রিয় ও সঙ্গবদ্ধ হয়েছেন।
সম্প্রতি ওই ধর্মীয় আনুগত্যর একটি নির্মম বহি:র্প্রকাশ আমরা দেখেছি।এক তরুণী তার ড্রেসের জন্য হেস্তনেস্ত হয়েছেন নরসিংদীতে । ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুড়োদের সঙ্গে আদালত নারীদের ড্রেস নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে ।তারই পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন - আমাদের উচিত কৃত্রিম মেধা অথবা রোবোটিক্স নিয়ে ভাবা।তিনি আরও বলেছেন, ড্রেস, টিপ মীমাংসিত বিষয় যদিও সম্প্রতিকালে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব নিয়েও কথা হয়েছে।সেগুলো নিয়ে বিতর্ক করা অনুচিত।পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন মৌলানারাদের কেউ কেউ।
মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর কথা থেকে আমি একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। তার কথা থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে তিনি আমাদের তরুণদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন। একথা সত্য কোরোনা উত্তরকালে আমাদের তরুণরা অত্যন্ত মানসিক চাপে আছে।সেগুলো থেকে বাঁচার জন্য আমরা অভিভাবকরা অনেকেই নামাজ পড়তে বলি। আল্লাহর কাছে মুক্তির পথ বাতলে দিতে হাত তুলতে বলি।আর এসবের সুযোগ নিচ্ছে চিরায়ত ধর্মব্যাবসায়ীরা।তাদেরই প্ররোচণায় তরুণদের কেউ কেউ নারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছে। রোবোটিক্স ও কৃত্রিম মেধা নিয়ে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দিকনির্দেশনা মূলক।তরুণদের হতাশার মাঝে আশা সঞ্চারক।
সারা পৃথিবীতে যে অর্থনৈতিক ধস নেমেছে করোনা ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে তা দিন দিন গভীরতর হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করছেন।তাদের বক্তব্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও প্রকাশ পাচ্ছে।ইতিমধ্যে তিনি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর্থসামাজিক পরিবেশে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলে অনেকেই শংকা প্রকাশ করছেন। এরকম একটি সময়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে বলে আমার বিশ্বাস।
পৃথিবীর এমন একটি সংকটকালে আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব সবচে বেশি।আমাদের তরুণসমাজ যাতে সঠিক পথ খুঁজে পায় সেদিকেই আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত।শিক্ষকের এই দায়টি সর্বজনবিদিত। আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী রোবোটিক্স বা কৃত্রিম মেধা নিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন তা খুবই যৌক্তিক।এবং আমাদের শিক্ষকদের উচিত তরুণদেরকে অনুপ্রাণিত করা যাতে তারা এসব নিয়ে ভাবতে আনন্দ পায়।
তবে সেজন্য সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারকে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে যাতে বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করে তরুণদেরকে উদ্ভাবনী কাজে আকৃষ্ট করা যায়।এবং যখন তারা বিজ্ঞানের চর্চায় উৎসাহ পাবে তখন ড্রেস কিংবা টিপ্ নিয়ে আলোচনায় সময় নষ্ট করবে না।মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে আমাদের অন্যান্য মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরা যাতে কথা বলেন তার নির্দেশনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দেবেন বলে আশা করতে পারি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের তরুণদের মাঝে একটি সংকট দেখা দিয়েছিলো। তারা দলে দলে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল।এবং সেটা দেশের ও তরুণদের যে সর্বনাশ করেছিল তা বর্ণনাতীত। আমাদের আজকের সংকটকালীন অবস্থায় তরুণদেরকে পথভ্রষ্ট করবার চেষ্টা চলছে।আশা করি সরকার সেটা বুঝতে পারছে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে তরুণদের মনে আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হবে যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ তরুণদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল সেই একইভাবে আমাদের তরুণদেরকে স্বপ্ন দিতে হবে।অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে কৃত্রিম মেধা বা রোবোটিক্স নিয়ে যাতে ভাবে।
আমরা ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ স্বপ্নের কথা জেনেছি।কিন্তু সেটা তরুণদের কাছে এখনো পরিষ্কার না।সেটাকে যদি বিশদভাবে সরকারিভাবে আলোচনা করা হয় তবে তরুণদের মাঝে আশার আলো দেখা যাবে। আমার বিশ্বাস রোবোটিক্স ও কৃত্রিম মেধা নিয়ে ভাবনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবনার অংশবিশেষ।
এবার বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস হাইওয়ে এবং পদ্মা সেতু দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম গ্রামের বাড়ি।গ্রামের তরুণরা এখন স্বপ্ন দেখছে সম্ভাবনাময় এক বাংলাদেশের।মেট্রো রেল ও টানেল তাদের স্বপ্নকে আরও প্রসারিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকলে চলবে না।নেতাদেরকে বলতে হবে কেমন বাংলাদেশ আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই।মানুষ স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে - তরুণদের স্বপ্ন কি তা সরকারকে জানতে হবে এবং সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থান দিতে হবে।
আমাদের তরুণদেরকে সঠিক পথে যাতে চলতে পারে সেজন্য সরকারের উচিত বিশেষ তহবিল গঠন করা।সেখান থেকে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা। তরুণদের জন্য খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে, তাদের বিভিন্ন সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা।তরুণদের জন্য বিশেষ স্কিল অর্জনের জন্য বিশেষ বিশেষ টেকনিক্যাল কোর্স স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু করা জরুরি।পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যাতে আকৃষ্ট হয় সেদিকে নজর দেয়া।
বিগত বছরগুলোতে মেগা প্রকল্প নিয়ে সরকারকে নিমগ্ন থাকতে দেখেছি। এখন প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন কিছু করতে হবে যাতে দেশের সকল অঞ্চলে উন্নয়নের কর্মকান্ড তরুণরা দেখতে পায়।সরকার যদি তরুণদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ না করে তবে সেই শুন্যতার সুযোগে অশুভ শক্তির উত্থান হতে পারে।
আমরা লক্ষ্য করেছি সুলভে নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসময়ে বাজার মূল্য এতটা বেশি যে সকলকেই কষ্ট দিচ্ছে। সরকার এসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডাইনিংএ ভর্তুকি দিয়ে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিধি ও পরিমান বাড়াতে পারে।
দেশের তরুণসমাজ আগামীদিনের নাগরিক- তাদের যত্নে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।তাদেরকে মাদক, অপসংস্কৃতি ও ধর্মিয়মাদকতায় আসক্ত করে ফায়দা লুটার চেষ্টা যাদের মাঝে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় রাখা প্রয়োজন।আমাদের মিডিয়া এখন অনেক বেশি উন্মুক্ত । ইউ টিউব ফেসবুক ব্যবহার কঠোর নজরদারীতে রাখতে হবে যাতে ওই অশুভ শক্তি আমাদের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত না করতে পারে।
আমাদের ব্যবসায়ী মহলে আছে লোভী লোকজন।তাঁরাও তরুণদেরকে ব্যবহার করে থাকে সরকারকে চাপে রাখার জন্য। সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।আমরা প্রায় দেখি বাস ভাড়া নিয়ে আমাদের তরুণ সমাজ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উন্নত দেশগুলোতে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য যানবাহনে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে সরকার যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। উন্নত দেশে তরুণদের জন্য আছে বিভিন্ন ধরণের সরকারি ভাতা। আমরা দাবি করছি আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। তাহলে তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা যায়।
তরুণরা উদ্যোক্তা হতে চায়। সেখানে সরকার মনযোগ দিতে পারে। তাতে করে অনাস্থার কালোমেঘ কেটে যাবে।বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে তরুণদের ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।