সম্প্রতিকালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। সাবেক ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন সেটি একটি মোটর সাইকেলকে ধাক্কা
দিলে এই মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হয়। আর এই মর্মান্তিক ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে :ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা-
মুক্তি কোথায়?
বিজয়ের মাসে আমাদের হৃদয় এমনিতেই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানীরা
যে বর্বর হত্যাকান্ড সারা দেশে চালিয়েছিল সেই সব স্মৃতিগুলো থেকে।বিজয়ের মাসে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষক যে বর্বরতার পরিচয় দিলেন, কিংবা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারী
২০০৯ বিডিআর সদর দপ্তরে বর্বরতার যে নির্মম ইতিহাস রচিত হলো তার থেকে মুক্তির
আকুলতা আমাদের সকলের।
কিন্তু কোথায়
আমাদের মুক্তি? এক সাগরের রক্তের বিনিময়ে কিংবা ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের বিনিময়ে যে আমাদের যে মুক্তি ১৬ ডিসেম্বর হয়েছিল সেটি কি তবে আবার কোথাও বন্দি হয়ে আছে ?
আমাদের ছাত্ররা যে ক্যাম্পাসে শান্তিতে নেই
সেটা আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সমাবর্তন ভাষণে উঠে এসেছে।
সমাজ জনগণ অভিভাবক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন যখন তখনি এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
কিছুদিন আগে আমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে কিছু কথা
লিখেছিলাম। সেখানে আমি এক শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধার নীরবতা আকুলতা নিয়ে যে লেখাটি
লিখেছিলাম তার সঙ্গে ক্যাম্পাস নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। লেখার
আগে তুখোড় সাবেক ছাত্র নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য জনাব এস এম বাহালুল
মজনুন চুন্নু ভায়ের সঙ্গে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে হাটতে হাটতে কিছু কথা হয়েছিল
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে এবং তিনি কি পরামর্শ দিয়েছিলেন সে গুলো বলছিলেন। তার বক্তব্য গুলোর সঙ্গে আমার চিন্তাগুলো মিলে
যাওয়াতে লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাবেক শিক্ষার্থীর কথাগুলোর
গুরুত্ব দেবেন। হয়তো তারা ভাবছেনও। সেটা যাই হোক , আজ আবার ছাত্রদের দাবির সঙ্গে আমি সহমত
পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও
সারাদেশের সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলো সাধারণ
জনগণের জন্য খুবই প্রয়োজন।সুতরাং, সেখানে সেনানিবাসের মতো বিধিনিষেধ আরোপ সম্ভব নয়। তবে তার পরেও অনেক কিছু
করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো খুবই প্রশস্ত। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন দেখেছি শিক্ষা ভবন
থেকে কার্জন হলের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত
আলাদা রিকশার লাইন ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি
কর্পোরেশন খুব সহজেই সেই রকম একটি ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে
চলতে পারে সেজন্য ফুটপাতগুলো হকার মুক্ত করে দিতে পারেন। এবং ফুটপাতগুলোতে যাতে
মোটর সাইকেল বা সাইকেল নিয়ে কেউ পথচারীদেরকে অত্যাচার না করতে পারে সেজন্য
ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এমনকি ফুটপাথগুলোকে রক্ষা করতে গ্রীল দিয়ে ঘিরে দিতে পারেন তাতে করে নিদৃষ্ট স্থান দিয়ে পথচারী পারাপার হবে।
এছাড়া গতিসীমা সর্বোচ ১০ কিলোমিটার করে দিতে পারেন। ভারী যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে। আমার এই লেখাটি পড়েও সেরকম মন্তব্য শুনতে হবে হয়তো।
প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমি রাজনীতি , সমাজের
অবস্থা , শিক্ষা
ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলি।সেগুলো যারা পড়েন বা শোনেন তাদের অনেকেই আমাকে
পরামর্শ দেন নিজের কথা ভাবতে। আমি তাদের পুনরায় বলি সমাজে
আজ অসহায় মানুষ, ছাত্র ,
শিশুদের নিয়ে কথা
বলার মানুষ কমে গেছে। ক্ষমতায় যারা আছেন
তারও নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করেন। আমরা
শুনি পুলিশরা নাকি সবচে ক্ষমতাবান। কিন্তু
তাদের সঙ্গে যখন কথা বলি তারাও বলেন- তারা কি
রকম অসহায়! এইতো গুলিস্তানের সামনে সিএনজি চালকদের
কাছ থেকে চাঁদা তুলছে পুলিশের সামনেই! তারা কতটা অসহায় তা দেখে সকলেই মুখ বুজে চলে
যান। আমি চেষ্টা করেছি, প্রতিবাদ করেছি।হয়তো সেজন্য আমি নিজের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছি !
কিন্তু বিবেকের তাড়নায় নীরব থাকতে পারিনি ! আমার প্রতিবাদ সুবিধাভোগীদের ভালো
লাগছে না বলে নিজের বিপদ তৈরী হচ্ছে।
পরিবারের চিন্তা বাড়ছে। তথাপি আমি করছি প্রতিবাদ। আমার লেখার
পাঠক/বন্ধুরা জানতে চেয়েছেন "হুমকি
কে দিল, কেন দিল জানালে উপকৃত হই।" আমি
তাদের উত্তরে বলতে চাই - অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদে যার সংক্ষুব্ধ তারাই
আমাকে হুমকি দিয়েছে।
আমাদের
উপাচার্যরা কত অসহায় তা আমার চেয়ে হয়তো তারাই ভালো বোঝেন।তারা একটি ভালো পদক্ষেপ
নিলে আরেকজন তার বাগড়া দেন। একজন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন
তথাকথিত সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের কাছে।একটি শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করবার চেষ্টাকে
ভণ্ডুল করতে একটি মহল সবসময় চেষ্টা করেন।উপাচার্যকে অসহায় দেখে অনেকেই চুপ
থাকেন।আজ আমাদের সকলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
সুতরাং , সময় এখন জাগরণের। সবার আগে মাননীয় উপাচার্যদেরকে শক্ত হতে হবে এবং জনগণ তাঁদের জাগরণের অপেক্ষায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিরাপত্তা
সহ ডাস্টবিনের দাবি করেছেন।তারা দাবি করেছেন উপাচার্য মহোদয়ের নিকট যত অভিযোগ জমা
পড়েছে সেগুলোর সমাধান দাবি করেছে। আজ এসময়ে মনে
পড়লো আমার প্রিয় সংগঠন রোটারাক্ট ক্লাব অফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। তারা
ক্যাম্পাসে কিছু ডাস্টবিন দিয়েছিলো তখন মাননীয় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল
মান্নান। উপাচার্য মান্নান স্যার ছাত্রদের
দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে উপাচার্য হয়ে মিছিল করেছেন স্বৈরাচারী
এরশাদের নিপীড়ন নির্যাতনকে সহ্য না করতে পেরে।আজকের উপাচার্যরা সেই অবস্থান নিতে
চাইলে কি হবে জানিনা , তবে এরশাদ
আব্দুল মান্নান স্যারকে সরিয়ে দিয়েছিলো।
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রোটারাক্ট ক্লাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল
ইসলামকে , যিনি এখন
বাংলাদেশ প্রতিদিন এর বার্তা সম্পাদক , বলেছিলাম অনুরূপ একটি ব্যবস্থা নিতে।
গতকাল পত্রিকায় দেখলাম তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধারা গ্রুপ সামর্থ্যহীনদেরকে
হজে পাঠাচ্ছে। আশা করি তিনি তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধারা
গ্রুপকে অনুরোধ করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে।এভাবে যদি দেশের
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ায়, তবে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উপরে উঠে আসবে।
ফুটপাথ , রিকশার আলাদা লেন ছাড়া গতিমাত্রা
নিয়ন্ত্রণ সাইন ও ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা থাকা দরকার আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক
হারে মোটর সাইকেল ব্যবহার করছে। সেগুলোকে
নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। সেজন্য ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।যে কথা আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বলছি, সেই কথা গুলো সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত
জরুরি।
আমাদের ছাত্র -ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে চায় বলে তারা র্যাংকিংয়ের কথা বলে। সুতরাং সিঙ্গারা সমুসার যুগ থেকে উত্তরণে
উপাচার্যদেরকেই আগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
আপনাদেরকে অনেকেই পরামর্শ দেন নিয়োগের ৪ বছর যাতে সম্পন্ন করতে পারেন
সেদিকে মনোযোগ দিতে। দোহাই , আপনারা সেই মেয়াদ পূরণের সংস্কৃতি থেকে
মুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্তির বার্তা দেন। জনগণ এখন শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের মুখে তাকিয়ে
আছে।
আগামী কয়েকদিন পরে মুক্তির সংগ্রাম ও
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনে অনন্য ভূমিকা রেখে যে সংগঠন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সেই
সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন।
আপনাদের সম্মেলনে শিক্ষার উন্নয়নের ভাবনাগুলো স্থান পাবে বলে আমার আশা।
" আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে "- কবির এই ছন্দ মিলিয়ে বলতে চাই
- "ছাত্রলীগ যদি না জাগে আপা কেমনে
মুক্তি আসবে ?"
ছাত্রলীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী সরকারের
পাশে আছেন। আপনাদের একটু সমাজ ভাবনা
জাতিকে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে শান্তির সৈকতে নিয়ে যাবে। ক্যাম্পাস নিরাপত্তা যাতে সম্ভব হয় , সড়কে নিরাপত্তা ও শৃংখলা যাতে থাকে
সেজন্য আপনাদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে।
আপনারা আপনার ক্যাম্পাসে সেচ্ছাসেবক হিসেবে যদি কাজ করেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলার দৃষ্টান্ত
সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে এবং সেটা নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করবে। জনগণ এখন একটু
শান্তি চায়।আপনার কি শান্তির পায়রা মুক্ত করে সম্মেলন শেষে শান্তির দূতের
ভূমিকায় একটু সময় দেবেন কি?
সারা দেশেই পথে নিরাপত্তা নেই পরিবহন
শ্রমিক , মালিক ও
তাদের সহযোগীদের কারণে। উন্নয়নের সুফল যাতে মানুষ আরও সুন্দরভাবে ভোগ করতে পারে
সেজন্য সরকারের মনোযোগ আরও বেশি কাম্য। আর যেন সড়ক পথে কিংবা ক্যাম্পাসে নির্মমতার
শিকার না হয় সেজন্য আমাদের জাগরণ প্রয়োজন।
১০ তারিখ যারা সরকার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন তাদের জন্য বলছি - সরকারকে
চাপে না ফেলে দেশের জনগণ যাতে একটু শান্তি পায় সেজন্য দলকে কাজে লাগান। লক্ষ লক্ষ লোক দেখিয়ে পাকিস্তানে বেনজির বা
নওয়াজ শরীফ কিছুই করতে পারেনি। বরং,
নিজ নিজ এলাকায়
কিছু করলে জনগণের কাছে প্রিয় হতে পারবেন।
যেদিন জনসভার সংষ্কৃতি থেকে রাজনীতি মুক্ত হবে, সেদিন কেবল গণতন্ত্রই নয় সব ধরনের
মুক্তি আসবে। জনসভা এখন জনগণকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে। সড়কের নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ছে। এখন জনসমাবেশ নয়
জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সময়।শৃংখলা রক্ষায় আমাদের পুলিশ কর্তৃপক্ষ এমনিতেই হিমশিম
খাচ্ছে - সেই সময়ে জনসভার রাজনীতি তাদের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং তাতে আমাদের
সকলের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে।
পরিণামে আমরা এক দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছি। প্লিজ - আমাদেরকে দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিতে
জনসভার রাজনীতি থেকে সরে আসুন।জনগণ এবার
তাকেই ভোট দেবে যারা জনগণের শান্তির কথা ভাবে -জনসভা দেখে নয়!
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।