ইনসাইড থট

জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা

প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ১২ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

বিশ্ব নেতা, বিজ্ঞানী, গবেষক, পূর্বাভাসদাতা, জলবায়ু কর্মী, লবিস্ট (সমর্থক আর জলবায়ু অস্বীকারকারী), তরুণরা সবাই COP27-এ যোগ দিতে মিশরের শার্ম এল শেখ রিসোর্ট এলাকায় জড়ো হয়েছে। গত বছর স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্যে COP26-এ অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল এবং ধনী দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছিল এবং বিলিয়ন ডলার অবদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারপর থেকে আসলে তেমন কিছুই হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রচেষ্টার জন্য খুব বেশি ডলার দেওয়া হয়নি। এই জনসমাগম যেন একটি টক শো এর বার্ষিক জাম্বুরী হয়ে উঠছে। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে দিচ্ছে, সেই সব বোমা ও কামানের গোলা ব্যবহার করে বাস্তুসংস্থান ও বায়ুমণ্ডলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুঃখজনকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তন যা ধনী এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রচেষ্টার জন্য এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু তহবিল সরবরাহ করা হয়নি। পরিবর্তে ধনী দেশগুলি অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং ঘরগুলিকে উত্তপ্ত রাখার জন্য কয়লা চালিত বৈদ্যুতিক উত্পাদন বা কাঠ পোড়ানোর আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর অর্থনীতি ও তার সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বোপরি নিষেধাজ্ঞাগুলি এশীয়, আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকান উন্নয়নশীল দেশগুলতে (যারা এই প্রক্সি যুদ্ধের শুরু করেনি, তারা শুধুই নীরব শিকার) অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে এবং অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, দারিদ্র্যতা এবং ক্ষুধা বাড়ছে। ইউক্রেন বা রাশিয়া বা পশ্চিম কেউই এই যুদ্ধে জয়ী হবে না যেনেও কিন্তু আমরা আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো সৎ প্রচেষ্টা দেখছি না এবং কোনো প্রচেষ্টার লক্ষণ নেই এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পশ্চিমা এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতি আবার শুরু করতে সহায়তার করার, যেমন কোভিডের পরে তা শুরু হয়েছিল। বিদ্রূপাত্মকভাবে সম্প্রতি যদিও পশ্চিমের কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যারা ভুগছেন এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, রাস্তায় তাদের আওয়াজ তুলেছেন। তবুও মনে হচ্ছে কিছু যুদ্ধবাজ এবং অস্ত্র লবিস্টের কারণে এই প্রক্সি যুদ্ধ সহজে বন্ধ হবেনা। এই যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে এবং করবে, অবকাঠামো ধ্বংস করবে এবং বাস্তুসংস্থান ও জলবায়ুকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়রা বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলিতে উদ্বাস্তু হিসাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ভাগ্যক্রমে পশ্চিমা দেশগুলি খুব উষ্ণভাবে সেই ইউক্রেনীয়দের প্রতি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। দুঃখজনকভাবে, ন্যাটো দেশগুলির দ্বারা সৃষ্ট যুদ্ধ এবং মৌলিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসের সহ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমে, সোমালিয়া বা অন্যান্য আফ্রিকান দেশ থেকে শরণার্থীরা জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসা সত্ত্বেও তাদের একই ভাবে স্বাগত জানানো হয়নি বরং তাদেরকে আক্রমণকারি (invasion), অপরাধী, ধর্ষক হিসাবে দায়ী করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে এই অপরাধীরা পশ্চিমা সমাজের স্বাভাবিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করছে। অভিবাসন বিরোধী অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলির সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রাজনৈতিক ভোট বিজয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
 
অভিবাসন (migration)

সাধারনত লোকেরা কোনো অপ্রীতিকর সামঞ্জস্যহীন পরিস্থিতি ছাড়া, স্বেচ্ছায় তাদের বাড়ি বা স্থান বা দেশ থেকে সরতে চায় না। জনসংখ্যার গতিশীলতা, জলবায়ু সম্পর্কিত হোক বা না হোক, জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। একই দেশের মধ্যে বা প্রতিবেশী দেশগুলিতে স্থানান্তরিত বা স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বা নিজের দেশ ছেড়ে দূর দেশে যায়ার সমস্ত ঝুঁকি নেওয়ার সময় তারা সর্বদা বর্তমান অবস্থান বনাম পথযাত্রীর/চলাফেরার ঝুঁকি এবং সেদেশের সম্ভাব্য সুবিধাগুলিকে বিবেচনা করে। তারা মাইগ্রেশনের সময় গন্তব্যের সাথে সম্পর্কিত সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতাগুলি বিবেচনা করে। অভিবাসনের সিদ্ধান্ত স্থায়ী, স্বল্পমেয়াদী, মৌসুমী, বা আবার ফিরে আসা বা বৃত্তাকার হতে পারে।
 
বিশাল এশিয়ান এবং আফ্রিকান জনগণের অভিবাসন খুব সাম্প্রতিক। অন্যদিকে ১৫ থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, লক্ষ লক্ষ মানুষ ইউরোপ ছেড়েছিল, যার মধ্যে ৯% এরও কম গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে (ক্যারিবিয়ান, এশিয়া এবং আফ্রিকা) গিয়েছিল। ১৮১৫ থেকে ১৯৩২সাল পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সাইবেরিয়া ছাড়াও, ৬৫ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপ ছেড়ে (অনেক আবার দেশে ফিরে এসেছে), প্রাথমিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার "ইউরোপীয় বসতির এলাকায়" বসবাশ শুরু করে। তাদের নতুন আবাসস্থলে জন্মহার বৃদ্ধির কারণে এই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়; যা ছিল আফ্রিকা এবং এশিয়ার জনসংখ্যার বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি। ফলস্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৮% ছিল ইউরোপীয় বংশধর। নিউ ওয়ার্ল্ডে বেশিরভাগ ইউরোপীয় অভিবাসীরা এসেছে জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে। প্রাথমিক অভিবাসীরা ছিল সচ্ছল ব্যক্তি এবং চুক্তিবদ্ধ চাকরদের মিশ্রণ। ১৮৪০ থেকে ১৮৫০ এর দশকে আগত আইরিশ, জার্মান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অভিবাসীরা দুর্ভিক্ষ, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে পালিয়ে ইউরোপীয় অভিবাসনের দ্বিতীয় তরঙ্গ তৈরি করেছিল। প্রথম ইউরোপীয়দের অভিবাসনের লোকদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রোটেস্ট্যান্ট ছিল, নতুন আগতরা ছিল অপ্রতিরোধ্যভাবে ক্যাথলিক। তারা অনেক দরিদ্র ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছিল এবং কম বয়সী এবং কম দক্ষ ছিল। সমসাময়িক কালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে, ইউরোপীয় অভিবাসন একটি ইউরোপীয় দেশ থেকে অন্য ইউরোপীয় দেশে আসা যাওয়া হচ্ছে।
 
অন্য দিকে বলা যায় আফ্রিকান এবং এশীয়দের মাইগ্রেশন শুরু হয় ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা। এই জনগণকে জোরপূর্বক তাদের ঔপনিবেশিক অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দাস হিসাবে, খনি বা আখ রোপণ এবং ফসল কাটা এবং চিনি উৎপাদন, বা কম বেতনের কেরানির চাকরির জন্য বা শ্রমিক হিসাবে। হাজার হাজার তুর্কি লোককে নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানিতে কম বেতনের শিল্প আর নিম্ন মানের কাজের জন্য আনা হয়েছিল।
 
মাইগ্রেশনের সিদ্ধান্তে ধাক্কা এবং টান (push and pull) কারণের সাথে ঘটে। চালক বা পুশ ফ্যাক্টর হল বর্নিত ক্ষেএের সীমিত বা অ-প্রাপ্যতা যেমন সামাজিক (শিক্ষা, কাজের সুযোগ, পারিবারিক আয়); রাজনৈতিক (সংঘাত, নিপীড়ন, জবরদস্তি, নিরাপত্তাহীনতা); জনসংখ্যা (জনসংখ্যার আকার এবং ঘনত্ব, জনসংখ্যার কাঠামো, রোগের প্রাদুর্ভাব); অর্থনৈতিক (ব্যবসা এবং কাজের সুযোগ, মজুরি, উত্পাদক মূল্য, ভোক্তা মূল্য), এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে পরিবেশ (জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিপদ, বাস্তুতন্ত্র, জমির উৎপাদনশীলতা, খাদ্য, পানি, শক্তি নিরাপত্তা এবং বাসযোগ্যতা)। টানার বা পুল ফ্যাক্টরের কারণগুলি হল ভাল বেতনের চাকরি, ভালো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শহরের জীবন, আপেক্ষিক শান্তি এবং খাবারের প্রাপ্যতা, নিজ দেশে পরিবারগুলিতে অর্থ পাঠানোর সম্ভাবনা।
 
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন

আজ অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য চীনকে দোষারোপ করছেন। এটা সঠিক আজ জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত হারে ঘটছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি শত শত বছর ধরে জলবায়ুর উপর আক্রমণের পুঞ্জীভূত ফলাফল। পশ্চিমা দেশগুলোতে শিল্প বিপ্লবের কথা ভাবুন। স্বর্ণ এবং খনিজ নিষ্কাশনের দৌড় , কয়লা চালিত স্টিম রেল এবং সমুদ্রগামী জাহাজ ইঞ্জিন, কয়লা ও কাঠের স্থির উৎপাদন ও ব্যবহার, জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন এবং শক্তির জন্য এর ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান মোটর গাড়ি ব্যবহার ও বিমান চলাচল, বাসস্থান, কাগজপত্র ও আসবাবপত্রের জন্য বন কাটা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক অস্ত্রের ব্যবহার, ধ্বংস, জাপানে পরমাণু বোমা ব্যবহার। ব্যাপক এজেন্ট অরেঞ্জ বোমা ব্যবহারের আর হামলার লক্ষ্য ছিল ভিয়েতনামের বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃষকদের শহরে তাড়ানো যার ফলে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট জনসংখ্যা এবং খাদ্যের ভিত্তি এবং নিরাপদ জঙ্গল আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হয়। সত্যিকার অর্থে ব্যাপক গ্রামীণ এলাকায় বোমা হামলা, রাসায়নিক ও যান্ত্রিক বন ধ্বংস, বৃহৎ আকারের ফসল ধ্বংস, খাদ্য ভান্ডার ধ্বংস, হাসপাতাল ধ্বংস এবং বৃহৎ আকারের জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি — সংক্ষেপে প্রাকৃতিক ও মানবিক উভয় পরিবেশের ব্যাপক, ইচ্ছাকৃত ব্যাঘাত। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স দ্বারা পরিচালিত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং বায়ুমণ্ডলীয়, জলজ এবং ভূগর্ভস্থ পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রভাব। এই ভাবে দীর্ঘকাল ধরে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর আক্রমণ বিরামহীনভাবে ঘটছিল। গত কয়েক দশকে চীন আর ভারতের দ্রুত এবং বিশাল শিল্প বিপ্লবের কারণে বিপুল শক্তির প্রয়োজন হচ্ছে তাই একইভাবে পরিবেশগত জলবায়ুর ক্ষতি ঘটছে, যা ইতিমধ্যে ঘটমান পরিবেশের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন তরান্বিত করছে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত প্রধান দূষণকারীর কারণে আজ জলবায়ুর ধ্বংস দ্রুত গতিতে ঘটছে। বেশিরভাগ এশিয়ান এবং আফ্রিকান দেশগুলি এখনও জলবায়ু বিপর্যয়ের সবচেয়ে কম অবদানকারী কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

অভিবাসন এবং আকস্মিকভাবে এক এলাকায় লাখ লাখ লোকের আগমন স্থানীয় পরিবেশ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন এবং কখনও কখনও অশান্তি ও সহিংসতার কারণ হতে পারে। আমরা দেখেছি, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ খোলা হৃদয়ে গ্রহণ করলেও তা কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় পাশাপাশি পরিবেশ ও সহিংসতা তৈরি করেছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটে না তবে পরিস্থিতি এটি ঘটায়। বাংলাদেশ এখনও দাতাদের সহায়তায় সেই সব রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে কিন্তু রোহিঙ্গারা যাতে আবার তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য সহায়তা প্রয়োজন। এটি রোহিঙ্গাদের শান্তি আর সমৃদ্ধির এনে জীবন ও পরিবেশ রক্ষা করবে।
 
জলবায়ুর কারণে মানুষ শত শত বছর ধরে তাদের নিজস্ব জায়গায় বসবাসের জন্য অভিবাসন বা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে অভিবাসন অনিবার্য। সাধারণ বাসস্থান ছেড়ে যাওয়ার কোন বিকল্প না থাকলে অভিবাসনের সম্ভাবনাও বেশি। মানুষ দ্রুত এবং ধীরে ধীরে ঘটতে থাকা পরিবেশগত প্রক্রিয়ার উভয়ের কারনে ভুগছে। প্রাথমিকভাবে পরিবেশগত অভিবাসন (climate migration) দ্রুত এবং আকস্মিক বিপর্যয়ের কারনে হচ্ছে, যেমন ঝড়, বন্যা বা বনের আগুন। সঙ্কট সৃষ্টিকারী এই প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানে ব্যাপক বন্যার কারণে ৩২ মিলিয়ন মানুষ তাদের আবাসস্থল ও পানির উৎস, খাদ্য উৎপাদন এবং অর্থ উপার্জন হারিয়েছে। অন্যান্য শুষ্ক উঁচু জমিতে চলে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না। অন্যদিকে ধীরগতির কিন্তু দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জলবায়ু পরিবর্তন জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে, যেমন বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের অম্লকরণ, জলের সানলিনাইজেশন বা ভূমি ক্ষয়। এইগুলি - কম উপলব্ধিযোগ্য - ঘটনাগুলি আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠেছে আর তাই মানুষের জীবিকা ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ উপকূলীয় অবকাঠামো এবং মিঠা পানির মাছ বা ফসলের ক্ষতি করছে। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় ঝড়, সুনামি এবং অন্যান্য আকস্মিক ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হ্রাস করে মানুষকে আরও বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, তারা গ্রামীণ থেকে শহুরে বাসস্থান সহ একটি উচ্চ উচ্চতায় বা অন্য এলাকায় যেতে বাধ্য হতে পারে বা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই ফিজি সরকার ইতিমধ্যেই তাদের নিম্ন ভূমি জনসংখ্যাকে উচ্চ ভূমিতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা শুরু করেছে।
 
যাইহোক, বাস্তুচ্যুতির সাথে সম্পর্কিত আর্থিক এবং সামাজিক খরচের কারণে, লোকেরা নতুন গন্তব্যে জীবিকা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল পরিত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকরা পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু তারা তাদের জমি এবং গবাদি পশুর সাথে সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত, যেগুলি সরানো সহজ নয়। প্রবীণরা সাধারণত কম পথযাএা/চলাচলে সক্ষম এবং কিছু সমাজে তারা পৈতৃক জমির সাথে বেশি সংযুক্ত থাকে। আজ জাপান এবং ইউরোপের অনেক দেশে, এমনকি চীনে গ্রামগুলি বলা যায় একরকম খালি হয়ে যাচ্ছে এবং শুধুমাত্র বয়স্ক লোকেরা সেখানে অবস্থান করছে কারণ তরুণরা শহরে চলে গেছে। আমি চিন, ইতালি আর চাপানোর শহর থেকে দুরের গ্রাম গুলোতে তাই দেখেছি। প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বাধাগুলি অভিবাসনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। অধিকন্তু, যাদের জমি বা অন্যান্য সম্পদ নতুনদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তারা সেই জনসংখ্যার সাথে বিরোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বলাবাহল্য, জলবায়ু পরিবর্তনের এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থিত অভিবাসন ধীরে ধীরে বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ও জনবহুল বস্তির জনসংখ্যা বাড়ছে। অনেকে অনুমান করছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন শুধুমাত্র জলবায়ু জনিত অভিবাসন হবে, যা অন্যান্য কারণে অভিবাসনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ অভিবাসনের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
 
 জলবায়ু, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা

জলবায়ু পরিবর্তন মানবতার মুখোমুখি একক বৃহত্তম স্বাস্থ্য হুমকি, এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পেশাদাররা ইতিমধ্যে এই উদ্ঘাটিত সংকটের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতির প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, ভৌত, পরিবেশগত এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বেশিরভাগ প্রভাব খাদ্যের ফলন, স্বাদু পানির প্রবাহ এবং গুণমান, সংক্রামক রোগের ধরণগুলির স্থিতিশীলতা, বায়ুর গুণমান, সামাজিক সংহতি এবং পারিবারিক আয় ও জীবিকা পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করবে এবং করছে।
 
জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই অগণিত উপায়ে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে, যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি যেমন তাপপ্রবাহ, ঝড় এবং বন্যা, খাদ্য ব্যবস্থার ব্যাঘাত, সার্স এবং কোভিড-১৯ এর মত পশু রোগ মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হওয়া এবং খাদ্য-, জল- এবং ভেক্টর-বাহিত রোগ, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক সামাজিক নির্ধারককে হ্রাস করছে, যেমন জীবিকা, সমতা এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তা কাঠামোর সুযোগ পাওয়া। এই জলবায়ু-সংবেদনশীল স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি নারী, শিশু, জাতিগত সংখ্যালঘু, দরিদ্র সম্প্রদায়, অভিবাসী বা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, বয়স্ক জনসংখ্যা এবং অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত অবস্থা সহ সবচেয়ে দুর্বল এবং সুবিধাবঞ্চিতদের দ্বারা অনুপাতহীনভাবে বেশী অনুভূত হয়।
 
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উদ্বাস্তু এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে, সংক্রামক রোগ অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। ২০০৪ এশিয়ান সুনামির পর, শ্রীলঙ্কায় প্রাথমিকভাবে এক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। অবিলম্বে, জল এবং খাদ্য-বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের (যেমন, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড জ্বর, এবং হেপাটাইটিস এ এবং ই), অতিরিক্ত ভিড়ের সাথে সম্পর্কিত রোগ (যেমন, হাম, মেনিনজাইটিস, এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে) ), এবং ভেক্টর-বাহিত রোগ (যেমন, ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু)। সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বিশেষ করে যেসব ক্যাম্প বা ঘন জনবসতি (বস্তিবাসী) ঘটে যেখানে জনসমাগমপূর্ণ, দুর্বল বায়ুচলাচল, এবং অপর্যাপ্ত আশ্রয়, জল, স্যানিটেশন, এবং টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলিতে অভাব বা অনুপস্থিত। সবচেয়ে সাধারণ সংক্রামক রোগ হল ডায়রিয়া রোগ, হাম, মেনিনজাইটিস, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া-নির্দিষ্ট মৃত্যুর হার বিশেষত উচ্চ হয় যখন উদ্বাস্তুরা উচ্চ ম্যালেরিয়া মহামারী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাতায়ত করে বা পালিয়ে যায়, যেমন ১৯৯৪ সালে হাইল্যান্ড রুয়ান্ডারা আরেকটি আফ্রিকান দেশ জায়ারে চলে যায়। জলবায়ু-চালিত বিপর্যয়গুলি বড় আকারের জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি ঘটায়। সেখানে সংক্রামক রোগ একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। টিবির মতো সংক্রামক রোগ বিশেষ করে বহু ওষুধ প্রতিরোধী টিবি ছড়িয়ে পড়তে পারে, রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা অনুসরণ করা খুব কঠিন হতে পারে।
 
খাদ্য ঘাটতি, খাদ্যে সীমিত প্রবেশাধিকার, এবং অপুষ্টি নিম্ন-আয়ের অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বারবার সমস্যা হচ্ছে। উদ্বাস্তু জনসংখ্যায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির প্রকোপ বিশেষভাবে বেশি। পেলাগ্রা (নিয়াসিনের অভাব), স্কার্ভি (ভিটামিন সি-এর অভাব), এবং অ্যানিমিয়া (আয়রনের ঘাটতি) সহ শরণার্থী শিবিরগুলিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবজনিত রোগ উচ্চ ঘটছে। সম্ভবত খাদ্য-অনিরাপদ অঞ্চলে অনেক জলবায়ু-সম্পর্কিত স্থানচ্যুতি ঘটবে আর যেখানে অনেক লোক প্রাথমিকভাবে পুষ্টির সাথে আপস করছে। অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন একাই বৈশ্বিক খাদ্যের ফলন, খরচ, এবং ক্রয় ক্ষমতায় নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে কারণ কৃষি, মৎস্য এবং কৃষি উৎপাদন জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থার দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
 
সামাজিক অস্থিরতা এবং স্থানচ্যুতি এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ সহ যৌন সংক্রামিত সংক্রমণের বিস্তারের জন্য উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি উপস্থাপন করে। অতিরিক্ত ভিড়, দারিদ্র, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোর ব্যাঘাত, যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি, এবং কনডম সহ গর্ভনিরোধক এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার সীমিত এবং সহজলভ্যতার অভাব এই সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়। শরণার্থী শিবিরের মহিলারা অতিরিক্ত প্রজননের কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন: মাতৃমৃত্যুর উচ্চতর ঝুঁকি, পরিবার পরিকল্পনার জন্য অপূর্ণ চাহিদা, ক্লিনিকাল স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে সীমিত অ্যাক্সেস, অনিরাপদ গর্ভপাতের পরে জটিলতা মাতৃমৃত্যুর কারন।
 
গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে বা অন্য দেশে চলে যাওয়া লোকদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও খাদ্যাভ্যাস ভেঙে দেয়। জনাকীর্ণ বস্তিতে বা ক্যাম্পে বসবাস করা চলাফেরার সীমাবদ্ধতা এবং একাকীত্ব, পরিবার থেকে দূরে থাকা মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। দূষণ অকথ্য ক্ষতির কারণ। ধূমপান এবং মাদক গ্রহণ একটি প্রধান সমস্যা হয়ে ওঠে। যার ফলে উৎপত্তিস্থলদের তুলনায় গ্রামীণ থেকে শহুরে এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসীরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে, যেমন ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং মানসিক রোগ। উৎস জনসংখ্যার সাপেক্ষে, গ্রামীণ থেকে শহুরে এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসনের পরে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্রমবর্ধমান ঘটনা, খাদ্যে পরিবর্তন, চাষের চাপ, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, বিচ্ছিন্নতা এবং ধূমপান এবং অ্যালকোহলের বিপজ্জনক ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় বা সেবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলি খুব সীমিত বা অনেক সময় পাওয়া যায় না।
 
সময়মত উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য প্রভাব এড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লক্ষ লক্ষ মৃত্যু রোধ করতে, বিশ্বকে অবশ্যই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে হবে। অতীতের নির্গমন ইতিমধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট স্তর এবং জলবায়ুর অন্যান্য পরিবর্তনগুলিকে অনিবার্য করে তুলেছে। এমনকি ১.৫ডিগ্রি সেলসিয়াসের বৈশ্বিক উত্তাপকে নিরাপদ বলে মনে করা হয় না; উষ্ণায়নের প্রতিটি অতিরিক্ত দশমাংশ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
 
যদিও এই ঝুঁকিগুলি থেকে কেউই নিরাপদ নয়, জলবায়ু সংকটের কারণে যাদের স্বাস্থ্য প্রথম এবং সবচেয়ে খারাপ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা হল তারা যারা এর কারণগুলিতে সবচেয়ে কম অবদান রাখে, এবং যারা এর বিরুদ্ধে নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে সবচেয়ে কম সক্ষম - নিম্ন স্তরের মানুষ -আয় এবং সুবিধাবঞ্চিত দেশ এবং সম্প্রদায়।
 
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত কার্যক্রম এখন একই রকম হতে পারে তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ না গ্রহন করলে নিকট ভবিষ্যতে জলবায়ু প্ররোচিত নেতিবাচক প্রভাব তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু সংকট উন্নয়ন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, এবং দারিদ্র্য হ্রাসে গত পঞ্চাশ বছরের অগ্রগতি পূর্বাবস্থায় ফেরার হুমকি কারন জনসংখ্যার মধ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্য বৈষম্যকে আরও বিস্তৃত করবে। এটি বিভিন্ন উপায়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (UHC) এর উপলব্ধিকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করবে- যার মধ্যে রয়েছে রোগের বিদ্যমান বোঝাকে জটিল করে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। দরিদ্রতম লোকেদের বেশিরভাগই বীমাহীন, স্বাস্থ্যগত ধাক্কা এবং চাপ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোককে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই প্রবণতাকে আরও খারাপ করবে বা করছে।
 
প্রতিযোগিতামূলক অগ্রাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে, NAPA (National Adaptation Programme of Action) প্রক্রিয়া দেশগুলিকে একক খাতে (যেমন, জল সম্পদের ঘাটতি দূরীকরণ) অবিলম্বে অগ্রাধিকারের জন্য প্রস্তুত প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে৷ জলবায়ু পরিবর্তন মানব স্বাস্থ্য এবং অভিবাসন প্রতিক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করবে এমন জটিল পথের পরিপ্রেক্ষিতে, কার্যকর জনস্বাস্থ্য এবং অভিযোজন কৌশলগুলিকে স্বাস্থ্য, জল, কৃষি, শক্তি এবং পরিবহন সহ একাধিক সেক্টরে নীতি গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকে দেশের সমস্ত নীতি (health in all policies) এবং মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা এটা করতে পারে না। কার্যক্রমের সমন্বয় অবশ্যই যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক) হতে হবে। এর জন্য স্থানীয় ও জাতীয় সরকার এবং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ সহ অভিযোজিত কৌশলগুলিকে বিদ্যমান জাতীয় উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, এবং দারিদ্র্য নিরসনের কৌশলগুলির সাথে একীভূত করা উচিত। স্পষ্টতই, বহুস্তরীয়, আন্তঃবিষয়ক, এবং সমন্বিত অভিযোজন ব্যবস্থা এবং জরুরী প্রতিক্রিয়াগুলির প্রয়োজন রয়েছে—এবং এই প্রয়োজনের সারগ্রাহী প্রকৃতিকে চিনতে সংস্থাগুলির জন্য তহবিল দরকার। উন্নয়নশীল দেশগুলির জলবায়ু প্রশমন কর্ম পরিকল্পনায় ধনী দেশগুলির পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, আঞ্চলিক উন্নয়নশীল ব্যাংক এবং আইএমএফকে সুদ মুক্ত ঋণ বা এমনকি বিনামূল্যে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।

যদি জলবায়ু পরিবর্তন তার বর্তমান গতিপথে চলতে থাকে, তাহলে আগামী কয়েক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ভবিষ্যত জলবায়ু-সম্পর্কিত জনসংখ্যার মাইগ্রেশনের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরিসর এবং ব্যাপ্তি স্পষ্টভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না, তবে মানুষের সাদৃশ্যপূর্ণ মাইগ্রেশন স্বাস্থ্য ফলাফলের প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি স্বাস্থ্য সুবিধার উপর প্রাধান্য পাবে। তাই আজ এটি যথেষ্ট ভূ-রাজনৈতিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের একটি বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি প্রশমিত করতে, অভিবাসন কমাতে এবং সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে একসঙ্গে কাজ করার এখন সময়।

(এই নিবন্ধটি বিভিন্ন নিবন্ধ এবং সংস্থার প্রতিবেদন থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে।)


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কেন এই বিতর্ক


Thumbnail

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষক বিষয়ে মাঝামাঝে কেউ কেউ অহেতুক বিতর্ক করেন। অথচ ইতিহাসের বাস্তবতা, সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং মীমাংসিত সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতার ঘোষক।

কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম দাবি করেছেন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এদেশ নাকি আজও স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি নাকি কল্পকাহিনী! কত বড় ধৃষ্টতা! চিন্তা করা যায়? তিনি দাবি করেছেন ২৩ শে মার্চ থেকে ইপিআর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। তাহলে ইপিআরের কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিট করা সম্ভব? স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মেজর হাফিজের এই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ইতিহাসের সত্য পাঠ থেকে তার বক্তব্য খন্ডন করছি। 

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিলো সেটি প্রমাণের জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক রচিত "উইটনেস টু সারেন্ডার " গ্রন্থে তিনি লিখেছেন - " ২৫ শে মার্চ রাতে যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ঐ কণ্ঠের বাণী মনে হয় আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সিদ্দিক সালিক এর মন্তব্যের পর আর প্রমাণের কিছু বাকি থাকে? তারপরও আমরা আরো কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করবো মেজর হাফিজের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। 

আসুন দেখা যাক, ইতিহাস কি বলে? বঙ্গবন্ধু আসলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ইপিআরের সিগন্যাল কোরের সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর শওকত আলি ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসে তার নিজস্ব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইপিআর প্রধানের মাস্ট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটরত অবস্থায় তিনি নাবিস্কো বিস্কুটের একটি টিনের কৌটা সহ রাত সোয়া বারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং নির্মমভাবে নিহত হন। মেজর শওকতের সাথে সে রাতে আটক হওয়া ইপিআরের সিগন্যালম্যান আব্দুল মোত্তালিব ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তার সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মেজর শওকতের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিনা পারভীন। যিনি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সুতরাং মেজর হাফিজের দাবি যে, ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং বায়বীয় তা স্পষ্ট। 

এবার আসা যাক বেতারে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রসঙ্গে। ২৫ শে মার্চ বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে থাকলেও বঙ্গবন্ধু গোপনে তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়। তিনটি ট্রান্সমিটারের একটি বঙ্গবন্ধুর  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে অতি গোপনে স্থাপন করা হয়েছিলো। বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল উল্লাহ্'র সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়টি জানা যায়। বঙ্গবন্ধু ডক্টর নূরুল উল্লাহ্কে তার বাসভবনে ডেকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে ডক্টর নূরুল তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটি ট্রান্সমিটার তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্থাপন করেন। এটির সম্প্রচার ক্ষমতা ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান। ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান রচিত "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। 

আরেকটি ট্রান্সমিটার ছিলো বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হকের কাছে। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ট্রান্সমিটার জোগাড় করার কথা বললে তিনি খুলনা থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার আগে আগে সেটির সাহায্যে আগেই রেকর্ড করে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা শারমিন আহমদ তার রচিত তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন। জনাব মোর্শেদ ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাকেও সে রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ছাড়া পান। 

হাজী গোলাম মোর্শেদ শারমিন আহমদ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- "২৫ শে মার্চ রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটা টেলিফোন আসে। আমি সেটা রিসিভ করি।" ফোনকলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, "আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি, মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন নিয়ে কি করব?" পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু কে জনাব মোর্শেদ বিষয়টি জানালে বঙ্গবন্ধু জনাব মোর্শেদের মাধ্যমে তাকে ট্রান্সমিটারটি ভেঙে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকার এবং ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে তার মহাখালীর সরকারি বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তাকে গুম করা হয়। উল্লেখ্য জনাব নুরুল হক ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের আত্মীয় এবং তার বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়ায়। 

তাছাড়া বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন পত্রিকা, দি গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রায় পঁচিশ টি গণমাধ্যম ফলাও করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চে। উপরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মেজর হাফিজ দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ ইতিহাসে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন মাত্র। 

ঘোষণাটি ছিল এরুপ " আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড দি ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ, জয় বাংলা।"

একই বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, বেতার কেন্দ্রের প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেতার ঘোষক আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন, সুলতানুল আলম সহ আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের আগে আরও ৮ জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর হাফিজের দাবি সঠিক হলে তারা প্রত্যেকেই হবেন স্বাধীনতার ঘোষক! সেক্ষেত্রে জিয়াউর হবেন স্বাধীনতার নবম ঘোষক!! 

জিয়াউর রহমান ২৫ শে মার্চ ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নতুনপাড়া সেনানিবাসের ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করে। শতশত বাঙালি সৈন্য আহত এবং আটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান এই খবর পেয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধ কিংবা আটকে পড়া আহত বাঙালি সৈন্যদের উদ্ধারে এগিয়ে না গিয়ে রাত তিনটার দিকে ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে তার সঙ্গে থাকা প্রায় আড়াইশো সৈন্য, গোলাবারুদ এবং যানবাহন নিয়ে বোয়ালখালী পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পটিয়া চলে যান। চট্টগ্রামের বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা সিরু বাঙালি'র লেখা "যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ণ" গ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ কয়েকজন পটিয়ায় গিয়ে তাকে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৭ শে মার্চ ঠিক সন্ধ্যায় তাদের সাথে তার অধীনে থাকা ফোর্স সহ আসেন এবং বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অবশ্য পরদিন ২৮ শে মার্চ তিনি হঠাৎ করেই বেতার ঘোষণায় নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে দাবি করেন। ঘোষণাটি ছিল- "আই হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেল্ফ প্রভিশনাল হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট  অব বাংলাদেশ।""

এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ বেতারের সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান তাকে টেলিফোন করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী টেলিফোন কলটি রিসিভ করলে জিয়ার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হান্নান সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন। শমসের মোবিন ও তার সাথে একমত পোষণ করেন। পরে রাতে জনাব মোবিন জিয়াউর রহমান কে এই বিষয়ে জানালে তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণায় থাকতে হবে। পরদিন ২৯ শে মার্চ জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাপত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ৩০ শে মার্চ। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের উপর গোলাবারুদ বর্ষণ করলে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর জিয়া এক ঘন্টার নোটিশে ভারতে যাওয়ার কথা বলে রামগড়ে পালিয়ে যান! যার বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তিনি তা না করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন! অথচ তাকেই আজকে স্বাধীনতার মহানায়ক বানানোর কতই না অপচেষ্টা! 

বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একজন সামান্য মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা সমূদ্রসম এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এককভাবে সেই সমূদ্র। জিয়াউর রহমানরা সেই সমূদ্রের কয়েকটি নুড়িপাথর মাত্র, তাকে বড় বানাতে চাইলে বড়জোর কয়েক বালতি পানি পর্যন্ত বিবেচনা করা যায়। এর বেশি নয়। 

যারা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান কিংবা ঘোষক হিসেবে মনে করেন তাদেরকে মস্তিষ্কহীন মনে না করার কোনো কারন দেখি না। মেজর জিয়াউর রহমান  পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচিত ৪৬৭ জনেরও একজন ছিলেন না। তাদের নেতা তো দূরের কথা। জাতীয় পরিষদের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রাদেশিক পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র এই দু'জনের ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবেরও ছিলো না, সরকারের কর্মচারী মেজর জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা!

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যদি ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বীকৃত ভূখন্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং একটি সরকারের সমষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু একাই হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং সরকার। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবরা হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, জনতা এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জিয়াউর রহমান হলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো অংশ নন। দৈবক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভাগ্যক্রমে বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন। এমন বীরউত্তম আছেন আরও ৬৮ জন। জিয়াউর রহমানের তুলনা হতে পারে সেই ৬৮ জনের সাথে। জিয়াউর রহমান এগারো সেক্টর কমান্ডারের একজন। সুতরাং তার তুলনা হতে পারে ঐ এগারো জনের সাথে। সেক্ষেত্রে ও অবদানের বিবেচনায় তার অবস্থান হবে নিচের দিকেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভারতীয় পণ্য বর্জন: রাজনীতির কানাগলিতে প্রবেশ বিএনপির


Thumbnail

যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।

কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।

রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।


ভারতীয় পণ্য   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রির গণহত্যা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত ‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।

আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।

কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর।  পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়।  হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।     

বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায় বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের ২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।


২৫ মার্চ   গণহত্যা দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল এমনটা না, এটা ছিল জেলা বা ওই সময় মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। যেটা আজকের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজ তারই উত্তরসূরি তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক পূর্ণতা পেয়েছে। যা সারা পৃথিবীর জন্য একটা রোল মডেল। জাতিসংঘ এটাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ব্যক্তির নামে এরকম রেজ্যুলেশন নাই। 

স্বাধীনতার পর যে স্বাস্থ্য তা সম্পূর্ণ একটা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পরপর ডাক্তারদের প্রথম শ্রেণির মযার্দা দেন। এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষা ছিলো না, গবেষণারও কোন সুযোগ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তখনই আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএমআসি ছিল নখহীন, দন্তহীন ঘুমন্ত একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নাই। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তারদের গবেষণার কাজের মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজেই খবু আগ্রহী। সবক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে শুধু ডাক্তাররাই মনে হয় এক্ষেত্রে একটু দুর্বল। গবেষণা আমরা এখনও পিছিয়ে। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য যা যা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করতে প্রস্তুত আছেন। এখন আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন যে, একটি রাষ্ট্রকে যদি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে হয়, একটি রাষ্ট্রকে যদি সঠিকভাবে মেরুদণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে ওই রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সূচনা করেছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই বহিপ্রকাশ বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জনগণের যে মূল কয়েকটি বিষয় তার ভিতরে স্বাস্থ্য একটি মূল বিষয়। বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সামনে রেখে আমাদের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নতির দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণালদ্ধ এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন। আমি যদি না জানি আমাদের চ্যালেঞ্জ কোথায়, অপরচুনিটি কোথায় তাহলে আমরা কোনোভাবেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারব না। এই উন্নয়নের জন্য দরকার গবেষণা। এই গবেষণা আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করি। একটি মৌলিক গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন কালেকশন এর জন্য গবেষণা, আরেকটি পাবলিক হেলথ গবেষণা। এই তিনটি গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে কতটুকু প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটুকু বিএনপি সরকার কখনও উপলব্ধি করেনি, উপলব্ধি করেনি বলেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়েছিল একটি জুয়া খেলার আড্ডার জায়গা। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিককে উজ্জীবিত করেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে উজ্জীবিত করেছে। আমাদের এখন দরকার গবেষণা। তাহলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এক্ষেত্রে বিএমআরসির শক্ত ভূমিকা থাকা উচিত। আমরা যদি গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারি তাহলে উন্নয়ন করতে পারব না। আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার কিন্তু পরিবর্তনটা কোথায় দরকার, কেন দরকার, কীভাবে দরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের একান্ত গবেষণা করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেরকম গবেষণার কাজ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কার্যক্রমও আর বৃদ্ধি পাবে, আরও সুদৃঢ় হবে।
 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন