ইনসাইড থট

দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে অন্যরা, ভুগছে উন্নয়নশীল দেশগুলো!

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৫ অক্টোবর, ২০২২


Thumbnail দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে অন্যরা, ভুগছে উন্নয়নশীল দেশগুলো!

গত ১৩ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শক্তিশালী এবং প্রশ্নাতীত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাপক যোগাযোগ (সড়ক, রেল, আকাশ, নদীর পাশাপাশি মোবাইল ও ডিজিটাল), কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ শুরু করে করে। একই সাথে তিনি উন্মুক্ত অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং বাণিজ্য নীতির সাথে সাথে আমলাতান্ত্রিক লাল টেপ অপসারণ করতে শুরু করেন -এ সবগুলো আর্থ-সামাজিক এবং মানব উন্নয়নের দ্রুত বৃদ্ধির প্রধান উপাদান। বাংলাদেশ ক্রমশ মাথা উঁচু করে নিজের দুই পায়ে দাঁড়াতে শুরু করে। তিনি লোহার মুষ্টি দিয়ে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোকে গুঁড়িয়ে দেন। জনগণ তাদের পরিবারের জন্য স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মূল্য উপলব্ধি করতে শুরু করে এবং ক্ষমতার স্বার্থে ক্ষমতা অর্জনের জন্য হরতাল, নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারা এবং ধ্বংসাত্মক অশান্তি আর সমর্থন করছে না। এখন সাধারন জনগন তাদের এবং তাদের সন্তানদের সমৃদ্ধির জন্য শান্তি ও প্রশান্তি চায়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অদম্য নেতৃত্ব এবং প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীক আর্থ-সামাজিক এবং মানব উন্নয়ন নীতি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছে, এবং সমৃদ্ধি ও সুখের সাথে জীবনযাপনে সাহায্য করে দেশে বাস্তব পরিবর্তন আনার কারনে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইএমএফের মতো অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্থাগুলি বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম উদাহরণ হিসাবে দেখতে শুরু করে। তারা আমাদের সম্মান করতে শুরু করে এবং আমাদেরকে উন্নয়নের সমান এবং সম্মানজনক অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করে। ১৬০ মিলিয়ন/ ষোল কোটি মানুষ এবং জনগনের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার দেশ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমা দেশগুলি পারস্পরিক বাণিজ্য এবং সুবিধার সম্ভাবনা দেখে বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করে। এই ছিল কয়েকদিন/মাস আগে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া চিত্র ও অবস্থান। একবার আপনি শুধু দেশের গ্রাম বা শহুর গুলোতে ঘুরে বেড়ান, তাহলে দেখবেন কী বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটছে সবার জন্য। কেউ পিছিয়ে নেই। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।
 
প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ আর এর জনগণের জন্য সবকিছুই ছিল মঙ্গলজনক। দেশে শান্তি, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির হাওয়া বইছিল। তারপরে COVID-19 আঘাত হানলে, হঠাৎ যেন সবকিছু থমকে দাঁড়াতে শুরু করলো। জীবন এবং জীবিকাকে ধ্বংস করতে শুরু করলো। কিন্তু আবারও প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী নেতৃত্বে অন্যান্য অনেক প্রতিবেশী এবং ধনী পশ্চিমা দেশের তুলনায় মহামারীটি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করলেন। অর্থনীতি আবার বাড়তে শুরু করে। মানুষ আবার উন্নত ভবিষ্যতের জন্য উন্মুখ হতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় দুর্ভাগ্যজনক ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর জন্য কাকে দায়ী করতে হবে, এটা কার বা কাদের দোষ ছিল তা নিয়ে তর্ক না করা যাক, আমরা জানি এটা কোনো উন্নয়নশীল এশীয়, আফ্রিকান বা ল্যাটিন আমেরিকান দেশের দোষ ছিল না। তারা এ যুদ্ধ শুরু করেনি বা শুরু হউক তাও চাইনি। কিন্তু মার্কিন ও কিছু ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় রাখার সংকল্পের জন্য প্রক্সি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে শুরু করে এবং বিশেষ করে খাদ্য, গ্যাস, জ্বালানী এবং সারের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আলোচনার মাধ্যমে একটি কূটনৈতিক সমাধান এবং যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তিতে সক্রিয়ভাবে বাঁধা দিতে শুরু করে বা নাকচ করে। অন্যদের জীবন ও জীবিকার মূল্যে রাশিয়াকে পরাজিত করা তাদের একমাএ বিদেশী নীতি হয়ে ওঠে।। কে এই যুদ্ধে জয়ী বা কে পরাজিত হবে তা নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো চিন্তা করে না। এমনকি এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় তাদের নেই। তারা শুধু মাএ চায় তাদের নাগরিকরা যেন বিনা বাধায় খাদ্য উৎপাদন করতে পারে, তাদের থালায় দুবেলা খাবার জোগাত পারে, তাদের ঘরে বিদ্যুতের বাতি যেন জ্বলে, সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবহন নিয়ে তাদের ব্যাবসা চালাতে পারে এবং তাদের সন্তানরা লেখাপড়া শেষ করে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিতে পারে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। এটাই তাদের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা।

পশ্চিমা দেশগুলো যদি তাদের প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তারা ইউক্রেনকে যুদ্ধের সমস্ত আধুনিক অস্ত্র, যতটুকু চায় এবং যত খুশি দিতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তা বন্ধ করার ক্ষমতা নেই বা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে না। তারা শুধু চায় এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ হোক। যদি পশ্চিমা দেশগুলো সত্যিই অ-পশ্চিমা দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তাহলে গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্য ও সার-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে পারে যাতে অ-পশ্চিমাদেশগুলো সহজেই তা সংগ্রহ করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশ দেশগুলোকে তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে পারে যাতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে অর্থনীতি এবং জীবন রক্ষাকারী পণ্য কিনে উন্নয়নশীল দেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

রাশিয়ার আরও অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্য এবং সারের উপর নিষেধাজ্ঞার পশ্চিমা যুক্তি একটা বাজে কথা। রাশিয়ানরা জ্বালানি ও গ্যাস বিক্রি করে আগের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছে। ইউরোপ রাসিয়াকে দোষারোপ করে বলছে গ্যাস ও জ্বালানিকে রাশিয়া অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করছে। তারা দাবি করছে যে রাশিয়াকে তাদেরকে সস্তায় গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে, তাদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সহ। পরিহাস এই যে এমনকি নিষেধাজ্ঞার সাথেও (যা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে হয় না), কমবেশি রাসিয়ার গ্যাস এবং জ্বালানী ইউরোপে প্রবাহিত হচ্ছে। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল এই ধনী দেশগুলি বিলিয়ন বিলিয়ন ধার নিতে পারে বা আরও বেশি অর্থ ছাপতে পারে আর উপসাগরীয় দেশগুলি আর অন্যান্য গ্যাস ও জ্বালানি আমদানিকারক দেশ থেকে বেশী দামেও গ্যাস এবং জ্বালানী ক্রয় করতে পারে। তাদের বড় কোম্পানির গুলোর ক্ষতির জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রদান করতে পারে। অন্যদিকে তেল আর গ্যাস সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলি পশ্চিমা দেশগুলির চাহিদা মেটাতে অনেক উন্নয়নশীল দেশে গ্যাস এবং জ্বালানী সরবরাহের পূর্ব চুক্তি বাতিল করছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে গ্যাস এবং জ্বালানির প্রাপ্যতা সীমাহীন নয় এবং ইচ্ছামতো প্রবাহ রাতারাতি বাড়ানোর যায় না। উন্নয়নশীল দেশগুলি এই গ্যাস এবং জ্বালানী কিনতে পারছে না কারন হয় সেগুলি পশ্চিমা দেশগুলির চাহিদা মেটাতে শেষ হয়েছে বা তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
 
পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ মানুষও ভুগছে। জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশগুলির দরিদ্র মানুষ জানে না তারা এখন কঠোর শীত কাটিয়ে উঠতে বা এমনকি বেঁচে থাকার জন্য তাদের ঘর গরম করার ব্যবস্থা করতে পারবে কিনা। এমন কি দু বেলা খেতে পারবে কিনা! যুক্তরাজ্য সহ অনেক ইউরোপীয় দেশ শীতকালে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা লোড শেডিংয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে। সাধারন জনগন তাদের জীবন আর জীবিকার এই অসহনিয় কষ্ট আর কতদিন চলবে তা ভাবছে। তাদের অনেকেই এই অনিশ্চয়তার দ্রুত অবসানের দাবি জানাচ্ছে। জনগন কী চান তা জিজ্ঞেস না করে রাজনীতিবিদরা একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মানুষ তাদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য উন্নত ভবিষ্যতের দাবিতে রাস্তায় নামছে। জলবায়ুর উপর প্রভাব নেতিবাচক মোড় নিচ্ছে কারণ অনেক পশ্চিমা দেশ কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করছে, মানুষ তাদের ঘর গরম করার জন্য কাঠ ব্যবহার করতে প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেশে ডানপন্থী ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা দখল করছে। ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো ডানপন্থী দল বিপুল সংখ্যক সংসদীয় আসন পেয়েছে। ইতালি ও সুইডেনের ডানপন্থিরা সরকার গঠন করতে চলেছে। যুক্তরাজ্যে আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কী ঘটছে তা দেখছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচন সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হবে কি না। তাই এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হয়ে উঠছে। ধনী দেশগুলি তাদের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যাগুলির অনেকগুলি প্রশমিত করতে পারে তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে খুবই কম বিকল্প রয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ অনেক উন্নয়নশীল দেশের দরজায় কড়া নাড়ছে। এসবের একটাই সমাধান, বন্দুক দিয়ে নয়, কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। আপনার আধিপত্যের প্রচেষ্টা বন্ধ করুন এবং মানুষকে বাঁচতে এবং উন্নতি করতে দিন। আল্লার দোহাই অন্তত গ্যাস, জ্বালানি, সার এবং খাদ্যে একতরফা অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করুন।
 
বাংলাদেশে আমরা দেখছি গ্যাস ও জ্বালানির উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা, অপর্যাপ্ততা আর বিশ্ব বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ও মূল্যস্ফীতি; লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কলকারখানা গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলিতে উচ্চ ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার খরচের কারণে, সেখানে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের উপার্জন কমে গেছে এবং তারা আগের মতো বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করতে পারছে না। হ্যাঁ, অনেকে যুক্তি দেবেন কিছু দুর্নীতিবাজ লোক এখনও দেশের বাইরে অবৈধভাবে কঠিন উপার্জনের মুদ্রা পাচার করছে। দুর্নীতি এখনও তুঙ্গে। হ্যাঁ, দেশে যখন বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন বিদ্যুৎ লাইনে বসাতে বেশি বিনিয়োগ করা হয়নি, গ্যাস ও জ্বালানি অনুসন্ধানেও খুব বেশি বিনিয়োগ করা হয়নি। প্রশ্ন থেকে যায় যে সেই ফ্যাক্টরগুলো যুদ্ধের আগেও ছিল, তবুও দেশ তখনও এগিয়ে যাচ্ছিল। যদি আমাদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস এবং জ্বালানী থাকতো বা আমরা কিনতে পারতাম (সৌভাগ্যক্রমে আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য, সার এবং পাঁচ মাসের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে), তাহলে কি আমরা এই বর্তমান পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম? আমি চাই সবাই নিজকে জিজ্ঞাসা করুক এবং উচ্চস্বরে চিন্তা করুক যে এই পরিস্থিতিতে যখন পুরো বিশ্বের অর্থনীতি অশান্ত, তখন কোনো রাজনৈতিক দল বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের রাতারাতি বা শীঘ্রই বাংলাদেশর বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টানোর কোনো ক্ষমতা আছে? আপনি কি শুনেছেন যে তারা বলছে তারা ক্ষমতায় গেলে আপনাকে, আপনার জীবনকে আরও ভাল করতে কি করবে? কাউকে দোষারোপ করা খুব সহজ কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি যখন খারাপ তখন জীবন আর জীবিকা সংশোধন বা সহজ করার জন্য কাজ করা অনেক কঠিন বা এত সহজে সম্ভব নাও হতে পারে। শুধু চিৎকার করা, গলা ফাটানো সমালচনা নয়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের পরিকল্পনা শোনার জন্য আমি এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
 
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার নামে পশ্চিমা দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলছে যে দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর মতবাদ যেন অনুসরণ করে চলে এবং তারের একতরফাভাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যেন কঠোর ভাবে মেনে চলে, অন্যথায় তাদের কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এই শক্তিধর দেশগুলো যখন দরিদ্র দেশগুলোকে হুমকি দেয়, তাদের রাষ্ট্রদূতরা কোন দ্বিধাবোধ না করে দাম্ভিকতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে বা বক্তৃতা দেন, তখন সেসব দরিদ্র দেশগুলোর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কোথায় থাকে? কোথায় থাকে তাদের বাক স্বাধীনতা? কেন দরিদ্র দেশগুলি তাদের জনগণের জন্য কী ভাল তা নির্ধারণ করতে পারবে না? আমি ভুল করে ভেবেছিলাম উপনিবেশ শেষ হয়েছে, আর কোন সাম্রাজ্যবাদ নেই বা মাএ কিছুদেশের আধিপত্য শেষ হয়েছে, আজ উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের ভালের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন। দুর্ভাগ্যবশত তদের হাঁটু এখনও আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে আর আমাদেরকে ভালভাবে শ্বাস নিতে এবং বেঁচে থাকতে বাঁধা দিচ্ছে।
 
আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে একত্রে কাজ না করে কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে, অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। শাসক দলও আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের জাতির পিতার সমর্থক দলগুলোকে নিয়ে, একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য চেষ্টা করছে না। এটি একটি জরুরী পরিস্থিতি, সংকটময় সময়, আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে, যদি কিনা আমরা সত্যিকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। আগামীকাল বিএনপি এলে বা স্বার্থপর এবং ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতায় আসলে তারা কি রাতারাতি প্রয়োজনীয় গ্যাস-জ্বালানি আনতে পারবে? অতীত ইতিহাস আমাদের নগ্নভাবে দেখিয়েছে, যে দেশ বা রাষ্ট্রদূতরা তাদের প্রভাবিত করছে, আশ্বাস প্রদান করছে তারা তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। বরং দাসত্বের বলয় আমাদের পায়ের গোড়ালিতে বসাবে যদি আমরা আমাদের স্বচ্ছলতা এবং স্বাধীনতা বিক্রি করি। এই পরিস্থিতি এখন বিশ্বব্যাপী। আজ এটা একমুখী আধিপত্য ও ক্ষমতা বজায় রাখার ক্ষমতার লড়াই। আমাদের অধিকাংশই নীরব পথচারী, আমরা কেবল শুধু কষ্টগুলো পর্যবেক্ষণ করতে এবং গ্রহণ করতে পারি।
 
দূতাবাসে ছুটে যাওয়া, রাষ্ট্রদূতদের সাথে দেখা করা এবং তাদের সাহায্য ভিক্ষা করে দেশে কোন পার্থক্য বা উন্নতি আনবে না। পশ্চিমা দেশগুলি সর্বদা তাদের সুবিধা এবং যে কোনও উপায়ে তাদের আধিপত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা থেকে পিছু হাঁটবেন না। আমরা এর আগেও দেখেছি, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের মধ্যে ঐক্যের পতনের পর যখন একপোলার বিশ্ব তৈরি হয়েছিল তখন কী হয়েছে। তখন সেই একমাএ পরাশক্তি হয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত কারি, বিচারক এবং জল্লাদ। তারা তথাকথিত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আদেশকে সম্মান করেনি। তারা যা করতে চেয়েছিল তাই করেছে, যেখানে যেতে চেয়েছিল সেখানে গেছে বা আক্রমণ করেছে। তখন আমাদের কিছুই বলার অধিকার ছিল না।
 
রূঢ় বাস্তবতা হল যে শীঘ্রই প্রবৃদ্ধিতে কোন প্রত্যাবর্তন হবে না। নিম্ন বৃদ্ধি একটি বিশ্ব বাস্তবতা হয়ে উঠেছে; মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব, উদীয়মান জীবনযাত্রার খরচ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার, সবই নিশ্চিত করেছে যে প্রবৃদ্ধি অদূর ভবিষ্যতের জন্য স্থবির থাকবে। রূপকথার গল্প বলার পরিবর্তে, রাজনীতিবিদদের সত্যিই কী গুরুত্বপূর্ণ তার উপর মনোযোগ দিতে করতে হবে। আমাদের বৃদ্ধি হোক বা না হোক, মানুষ ভালো জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মূল্যবোধ, শক্তি এবং সম্পদের উপর ভিত্তি করে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা প্রয়োগ করতে হবে। শুধু কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নয়, বরং গণতান্ত্রিক নকশার মাধ্যমেও, নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রবৃদ্ধি হয় সকলের মালিকানাধীন এবং যাতে সকলে সমান ভাবে ভাগ নিতে পারে। আমাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা আর কাজ করা দরকার কীভাবে সাধারন মানুষ অর্থনীতিতে প্রকৃত অংশীদার হতে পারে সে সম্পর্কে।
 
এই ইউক্রেন যুদ্ধে শুধুমাত্র একটি বা দুটি সেক্টর বা দেশ বিজয়ী - গ্যাস এবং জ্বালানী কোম্পানি/দেশ এবং অস্ত্র উৎপাদনকারী শিল্প/দেশ। সাধারণ ও দরিদ্র মানুষ এর শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা সবাই শুধুই নীরব পথিক, শুধু আশা করছি এবং প্রার্থনা করছি ইউক্রেন যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হবে, শীঘ্রই আবার ভালো দিন, স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন