ভালোবাসা আর জীবন এ দুইয়ের মূল্য যেমন দেয়া যায় না,
তেমনি মূল্য দেয়া যায় না পতাকার। ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা ও পতাকা অর্জন করেছি তারও মূল্য কত আমরা কেউই জানিনা। কারণ স্বাধীনতা স্বতঃ মূল্য: অন্য কোনো কিছুর প্রাপ্তির সঙ্গে যুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। সেই স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির অবদান কয়েক শতকের। ১৭৫৭ সালে মীরজাফরের লোভ স্বাধীনতাকে শৃংখলিত করেছিল। সেখান থেকে মুক্ত করতে যে ত্যাগ আমাদের রয়েছে তার মহিমা বর্ণনার মহাকাব্য যুগে যুগে গ্রন্থিত করে গেছেন কবি , সাহিত্যিক , ঐতিহাসিক এবং রাজনীতিবিদরা।
সংগ্রামের সেই গর্ব আমাদের
স্বাধীনতা।
৫১ বছর পর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আজ আমি স্বাধীনতার অর্থ খুঁজছি। সেই অর্থ খোঁজার এটা প্রমান করে কি যে আমাদের কাংখিত স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি ? হয়তো না- আবার হয়তো সত্যি। আজ আমি যা দেখছি আমার সমাজ জীবনে তা থেকেই আমার মনে প্রশ্ন জাগছে। আমাদের রাজনীতিতে বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা আবির্ভুত হয়েছেন অভিভাবকের ভূমিকায়। তাদের সাবেক ৩৩ তম প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান ১৯৪৯ সালে পৃথিবীকে দুইভাগে ভাগ করে আমাদেরকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে ফেলেছিলেন। এবং কিভাবে তারা আমাদের উন্নয়নের ভূমিকায় অবদান রাখবেন তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন White
House এ বসে।
গবেষকদের ধারণা আসলে ভিন্ন। ট্রুম্যান আমাদের উন্নয়ন নয় বরং উপনিবেশিক সমাজ ব্যবস্থার সমাপ্তির পর কিভাবে নতুন ধরণের উপনিবেশ সৃষ্টি করা যায় তার পরিকল্পনা থেকেই উন্নয়নের পার্টনার হওয়ার বাসনা
ব্যক্ত করেছিলেন।
সেই বাসনা থেকে আমাদেরকে দেয়া হয় গণতন্ত্রের হার। আমরা সেই শৃংখলার হারকে এতটাই গুরুত্ব দেই যে, আমরা আমাদের অধিকার,
মর্যাদা, স্বাধীনতাকে ভুলে যাই। আমরা আমাদের নাগরিকদেরকে শাসন করি উপনিবেশিক কায়দায় এবং সেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির জন্য আবার তাদেরই কাছে যাই। তারা গণতন্ত্রের এবং উন্নয়নের যে
ধারণা পোষণ করেন তারই মোহে মুগ্ধ হয়ে ছুটে যাই নতজানু হয়ে। আর এভাবেই আমাদের স্বাধীনতাকে শৃংখলিত করে ফেলি।
সম্প্ৰতিকালে আমাদেরকে নতুন একটি হার উপহার দেয়া হয়েছে - যার নাম টেকসই উন্নয়ন। খুবই যুৎসই সেই হার আমাদেরকে নতুন করে শাসন ও শোষণের জন্য। বিয়ষটিকে ওই ব্যাবসায়ীর স্ত্রীকে নিজের পরকীয়া ঢাকতে নতুন উপহার দেয়ার মতো বিষয়। আমাদের উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে সে কথা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে খুঁজে পাই। পরকীয়া এখন এতটাই মহামারী আকারে ধারণ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরকীয়ার সংজ্ঞা যতই সীমিত ভাবে নির্ধারণ করি না কেন এই নৈতিক স্খলন থেকে আমাদের মুক্তির পথ খোঁজা উচিত। নতুবা এই রোগ স্বাধীনতাকে বিপন্ন ও অর্থহীন করে তুলবে। আমরা যে নারীমুক্তির কথা বলছি সেটাও হুমকিতে পড়বে।
বিদেশী পত্রিকায় আমাদের এক সহকর্মী অধ্যাপক বশির আহমেদের একটি সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বলছেন কেন সারা বিশ্বে রক্ষণশীলদের হাতে বিজয় পতাকা উড়ছে। সেটি আমাদের উদারতাবাদের পরাজয়। আমাদের সমাজে রক্ষণশীলরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে যেমনটি ভারতেও ঘটেছে। যেভাবে আফগানিস্তানে,
পাকিস্তানে উদারপন্থিদেরকে পরাস্থ করে ক্ষমতায় শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে রক্ষনশীলরা। অসাম্প্রদায়িকতা , ধর্মনিরপেক্ষতা যে স্বাধীনতাকামী বাঙালির রাষ্ট্র দর্শন ছিল,
সেই সাম্প্রদায়িকতা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। আর তাই আমাদের কেউ কেউ বলছেন “আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।“
আমাদের সর্বনাশ হয়ে যায়নি - আমাদের এখনোও সুযোগ আছে। আর সেজন্য অর্থনীতিবিদরা উন্নয়নের পরিকল্পনার সঙ্গে cut your
coat according to your cloth নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন। উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে শ্রীলংকা যেভাবে কাঁদছে সেভাবে যেন আমাদের কাঁদতে না হয় , এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যাতে নতুন কোনো ফাঁদে শৃংখলিত না হয় তা সরকার ও বিরোধীদলকে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিবেচনা করতে হবে।
সরকারকে মানতে হবে বিরোধীদলের রাজনৈতিক স্পেস সংকুচিত হয়ে পড়েছে , এবং নিজেদের মধ্যে অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে - সুতরাং , বিদেশিরা এখানে আমাদেরকে শিকারে পরিনিত করতে চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিরোধীদলকেও বুঝতে হবে তারা কতটুকু বিদেশ নির্ভর রাজনীতি করবেন। তাদেরকে ক্ষমতায় বসানোর লোভ দেখিয়ে বিদেশিরা যাতে ফায়দা লুটে নিতে না
পারে সেই সতর্কতা অবলম্বন জনদাবি।
আমাদের সকলেরই উচিত রাজনীতিকে মানব সেবায় পরিনিত করা। আর সে জন্য মানবাধিকারকে সর্বোচ সামাজিক আদর্শ নির্বাচন করা। আমাদের সংবিধানকে একটি দলিল হিসেবে না দেখে এটিকে বাস্তব স্বাধীনতা বাস্তবায়নের কাঠামো বিবেচনা করা। যদি আমরা সেটা করতে পারি তবে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সরকারকে বুঝতে হবে কেন পিটার হাস কূটনীতিবিদ হয়ে একটি দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে মনোযোগী হচ্ছে। সমাজে যিনি ক্ষমতায় আছেন তিনি তার শপথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন কি ? এসব প্রশ্ন নিজেকে করতে হবে যদি আমরা উন্নত সমাজ ব্যবস্থার দিকে যেতে চাই কিংবা আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে চাই।
বিজয়ের মাসে,
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাজনৈতিক অঙ্গনে যা ঘটছে তাতে আমরা শংকিত। সরকারকে মানতে হবে কিছু বিচ্যুতি ঘটেছে। এবং সেখান থেকে আবার ফিরে আসতে হবে ঠিক সেই জায়গায় যা মহিমান্বিত করেছিল বাঙালিকে। "মানুষের স্বাধীনতা" বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক আদর্শ নির্বাচনে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছি। আমাদের সতর্ক হওয়ার সময় এখন। বিজয় দিবসে কেবল আনন্দই নয় বরং যেন কঠোর শপথ নেই “সারাদিন যেন আমি ভালো হয়ে চলি।“ বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর