বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-কে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলমন্ত্ররূপে গ্রহণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমটি "জাতীয়তাবাদ" সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমার দেশ স্বাধীন দেশ। ভারত হোক, আমেরিকা হোক, রাশিয়া হোক, গ্রেট বৃটেন হোক- কারো এমন শক্তি নাই যে, আমি যতক্ষণ বেঁচে থাকি ততক্ষণ আমার দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। একদল লোক বলছে মুজিবুর রহমান লন্ডন চলে যাবে। কিন্তু মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষকে ফেলে বেহেস্তে গেলেও শান্তি পাবে না।’’
বঙ্গবন্ধু কতটা দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন উপর্যুক্ত বক্তব্যেই তা প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা অবস্থায় বিদেশী কোনো শক্তিই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের যদি সুযোগই থাকতো তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর ৯০ হাজার সদস্যকে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে নিজদেশে ফিরিয়ে নিতেন না। বিশ্বে বহুদেশের স্বাধীনতাত্তোর মিত্রবাহিনীর দীর্ঘসময় ধরে থেকে যাবার নজীর ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের কারণে সেই সুযোগ পাননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
অথচ যাঁর বাহিনীর কল্যাণে দ্রুত পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং ও যাঁর হুশিয়ারীতে পাকপ্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির কার্যকারিতার আদেশ প্রত্যাহার করে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য চার জানুয়ারী ১৯৭২ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো। যাহোক সেই মিত্র ইন্দিরার গান্ধীর কাছেও নতজানু হননি বঙ্গবন্ধু। বরং চোখলজ্জা ভুলে গিয়ে বলেছিলেন," আমার দেশ থেকে কবে আপনার ৯০ হাজার সৈন্য প্রত্যাহার হবে?" জবাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বলতে হয়"আপনার জন্মদিনের আগেই।" সত্যাসত্যই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের দুদিন আগেই ১৫ মার্চ-১৯৭২ মিত্রবাহিনীকে ভারতে ফিরে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী চেতনাশক্তির প্রকৃতিরূপ কতটা হৃদয়গ্রাহ্য হতে পারে, তার উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য এবং গৌরবোজ্জ্বল। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বাংলাদেশ কখনও কার্পণ্য করে না। কিন্তু সেই সুবাদে নানা অবিমৃষ্যকারীতা নীরবে সহ্য করে যেতে হবে এটাও একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতির কাম্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কতবড় জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পরপরই তাঁর এক ঝানু আমলা শ্রী ডিপি ধরকে বাংলাদেশে পাঠান। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনকাঠামো গঠনেও সহায়তা করবেন এ রাষ্ট্রদূত(হাই কমিশনার)। এ জন্যই তাঁর আসা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ডি পি ধর আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করলেন রাতের এক সমভিব্যাহারে। সৌজন্যমূলক কুশলাদি বিনিময়ের পর বঙ্গবন্ধু বলেন, "মি. ধর, কবে দিল্লী ফিরে যাচ্ছেন? এসেছেন মাত্র। কয়েকটা দিন আমাদের এখানে কাটান। বাংলাদেশ মাছের দেশ। এখানকার পদ্মার ইলিশ খুবই উপাদেয় ও মজাদার। কয়েকদিন থেকে মাছ-টাছ খান, তারপর যাবেন।" ডি পি ধর তো হতবাক, প্রথম সাক্ষাতে তাঁকে ফিরে যাওয়ার তাগিদ? কিন্তু কেন? সরকারের প্রশাসনকাঠামো গঠনের কোন ইঙ্গিতও নেই। তাহলে?" ডিপি পি ধর ওদিনই বার্তা পাঠালেন দিল্লিতে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যা বোঝার বুঝলেন। তিনি দ্রুত ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দিলেন মি. ধরকে। প্রধানমন্ত্রীর সচিব ছিলেন রফিকউল্লাহ চৌধুরী (স্পীকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর পিতা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি)। রফিকউল্লাহ চৌধুরীর বরাত দিয়ে তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের (পরবর্তীতে এরশাদের উপপ্রধান মন্ত্রী) ভাষ্যমতে, "বঙ্গবন্ধু ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে মিত্রবাহিনীকে বিদায় দেয়া যেমন সম্ভব ছিলো না, তদ্রূপ সরাসরি ডি পি ধরকে অপ্রস্তুত করে ফেলে দিল্লিতে ফেরানোর পথনির্দেশ দেয়াও সম্ভব ছিলো না। আসলে ‘স্বাধীনতার তেজ ছিল বঙ্গবন্ধুর মজ্জাগত। তিনি মনে করেছেন, হ্যাঁ, প্রয়োজনে ওদের সাহায্য নিয়েছি, সে জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সর্বদা স্বীকার করবো। কিন্তু তাই বলে, আমরা কারো মাখা তামাক খা না।’ কেউ অহেতুক অভিভাবক হয়ে দাঁড়াবে এটা বঙ্গবন্ধুর কাছে বাঞ্ছনীয় ছিল না। বঙ্গবন্ধু একজন সত্যিকারের স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন এবং যতবড় বন্ধুই হোক ভিনদেশের অছিগিরি তাঁর অত্যন্ত অপছন্দনীয় ছিল।
বঙ্গবন্ধু অন্যতম মূলনীতি "ধর্মনিরপেক্ষতা" সম্পর্কে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, খ্রীষ্টান তার ধর্ম পালন করবে, বৌদ্ধ তার ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আলবদর হওয়া চলবে না এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। রাজনীতির অঙ্গনে ‘ঢাক ঢাক গুড়গুড় নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। জনগণের জন্য যা চাই তা সুস্পষ্ট ভাষায়, সরাসরি ঘোষণা করি। এ কারণে কখনো ইসলামবিরোধী, কখনো রাষ্ট্রদ্রোহী, কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আবার কখনো বিদেশী চরের আখ্যা পেতে হয়েছে।’’
বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে আরো একটি নজীর স্থাপন করেন। শত্রুবাহিনীর দেশ পাকিস্তান সফর করে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ মুসলিম দেশসমূহের ইসলামিক সম্মেলন। গণভবনে বৈঠক ডাকা হলো। বঙ্গবন্ধুর যোগদান প্রশ্নে প্রথমেই ‘না’ যাওয়ার পক্ষে মত দিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ওই সময় তিনি অর্থমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ না যাওয়ার পক্ষে। আইনমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেনসহ অনেকের মুখেই "না" উচ্চারিত হলো। তাঁরা বলছিলেন, "ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবে ইসলামি সম্মেলনে যোগদান ঠিক হবে না।"
দেশের শতকরা ৯০ জন মুসলিম এবং পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।। ইসলামিক সম্মেলনে না যাওয়া হবে দেশের মানুষের ধর্মানুভূতির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শনেরই নামান্তর।
বঙ্গবন্ধু যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিলেন। এ অবস্থায় না যাওয়ার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা প্রস্তাব করেন, ঠিক আছে- যেতে চান যখন যান, কিন্তু যাত্রাপথে দিল্লিতে নেমে ওদের সঙ্গে একটু কথা বলে গেলে সবদিক রক্ষা হয়। তৎকালীন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাষায়,"বঙ্গবন্ধু টেবিল চাপড়িয়ে রীতিমতো ক্রুদ্ধ কণ্ঠে চিৎকার করে বললেন, আমি কারো মাখা তামাক খাই যে, আমাকে মাঝপথে নেমে কারো মত নিতে হবে? তোমরা ভেবেছো কী? আমাদের সার্বভৌম দেশ। কী করবো, না করবো, আমরা সাব্যস্ত করব। কাউকে ট্যাক্স দিয়ে চলার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। পিন্ডির গুহা থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে আমরা দিল্লির গর্তে ঢুকব– আমার জীবদ্দশায় তা হবে না। তোমরা যে যা মনে কর, কর, আমি ইসলামাবাদ যাব, সরাসরি যাব।’
বঙ্গবন্ধু ঠিকই ইসলামী সম্মেলনে যোগদেন।
বঙ্গবন্ধু সংবিধানের অন্যতম দুই নীতি "গণতন্ত্র" ও "সমাজতন্ত্র" এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সমাজতন্ত্র হবে দ্বিতীয় স্তম্ভ। এ সমাজতন্ত্র আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না, এ সমাজতন্ত্র হবে বাংলার মাটির সমাজতন্ত্র। এ সমাজতন্ত্র বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বন্টন। বাংলাদেশে ধনীদের আর ধন সম্পদ বাড়াতে দেব না। বাংলার কৃষক, মজদুর, শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী এ দেশে সমাজতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করবে। সমাজতন্ত্র যেখানে আছে সেদেশে গণতন্ত্র নাই। দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্র কায়েম করবো। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি জনগণকে ভালোবাসি, আমি জনগণকে ভয় পাই না। দরকার হলে আবার ভোটে যাবো।’’
১৯৭২ সালের চার নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ওপর ভাষণের পর গণপরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশের সংবিধান পাস করে। যা ১৯৭২ সালের ষোল ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ প্রথম বিজয় দিবসে দেশ-জাতি অমূল্য সম্পদ সংবিধান উপহার লাভ করে। এবং সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের সাত মার্চ সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর খুনী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদ অবৈধভাবে দখল করলে সংবিধান ও সংসদ বহাল রাখেন। চার মূলনীতির কোন পরিবর্তন করার দুঃসাহস দেখাননি। রাষ্ট্রপতির ভাষণে যে কথাগুলো খুনী মোশতাক বলেছিলেন, তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হলো, "অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন অসম্ভব হওয়ায় সামরিকবাহিনী হত্যার মাধ্যমে শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করেছে।"
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মুসলমান। মুসলমান একবারই মরে। বারবার মরে না। আসলে কী বঙ্গবন্ধু মরেছেন? দৈহিকভাবে তিনি না থাকলেও তিনি বিশ্বময় দৃশ্যমান।
সংবিধানের প্রস্তাবনা সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ওপর চরম আঘাত হানেন খুনী মোশতাকের নিয়োগকৃত সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রপতি হবার পর তিনি মোশতাকের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকেও সংসদে পাস করিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথই রুদ্ধ করে দেন খুনীদের বৈদেশিক কুটনীতিক বানিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করান। জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে "ধর্মনিরপেক্ষতা" নীতিটিই উচ্ছেদ করে ফেলেন। ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে প্রস্তাবনার উপরে জুড়ে দেন "বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম।" নীতির মধ্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নাম ব্যবহার করে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ কর্তন করে দেশে ধর্নীয় রাজনীতির প্রবর্তন করেন। কার্যত তিনি এভাবেই স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। এমনকি তাদের অনেককে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী,এমপি করা হয়।
জেনারেল জিয়া "জাতীয়তাবাদ" নীতির ব্যাখ্যা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে "বাঙালির" স্থলে "বাংলাদেশী" শব্দ স্থাপন করে ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেন। প্রস্তাবনা থেকে মুক্তিসংগ্রাম কথাটিই তুলে দেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয় জাতির পিতাকে।
যা ছিলো স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। কারণ সাংবিধানিকভাবেই বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও স্বাধীনতার ঘোষক। জেনারেল জিয়া জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায়
নাগরিকত্ব ও জাতীয়তাকে গুলিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেন।
"আইনের হাত লম্বা, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলে" চিরাচরিত এ প্রবাদ দেরীতে হলেও সত্য প্রমাণিত হয়। মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ মূলনীতিগুলো পুনর্স্থাপিত হয়। জাতীয়তা ও নাগরিকত্বের পার্থক্যও নির্দিষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশের জনগণ জাতীয়তাবাদ- বা জাতীয়তায়- বাঙালী এবং নাগরিকত্বে- বাংলাদেশী বলে পরিচিত হবো। সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১৫০ অনুচ্ছেদ অপরিবর্তনীয় বিষয়। কখনোই কোনো ব্যক্তি-দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কিংবা বন্দুকের নলের ক্ষমতায় তা পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ভিত্তিই হলো সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। মহামান্য
সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ সংশোধনীকেও অবৈধ ঘোষণা করে মোশতাক -সায়েম-জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায় অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকার সংবিধান সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস করিয়েছে। ফলে বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল হয়েছে। এতে করে সংবিধানের চার মূলনীতি পুনঃস্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় মূলনীতিরূপে ধর্মনিরপেক্ষতাই রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ফেলে না দিয়েও তার সঙ্গে যে কথা যুক্ত করা হয়েছে তা প্রকারান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতাই। ব্যাখ্যায় বলা হয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তবে সকল ধর্ম সমঅধিকার ভোগ করবে।
সংবিধানে ইনডেমনিটি ঢুকিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকে বৈধতাদানের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছিল। সেই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়েছে। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। সরকার চাইলেই সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন কোনো আইনী বা সাংবিধানিক বিধিনিষেধ নেই। রাষ্ট্রীয় হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলও সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি হত্যা, ক্যু করে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন। এই বিধানটি বাহাত্তরের সংবিধানে থাকলে হত্যা,ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের ইতিহাস রচিত হওয়া খুব কঠিনই ছিলো। এই বিধান প্রবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু দৈহিকভাবে নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কথার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশে-বাতাসে অনুরণনের সৃষ্টি করে। তিনি সমাসীন সুমহান মর্যাদায় মানুষের হৃদয়ে আর মাথার উপরে। জাতির পিতার আসনে।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর