ইনসাইড থট

এটা কি একটি খুব সুপরিকল্পিত, সুসংগঠিত ধীরগতির ক্রমবর্ধমান ষড়যন্ত্র?

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১৯ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

প্রতিদিনের মত, আমি সেদিন প্রথম আলো সংবাদপত্র পড়ছিলাম। যেহেতু আমি পরিস্থিতি বুঝতে এবং নিজের সিদ্ধান্তে আসতে বিভিন্ন মতামত শুনি, পড়ি আর অনুসরণ করি তাই মনোযোগ দিয়ে প্রথম আলোর আলতাফ পারভেজ-এর “চিড়া–মুড়ির রাজনীতি ও পিটার হাসের ভূরাজনীতি” শিরোনামের এই অত্যন্ত আকর্ষণীয় নিবন্ধটি পড়ছিলাম। এই নিবন্ধে একটি খুব আকর্ষণীয় তথ্য প্রদান করা হয়েছে, যা পড়ে আমি মোটেও অবাক হইনি। কোন শব্দ পরিবর্তন না করেই আমি নিবন্ধের কিছু অংশ এখানে হবহু কপি করছি। “পিটার হাসের ফর্দ বড় নয়, তবে স্পর্শকাতর. গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ নামের এক অনুষ্ঠানে হাস পরিষ্কার করেই জানিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর সরকার কী চাইছে। এখানে তাঁদের আপাতত চাওয়া পাঁচটি। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে’ বাংলাদেশকে নিরাপত্তাবন্ধু হিসেবে পাওয়া; গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও সুশাসনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন, সামাজিক ও পরিবেশগত বিপদ মোকাবিলায় সামর্থ্য বাড়ানো, শ্রম অধিকারের উন্নয়ন এবং নিরাপদে নিজ দেশে না ফেরা পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানসম্মত সুরক্ষা"। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন তার বা অন্য কথায় মার্কিন সরকারের প্রথম দাবি বা লক্ষ্য কি ছিল? এটা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা মানবাধিকার বা সুষ্ঠু নির্বাচনের দবি নয়। প্রথম এবং প্রধান দাবি হচ্ছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে’ বাংলাদেশকে যে কোন ভাবে নিরাপত্তাবন্ধু হিসেবে পাওয়া। চীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করা। অন্য কথায় নানা ধরনের হুমকি বা চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করা। অন্য চারটি দাবি বা তাদের প্রচেষ্টা হল প্রথম চাহিদা অর্জনের জন্য চাপের অস্ত্র। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন সবই চাপের বিষয় এবং ফাঁকা কথা। যদি তারা সত্যই বিশ্বব্যাপী তথাকথিত নৈতিকতার কথা চিন্তা করে আর এই ধরনের মানবিক বিষয় স্থাপনে দেশগুলোর সাথে সমান অংশীদার হিসাবে কাজ করতে চাইতো তাহলে আমরা দেখতে পেতাম যে তারা সবার উপর একই রকম চাপ প্রয়োগ করছে। উদাহরণ স্বরূপ, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল, থাইল্যান্ডের কথা চিন্তা করুন, কোথায় সেই দাবি বা চাপ। ভেনিজুয়েলা সরকারের (পূর্বে তাদের সরকার প্রধানকে একনায়ক, দানব হিসেবে নিন্দা করা হয়েছিল) কাছে গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য দৌড়ে যেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি করছে। এখন আর সেখানে গণতন্ত্রের কথা নয়, বাক স্বাধীনতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা নয়। নিষেধাজ্ঞাও চলে গেছে! এটাই হল পশ্চিমাদের দ্বৈত নৈতিকতা। পশ্চিমাদের একমাত্র এজেন্ডা হল তাদের আধিপত্য অব্যাহত রাখা। যেহেতু বাংলাদেশ এখনও “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়”, সার্বভৌম পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে, তাই বাংলাদেশ আমেরিকার দাবির চাপের কাছে মাথানত করে তাদের দাবি মানতে সম্মতি দেয়নি, বা প্রকাশ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করছে না, তাই চাপ বাড়ছে। দিন দিন চাপ আরো বাড়বে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ যদি জোটে যোগদানের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেয়, বা প্রকাশ্যে রাশিয়ার নিন্দা করে তাহলে বাকি সব দাবি ভেস্তে যাবে, নাকচ হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা হবে আমাদের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দাস হয়ে যাওয়া।

আপাতত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিরাপত্তা জোটে আছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান আর ভারত। এটা একটা চীন বিরোধি জোট। ঐ দেশগুলো এই জোট সম্প্রসারণ করতে চায়। আমার জাতিসংঘের কাজের সময় আমি বেশ কয়েকবার জাপানে গিয়েছিলাম। আমি টোকিওতে বহুবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি নামিবিয়াতে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাথে পারস্পরিক বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। আমি এখনও তাদের সাথে যোগাযোগ করি। প্রতি বছর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য জাপানে যাই এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াই, মানুষের সাথে দেখা করি এবং যোগাযোগ করি। আমি বেশিরভাগ জাপানের শহরে গিয়েছি, এমনকি সুনামিতে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ দেখতেও গিয়েছি। তারা হল আমার দেখা সবচেয়ে নরম কথ্যার, অ দ্বন্দ্বমূলক, ভদ্র মানুষ। আমি কখনোই কোনো জাপানি রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক কর্মীকে বা কোন মানুষকে কোনো উন্মুক্ত ফোরামে বা প্রকাশ্যে সরকারের বা অন্য কাউকে সমালোচনা করতে দেখিনি বা তা আমার জানা নাই। যদি আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের আর অন্য কিছু সময়ের জাপানি নৃশংসতার বিষয়টি না উত্থাপন করি, তাহলে জাপানিরা সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত বিনয়ী এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক নিয়মের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন কারণ তারা তাদের সংস্কৃতি এবং নিয়মকে সম্মান করে। তাই প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত সেদিন একটি উন্মুক্ত ফোরামে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যা বললেন তা পড়ে আমি খুব অবাক হয়েছি।রাজধানীতে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত মহামান্য মি: নাওকি ইতো নাওকি বলেন, ‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আগের রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে আমি শুনেছি। অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’ হ্যাঁ জাপান বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দাতাদের মধ্যে একটি এবং মেগা প্রকল্পে বাংলাদেশকে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং বস্তুগতভাবে সাহায্য করছে। ঋণের কারণে, যা বাংলাদেশকে সুদের সাথে ফেরত দিতে হবে, ব্যাংলাদেশকে সাহায্য করার একই সাথে ঋণের টাকার কারনে জাপান তার বড় শিল্পকে সাহায্য করছে যেমন মেট্রো রেল উৎপাদন ও বিক্রয় করছে এবং খুব অল্প হলেও সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, জাপানে তাদের অর্থনীতিকে বড় করছে। এটি একটি জয় জয়ের খেলা, একটি শূন্য যোগের খেলা নয়। তাই ঋণের টাকা জাপানকে বাংলাদেশের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলার স্বাধীনতা দেয় না। সবাইকে একটি পারস্পরিক কূটনৈতিক শালীনতা বজায় রাখত হবে। আমাদের সবার সমান সম্মান ও মর্যাদা থাকতে হবে। আমি কখনই ভাবিনি যে এটি হবে, জাপান থেকে নয়। এটি কি ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টির একটি সাজানো পরিকল্পিত খেলা? কি লজ্জা! আমি ভাবছি বাংলাদেশের মানুষের নাকি বাক-স্বাধীনতা বা তথ্য বা গণমাধ্যমের কোনো অধিকার নেই, তাহলে কিছু সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করার সাহস পায় কেমন করে?

মার্কিন টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন রবার্ট বোল্টন কী বলেছিলেন তা কি এখনও মনে আছে? তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে কোন দেশের নেতা যদি তাদের পররাষ্ট্র নীতি বা চাহিদার বা দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় বা গ্রহণ না করে তবে সেই শাসন বা শাসক পরিবর্তনের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি চাপ এবং জাতীয় অশান্তি তৈরির বিভিন্ন উপায় এবং কৌশল সম্পর্কে কথা বলছিলেন। যেমন কিছু প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, স্থানীয় সংবাদপত্র, টিভি বা রেডিও কেন্দ্র গুলোতে টাকা দিয়ে কিনে একটা অশান্ত বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা, মিথ্যা ছড়ানো, বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা, শাসক বা ক্ষমতাসীন দলকে পৈশাচিক নিষ্ঠুর একনায়কে তৈরি করা। কূটনৈতিক চাপ, আর্থিক হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। মিথ্যা প্রচনা, গুজব ছডিয়ে দিয়ে জনসংখ্যাকে আতঙ্কে ফেলে আন্দোলনকে সমর্থন করা। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে শাসন/শাসক পরিবর্তনের ব্যাপক বিশৃঙ্খলা বা আন্দোলন শুরু হয়। তিনি অন্য আরো পদ্ধতি সম্পর্কে কথা বলতে চাননি। মনে আছে কি তারা একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করে হয় শাসন পতন ঘটিয়েছে অথবা দেশ আক্রমণ করেছে যেমন তারা ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, বসনিয়া, পানামা বা ভিয়েতনামে করেছিল। তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে কেন কিছু কূটনৈতিক মিশন এবং এর প্রধানরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সার্বভৌম বিষয় নিয়ে এত নির্দ্বিধায় কথা বলছেন!

আসুন তাদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বজায় রাখার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে সচরাচর ঘোলা জলে মাছ ধরার উদ্দেশে বাংলাদেশে তাদের ব্যাপক মিথ্যা এবং জাল খবর, আতঙ্ক, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করা সাম্প্রতিক সুপরিকল্পিত/পূর্বপরিকল্পিত সহ আরে কিছু ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আলোচনা করি আর্থিক হুমকি এবং অভ্যুত্থানের মাঠ গরম করার কথা।

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় (যা প্রসারিত হয় রাশিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দূরবর্তী দেশগুলিতেও) থাই বাথ পতনের সাথে শুরু হওয়া আর্থিক মন্দার কথা। ঋণ খেলাপি হওয়া এড়াতে ওই দেশগুলোকে আইএমএফের দরজায় কড়া নাড়তে হয়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অভাবে ইন্দোনেশিয়া আইএমএফের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। অনেক পশ্চিমা দেশ সুহার্তোর শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিল তাই রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক সরকারী কর্মচারীদের ছাঁটাই, কর বৃদ্ধি, জ্বালানি ও খাদ্যের উপর ভর্তুকি প্রত্যাহার করার মতো অনেক কঠোরতামূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছিল। আইএমএফের সেই দাবিগুলি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে জেনে সুহার্তো প্রাথমিকভাবে আইএমএফের দাবির সাথে একমত হতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু চাপের কারণে তাকে আইএমএফের শর্তাবলীতে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। ফলাফল সরুপ আর্থিক মন্দা, জীবনযাত্রার বর্ধিত মূল্যস্ফীতি বেশিরভাগ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ জনগণের জীবন-জীবিকা বজায় রাখা কঠিন এবং অসম্ভব হয়ে ওঠে, রাস্তায় আন্দোলন শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত সুহার্তো ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েন। পশ্চিমা শক্তি তারা যা চেয়েছিল তাই হল। তারপর থেকে বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলি আর্থিক সংকট এবং ঋণ পরিশোধের সংকট মোকাবেলা করতে এবং ভবিষ্যতে আইএমএফের উপর নির্ভরতা কমাতেএবং বহিরাগত শক্তির আরোপিত নীতি/নির্দেশ মানতে বাধ্য না হওয়ার জন্য নিজ নিজ দেশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো শুরু করে। তাই গত কয়েক দশক খুব আরামদায়ক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কারনে বাংলাদেশের কোনো আইএমএফ ঋণের প্রয়োজন ছিল না কিন্তু রিজার্ভ কমে যাওয়া পরিস্থিতি বাংলাদেশকে বিদেশি হস্তক্ষেপের সম্মুখীন করছে। এই ভূ-রাজনৈতিক উত্থান বাংলাদেশের কোনো দোষ বা নিজের সৃষ্টি নয় কিন্তু এখন দুর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক নেতাদের বা দলের এই অবস্থায় খুব কম বিকল্প আছে। আপনার কাছে সময় থাকলে অনুগ্রহ করে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক নিবন্ধটি পড়ুন "আইএমএফ কি উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত (Is the IMF fit for purpose?)"

চলুন আবার চলে আসি প্রথম আলোর আরেকটি নিবন্ধে “বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ তৈরির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের”। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক প্রশ্নের উত্তরে এই আহ্বান জানান। ব্রিফিংয়ে নেড প্রাইসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে নেড প্রাইস বলেন, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কসহ পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই তারা নিয়মিতভাবে বিষয়গুলো তাদের আলোচনায় তুলে থাকে”। প্রশ্ন হল নেড প্রাইস যা বলল তা নয়, প্রশ্ন হল কিন্তু কেন এবং কে এই প্রশ্নটি করেছিল? যুক্তরাষ্ট্র যখন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আর কাজ করছে, যেমন মূল্যস্ফীতি এবং নিজের দেশে গৃহস্থালির জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের সাথে সম্পর্ক, ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান না করা বা রাশিয়ার নিন্দা না করা তখন এই সমস্ত বিষয়গুলির মধ্যে তাদের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশ ইস্যুকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার জন্যই কি সেই প্রশ্ন কোন ভাড়া করা লবিস্ট বা কিছু বাংলাদেশী বিরোধী লোক বা তথাকথিত সাংবাদিক করেছে? নাকি এর পিছনে লুকানো হাত আছে।

কেন হঠাৎ করে আমরা মিথ্যা শুনছি যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাঙ্কে নগদ অর্থ নেই। কেন কিছু স্বার্থান্বেষী পক্ষ মিথ্যাভাবে বলছে এবং বিদেশে কর্মরত বা বসবাসকারী ব্যক্তিদেরকে আইনি মাধ্যমে টাকা না পাঠাতে এবং তৃতীয় পক্ষের হুন্ডি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের অর্থ পাঠানোর জন্য উত্সাহিত ও পরামর্শ দিচ্ছে? কেন বাংলাদেশ ব্যাংককে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হল যে বাংলাদেশে নগদ টাকা প্রবাহের সংকট নেই। কেন বার বার মানুষকে আশ্বস্ত করতে হচ্ছে যে তারা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সন্দেহ বা অসুবিধা ছাড়াই তাদের টাকা তাদের পরিবার সময়মত, ঠিক পরিমান পাবেন। কেউ কি মনে করেন, এই মিথ্যার প্রসার ইচ্ছাকৃত নয় এবং এর সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও দালালরা সক্রিয়ভাবে জড়িত নয়?

আসুন আবারও প্রথম আলোর কল্লোল মোস্তফার নিবন্ধ “রাষ্ট্রায়ত্ত কল বন্ধ রেখে ডেকে আনা চিনি সংকট” নিয়ে কথা বলি। নিবন্ধের হেড লাইনের দিকে তাকান, যা অনেকেই পড়বেন, হয়ত পুরো নিবন্ধটি না পড়ে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে কৃত্রিম চিনির সংকট হচ্ছে বলে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কল্লোল মোস্তফা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন সরকারকে কেন তার নিজস্ব কারখানায় চিনি উৎপাদন কমাতে বা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে তার কারণগুলি। যেমন তিনি লিখেছেন স্থানীয়ভাবে উত্পাদন করা চিনি বেশি ব্যয়বহুল যখন আমদানি করা চিনি অনেক সস্তা বা কৃষকরা বেশি দাম না পাওয়ায় আর বেশী আখের চাষ করছেন না, চিনি কারখানাগুলো পর্যাপ্ত আখ পাচ্ছে না তাই সরকারী কারখানাগুলো আর লাভ জনক না হয়ে অনেক ক্ষতির কারন হচ্ছে। যদি তার উদ্দেশ্য মিথ্যা আতঙ্ক সৃষ্টি করা না হয়, তাহলে দয়া করে কেউ কি আমাকে বলবেন কল্লোল মোস্তফা কেন তার নিবন্ধে ঐ শিরোনামটি ব্যবহার করেছেন?।

ইদানিং কালে জেলাগুলোতে বিএনপি জনসমাবেশে যোগদান দিতে শত শত মানুষ দুই তিন দিন আগে জেলাগুলিতে আসছেন, রাত কাটাচ্ছেন, টাকা খরচ করছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে বিএনপি এত বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে, কে দিচ্ছে? আপনি যদি এই সমস্ত ধীরে ধীরে কিন্তু খুব পদ্ধতিগতভাবে সৃষ্ট ঘটনাগুলি এবং আরও অনেকগুলি ঘটনা বিশ্লেষণ করেন তা হলে বুঝতে কঠিন হবে না সরকারকে দুর্বল করার জন্য এবং বহিরাগত প্রভাব ও শাসন চাপিয়ে দেওয়ার জন্য গত কয়েক দশকের মানব উন্নয়নের বিশাল উন্নতিকে ম্লান করার একটি চলমান ষড়যন্ত্র চলছে। অনুগ্রহ করে আমাকে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক ভেবে ভুল বুঝবেন না, ভাববেন না আমি সবকিছুতেই সবসময় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। সাম্প্রতিক ঘটমান ঘটনা আমাদের অন্যথায়/ অন্যভাবে না চিন্তা করতে বাধ্য করছে। আমরা কি মনে করি এই সমস্ত ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই ঘটছে কোন ইচ্ছাকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্ররোচনা ছাড়াই?

আমি একমত যে সরকারকে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে, সমস্ত দুর্নীতিবাজ নেতা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী বা ব্যবসায়ীদের বন্ধ করে শাস্তি দিতে হবে। আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে, ঋণ খেলাপি কমাতে হবে, কঠোর ব্যাবস্থা নিতে হবে, কষ্টার্জিত অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব কমাতে হবে। তবে এগুলি আমাদের কোন বহিরাগত, অন্যান্য দেশের সমর্থন ছাড়া অবশ্যই আমাদের নিজেদের করতে হবে। এটি ঠিক করার জন্য আমাদের অন্য দেশ বা দূতাবাসের কাছে ভিক্ষা করার দরকার নেই। কোন অযথা হস্তক্ষেপ ছাড়াই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য এটি আমাদের সমস্যা। আমাদের মর্যাদা, সম্মান এবং গর্ব নিয়ে বাঁচতে হবে।

আমি মনে করি সরকারকে আরো সজাগ হতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজের সমন্বয় করতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে কিভাবে আমরা এই অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি যে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমলাদের তাদের নিজ স্বার্থের উপরে উঠে, দেশের আর জনগনের কথা ভাবতে হবে, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, প্রতিটি নাগরিক, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, প্রতিষ্ঠান যারা আমাদের মুক্তির জন্য লড়াই করেছে, যারা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে এবং বাংলাদেশে বিশ্বাস করে, যারা আমাদের শক্তিতে বিশ্বাস করে, যাদের আত্মসম্মান আছে, তাদের সবাইকে অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে, একে অপরকে সমর্থন করতে হবে। এটা সহযোগিতা ও সহযোগিতার সময় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় নয়। সাহসী হোন এবং বিশ্বাস রাখুন। নিজস্ব ক্ষমতা এবং শক্তির উপর বিশ্বাস রেখে আমরা সবাই মিলে এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিকে যা আমাদের সৃষ্টি নয় কাটিয়ে উঠতে পারি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন। তার ক্ষমতা, তার দূরদৃষ্টি, রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তিনি অতীতে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে নিরাপদে জাতিকে নেভিগেট করেছেন, অনেক হত্যার শিকার হয়েও নিজের উপর বিশ্বাস হারান নি , থেমে যাননি। তিনি আবারও আগামী দিনে আমাদের পথ দেখাবেন এবং নেতৃত্ব দেবেন এবং বাংলাদেশকে একটি সম্মানিত গর্বিত উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন।

Prof Dr Quazi Monirul Islam, MBBS, MPH, FRCOG
Epidemiology Department, Prince of Songkla University, Hat Yai, Thailand
Senior Specialist, International Centre for Migration, Health and Development 
Former Senior Specialist (Maternal and Newborn), Liverpool School of Tropical Medicine, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন