বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-কে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলমন্ত্ররূপে গ্রহণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমটি "জাতীয়তাবাদ" সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমার দেশ স্বাধীন দেশ। ভারত হোক, আমেরিকা হোক, রাশিয়া হোক, গ্রেট বৃটেন হোক- কারো এমন শক্তি নাই যে, আমি যতক্ষণ বেঁচে থাকি ততক্ষণ আমার দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। একদল লোক বলছে মুজিবুর রহমান লন্ডন চলে যাবে। কিন্তু মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষকে ফেলে বেহেস্তে গেলেও শান্তি পাবে না।’’
বঙ্গবন্ধু কতটা দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন উপর্যুক্ত বক্তব্যেই তা প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা অবস্থায় বিদেশী কোনো শক্তিই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের যদি সুযোগই থাকতো তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর ৯০ হাজার সদস্যকে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে নিজদেশে ফিরিয়ে নিতেন না। বিশ্বে বহুদেশের স্বাধীনতাত্তোর মিত্রবাহিনীর দীর্ঘসময় ধরে থেকে যাবার নজীর ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের কারণে সেই সুযোগ পাননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
অথচ যাঁর বাহিনীর কল্যাণে দ্রুত পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং ও যাঁর হুশিয়ারীতে পাকপ্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির কার্যকারিতার আদেশ প্রত্যাহার করে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য চার জানুয়ারী ১৯৭২ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো। যাহোক সেই মিত্র ইন্দিরার গান্ধীর কাছেও নতজানু হননি বঙ্গবন্ধু। বরং চোখলজ্জা ভুলে গিয়ে বলেছিলেন," আমার দেশ থেকে কবে আপনার ৯০ হাজার সৈন্য প্রত্যাহার হবে?" জবাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বলতে হয়"আপনার জন্মদিনের আগেই।" সত্যাসত্যই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের দুদিন আগেই ১৫ মার্চ-১৯৭২ মিত্রবাহিনীকে ভারতে ফিরে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী চেতনাশক্তির প্রকৃতিরূপ কতটা হৃদয়গ্রাহ্য হতে পারে, তার উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য এবং গৌরবোজ্জ্বল। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বাংলাদেশ কখনও কার্পণ্য করে না। কিন্তু সেই সুবাদে নানা অবিমৃষ্যকারীতা নীরবে সহ্য করে যেতে হবে এটাও একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতির কাম্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কতবড় জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পরপরই তাঁর এক ঝানু আমলা শ্রী ডিপি ধরকে বাংলাদেশে পাঠান। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনকাঠামো গঠনেও সহায়তা করবেন এ রাষ্ট্রদূত(হাই কমিশনার)। এ জন্যই তাঁর আসা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ডি পি ধর আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করলেন রাতের এক সমভিব্যাহারে। সৌজন্যমূলক কুশলাদি বিনিময়ের পর বঙ্গবন্ধু বলেন, "মি. ধর, কবে দিল্লী ফিরে যাচ্ছেন? এসেছেন মাত্র। কয়েকটা দিন আমাদের এখানে কাটান। বাংলাদেশ মাছের দেশ। এখানকার পদ্মার ইলিশ খুবই উপাদেয় ও মজাদার। কয়েকদিন থেকে মাছ-টাছ খান, তারপর যাবেন।" ডি পি ধর তো হতবাক, প্রথম সাক্ষাতে তাঁকে ফিরে যাওয়ার তাগিদ? কিন্তু কেন? সরকারের প্রশাসনকাঠামো গঠনের কোন ইঙ্গিতও নেই। তাহলে?" ডিপি পি ধর ওদিনই বার্তা পাঠালেন দিল্লিতে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যা বোঝার বুঝলেন। তিনি দ্রুত ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দিলেন মি. ধরকে। প্রধানমন্ত্রীর সচিব ছিলেন রফিকউল্লাহ চৌধুরী (স্পীকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর পিতা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি)। রফিকউল্লাহ চৌধুরীর বরাত দিয়ে তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের (পরবর্তীতে এরশাদের উপপ্রধান মন্ত্রী) ভাষ্যমতে, "বঙ্গবন্ধু ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে মিত্রবাহিনীকে বিদায় দেয়া যেমন সম্ভব ছিলো না, তদ্রূপ সরাসরি ডি পি ধরকে অপ্রস্তুত করে ফেলে দিল্লিতে ফেরানোর পথনির্দেশ দেয়াও সম্ভব ছিলো না। আসলে ‘স্বাধীনতার তেজ ছিল বঙ্গবন্ধুর মজ্জাগত। তিনি মনে করেছেন, হ্যাঁ, প্রয়োজনে ওদের সাহায্য নিয়েছি, সে জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সর্বদা স্বীকার করবো। কিন্তু তাই বলে, আমরা কারো মাখা তামাক খা না।’ কেউ অহেতুক অভিভাবক হয়ে দাঁড়াবে এটা বঙ্গবন্ধুর কাছে বাঞ্ছনীয় ছিল না। বঙ্গবন্ধু একজন সত্যিকারের স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন এবং যতবড় বন্ধুই হোক ভিনদেশের অছিগিরি তাঁর অত্যন্ত অপছন্দনীয় ছিল।
বঙ্গবন্ধু অন্যতম মূলনীতি "ধর্মনিরপেক্ষতা" সম্পর্কে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, খ্রীষ্টান তার ধর্ম পালন করবে, বৌদ্ধ তার ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আলবদর হওয়া চলবে না এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। রাজনীতির অঙ্গনে ‘ঢাক ঢাক গুড়গুড় নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। জনগণের জন্য যা চাই তা সুস্পষ্ট ভাষায়, সরাসরি ঘোষণা করি। এ কারণে কখনো ইসলামবিরোধী, কখনো রাষ্ট্রদ্রোহী, কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আবার কখনো বিদেশী চরের আখ্যা পেতে হয়েছে।’’
বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে আরো একটি নজীর স্থাপন করেন। শত্রুবাহিনীর দেশ পাকিস্তান সফর করে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ মুসলিম দেশসমূহের ইসলামিক সম্মেলন। গণভবনে বৈঠক ডাকা হলো। বঙ্গবন্ধুর যোগদান প্রশ্নে প্রথমেই ‘না’ যাওয়ার পক্ষে মত দিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ওই সময় তিনি অর্থমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ না যাওয়ার পক্ষে। আইনমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেনসহ অনেকের মুখেই "না" উচ্চারিত হলো। তাঁরা বলছিলেন, "ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবে ইসলামি সম্মেলনে যোগদান ঠিক হবে না।"
দেশের শতকরা ৯০ জন মুসলিম এবং পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।। ইসলামিক সম্মেলনে না যাওয়া হবে দেশের মানুষের ধর্মানুভূতির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শনেরই নামান্তর।
বঙ্গবন্ধু যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিলেন। এ অবস্থায় না যাওয়ার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা প্রস্তাব করেন, ঠিক আছে- যেতে চান যখন যান, কিন্তু যাত্রাপথে দিল্লিতে নেমে ওদের সঙ্গে একটু কথা বলে গেলে সবদিক রক্ষা হয়। তৎকালীন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাষায়,"বঙ্গবন্ধু টেবিল চাপড়িয়ে রীতিমতো ক্রুদ্ধ কণ্ঠে চিৎকার করে বললেন, আমি কারো মাখা তামাক খাই যে, আমাকে মাঝপথে নেমে কারো মত নিতে হবে? তোমরা ভেবেছো কী? আমাদের সার্বভৌম দেশ। কী করবো, না করবো, আমরা সাব্যস্ত করব। কাউকে ট্যাক্স দিয়ে চলার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। পিন্ডির গুহা থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে আমরা দিল্লির গর্তে ঢুকব– আমার জীবদ্দশায় তা হবে না। তোমরা যে যা মনে কর, কর, আমি ইসলামাবাদ যাব, সরাসরি যাব।’
বঙ্গবন্ধু ঠিকই ইসলামী সম্মেলনে যোগদেন।
বঙ্গবন্ধু সংবিধানের অন্যতম দুই নীতি "গণতন্ত্র" ও "সমাজতন্ত্র" এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সমাজতন্ত্র হবে দ্বিতীয় স্তম্ভ। এ সমাজতন্ত্র আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না, এ সমাজতন্ত্র হবে বাংলার মাটির সমাজতন্ত্র। এ সমাজতন্ত্র বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বন্টন। বাংলাদেশে ধনীদের আর ধন সম্পদ বাড়াতে দেব না। বাংলার কৃষক, মজদুর, শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী এ দেশে সমাজতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করবে। সমাজতন্ত্র যেখানে আছে সেদেশে গণতন্ত্র নাই। দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্র কায়েম করবো। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি জনগণকে ভালোবাসি, আমি জনগণকে ভয় পাই না। দরকার হলে আবার ভোটে যাবো।’’
১৯৭২ সালের চার নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর সংবিধানের ওপর ভাষণের পর গণপরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশের সংবিধান পাস করে। যা ১৯৭২ সালের ষোল ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ প্রথম বিজয় দিবসে দেশ-জাতি অমূল্য সম্পদ সংবিধান উপহার লাভ করে। এবং সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের সাত মার্চ সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর খুনী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদ অবৈধভাবে দখল করলে সংবিধান ও সংসদ বহাল রাখেন। চার মূলনীতির কোন পরিবর্তন করার দুঃসাহস দেখাননি। রাষ্ট্রপতির ভাষণে যে কথাগুলো খুনী মোশতাক বলেছিলেন, তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হলো, "অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন অসম্ভব হওয়ায় সামরিকবাহিনী হত্যার মাধ্যমে শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করেছে।"
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মুসলমান। মুসলমান একবারই মরে। বারবার মরে না। আসলে কী বঙ্গবন্ধু মরেছেন? দৈহিকভাবে তিনি না থাকলেও তিনি বিশ্বময় দৃশ্যমান।
সংবিধানের প্রস্তাবনা সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ওপর চরম আঘাত হানেন খুনী মোশতাকের নিয়োগকৃত সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রপতি হবার পর তিনি মোশতাকের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকেও সংসদে পাস করিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথই রুদ্ধ করে দেন খুনীদের বৈদেশিক কুটনীতিক বানিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করান। জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে "ধর্মনিরপেক্ষতা" নীতিটিই উচ্ছেদ করে ফেলেন। ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে প্রস্তাবনার উপরে জুড়ে দেন "বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম।" নীতির মধ্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নাম ব্যবহার করে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ কর্তন করে দেশে ধর্নীয় রাজনীতির প্রবর্তন করেন। কার্যত তিনি এভাবেই স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। এমনকি তাদের অনেককে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী,এমপি করা হয়।
জেনারেল জিয়া "জাতীয়তাবাদ" নীতির ব্যাখ্যা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে "বাঙালির" স্থলে "বাংলাদেশী" শব্দ স্থাপন করে ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেন। প্রস্তাবনা থেকে মুক্তিসংগ্রাম কথাটিই তুলে দেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয় জাতির পিতাকে।
যা ছিলো স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। কারণ সাংবিধানিকভাবেই বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও স্বাধীনতার ঘোষক। জেনারেল জিয়া জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায়
নাগরিকত্ব ও জাতীয়তাকে গুলিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেন।
"আইনের হাত লম্বা, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলে" চিরাচরিত এ প্রবাদ দেরীতে হলেও সত্য প্রমাণিত হয়। মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ মূলনীতিগুলো পুনর্স্থাপিত হয়। জাতীয়তা ও নাগরিকত্বের পার্থক্যও নির্দিষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশের জনগণ জাতীয়তাবাদ- বা জাতীয়তায়- বাঙালী এবং নাগরিকত্বে- বাংলাদেশী বলে পরিচিত হবো। সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১৫০ অনুচ্ছেদ অপরিবর্তনীয় বিষয়। কখনোই কোনো ব্যক্তি-দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কিংবা বন্দুকের নলের ক্ষমতায় তা পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ভিত্তিই হলো সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। মহামান্য
সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ সংশোধনীকেও অবৈধ ঘোষণা করে মোশতাক -সায়েম-জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায় অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকার সংবিধান সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস করিয়েছে। ফলে বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল হয়েছে। এতে করে সংবিধানের চার মূলনীতি পুনঃস্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় মূলনীতিরূপে ধর্মনিরপেক্ষতাই রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ফেলে না দিয়েও তার সঙ্গে যে কথা যুক্ত করা হয়েছে তা প্রকারান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতাই। ব্যাখ্যায় বলা হয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তবে সকল ধর্ম সমঅধিকার ভোগ করবে।
সংবিধানে ইনডেমনিটি ঢুকিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকে বৈধতাদানের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছিল। সেই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়েছে। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। সরকার চাইলেই সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন কোনো আইনী বা সাংবিধানিক বিধিনিষেধ নেই। রাষ্ট্রীয় হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলও সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি হত্যা, ক্যু করে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন। এই বিধানটি বাহাত্তরের সংবিধানে থাকলে হত্যা,ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের ইতিহাস রচিত হওয়া খুব কঠিনই ছিলো। এই বিধান প্রবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু দৈহিকভাবে নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কথার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশে-বাতাসে অনুরণনের সৃষ্টি করে। তিনি সমাসীন সুমহান মর্যাদায় মানুষের হৃদয়ে আর মাথার উপরে। জাতির পিতার আসনে।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমেরিকা আমার 'খুউব' পছন্দের দেশ। পছন্দের অন্যতম কারণ হলো, সে দেশের পররাষ্ট্র অনুষদের কর্মকান্ড। দেশটি তাদের নাগরিকদের খুব ভালোবাসে। তাদের নিরাপত্তায় সর্বদা উদ্বিগ্ন। নাগরিক বিদেশে গেলে সে দেশে কোথায় যাবে না যাবে, কোথায় নিরাপদ, কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ, কেমন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তার একটি দিক নির্দেশনা সময়ে সময়ে দিয়ে থাকে। এমন নির্দেশনা সরকার তাদের নাগরিকদের দিলে সে নাগরিকের গর্ববোধ করা উচিত। সে জন্যই দেশটিকে 'খুউব' পছন্দ করি।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস গত ২১ মে সে দেশের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করেছে। সতর্কবার্তার নাম দিয়েছে ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’। বার্তায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বাড়তে পারে। বিক্ষোভ হতে পারে। বিক্ষোভের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। সে দেশের নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’টি যখন দেয়া হয়, তখন দেশের রাজনীতির আকাশে সংঘাত, সহিংসতা বা বিক্ষোভের কোন ঘনঘটা ছিল না। কিন্তু তার দুদিন পর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে যে তুলকালাম ঘটে গেল তাতে অনুমেয় যে দূতাবাস একেবারে মোক্ষম সময়ে সতর্ক বার্তা জারি করেছে। তাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতার তারিফ করতে হয়। দেশটির জনগণের প্রতি তাদের সরকার যে মায়া মমতা ও উদ্বিগ্নতা, সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা, সেটি আজকের বিষয়বস্তু নয়। কোন দেশে এ ধরণের বা এর চেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি হলে আমাদের দূতাবাসগুলোর ভূমিকা বা নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। প্রায় সোয়া কোটি দেশি রেমিটেন্স যোদ্ধা রয়েছে বিদেশে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী যাচ্ছে বিদেশ ভ্রমণে। প্রতিনিয়ত সংঘাত, সহিংসতা, বিক্ষোভ চলছে দেশে দেশে। কখনো শুনি না যে দেশি দূতাবাস গুলো এ ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো এ ব্যাপারে সর্বদাই নিষ্ক্রিয়।
ফিরে যাই মার্কিন মুলুকে। সেখানে বন্দুক সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ৩২ বছরে দেশটিতে বন্দুক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ লাখের বেশি মানুষ। ২০২১ সালে বন্দুকের গুলিতে মারা গেছে প্রায় ৪৯ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সার্বোচ্চ। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ৫২টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ৯৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত ২০৫। গত ফেব্রুয়ারিতে সেদেশে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি, নিহত ৪৬, আহত ১৫০। গত মার্চে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি, নিহত ৫৬, আহত ১৩৬। গত এপ্রিলে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫৬টি। এসব ঘটনায় নিহত ৬২, আহত ২৪৪। এপ্রিলের শেষ দিনে ১১টি ঘটনা ঘটেছে। ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ নামের একটি গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত 'গান পলিসি' নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশে বন্দুক হামলায় মারা যায় দেড় হাজার জন। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় সাড়ে ২৮ হাজার জন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বাংলাদেশের দ্বিগুন। জনসংখ্যা অনুপাতে সেদেশে বন্দুক হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে দশগুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে এসব বন্দুক হামলার সংঘাতের ঘটনাস্থল সর্বত্র। শপিংমল, পার্ক, স্কুল, হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, রেল স্টেশন, ব্যাংক থেকে শুরু করে জন্মদিনের অনুষ্ঠান, মেমোরিয়াল ডে’র অনুষ্ঠানস্থল, স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়ত বন্দুক হামলা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশী বাস করে, বেড়াতে যায়, কাজে যায়, সভা-সেমিনারে যায়। আমেরিকার ভিসা দপ্তরের তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশী নন ইমিগ্রান্ট ভিসা পেয়েছে। তার মানে, গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যায়। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রী সেখানে পড়াশুনা করে । এসব প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র বা টুরিস্টদের প্রতি বাংলাদেশী দূতাবাসের কি কোন দয়া মায়া নেই ? উদ্বিগ্নতা নেই ? তারাও তো পারে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান বন্দুক হামলার প্রেক্ষিতে সময়ে সময়ে আমাদেরকে সতর্কবার্তা দিতে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী দূতাবাস যুগ যুগ ধরে এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক সংকেত দিচ্ছে না। শপিংমল, রেল স্টেশন, ব্যাংক, হাসপাতাল, স্কুল, পার্ক ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলার বা সাবধানে চলার পরামর্শ দিচ্ছে না। কিন্তু কেন ? দেশের নাগরিকদের প্রতি তাদের কি কোন দায়িত্ববোধ নেই?
এ বি এম কামরুল হাসান
প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:৩০ পিএম, ২৭ মে, ২০২৩
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু
দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন
করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে
পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ
ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।
তখন স্বাভাবিক নিয়মে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা কাজ করেন, তারা বললেন, ‘স্যার
একটা প্রতিবাদ দিতে হয়।’
তখন আমি বললাম, আমিতো পড়েছি। আমি ভোরবেলাতে যে পত্রিকাগিুলো পড়ি, তার মধ্যে নঈম
নিজাম এবং এখনকার যে বুদ্ধিভিত্তিক কলামিস্ট আমার অনুজপ্রতীম সৈয়দ বোরহান কবিরের লেখাগুলো
পড়ি। তারা একটা রৈখনি নিয়ে এসেছে। একটা প্রতিবাদ, সরকারিভাবে যা লেখা হয়, এটা না, ওটা।
আমি বললাম, ‘তোমরা ওই কমিউনিটি ক্লিনিকটা শেষ কে কবে পরিদর্শন করেছ?
তারা কেউই সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে না। আমি বললাম, নঈম নিজাম এবং সৈয়দ বোরাহান
কবির- এরা কখনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের সাথে তাদের যে পেশাগত সম্পর্ক সেটা জড়িয়ে ফেলে
না। উদাহরণসরূপ বলছি, আমি তখন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক। তখন ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অনুষ্ঠানটি
পরিচালনা করে সৈয়দ বোরহান কবির। আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে বেশ কিছু
বক্তব্য প্রচার করে। কিন্তু আমার সাথে তার যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সে সেটা বিবেচনা না
করে পেশাগত দায়িত্ব থেকে সে এটা করেছে। সেটা নিয়ে তার সাথে আমার কোনোদিন আলাপ হয়নি।
কারণ হচ্ছে, সে তার পেশায় ঠিক আছে, আমি আমার পেশায় ঠিক আছি।
আমার কোনো ভুলভ্রান্তি হলে সেটা উল্লেখ করা তার দায়িত্ব। নঈম নিজামের পত্রিকায়
যেহেতু সংবাদ ছাপা হয়েছে। সুতরাং নঈম নিজামকে আমি আলাদা চোখে দেখি।
তারা বললো, ‘স্যার সিভিল সার্জনের সাথে কথা হয়েছে।’
আমি বললাম, সিভিল সার্জন নয়, একজন বিশ্বস্ত লোককে পাঠাও। তারপর প্রতিবাদ ছাপাতে
হয়, আর্টিকেল লিখতে হয়, আমি দেখবো।
তারপর একজনকে পাঠানো হলো। তিন দিনে রিপোর্ট দিলো। তারপর দেখা গেলো, বাংলাদেশ
প্রতিদিনে যা ছাপা হয়েছে। সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। তখন আমি এইটার ব্যবস্থা গ্রহণ
করলাম, যেন ওটা ঠিকমতো চলে এবং সমস্যাটির সমাধান করলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোনো লেখা
বা নঈম নিজামকে ফোন করার আর কোনো প্রয়োজন পড়লো না। আমি দেখেছি, আমার ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে।
সুতরাং এর দায়-দায়িত্বও আমার। যেহেতু এটা আমার দায়-দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সুতরাং আমি
মনে করেছি, সে আমাকে সহায়তা করেছে। এখন আমার পক্ষে না বিপক্ষে গেলো, সেটা কোনো বিষয়
নয়।
সম্প্রতিককালে দেখলাম, আমাদের একটি মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী এবং তাদের যে কাজের
গাফিলতি সম্পর্কে লিখেছে বলে তারা তার প্রতিবাদ পাঠিয়েছে। প্রতিবাদটি আমি পড়লাম। প্রতিবাদটি
বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। আমার কাছে মনে হলো, অনেক আমলারা কাঁচা হাতের কাজ করে
সেরকম। এই প্রতিবাদটি ছাপানোর আগে, যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলোর সমাধান
করাতো বেশি দরকার। এরা দেশের ভালো করতেছে না খারাপ করতেছে, সেটা বিচার করার সময় এসেছে।
আমারতো কোনো পত্রিকার সাথে কোনো জমি নিয়ে বা কোনো বিরোধ বা কোনো গন্ডগোল নেই, সে আমার
বিরুদ্ধে কেন লিখবে? লিখলে আমিসহ সকলে যে যেখানে দায়িত্বে আছে, সকলের প্রধান দায়িত্ব
হচ্ছে জিনিসটা সঠিক কি না, সেটার চুলচেরা বিচার করা।
দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি নিয়ে লিখেছে, সেটাকে অবশ্যই দেখাশোনা করা, যাতে ওই ভুলটটা
ভবিষ্যতে আর না হয়। নঈম নিজাম কেন, দুনিয়ার কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভুলটা বুঝতে
পারা এবং ভুলটা সঠিক করা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই আমরা
এটা করতে পারি না। সেজন্য সবাইকে বলবো, যে কোনো মিডিয়াতে কোনো কিছু আসলে প্রতিবাদ পাঠানোর
আগে কি লিখেছে, বরং সেটার সমাধান আগে করে তারপর প্রতিবাদ পাঠান।
মন্তব্য করুন
আমি আন্তর্জাতিক বিষয়ে অধ্যায়ন করিনি। তবে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুবই শংকিত! কারণ, বিশ্বে শান্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চললেও দীর্ঘদিন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা , নিপীড়ন , নারী ও শিশু নির্যাতন, মানব পাচার, অভিবাসন করতে গিয়ে প্রাণহানি আমাদেরকে শংকিত করে তুলছে। উন্নত দেশগুলো রাষ্ট্রীয় সীমারেখার দেয়াল তুলে শান্ত হয়নি, বিভিন্ন রকম আন্তর্জাতিক কৌশল অবলম্বন করে তারা দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষদেরকে আরও সুশীল বানাতে চাইছে। গণতন্রের পূজারী উন্নত বিশ্ব তাদের স্বার্থে সুশীল বানানো প্রক্রিয়ায় ধনী দেশগুলোতে সেভাবে চাপ প্ৰয়োগ করে না, যেভাবে দরিদ্র দেশগুলোতে শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেলায় যেভাবে কূটনীতিবিদরা সক্রিয় তাতে আমাদের স্বাধীনতা কি ক্ষুন্ন হচ্ছে না ? এ দায় কি কেবল নিপীড়িত মানুষের ?
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নানা আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছে। কিছুদিন সেই চাপ কমেছিল। কিন্তু আবার নতুন করে চাপে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে? বিরোধী জোটে যারা আছেন তারা বলবেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নির্বাচন করুন , সমস্যা প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে। কিন্তু আমার ভিন্ন রকম উপলব্ধি।
বাংলাদেশের সরকার নির্বাচিত নাকি অনির্বাচিত তাতে কারও কিছু যায় আসে না। যদি নির্বাচন মুখ্য বিষয় হতো তবে আরব রাষ্ট্রে বিরাজমান রাজতন্ত্র অবসানে তারা মনোযোগী হতো। সেখানে কেন গণতন্রের জন্য মনোযোগ দেয়া হয়না তার অনুসন্ধানে যারা লিখেছেন তাদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। এখানে কার্ল মার্কস এর দর্শনের সাফল্য। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটাতে উন্নত দেশগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। তার পরেও আমাদের উপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ গভীর ভাবনার বিষয়। এটি দেশের বিরোধী দলের দেনদরবার বা তদবিরের ফলে হচ্ছে মনে করলে হয়তো ভুল হবে। সুষ্ঠু অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি এক মাত্র ভাবনা ওই সব বিধিনিষেধ আরোপের কারণ ? একটি অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ? আমাদের সমাজে যারা বুদ্ধিজীবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তাদের মনোযোগ এখানে একান্তভাবে কাম্য যাতে সরকার চাপের মুখে কোনো বড়োরকম ভুল না করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বাতিঘর। গতকাল একটি বিবৃতিতে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বলেছে - তারা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সারা বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়ে থাকে সেইভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে। সম্প্রতি একটি পোস্টার আমার নজরে এসেছে। সেখানে লেখা আছে "আমার ভোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে চাই। " ওই পোস্টার নিয়ে দলের লোকদেরসঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা বিদেশী দূতাবাসের আশীর্বাদ পেয়েছেন। এবং আরেকটি মহল মনে করেন - যুক্তরাষ্ট্র যে সব বিধিনিষেধ দিচ্ছে তার লক্ষ্য হলো পর্যাক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কৌশল। এটাকে বিস্তৃত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদের বক্তব্যর অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।
পত্রিকাতে দেখেছি সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করবে , এবং এখন আগের তুলনায় সরকার বিরোধী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে না। অন্ততঃ গত মঙ্গলবার গাবতলীতে সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডাকসুর ভিপি অমানুল্লার জনসভা দেখে আমার ধারণা হয়েছে। ঐদিন ধানমন্ডিতে সভা হয়েছে বটে কিন্তু কিছু মানুষ বাস পোড়ানোর মতো বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার করছে। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের কাছে অনেকেই বলেন আগামী নির্বাচন যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় সেজন্য আন্দোলন করবেন। সেই আন্দোলন যে শান্তিপূর্ণ হবে সেটা ভাবা যায় কি ? আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষই অবলম্বন করবে না যদি তারা কোনোভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়। আমাদের মনে পড়ে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে তাতে আমাদের সামাজিক শান্তি ও অর্থনীতি হুমকিতে পড়েছে।আরেকটি ১/১১ সৃষ্টির যে পায়তারা চলছে তা কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে বলে মনে হয় না।কারণ যেই হারবে সেই দাবি করবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
জনগণের কষ্ট সৃষ্টি করে কেউই ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। ভোট ও ভাতের স্বাধীনতা অর্জনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি অর্জন করতে হয় তবে তা জনগণের কষ্টে পাশে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়েই সম্ভব। বাংলাদেশ আশা করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হয়েই থাকবে। তাদের আরোপিত বিধিনিষেধ কেন সেটা অনুসন্ধানে সময় না দিয়ে আমার সমস্যা নিয়ে আমি ভাবতে ও সমাধানের চেষ্টা করতে চাই। রাজনীতির লক্ষ্য হোক জনগনমুখী - কূটনীতিবিদমুখী নয়।আমাদের আরও সহনশীল হতে হবে এবং সৎ মানুষগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য থাকতে হবে। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবার সুযোগ আছে রাজনীতিবিদেরকে আলোর পথের সন্ধান দিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বক্তব্য তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সে স্বপ্ন আমাদের সকলের। বিদেশী কূটনীতিবিদরা যেভাবে যুক্ত হচ্ছে তা থেকে বের হয়ে আসার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। আমরা বঙ্গবন্ধুর শান্তি পুরস্কার বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি পালন করছি। বঙ্গবন্ধুর শান্তি ভাবনা যেন আমাদের রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনে সেই কামনা করছি। তাহলেই কূটনৈতিক বিজয় অর্জন সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন
" মনোযোগ বলতে নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে ফোকাস করাকে বুঝায় না, একই সাথে এটা অসংখ্য প্রতিযোগী তথ্য এবং উদ্দীপককে অগ্রাহ্য করাকেও বুঝায়। যা এ মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয় সেটাকে এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি আকর্ষিত হওয়াই মনোযোগ ( Kendra Cherry, 2022)। কোন পণ্যকে ভোক্তা কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটা অনেকাংশেই তাঁর প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের একটি পূর্বশর্ত। কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি ইন্দ্রিয় বা ইন্দ্রীয় সমূহকে নিবদ্ধ করার নামই হলো মনোযোগ। যে মানসিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক বিষয় থেকে চেতনাকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা হয় তাকে মনোযোগ বলে।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস গত ২১ মে সে দেশের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করেছে। সতর্কবার্তার নাম দিয়েছে ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’। বার্তায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বাড়তে পারে। বিক্ষোভ হতে পারে। বিক্ষোভের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। সে দেশের নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আমেরিকার South Asia Perspectives পত্রিকায় ২৮ মে(২০২৩) প্রকাশিত মিথ্যাচারে পূর্ণ Jon Danilowicz এর U.S. Visa Policy: What Next? শিরোনামে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে দেখা যাবে এক সময়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এই সাবেক কর্মকর্তা কী কৌশলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে বিরোধী শিবিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।তিনি যেভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো তুলে ধরেছেন এবং বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতাকে এড়িয়ে গেছেন তা সৎ লেখকের কাজ নয়। তিনি যেন কোনো লবিস্ট কর্তৃক নিযুক্ত লেখক। যার নুন খান তার গুণগান করেন। এ ধারার জন ড্যানিলভিচ মার্কা লেখক ও বক্তারা পৃথিবীর অনেক জায়গায় বসে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রের কথা ব্যক্ত করার পরিবর্তে মিথ্যাভাষণে সরকার বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। এদের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।
আমি আন্তর্জাতিক বিষয়ে অধ্যায়ন করিনি। তবে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুবই শংকিত! কারণ, বিশ্বে শান্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চললেও দীর্ঘদিন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা , নিপীড়ন , নারী ও শিশু নির্যাতন, মানব পাচার, অভিবাসন করতে গিয়ে প্রাণহানি আমাদেরকে শংকিত করে তুলছে।