ঢাকার রাজনীতির মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মোহাম্মদ হানিফ। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সফল সভাপতি। চারশ বছরের প্রাচীন শহর রাজধানী ঢাকা। ঐতিহ্য আর নানা সংস্কৃতির বৈচিত্রের কারণে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মেগাসিটি। সেই শহরের গৌরবের অপর নাম মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৪৪ সালে ১লা এপ্রিল পুরান ঢাকার স্যান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা আবদুল আজিজ আর মাতা মুন্নি বেগমের ছোট ছেলে হানিফ। আদর করে সবাই তাকে 'ধনী' নামে ডাকতো। শিশু হানিফ ছোটবেলায় মমতাময়ী মাকে হারান। মাঝের মৃত্যুর পর ফুফু আছিয়া খাতুনের কাছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আর আদর্শে বেড়ে উঠেন মোহাম্মদ হানিফ। ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মাজেদ সরদার ছিলেন ঢাকার শেষ সরদার। মোহাম্মদ হানিফের বহুমুখী প্রতিষ্ঠা তাকে মুগ্ধ করে। তাই ১৯৬৭ সালে মাজেদ সরদার প্রিয়কন্যা ফাতেমা খাতুনকে মোহাম্মদ হানিফের সাথে বিয়ে দেন। এই দম্পতির একজন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। পুত্র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পিতার আদর্শ ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত পূর্ন মন্ত্রী মর্যাদায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ হানিফ যৌবনের থেকে আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। দলীয় রাজনীতি করলেও তার উদার চিন্তা-চেতনা ও সংবেদনশীল মনোভাবের কারনে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল অসামান্য। তাঁর জীবন ছিল কর্মময়, ধ্যান ধারণা ছিল অত্যন্ত সুন্দর, ব্যক্তিগত চরিত্রে ছিল সজ্জন ও সততা সৌরভে উজ্জ্বল। একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা “নগর পিতা" খ্যাত যিনি নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম নির্বাচিত একজন সফল মেয়র। নিজ বিশ্বাসে অটল থেকে তা অকপটে প্রকাশ করতে পারা একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার ও ধার্মিক মুসলমান। একইসাথে ইসলামের মর্যাদা এবং দ্বীন প্রচারেও ছিলেন সোচ্চার। তিনি তাঁর স্বপ্নে প্রিয় ঢাকা নগরীকে ইসলামী স্থাপত্য কলায় সাজিয়ে তুলতে সহায়তা করেছেন। যার সুবাদে মুসলিম প্রধান দেশের রাজধানীতে বিদেশী মেহমান কেউ নেমেই যেন বুঝতে পারেন তারা কোথায় এসেছেন। বুকে হাজারো স্বপ্ন থেকে তা বাস্তবে রুপায়নের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সচেষ্ট থেকেছেন। তিনি মুসলিম হলেও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের কাছে ছিলেন পরমপ্রিয়। দূর্গাপূজা কিংবা বড়দিন অথবা অন্য কোন উৎসবে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। তার সহায়তায় অসংখ্য মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা সংস্কার করা হয়।
মোহাম্মদ হানিফ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ১৯৬০ সালে পুরান ঢাকার ইসলামিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে পরবর্তীতে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ) উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিএ পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ন হয়ে কিছুদিন আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ের পর গঠিত প্রাদেশিক সরকার ভেঙ্গে দেয়ার পর শেখ মুজিবর রহমানকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে ২৪ ঘন্টার নোটিশে শেখ মুজিবর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুনন্নেসা মুজিব ও তার পরিবারকে মন্ত্রীপাড়ার বাসা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় পাকিস্তান সরকার। সেসময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের রক্তচক্ষু, হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে মোহাম্মদ হানিফের পরিবারে পুরান ঢাকার ৭৯ নম্বর নাজিরা বাজার বাসায় অবস্থান নেন বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব ও তার পরিবারকে। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মোহাম্মদ হানিফকে খুব স্নেহ ও বিশ্বাস করতেন। তিনি সবসময় চাইতেন মোহাম্মদ হানিফ যেন সর্বদাই বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকেন। মোহাম্মদ হানিফের সাথে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারে ঘনিষ্টতা কোন দিন কমেনি বরং মুজিব পরিবারের বিশ্বস্ত হিসেবে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচার্যে থেকে মোহাম্মদ হানিফের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়। ১৯৬৫ সালের বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে অত্যন্ত সফলতা ও বিশ্বস্ততার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। তিনি একান্ত সচিব থাকা কালীন ছয়দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০'র জাতীয় নির্বাচন এবং একাত্তরে মহান মুক্তি সংগ্রামে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা চিরস্মরণীয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সব আন্দোলন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলনে তিনি রাজপথে সংগ্রামের প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অতুলনীয় সাংগঠনিক ক্ষ এবং সম্মোহনী বাগ্মিতা তাকে কিংবদন্তি তুল্য খ্যাতি এবং ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া ঢাকা ১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে হুইপের মহান দায়িত্ব পালন করেন। সাংগ্রামী জীবনে ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ৩০ বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দলের প্রতি অনুগত ও প্রিয় নেত্রীর বিশ্বস্ততায় এই মহান দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী গনঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মোহাম্মদ হানিফ।
মোহাম্মদ হানিফের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল ৭৫'র ১৫ই আগস্টের কালোরাতে ইতিহাসের বর্বরোচিত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রায় সব সদস্যের নির্মম হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ড কোন দিন মেনে নিতে পারেনি মোহাম্মদ হানিফ। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ১০ বছরের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড মোহাম্মদ হানিফকে বেদনার গভীর সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। ১৯৭৩ সালে লন্ডনে একসাথে সফরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কথা "আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুই আমার রাসেলকে দেখবি" বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে করতো মোহাম্মদ হানিফ। তাই ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ এর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের পর মোহাম্মদ হানিফের কণ্ঠে ছিল শুধুই স্লোগান "মাগো তোমায় কথা দিলাম মুজিব হত্যার বদলা নেবো, রাসেল হত্যার বদলা নেবো ১৫ই আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে রাজনৈতিক ভাবে পিতা মুজিব হত্যার বদলা নেয়া এবং হত্যার বিচারের দাবিতে দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সান্নিধ্য পাওয়া মোহাম্মদ হানিফ ১৯৯৪ সালে ৩০শে জানুয়ারী অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জনগনের প্রত্যক্ষ বিপুল ভোটের ব্যাবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তার আমলে ঢাকার উন্নয়নে রাস্তাঘাট, নর্দমা, ফুটপাত উন্নয়ন ও সংস্কার, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, আন্ডারপাস, সেতু, ফুটভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় ধানমন্ডি লেক এবং আশেপাশের এলাকা। ঢাকাবাসী সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে তিনি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঢাকার সৌন্দর্য বাড়ানো ও নগরবাসীর চাহিদা পূরনে নগরীতে বিজলী বাতি স্থাপন, নগর সৌন্দর্য বর্ষনে ফোয়ারা নির্মাণ, বনায়ন কর্মসূচি, পুরান ঢাকার আউটফলে ছিন্নমূল শিশু কিশোরদের প্রশিক্ষন ও পূর্নবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করেন।
নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ছিলেন মেয়র হানিফ। নারী শিক্ষা বিস্তারে লক্ষীবাজারে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ। এছাড়াও মহিলাদের মাতৃকালীন সময়ে পরিচর্যার জন্য নগরীতে বেশ কয়েকটি মাতৃসদন নির্মাণ করেন। শিশুবান্ধব ঢাকা পড়তে নিরলস কাজ করেছেন নগরপিতা হানিফ। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য পৌর শিশু পার্ক নির্মাণ ও পুরাতন পার্ক গুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনা, এছাড়াও বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করে গেছেন।
মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ ঢাকাবাসীর কষ্ট লাঘব করতে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা, মশক নিধন কর্মসূচি গ্রহণ। করেছিলেন। তার আমলে তিলোত্তমা নগরী গড়ায় লক্ষ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়েও মহানগরীর উন্নয়ন সম্ভব ঢাকাবাসির নিকট তারই নির্বাচনী গুয়াদা পূরণ হিসেবে এটাই তিনি কাজে প্রমাণ করে গেছেন।
১৯৯৬
এর মার্চের শেষ সপ্তাহে স্বৈরাচার
বিরোধী গণআন্দোলনে মোহাম্মদ হানিফ তার নেতৃত্বে জনতার
মঞ্চ" গঠন করেন, যা
তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট
তৈরী করে এবং যার
ফলশ্রুতিতে ৯৬-এর ১২জুন
দেশের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে দেশ
পরিচালনার জন্য মোহাম্মদ হানিফের
প্রানপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
মেয়র
মোহাম্মদ হানিফ আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর
প্রতি বিশ্বস্ততার বড় প্রমাণ দিয়েছেন
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। বিএনপি-
জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ
মদন এবং হাওয়া ভবনের
নেতৃত্বে পরিচালিত গ্রেনেড হামলার মূল টার্গেট ছিলেন
বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং সেসময়কার বিরোধী
দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৪
সালের ভয়াল ২১শে আগষ্ঠ রাজধানীর
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশের ট্রাক মঞ্চে শেখ হাসিনার ওপর
নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন
তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা
করে। তার প্রিয় নেত্রী
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার
প্রাণান্তর চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হানিফ।
একের পর এক ছোড়া
গ্রেনেডের সামনে নির্ভয়ে পেতে দিলেন নিজেকে,
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি।
মস্তিষ্ক সহ দেহের বিভিন্ন
অংশে অসংখ্য ঘাতক স্পিন্টার ঢুকে
পড়ে। দীর্ঘ দিনের চিকিৎসাতেও কোন ফল হয়নি
বরং মাথার গভীরে বিধে থাকায় ও
অস্ত্রোপ্রচার করেও অপসারন করা
সম্ভব হয়নি। দুঃসহ যন্ত্রনা সহ্য করেই রাজনৈতিক
জীবনে সক্রিয় থেকেছেন মোহাম্মদ হানিফ। জনগণের কল্যাণই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান।
আর রাজনীতির উজ্জ্বল ধ্রুবতারা ছিলেন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। একজন প্রকৃত নেতা
হিসেবে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিতে এই অকুতোভয় সৈনিক
রাজপথে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজধানীর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব নিয়েছেন। ২০০৬ এর ৮
ফেব্রুয়ারী মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির
বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে
আক্রান্ত হন। পূর্বে মাথায়
বিদ্ধ হওয়া স্পিন্টারের প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক অবস্থার
অবনতি হয়। তীব্র যন্ত্রনা
ভোগ করে দীর্ঘ দিন।
চিকিৎসা শেষে গত ২৮শে
নভেম্বর ০৬ দিবাগত রাতে
৬২ বছর বয়সে ঢাকার
এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করেন মোহাম্মদ হানিফ (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। অবশেষে চির
অবসান ঘটে তার কর্মময়
রাজনৈতিক জীবনের। ২৮ নভেম্বর তার
ষষ্ঠদশ মৃত্যুবার্ষিকী। মোহাম্মদ হানিফ চলে গেলেন জাতির
এক চরম দুঃসময়ে। যখন
দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভবিষৎ, তখন জননেতা হানিফের
মতো আদর্শ নিষ্ঠ, অকুতোভয় বিচক্ষন নেতৃত্বের বড়ো বেশি প্রয়োজন
ছিল। তার মৃত্যুতে সৃষ্ট
শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার
নয়। দেশের রাজনীতিতে তার অবদান শ্রদ্ধার
সঙ্গে স্মরনীয়। একজন সফল রাজনৈতিক
এবং সকল গুনাবলীর অধিকারী
সম্পন্ন মোহাম্মদ হানিফ তার কর্মের মাধ্যমে
আমাদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। আমরা তাঁর বিদেহী
আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৪৮ বছর আগের কথা। সবে
মাধ্যমিক পাশ করেছি, খণ্ডকালীন
কাজ শুরু একটি সাপ্তাহিক
পত্রিকার প্রুফরিডার হিসেবে,সপ্তাহে দু ঘন্টার কাজ,
১০ টাকা আয়, সময়টা
খারাপ যাচ্ছিলো না, একদিন কাকডাকা
ভোরে সম্পাদকের তলব, বেশ রাগত
স্বরে জানালেন কি কাজ করেছি,
এ বলে গত রাতে
প্রকাশিত পত্রিকা ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
কোনো বড়ো ভুল হয়েছে
কিনা, জানালেন এ এক কপি
ছাড়া সব পত্রিকা পুড়িয়ে
ফেলা হয়েছে কোনো এক সুহৃদ
পাঠকের অনুসন্ধানী ফোনকল এর রিপোর্টের ভিত্তিতে।
অভিযোগ মারাত্মক। আমার শহরতলীর এক
মাদ্রাসাতে ওয়াজ মাহফিলের একটা
সংবাদ তাদের অনুরোধে ছাপা হয়েছে।নিচের লাইনে
লেখা থাকার কথা, " উক্ত ওয়াজ মাহফিলে
দেশের বিশিষ্ট আলেমগণ ওয়াজ নসিহত করেন।"
পত্রিকার কম্পোজার আর মেশিনম্যান এক
হিন্দু ব্রাহ্মণ, কম্পোজ করতে গিয়ে ওই
লাইন এ আলেমগণের পরিবর্তে
ছাপা হলো, " উক্ত ওয়াজ মাহফিলে
দেশের বিশিষ্ট জালেমগণ ওয়াজ নসিহত করেন।"
এই দেখে তো আমাদের
সবাই ভয় পেয়ে গেছি,
নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জেলে থাকার
কথা।
গণতন্ত্রের
নতুন ভাষ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক,যিনি
প্রতি দিন শাসক দলের
নেতাদের হাঁটু ছুঁয়ে সম্মান জানান। যদি কেউ দাসত্ব স্বীকার
করে নিতে পারেন,তা
হলে তিনিই শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক; নানা অভিযোগে কণ্টকিত
হয়েও সরকারের শীর্ষব্যক্তিত্বের গুডবুকে থাকতে পারবেন। এটাই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ‘নিউ
নর্মাল’। কিন্তু সে তুলনায় প্রথম
আলো পত্রিকাটি বেশ ব্যতিক্রম। একসময় মতি
ভাই (সম্পাদক মতিউর রহমান) কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, একতা নামের একটি
সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে হাতে খড়ি, সালটা
হবে ১৯৭৮, দেশে সামরিক শাসন
চলছে। অনেক চড়াই উৎরাই
পেরিয়ে এ ভাসমান সম্পাদক
হাতে পেলেন আলাদিনের চেরাগ, সাবের হোসেন চৌধুরী পত্রিকা বের করবেন, নাম
দেয়া হলো ভোরের কাগজ।
ঐ সময়ে সেনাবাহিনী থেকে
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শাহেদ আহমেদ দৈনিক আজকের কাগজ নামের একটা
পত্রিকা চালাতেন, নতুন ধারার পত্রিকা,
ঐ পত্রিকা সহ আরো সব
টগ বগে তরুণ সাংবাদিককে
নিয়ে জড়ো করা হলো,
চালু হলো মতিউর রহমান
সম্পাদিত ভোরের কাগজ। বেশ নাম করেছিল
ঐ পত্রিকা। একদিন মতি ভাই সেখান
থেকে বেরিয়ে গেলেন, ট্রান্সকম গ্রুপ এর মালিক লতিফুর
রহমান কিনে নিলেন, ইংরেজি
পত্রিকা ডেইলি ষ্টার, সম্পাদক হলেন মাহফুজ আনাম,
প্রফেসর এস এম আলীর
মতো সম্পাদককে হটিয়ে দিয়ে, আমি অনেকবার ঐ
অফিসে লেখা জমা দিতে
গেছি, ধানমন্ডির ৪ নাম্বার সড়কে
ছিল অফিস। কিছুদিন পর লতিফ সাহেবের
টাকার খেলায় চালু হলো প্রথম
আলো, মতিউর রহমানকে করা হলো সম্পাদক।
২০০০
সালের গোড়ার দিকে ফেনীর সন্ত্রাস
নিয়ে টিপু সুলতান বলে
এক ফেনী প্রতিনিধি তৎকালীন
ফেনীর গডফাদার জয়নাল হাজারীকে নিয়ে বেশ কিছু
প্রতিবেদন প্রকাশ করলো,গডফাদার এর
আদেশে টিপুর উপর চালানো হলো
অমানবিক শারীরিক নির্যাতন, তা নিয়ে দেশে
বিদেশে হৈ চৈ পড়ে
গেলো, প্রথম আলো তখন অন্য
সব পত্রিকাকে ছাপিয়ে হয়ে উঠলো এক
নাম্বার সংবাদপত্র। নির্যাতিত টিপু আমেরিকার প্রেস
ফ্রিডম পুরস্কার পেলো।সময়ের আবর্তনে প্রথম আলো আরো বেশি
লাইম লাইট -এ এলো ২০০৭
সালের সামরিক শাসনের আমলে, মাইনাস টু ফর্মুলার প্রবক্তা
হয়ে। প্রচার সংখ্যা কয়েক লক্ষ, কর্মীর
সংখ্যাও হাজারের উপর।সরকারি বিজ্ঞাপন না হলেও চলার
ক্ষমতা রাখে প্রথম আলো।অনেক
ভালো ভালো সংবাদ সাহস
করে ছাপিয়ে পাঠকের মন জয় করে
চলছিল।
এবার
আসি গেলো কয়েকদিনে প্রথম
আলো পত্রিকাকে নিয়ে বিভিন্ন তর্ক
বিতর্ক নিয়ে। মহান স্বাধীনতা দিবসে
একজন দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলো যে প্রতিবেদন
প্রকাশ করেছে, সেটি মিথ্যা ও
‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড’।একটা বাচ্চার হাতে ১০ টাকা
দিয়ে স্বাধীনতা নিয়ে তার মন্তব্য নেওয়া
হয়েছে।ছেলের নাম সবুজ।তাকে বানানো
হয়েছে জাকির হোসেন।ছেলে স্কুলের ছাত্র, তাকে বানানো হয়েছে
দিনমজুর। এটি কোন সাংবাদিকতা? এত
বড় মিথ্যাচার, মিথ্যা রিপোর্ট করা, সরি বললেই
কি সব সমস্যার সমাধান
হয়ে যায়? এটা একটা সংগঠিত
অপরাধ।দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার দায় প্রথম
আলো-কে নিতে হবে। ২০১৩
সালে রানা প্নাজা ধসে
হাজার হাজার মানুষ যে দিন নিহত
হয়, সে দিন সন্ধ্যায়
প্রথম আলো-মেরিল পুরস্কারে
নাচ-গান করা, ঢাকা
রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে প্রথম
আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ছাত্রকে নিকটবর্তী উন্নত হাসপাতালে ভর্তি না করে দূরের
এক হাসপাতালে ভর্তি করা ও তার
মৃত্যু ঘটা এবং এখন
স্বাধীনতা দিবসে শিশুর নাম দিয়ে মিথ্যা
লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা -এ সবের
কি বিচার? স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে এভাবে কটাক্ষ করে যে সংবাদ
প্রচার করা এবং একটা
শিশুকে ১০ টাকা হাতে
ধরিয়ে দিয়ে যেটি বলানোর
চেষ্টা করা সে না
বললেও সেটিকে ছাপানো- এটি কি সাংবাদিকতার
নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি নয়? সে জন্যই
এটার প্রচন্ড সমালোচনা হয়েছে, এটি ঠিক নয়
বিধায় আপলোড হওয়ার পরে সেটি তারা
সরিয়েও ফেলেছিলো। কিন্তু সেটির ‘স্ক্রিনশট’ তো বিভিন্ন জায়গায়
ছিলো, অনেকে শেয়ার করেছে, সেগুলো রয়েও গেছে।সেগুলো সোশ্যাল
মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে, ঘুরছে। এতদপ্রেক্ষিতে
সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মামলা করেছে, মামলার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।পুলিশের তদন্তে
সব বেরিয়ে আসবে এবং আইনের
গতিতে আইন চলবে।
বঙ্গবন্ধুকে
হত্যা করার আগে বাসন্তীর
গায়ে জাল পরিয়ে ছবি
তুলে সেটি প্রকাশ করা
হয়েছিল। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের
দামের চেয়ে বেশি ছিলো,
এখনো জালের অনেক দাম।কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে
বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে
ছবি তুলে প্রকাশ করা
হয়েছিল। অনেকে বলছে, ২৬ মার্চে প্রথম
আলোর এ ঘটনাটি বাসন্তীকে
জাল পরানোর মতোই। রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এ ধরণের অসত্য
পরিবেশন সর্বমহলের মতে একটি অপরাধ,
ডিজিটাল অপরাধ। অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক
জিনিস নয়, কোনো সাংবাদিক
যদি অপরাধ করে তার কি
শাস্তি হবে না? কেউ
যদি অপসাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ
করে এবং একটি ছেলের
হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে
দিয়ে তার নামে অসত্য
লেখে, চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন করে, সেটার কি
বিচার হবে না? আমরা
কি কেউ বিচারের উর্ধ্বে,
আইনের উর্ধ্বে? তা তো নয়। বিশ্বের
দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইনের উদাহরণ আছে, এ ধরনের
আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে
সাইবার সিকিউরিটি ল’জ এন্ড
রেগুলেশন ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ এন্ড পানিশমেন্ট
এবং এ ধরণের আইন
বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধের
শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদন্ড
এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে
যদি কারো মৃত্যু হয়,
তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের
শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও
অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি
কঠিন।
*(ছবিতে ১৯৭৪ সালে বাসন্তীকে মাছধরার জাল পরিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক যে ছবি ছাপিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিলো, সে ছবি আর ২০১৭ সালের সে বাসন্তী (বয়স ৭৫)*
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের
কাছে বছরে কয়েকটি দিন আসে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,
স্মরণীয় আর শ্রদ্ধার দিন।
১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। সেইদিনই বলা যায় শুধু আমাদের পরিচয়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করা নয় সাথে সাথে
স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজ রোপণ করা হয়েছিল। বাঙালি বিভিন্ন নিপীড়ন, প্রতিবন্ধকতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ অতিক্রম করে, ভাষার জন্য যারা তাদের জীবন দিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেছিল। সেই থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা সবাই শহীদ মিনারে একত্রিত হই, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। আজ মাতৃভাষার অধিকার
রক্ষার লড়ায়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ এই লড়াইয়ে
যারা প্রাণ দিয়েছেন সেই বাঙালিদের বিশ্ববাসী জানে এবং শ্রদ্ধা করে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে এলে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে তারা যাবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার অর্জনের ঠিক কয়েকদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্য ভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের স্মরণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির পরের প্রজন্মের সন্তানরা যাতে স্বাধীনতার মুল্য বুঝতে পারে আর স্বাধীনতার জন্য
যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন কথা না ভুলে যায়
তার জন্য জয়লাভের পর ঢাকায় একটি
অপুর্ব বিস্ময়কর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। সেইদিন অনেক নেতা, দল আর মানুষ
সেখানে যায়। আমি বিশ্বাস করি যদি জায়গাটি উপযুক্ত করা হয়, তাহলে সেখানে প্রতিদিন দেশী, বিদেশী দর্শনার্থীসহ সব বর্ণের মানুষ
যেতে চাইবে।।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল সাভারে আমাদের
জাতীয় শহীদ সমৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের আত্মত্যাগের গল্প বলার তীর্থস্থান। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ
সফরে আসলে সেখানে যান তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ২৬শে মার্চ এই জায়গাটি হাজার
হাজার মানুষের সাথে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুঃখজনকভাবে তার মৃতদেহ তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। ঘাতক ও সামরিক শক্তি বিদ্রোহের ভয়ে তাকে ঢাকা থেকে অনেক দূরে টঙ্গী পাড়ায় সমাহিত করে। সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকাকালে কবরটি অবহেলিত ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও কবরটি অবহেলিত থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার প্রতি সঠিকভাবে অনেক মনোযোগী হয়।মানুষ যাতে আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার অবদান, স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়ন এবং তার আত্মত্যাগ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণ করতে পারে তার জন্য একটি সম্মানজনক সহজ কিন্তু মহিমান্বিত জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। জাতীর পিতার জন্মদিন ছাড়া অন্য দিনে আমার মত দেশের প্রতিটি কোণ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে হাতে গনা কিছু লোক প্রতিদিন সেখানে যান।
আমি এখানে কেবল উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের আলোকপাত করছি। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যাই। তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি
ছয়টি মহাদেশের ১১৫টি দেশে কাজ করার এবং দেখার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি দেশে আমি ইতিহাসের স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ, তাৎপর্যপূর্ণ সমাধি দেখার চেষ্টা করি। যা দেখে নাগরিক
এবং দর্শনার্থীরা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আমি দেখেছি সেসব দেশের সরকার সেই জায়গাগুলির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
যতাযত বিনিয়োগ করেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েছে। এই জায়গাগুলি সপ্তাহ
এবং বছরের প্রতিটি দিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সেই জায়গাগুলোতে যান। সব সময় কিছু
না কিছু উৎসবের আয়োজন করা হয় সেসব জায়গায়। সেই জায়গাগুলো অনেক স্বেচ্ছাসেবক সহ সশস্ত্র বাহিনী
পাহারা দেয়। স্কুলের বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে তারা তাদের ইতিহাস এবং সংগ্রাম দেখতে, বুঝতে, শিখতে পারে এবং সম্মান দেখাতে পারে। বিদেশী দর্শনার্থীরাও সেসব স্থান পরিদর্শন করে এবং সেই দেশ, এর মানুষ এবং
ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতিটি পর্যটন বইয়ে সেই স্থানগুলিকে অবশ্যই দর্শনীয় স্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে যাবার পর ২০১৭ সাল
পর্যন্ত আমি প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার এবং ২০১৭ সাল থেকে আমি বছরে অন্তত একবার বাংলাদেশ সফর করি (যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের জন্য আমি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি)। আমি যখন
বাংলাদেশে যাই, আমি সবসময় চেষ্টা করি ওই চারটি এলাকা
ঘুরে দেখার জন্য। গত কয়েক দশকে
অসাধারণ উন্নয়ন দেখতে আর জানতে আমি
প্রতিবার ঢাকার বাইরে আমাদের গ্রামীণ এলাকাতেও যাই। ওই চারটি এলাকা
পরিদর্শন করে, অবহেলা দেখে আমার দারুন মন খারাপ হয়।
হ্যাঁ, জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে যান, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নেতাদের শ্রদ্ধা
জানাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কারণেই সেই জায়গাটি সারা বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত
রাখা হয়। তবুও আমি এর চেয়ে অনেক
বেশি আশা করি।
২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ মিনার রং করা হবে,
পরিষ্কার করা হবে, আল্পনা আঁকা হয় এবং সেইদিন
বিভিন্ন দলের নেতা আর হাজার হাজার
মানুষের মধ্যে লড়াই হয় কে প্রথমে
তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে তাই নিয়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারির পরের দিন, জায়গাটি অবহেলিত এলাকা বলে মনে হয়। আমি দেখেছি সেই জায়গাটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা, কোন পাহারাদার নেই, রক্ষণাবেক্ষণের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?
বধ্য ভূমি স্মৃতিসৌধ (শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ), একটি চমৎকার জায়গা কিন্তু এটিও একদিনের স্মরণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে - শুধুমাত্র একদিনের সহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। আমি সেখানে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। দেখেছি কিছু তরুণ দম্পতি এখানে-সেখানে বসে রোমান্টিক সময় পার করছে। এক কোণায় অলসভাবে
বসে আছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?
সৌভাগ্যবশত সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ একটি ভাল দর্শনীয় স্থান, তবুও শুধুমাত্র ২৬মার্চ নয় জায়গাটি সারা বছর আরো ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা যেতে পারে। আমি সেখানে এমন কোনো ট্যুরিস্ট গাইড দেখিনি যিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা স্থাপত্যের অর্থ
বর্ণনা করতে পারেন।
বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন যাতে আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গর্বিত জাতি হতে পারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি দেশ পুনর্গঠন শুরু করেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের আহ্বানে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। অর্থনীতি দ্রুত গতিতে উঠতে শুরু করে। উৎপাদন বাড়াতে শুরু হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমতে থাকে। আশায় উদ্বুদ্ধ, লোকেরা স্বাধীনতার সুবিধাগুলিকে প্রতিটি দরজায় ধাপে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। ঠিক তখন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের
সাথে মিলে মিথ্যা ও নোংরা প্রচারণা
ছড়ানো আর কিছু বিশ্বাসঘাতক
সামরিক কর্মকর্তা, কিছু বিদেশী শক্তি এবং বাংলাদেশের কিছু মিরজাফরদের সহায়তায় জাতির পিতাকে সপরিবারের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ঘোষণা করা হয় সামরিক আইন। গণতন্ত্র হরণ করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় হত্যা, অভ্যুত্থান
ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকার
কেড়ে নেওয়া হয়। সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং কয়েক দশক ধরে দেশ শাসন করে। স্বাধীনতা আর মুক্তির সব
নিদর্শন কেড়ে নেওয়া হয, জাতির পিতার কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। আমাদের অতীত বা জাতির পিতাকে
স্মরণ করার মতো কোনো প্রতীক বা স্থান আমাদের
কাছে ছিল না। তাই আজ জাতির পিতা
শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ একটি চমৎকার স্থান, একটি দুঃখ, শান্তি, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এলাকা।
এটা আমাদের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার জায়গা,
আমাদের ভবিষ্যতের জায়গা। সেখানের জাদুঘরটি আমাদের জাতির পিতা এবং সংগ্রামের গল্প বলার চেষ্টা করে। তবুও আমি অনুভব করি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ আরো অনেক বেশি সম্মানের যোগ্য। এটি শুধুমাত্র তার জন্মদিনে দেখার জায়গা হতে পারে না। জাতির পিতার সমাধি হল ইতিহাস, ত্যাগ
ও সংগ্রামের স্থান, শুধুমাত্র জন্মদিনে এটি দর্শন হতে পারে না। এটা বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য
প্রতিদিন মনে রাখার জায়গা। আমার জন্য এটি একটি তীর্থস্থান। বেড়াতে যেতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আসার জন্য কেন ডেডিকেটেড পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস নেই। তাহলে মানুষ সেখানে যাবে কিভাবে? দুর থেকে আশা মানুষের রাত কাটার জায়গা সেখানে নই। সামরিক খুনি ও স্বৈরশাসকরা এটাই
চেয়েছিলেন, যাতে মানুষ সেখানে না যেতে পারে
এবং দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও কোন মনোযোগ দিচ্ছি না। ভবিষ্যত প্রজন্মের সেখানে যাওয়া সহজ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না! আমরা ভর্তুকি প্রদান করছি, এমনকি লোকসানকারী প্রতিষ্ঠানকেও কিন্তু কেন এই প্রচেষ্টায় বরাদ্দ
করতে পারছি না!
আমি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী হতে চাই, আমি আমাদের গর্বিত ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং আমাদের আত্মত্যাগের কথা প্রতিটি দিন স্মরণ করতে এবং বলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুযোগ দেওয়া হলে, সক্রিয়ভাবে দেশব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের জনগণ, বৃদ্ধ এবং যুবক, নারী বা পুরুষ তাদের
শ্রদ্ধা জানাতে সেই স্থানগুলিকে স্মরণের জায়গা হিসাবে পরিদর্শন করতে যাবে। তারা ইতিহাসকে আলিঙ্গন করে প্রতিশ্রুতি করবে কখনই কউকে আমাদের দমন করতে, আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেব না। বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীরা সে জায়গা দেখার
জন্য কৌতুহলী হবে এবং সেখানের যাবার ইচ্ছা করবে এবং আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। যা আমি অন্য
অনেক দেশে দেখেছি, তাই ভাবি কেন আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ, বিমান বাহিনী এবং বিডিআর বাহিনী তাদের সেনানিবাসের মতো তেমন সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণের ধারাতে এই চারটি জায়গায়
স্থায়ীভাবে তাদের স্টেশন স্থাপন করে, সরকারী সহায়তায় এই স্থানগুলি পরিচালনার
সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে না? আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তি এবং
আমাদের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। কথার কথা তারা সেখানে সবচেয়ে অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় প্রহরী পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারে, লোকেরা তাদের দেখতে যাবে এবং একই সাথে তাদের শ্রদ্ধা জানাবে। কেন আমি বিমান বন্দরে এই চার সৌধের
ছবি দেখি না? কেন রাজনৈতিক দল, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যায়ক্রমে ছাত্রদের এই জায়গায় যাওয়ার
আয়োজন করে না? আমরা কেন ইতিহাসের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু অর্থ ব্যয় করতে পারি না? কেন যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো
সেখানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না? মনে রাখতে হবে, এই জায়গাগুলো আমাদের
বারবার মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথায় ছিলাম এবং আজ কোথায় আছি।
আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে কেন আমাদের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য
লড়াই করতে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। বার বার সতর্ক করবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আমাদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সাহস দেবে কেন আমাদের জাতি, আমাদের ভাষা এবং আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করা উচিত।
আমি যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরের স্থান পরিদর্শন করার সচেতনতা এবং ইচ্ছা, তখন আমি খুব বিস্মিত এবং গর্ব বোধ করি। সামাজিক মিডিয়াগুলো তাদের দুঃসাহসিক গল্পে পূর্ণ। তারা তাদের বাড়ির চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, তারা এখন আরও মোবাইল, তাদের সামাজিক ও আর্থিক উপায় বাড়ছে, তারা বিভিন্ন জায়গা দেখতে চায়, আমাদের ইতিহাস জানতে চায়। এখন অন্তত সেই চারটি জায়গাগুলিকে দেখার জন্য, সময় কাটানোর জন্য আরও আকর্ষণীয় করার দায়িত্ব আমাদের, সরকারের, সবার।আমি বিশ্বাস করতে চাই শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ শুধুমাত্র একটি দিনের জায়গা নয় বরং প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা ও স্মরণের জায়গা হক। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মাতৃভাষা, যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের জাতির পিতাকে বিশ্বাস করি তবে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে, আপনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, সেই বিশ্বাসে আমাদের অবশ্যই একসাথে থাকতে হবে। আমরা একদিনের জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী হতে চাই না। আমরা বাঁচতে চাই এবং সমৃদ্ধ হতে চাই, আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের অতীত, বর্তমান নিয়ে গর্বিত হতে চাই এবং আমরা আমাদের আরো উন্নত ভবিষ্যতে বিশ্বাস করতে চাই। চিরদিন আমরা সবাই মনে প্রানে বাঙ্গালী, বাংলাদেশী হয়েই বাঁচতে চাই।
Prof
Monir Islam, MBBS, FRCOG, MPH
Senior
Specialist
International
Centre for Migration, Health and Development
Former
Senior Specialist, Maternal and Newborn Health
Liverpool
School of Tropical Medicine, Liverpool, UK
Former
WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৭:১৪ পিএম, ৩০ মার্চ, ২০২৩
দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা সকলেই চাইব যে আইন সবার জন্য সমান থাকবে। কিন্তু খুব অবাক লাগে যখন দেখি একই অপরাধে একজন কারাগারে এবং আরেকজন স্বাধীনভাবে বাহিরের হাওয়া বাতাস খাচ্ছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হলে গতকাল বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শুধু শামসুজ্জামান নয়। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও বুধবার মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হল, শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার পর তাকে গ্রেফতার করা হলে মতিউর রহমানকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? এর কারণ কি?
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ছিলেন এক-এগারোর ষড়যন্ত্রকারী এবং এখনও তিনি দেশের বিরুদ্ধে যে নিয়মিত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন আরেকটি বড় উদাহরণ হল ২৬ মার্চের সেই প্রতিবেদন। ভাবতে অবাক লাগে যে, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিলেন এবং তার কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বাধীন বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল, তারপরও দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন ষড়যন্ত্র করার পরও ষড়যন্ত্রকারীরা কিভাবে এখনও জেলের বাইরে। এটা শুধু আমি না, দেশের সাধারণ জনগণও জানতে চায়। সুতরাং অবিলম্বে তাকে আইনে সপর্দ করা হোক। পরবর্তিতে তিনি যদি বেইল পাওয়ার যোগ্য হন, তিনি বেইল পাবেন। বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু যদি এই তওবা সম্পাদককে অবিলম্বে জেলে না নেওয়া হয়, তাহলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিরা জয়ী হয়ে যাবে।
আজ দার্শনিক শেখ হাসিনা শুধু একজন ব্যক্তি নন, শুধু একটি দলের প্রধান নন কিংবা শুধুমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, একসময় যেমন বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ বোঝাত এখন শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। মতিউর রহমানের মত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যদি কঠিন হস্তে দমন না করা হয় তাহলে তারা একের পর ষড়যন্ত্র করেই যাবে। এর আগেও নানা রকম মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। যার জন্য আগে তওবা করতে হয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদককে। ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান’, কবিতার এই বাক্যের মত বার বার তওবা করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এই তওবা করাই তাদের ভাষা। এভাবেই যদি তারা বারবার ছাড় পেয়ে যায় তাহলে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
প্রথম আলোর সম্পাদক, যিনি তওবা সম্পাদক হিসেবেই বেশি পরিচিত এবং বাংলাদেশকে যেহেতু তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেছে তাদেরকে অতি শীঘ্রই বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটা ১৯৭৫ সাল না, এটা ২০২৩ সাল। বিদেশীদের দিয়ে কিছু মন্তব্য করালাম আর হয়ে গেল, এত সহজ নয়। চুনোপুঁটিকে ধরে রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দিবেন, এটা এখন আর সম্ভব নয়। এবার রাঘব বোয়ালকেই ধরতে হবে।
মন্তব্য করুন
গেল সপ্তাহে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক উন্নয়ন তৎপরতা তথা সাফল্যকে হেয় করে দেখার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। উপরন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও বেশ কিছু সংস্থার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।তবে দৈনিক পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগকে সরল করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’’ এখানে কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড়ানোর কথা নয়।এজন্য স্বাধীনতা দিবসের প্রতিবেদন নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত প্রথম আলোর সাংবাদিক মো সামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।সংবিধানে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলভিত্তি যেমন বাক-স্বাধীনতার উপর প্রতিষ্ঠিত, তেমনি বাক্-অসংযম গণতন্ত্রের মূলোচ্ছেদকারী।
খেলোয়াড় সৃষ্টির প্রথম প্রয়োজন হলো মাঠ। কলকাতায় গড়ের মাঠ আছে; ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রেসকোর্স বেশ কিছু ক্লাব এই গড়ের মাঠ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা খেলাপ্রিয় জাতি, স্বাধীনতার আগে আগাখান গোল্ড কাপ হতে দেখেছি। ঢাকার ফুটবল কর্তারাই এই গোল্ড কাপের আয়োজন করতেন। আরসিডি ফুটবল এখানে হয়েছে। দর্শক অপেক্ষা করত দামি তারকাদের ফুটবল কলা দেখার। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় না বা ফেডারেশন কর্তারা এই ফুটবল আয়োজন না করে বসে বসে ক্রিকেট দেখেন। ঢাকা স্টেডিয়াম পাকিস্তানিরা তৈরি করে। পুরো স্টেডিয়াম হয় দোকানসহ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার অর্জনের ঠিক কয়েকদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্য ভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের স্মরণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির পরের প্রজন্মের সন্তানরা যাতে স্বাধীনতার মুল্য বুঝতে পারে আর স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন কথা না ভুলে যায় তার জন্য জয়লাভের পর ঢাকায় একটি অপুর্ব বিস্ময়কর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। সেইদিন অনেক নেতা, দল আর মানুষ সেখানে যায়। আমি বিশ্বাস করি যদি জায়গাটি উপযুক্ত করা হয়, তাহলে সেখানে প্রতিদিন দেশী, বিদেশী দর্শনার্থীসহ সব বর্ণের মানুষ যেতে চাইবে।।