প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১০ অক্টোবর, ২০২২
আমাদের বাঙালিদের একটি সবচেয়ে বড় গুণ হলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমূহ। এক বছর তিন মাসের মত আছে নির্বাচনের। এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হচ্ছে। ইভিএম নিয়েও আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আবার সেই অসাংবিধানিক পথে নির্বাচন করা যায় কিনা তা নিয়েও আলাপ হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা তো রীতিমতো নতুন সুট কোড বানাতে দিয়েছেন। শুধু ডেলিভারি নেন নাই। অনেকে তাদের আগের সুট কোট ধৌত করতে দিয়েছেন। কারণ অসাংবিধানিক পথে আসলেই তারা একবছর বা দুই বছরের জন্য যদি আবার গদি দখল করতে পারেন। আবার এরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলেন। বিশেষ করে দুটি প্রিন্টিং মিডিয়া এবং যেকোনো টিভি খুলি তাহলে সব জায়গায় দেখা যায় একই আলাপ আলোচনা। টকশোতেও একই আলাপ আলোচনা। সব আলাপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কি? এটা তো যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তার দায়িত্ব। সুতরাং দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দায়িত্ব দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর করা, দেশ উন্নত করা ইত্যাদি। তাদের এই যুক্তি ঠিক আছে।
কিন্তু এটা অক্টোবর মাস। আজ ১০ অক্টোবর। এই ১০ অক্টোবর প্রথম জামায়াত-বিএনপি মিলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। আমি এটাকে প্রথম বলছি অন্য কারণে। কারণ এর আগে জামায়াতের সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করলেও অন্যভাবে কায়দা করেছিল। কিন্তু এবারই প্রথম রাখঢাক ছেড়ে দিয়ে ১০ তারিখে যারা স্বাধীনতা চায় নাই, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যাদের পরবর্তীতে স্বাভাবিক আইন কানুন ফলো করে যাদের ফাঁসি হয়েছে প্রথম তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল বিএনপি। একথা নিয়ে কোনো আলাপ হচ্ছে না। এ কথা নিয়ে আজকে পত্রিকার প্রধান হেডিং হওয়ার কথা ছিল। সমস্ত পত্রিকায়, সমস্ত টেলিভিশনে এটা প্রচার করা উচিত ছিল যে, আজ ‘১০ অক্টোবর’ বাঙালি জাতির জন্য কালো দিবস। কারণ হচ্ছে এদিনই যারা আমাদের দেশে চায় নাই সেই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে আজকের দিনে জাতীয় পতাকা উঠেছিল।
আমরা
যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন
করলাম সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবের নেতৃত্বে।
এদেশের বঙ্গমাতা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তার বাচ্চারা, তারা খুব ছোট তাদের সকলেই অবরুদ্ধ বাংলাদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব করেছে। চোখের সামনে যখন দেখা যায় যে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করে দেশটাকে পেয়েছি, এই পতাকা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে। কিন্তু এই পতাকাটা দেয়া হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি তাদের গাড়িতে এবং সেই পতাকা তারা পাঁচ বছর উড়ালো। তাদের নিয়ে আবার আজ-কাল গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কি হিজরতের পক্ষে নাকি? আমার মনে হচ্ছে এই ১০ অক্টোবর শুধু কালো দিবস নয়, বুদ্ধিজীবীদের হিজরত দিবস উচিত। তাদের পাকিস্তানে চলে যা উচিত। যারা দেশ চায় নাই, তাদের হাতে যারা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে তাদের তো স্বাধীন দেশে থাকার কোন অধিকারই নেই। নির্বাচন তো অনেক দূরের কথা। নির্বাচন বিএনপি করবে কিসের জন্য? তারা আজকে বলছে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচন করবে না। কিন্তু আমি তো উল্টো বলি যে, তাদের নির্বাচন করার কোন অধিকার নাই। তারা তো বাংলাদেশকে বিশ্বাসই করে না। যদি বিশ্বাস করতো তাহলে যারা দেশ স্বাধীন চায় নাই তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে কেন? তাদের তো এই দেশে থাকার অধিকার নাই। সুতরাং নির্বাচন তো দূরের কথা। যে সকল বুদ্ধিজীবীরা তাদেরকে সমর্থন করছেন তাদেরও এদেশে থাকার কোন অধিকার নাই। সুতরাং একচেটিয়া নির্বাচন হবে, কোন দেশ মানল কি মানলো না তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ দেশটা আমাদের, আমরা আমাদের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছি এবং এই দেশের তারাই ক্ষমতায় থাকবে, তারাই শুধুমাত্র দেশ পরিচালনা করবে যারা দেশটাকে স্বাধীন করেছে। সুতরাং যারা স্বাধীন করেনি বরং এর বিরোধিতা করেছে, যারা পাকিস্তান চেয়েছে, তারা পাকিস্তানে যেয়ে নির্বাচন করুক। পাকিস্তানের নির্বাচনের কিছুদিন পরে হবে। এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশের পরপর ওখানে নির্বাচন হবে তারা সেখানে নির্বাচন করুক। বিএনপি তাদের সব বুদ্ধিজীবীসহ চলে যাক।
গণ আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, এমনকি এই মুক্তিযুদ্ধে বাম রাজনীতিবিদদের অবদান অনস্বীকার্য । রাজনীতিতে কে কি ভুল করেছে সেটা অন্য জিনিস। কিন্তু যিনি বাংলাদেশ বিশ্বাস করেন, তিনি বাংলাদেশে বসে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা হতে পারে, তাদের মতবাদ আলাদা হতে পারে, তারা তর্ক বিতর্ক করতে পারে কিন্তু যারা দেশই চায় নাই তাদের সাথে তো কোন আলাপ হতে পারে না। সুতরাং এদেশে বাম দল আছে যারা, তারা নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে এবং যারা এই স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ চেয়েছে এবং আমাদের পতাকা দিয়েছে তারাই শুধু মাত্র একমাত্র এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমিসহ আমরা ভুল করেছি এতদিন তাদেরকে বিশেষ করে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবরের পরে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিয়ে। আমাদের বরং স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে, তোমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই এবং তোমাদের যারা সমর্থন করে তাদেরও কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশ সম্বন্ধে কোন কথা বলার। তোমাদের কথা বলতে হলে, তোমাদের কিছু লিখতে হলে তোমরা পাকিস্তানের পক্ষে লেখ। যারা দেশের কথায় বিশ্বাস করে না তাদের সাথে কিসের তাদের আলাপ-আলোচনা।
আমার মতে, শুধু আজকে জামায়াত নয়, জামায়াতের সাথে সাথে বিএনপিকেও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কেননা তারাই সেদিন রক্তের বিনিময়ে পতাকা স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সুতরাং শুধু জামায়াত না, জামায়াতের সাথে সাথে বিএনপি এবং যারা যারা আজকে বিএনপিকে সমর্থন করছে তাদের পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। আমার খুব দুঃখ লাগে যে, অবসরপ্রাপ্ত ইব্রাহীম সাহেব উনি একটা দল করেছেন। একাই একটা দল। কিন্তু এরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের কি সামান্য লজ্জা লাগে না? যাদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছেন, তাদের গাড়িতে যারা পতাকা তুলে দিয়েছিল তাদের সাথে কিভাবে একই সাথে মিলে নির্বাচন বয়কটের ডাক দেন।
ব্যক্তিগতভাবে এই ভদ্রলোককে অপছন্দ করার কিছু নাই। কিন্তু এরা তো রাজনীতির মাঠে রাজনীতি করেন নাই। হঠাৎ করে ভাবছেন যে, একটা ইঞ্জিন রেডি করতে পারলেই সেখানে অনেকে এসে যাবে এবং একটা পদ পাওয়া যাবে। যেভাবে তিনি চলতেছে তাতে যাওয়ার তো জায়গা নাই। আমি বলব অনেকেরই তো বয়স হয়েছে, মৃত্যুর আগে অন্তত যাদের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে তাদের সাথে যেমন, বিএনপি নেতা হাফিজ সাহেব এরকম অনেকেই সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধে অবদান আছে। তাদের সেই অবদানকে সামান্য ক্ষমতার লোভে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাদের গাড়ীতে পতাকা তুলে দিলেন। আবার তাদেরকে সাথে নিয়ে আবার নির্বাচন করতে চান? লজ্জা করে না তাদের? তাদের বিবেক বলে কিছু নাই? তারা এত বিবেকহীন হয়ে গেল কিভাবে? তাই বলে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে ভুলে যাবো? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে যাবো? পঁচাত্তরকে ভুলে যাবো? এমনকি ওয়ান ইলেভেন ভুলে যাবো? সবই যদি ভুলে যায় তাহলে আমাদের চোখ আর কান থাকার তো কোন দরকার নাই। আমরা বোধির হয়ে থাকবো।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হয়। এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক সত্য। এটা বারবার বিজ্ঞজনরা বলেছেন এবং লিখেছেন। আপনারা মুনতাসির মামুনের মত লোক অথবা জাস্টিস মানিকের মতো এদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। এরা আরও ভালোভাবে আপনাদেরকে বলতে পারবে যে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে কত কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু একজন রাজাকার-আলবদর তিনি আমৃত্যু রাজাকার-আলবদর থাকতে পারেন। এই কারণের জন্য এই ১০ অক্টোবর কালো দিবসে সকলের প্রতি আমার আবেদন, সকল দেশ প্রেমিকের প্রতি বিশেষ আবেদন, আপনারা আবার রুখে দাঁড়ান যারা এই কালো দিবসের সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাদের গাড়িতে যারা পতাকা তুলে দিয়েছে তাদেরকে এ দেশে নির্বাচন করার কোন অধিকার দেওয়া যেতে পারে না। বরং বিএনপি যদি অন্য নাম দিয়ে সেখানে যারা মুক্তিযুদ্ধ আছে তারা যদি একটি দল গঠন করে সেই দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
আমি
সবার কাছে আশা করবো
আমরা জাতি হিসেবে যেন
সবসময় ১০ অক্টোবরকে কালো
দিবস হিসাবে পালন করি। যাতে
আমরা ভুলে না যাই
যে, একসময় এদেশে যাদের সাথে আমরা সংগ্রাম
করেছিলাম তাদের হাতেও কিছু লোক তাদের
গাড়ীতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। সুতরাং
তাদেরকে সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণভাবে তাদেরকে পরিত্যাগ করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।