সবকিছু
দেখে শুনে মনে হচ্ছে
সমস্যাটা মনে হয় আমার
একান্তই নিজস্ব। অন্য কাউকে এই
সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে দেখছি না।
বিষয়টা
একটু খুলে বলা যাক।
একবারে হঠাৎ করে দেশে
একটা নির্বাচন-নির্বাচন ভাব চলে এসেছে।
আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের জন্য এটা খুবই
ভালো খবর। বুদ্ধিজীবীদের লেখালেখি
করার জন্য এবং টেলিভিশনে
টকশো করার জন্য সবসময়
কিছু বিষয়ের দরকার হয়। দেশে নির্বাচন-নির্বাচন ভাব চলে আসার
কারণে বুদ্ধিজীবীরা লেখালেখি করার জন্য নানারকম
বিষয়ের একটা বিশাল বড়
সাপ্লাই খুঁজে পেয়েছেন। সরকার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগও
এই উপলক্ষে তাদের লেখার নূতন নূতন বিষয়
তৈরি করে দিচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা
এখন সেই বিষয়গুলো নিয়ে
লিখছেন এবং আমি সেগুলো
খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। আমি মনে মনে
সবসময় আশা করে থাকি
তারা লেখাগুলো এইভাবে শেষ করবেন, “আর
যাই হোক আমরা আশা
করি এই নির্বাচনে কোনো
রাজাকার কিংবা রাজাকারের দল অংশ নিতে
পারবে না। যে দলই
নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা
হবে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল।” কিন্তু এই
কথাগুলো কেউ লিখছেন না।
তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন এবং
আমাদের বোঝান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
হচ্ছে ‘সাম্য’ কিন্তু কেউ এই কথাটা
বলেন না যে রাজাকার,
কিংবা রাজাকারের দলকে নিয়ে সেই
‘সাম্য’ দেশে আনা যাবে
না। রাজাকারদের নিয়ে সাম্যের ভেতরে
আর যাই থাকুক সেখানে
মুক্তিযুদ্ধের ছিটেফোঁটা নেই। কাজেই দেশকে
নিয়ে আমরা যা ইচ্ছে
স্বপ্ন দেখতে পারি, কিন্তু সবার ঝেড়ে কাশতে
হবে, অর্থাৎ আমতা আমতা না
করে স্পষ্ট গলায় বলতে হবে,
এই দেশে রাজাকারদের কোনো
জায়গা নেই। (আমরা যারা ৭১-এর ভেতর দিয়ে
এসেছি তারা জানি মুক্তিযুদ্ধের
বিরোধী দলগুলোর মাঝে সবচেয়ে দরিদ্র
অশিক্ষিত অনগ্রসর দলটি ছিল রাজাকার।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী যেকোনো দল কিংবা মানুষ
সবাইকেই ঢালাওভাবে রাজাকার শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়।)
আমি
এক-দুই জায়গায় যেখানে
এই বুদ্ধিজীবীরা আছেন সেখানে রাজাকার
কিংবা রাজাকারদের দল ছাড়া নির্বাচন
করার কথাটি বলে দেখেছি। তারা
একটু অবাক হয়ে আমার
দিকে তাকিয়েছেন, কেউ কেউ আমতা
আমতা করে বলেছেন, “জামায়াতে
ইসলামী তো নিবন্ধন পায়
নাই।” কেউ কেউ বলেছেন,
“এটা সরকারের ব্যাপার, সরকার নিজের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীকে বেআইনি ঘোষণা করছে না।”অনেকেই
আমার কথা না শোনার
ভান করে এদিক সেদিক
তাকিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়েই পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা বুদ্ধিজীবীরা
আমার বক্তব্যটুকুই ধরতে পারেননি। তারা
সবাই জানেন শুধু ডিসেম্বর মাসে
মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হবে,
অন্য মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা
বলা হচ্ছে নেহাত ছেলেমানুষি ব্যাপার। বিশাল জনপ্রিয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের
সময় একজন তরুণ ছাত্র
বুকের মাঝে ‘আমি রাজাকার’ লিখে
দাঁড়িয়েছিল, সেই ছবি পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সবাই
সেটাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে সহজভাবে নিয়েছে কারও সেটা নিয়ে
সমস্যা হতে দেখিনি। গত
নির্বাচনে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের লেখক সর্বজন শ্রদ্ধেয়
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন করেছে। ওই নির্বাচনে জামায়াতে
ইসলামীর প্রার্থী ধানের শিষ মার্কায় নির্বাচন
করেছে, ড. কামাল হোসেন
তা হতে দিয়েছেন। সেটাও
পত্র-পত্রিকা এবং তাদের কলাম
লেখকেরা সবাই যথেষ্ট উদারভাবে
নিয়েছেন। এই বিষয়গুলো চিন্তা
করলে আমার রক্ত গরম
হয় কিন্তু দেখি অন্য কারও
সমস্যা হয় না। কাজেই
আমার ধারণা হয়েছে সমস্যাটা মনে হয় একান্তভাবেই
আমার নিজস্ব! আমার মতো করে
ভাবেন এরকম আরও মানুষ
নিশ্চয়ই আছেন, তারা দীর্ঘশ্বাস বুকে
চেপে অপেক্ষা করেন কিন্তু আমার
কাছে যেহেতু কাগজ-কলম আছে
আমাকে চুপ করে অপেক্ষা
করতে হবে কে বলেছে?
প্রথমেই
বলে দিই আমি শুধু
ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস
করি না। আমি শুধু
সারা বছর না প্রতি
নিঃশ্বাসে মুক্তিযুদ্ধ এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস
করি। সেই তরুণ বয়সে
আমি মাত্র লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন
একজন বয়স্ক লেখক খুবই বিরক্ত
হয়ে আমাকে বলেছিলেন, “তোমার সমস্যাটা কী? যাই লিখো
সেখানেই মুক্তিযুদ্ধ ঢুকিয়ে দাও, কারণটা কী?”
বলাই বাহুল্য আমি তাকে কোনো
সদুত্তর দিতে পারিনি। যেহেতু
আমার পৃথিবীর বিশাল ক্যানভাস ব্যবহার করে মহৎ সাহিত্য
সৃষ্টি করে সাহিত্য জগতে
অমর হয়ে থাকার বিন্দুমাত্র
ইচ্ছা নাই তাই কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিছু লিখতে
হলেই আমি কোনো একজন
মুক্তিযোদ্ধার গল্প টেনে আনি—
সেই গল্পে রাজাকারদের জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে
ছেড়ে দিই! সেজন্য কোনো
লাভ হয়নি সেটাও সত্যি না, অনেক কিশোর-কিশোরী আমাকে বলেছে তারা আমার বই
পড়ে সেই অর্ধ শতাব্দী
আগে ঘটে যাওয়া বিস্মৃত
মুক্তিযুদ্ধের জন্য এক ধরনের
ভালোবাসা অনুভব করেছে, এর চাইতে বেশি
তো আমি কিছু চাইনি।
আমি
১৯৯৪ সালে যখন দেশে
ফিরে এসেছি তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র সংসদের দায়িত্বে ছিল ছাত্রদল। তারা
সাহিত্য সপ্তাহের আয়োজন করেছে, সেখানে উপস্থিত বক্তৃতার বেশিরভাগের বিষয়বস্তু ছিল রাজাকারদের জন্য
ঘৃণাসূচক। বক্তৃতা চলাকালীন সময়ে ওই বক্তব্য সহ্য
করতে না পেরে ইসলামী
ছাত্র শিবিরের একজন ছাত্রদলের এক
নেতার পিঠে চাকু মেরে
দিল। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের
নতুন যোগ দিয়েছি। দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন কিছুই জানি না। তারপরও
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ওই ঘটনার তদন্ত
করতে দিল। আমি তদন্ত
শুরু করা মাত্রই শহর
থেকে বিচিত্র চেহারার লোকজন এসে সেই ছাত্রটিকে
ছেড়ে দেয়ার জন্য সুপারিশ করতে
লাগল—এরকম যে করা
যায় আমি সেটাও জানতাম
না। যাই হোক ঘটনা
তদন্ত করে আমি শিবিরের
ছাত্রটিকে দোষী সাব্যস্ত করে
রিপোর্ট দিয়েছি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
বহিষ্কার করা হলো এবং
দুইদিন পর খবর পেলাম
সে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেছে। কোনোরকম
দুর্ভাবনা ছাড়া শিবির যেন
শান্তিমতো সন্ত্রাস করতে পারে সেজন্য
জামায়াতে ইসলামী যে এরকম চমৎকার
ব্যবস্থা করে রেখেছে সেটাও
আমি তখন প্রথম জানতে
পেরেছি।
যাই
হোক তখন দেশে একটি
ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল। বিএনপির
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একটা গবেষণা করে
সিদ্ধান্তে পৌছালেন যে বিএনপি এবং
জামায়াত যদি সম্মিলিতভাবে নির্বাচন
করে তাহলে তারা খুব সহজে
নির্বাচনে জিতে যাবে। আমাদের
দেশের 'নিরপেক্ষ সুশীল’ পত্রিকা পুরো বাংলাদেশের ম্যাপ
একে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা দেখিয়ে এবং কোন দলের
কত ভোট আছে তা
বিশ্লেষণ করে একটি সংবাদ
পরিবেশন করল। আমি সবিস্ময়ে
আবিষ্কার করলাম একদিন ঘোষণা দিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত একত্র
হয়ে গেল।
সবচেয়ে
মজার ঘটনাটি আমার তখনও দেখা
বাকি ছিল। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস দিয়ে হাঁটছি তখন দেখি একসময়
যাদের ভেতর সাপে-নেউলে
সম্পর্ক ছিল সেই ছাত্রদল
এবং ছাত্র শিবিরের ছাত্রেরা একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটামুটি কেন্দ্রীয় এলাকায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে। আমাকে দেখেই তারা আমার বিরুদ্ধে
স্লোগান দিতে শুরু করেছে
এবং আমি সবিস্ময়ে দেখলাম
রাজাকারদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছাত্রদলের যে
নেতাটি শিবিরের হাতে চাকু খেয়েছিল
এবং আমি যার জন্য
তদন্ত করেছিলাম আমার বিরুদ্ধে তার
গলা সবার ওপরে। আমাদের
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এত গৌরবময় যে
শুধু জামায়াতের সাথে একত্রিত হয়েছে
বলে রাতারাতি সেই ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান
করা খুব সহজ নয়!
সবাই পারেনি, একজন দুজন ছাত্র
যারা মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেছিল তারা
খুব মন খারাপ করে
আমার কাছে শান্তনার জন্য
আসত— আমি সান্ত্বনা দিতাম।
এখন তারা কে কেমন
আছে কে জানে?
আমি
জানি যারা বিএনপি করেন
জামায়াতের সাথে তাদের এই
আত্মিক বন্ধন নিয়ে সবসময়েই কিছু একটা ব্যাখ্যা
দেওয়ার চেষ্টা করেন। এটি শুধুমাত্র নির্বাচনী
জোট— আদর্শিকভাবে তারা আসলে মুক্তিযুদ্ধকে
ধারণ করেন এরকম কথাবার্তা
শোনা যায় কিন্তু আমাকে
এই ছেলেমানুষি কথাবার্তা বিশ্বাস করতে হবে কে
বলেছে? আমি এখনো শিউরে
উঠে যখন চিন্তা করি
এই দেশে বদর বাহিনীর
কমান্ডারেরা ক্ষমতায় চলে এসেছিল! বিষয়টি
যে নৈতিকভাবে ঠিক আছে সেটা
বোঝানোর জন্য ধানাই পানাই
জাতীয় যুক্তি দেবেন কিন্তু আমার সেগুলো শোনার
ধৈর্য নেই। আমি পরিষ্কার
জানি পাকিস্তানি মিলিটারি ১৯৭১ সালে এই
দেশে যে গণহত্যা করেছিল,
মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল সেই অবিশ্বাস্য নৃশংসতায়
জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটি
তাদের সাথে ছিল এই
দেশের নাম যদি বাংলাদেশ
হয়ে থাকে এবং দেশটি
যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে
পেয়ে থাকি তাহলে এই
দেশের মাটিতে জামায়াতে ইসলামী থাকার অধিকার নেই।
আমি
যখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তখন একদিন আমেরিকান
অ্যাম্বেসির একজন কর্মকর্তা আমার
সাথে দেখা করে তাদের
একটা অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলেন। সিলেট শহরে সুধীসমাজ এবং
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সেখানে তারা
কথাবার্তা বলবেন। অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হয় তাই আমি
ঢেঁকি গেলার জন্য সেই অনুষ্ঠানে
যাব বলে কথা দিয়েছি।
নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়
সেখানে হাজির হয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সাথে জামায়াতে
ইসলামীকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকান অ্যাম্বেসির যে মানুষটি আমাকে
আমন্ত্রণ দিয়ে এনেছেন তিনি পাশে ছিলেন,
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“এই অনুষ্ঠানে আপনারা জামায়াতে ইসলামীকে দাওয়াত দিয়েছেন?”
ভদ্রলোক
আমতা আমতা করে বললেন,
“সব রাজনৈতিক দলকেই দাওয়াত দেয়া হয়েছে।”
আমি
ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম, “আপনি
আমাকে চেনেন, আমার সম্পর্কে জানেন,
তারপরও আমাকে এখানে ডেকেছেন?”
ভদ্রলোক
আমতা আমতা করে কিছু
একটা বলার চেষ্টা করলেন,
আমি কোনো সুযোগ না
দিয়ে অত্যন্ত রুঢ় ভাষায় তাকে
কিছু একটা বলে অনুষ্ঠান
থেকে বের হয়ে যেতে
শুরু করলাম। ঠিক তখন দেখতে
পেলাম সিলেট শহরের জামায়াতের নেতা হাজির হয়েছেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হলের নাম শহীদ
জননী জাহানারা ইমামের নামে দেয়ার জন্য
এই মানুষটি এবং তার দল
আমার বাসায় বোমা মারা থেকে
শুরু করে অনেকভাবে আমার
জীবনের ওপর কম হামলা
করেনি। তাছাড়া বিএনপি জামায়াতের সম্মিলিত সভায় আমাকে মুরতাদ
ঘোষণা দেওয়ার কারণে অনেকেই আমাকে মুরতাদ হিসেবে খুন করে বেহেশতে
যাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জামায়াতের
নেতা আমাকে দেখে আমার সামনে
দাঁড়িয়ে করমর্দন করার জন্য মুখে
হাসি ফুটিয়ে হাত এগিয়ে দিলেন।
আমি আমার হাত সরিয়ে
বের হয়ে এলাম। পিছন
থেকে আমেরিকান অ্যাম্বেসির কর্মকর্তা ছুটে এসে বলল,
“স্যার স্যার ঢাকা থেকে অনেক
বড় বড় মানুষ আসছেন
তাদেরকে আপনার কথা বলা হয়েছে।
আপনি চলে গেলে আমি
এখন তাদেরকে কি বলব?”
আমি
বললাম, “তাদেরকে কি বলবেন সেটা
আপনার ব্যাপার, আমার না।”
আমি
জানি অনেকে আমার এরকম ব্যবহারকে
যথেষ্ট বিচিত্র বলে মনে করবেন,
১০৭১-এ জামায়াতে ইসলামীর
কার্যকলাপের জন্য বর্তমান জামায়াতে
ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের
দায়ী করতে রাজি হবেন
না। ‘অতীত ভুলে গিয়ে
ভবিষ্যতের মুখের দিকে তাকিয়ে সবাইকে
নিয়ে একত্রে বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ এরকম
একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। যারা এই যুক্তি
বিশ্বাস করতে চান তারা
করতে পারেন কিন্তু আমার পক্ষে সেই
যুক্তি মেনে নেওয়া সম্ভব
না। আমার যথেষ্ট বয়স
হয়েছে যতদিন বেঁচে আছি নিজের হাতে
জেনে শুনে কোনো যুদ্ধাপরাধী
কিংবা তাদের সংগঠনের কারও হাত স্পর্শ
করিনি এই অনুভূতিটি নিয়ে
বেঁচে থাকতে চাই।
সিলেটের
সেই অনুষ্ঠানে আমি যার হাত
স্পর্শ করতে রাজি হইনি
সেই মানুষটি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির। জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য তার ছেলেকে
মাসখানেক আগে গ্রেফতার করা
হয়েছে। কয়েকদিন আগে খবর পেয়েছি
একই কারণে ওই মানুষটিকেও গ্রেফতার
করা হয়েছে।
যারা
রাজনীতি করেন তারা সবসময়
বলেন রাজনীতিতে নাকি কোনো শেষ
কথা নেই। আমি সেই
কথাটি মানতে রাজি নই। অবশ্যই
রাজনীতিতে শেষ কথা আছে,
থাকতেই হবে। বাংলাদেশকে এমনি
এমনি কেউ হাতে তুলে
দেয়নি। ডেইলি টেলিগ্রাফের ভাষায়, রক্ত যদি স্বাধীনতার
মূল্য হয়ে থাকে তাহলে
পৃথিবী আর কোনো দেশ
এত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কিনে আনেনি। সেই
বাংলাদেশের রাজনীতির শেষ কথা হচ্ছে,
এই দেশে রাজাকাররা রাজনীতি
করতে পারবে না। শুধু শেষ
কথা নয়, প্রথম কথাটিও
তাই।
দেশে
প্রায় হঠাৎ করে নির্বাচন-নির্বাচন আবহাওয়া চলে আসার পর
জামায়াতে ইসলামী একটা খাঁটি রাজনৈতিক
দলের মতো তাদের নিজেদের
দাবি-দাওয়া উচ্চারণ করতে শুরু করেছে
এবং বেশ কিছু রাজনৈতিক
দল খুবই নিরীহ ভঙ্গিতে
বলছে, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা যদি অংশ
নিতে চায় তারা নিতেই
পারে, এটি তাদের ব্যাপার।”
এর পরেই তাদের বলা
উচিত, “তবে এই দলটি
হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল। নৈতিকভাবে এই
দেশে রাজনীতি দূরে থাকুক এই
দেশে তাদের কোনো ধরনের অস্তিত্ব
থাকারই অধিকার নেই।” তবে কোনো রাজনৈতিক
দল একথা বলছে না,
মজার কথা হচ্ছে প্রগতিশীল
বামপন্থী দলগুলোও না। যেহেতু অতীতে
আল বদরের কমান্ডাররা এই দেশে মন্ত্রী
হয়ে দেশ শাসন পর্যন্ত
করেছে কাজেই এই দেশের রাজনৈতিক
দলের কাছে আমি আসলে
বড় ধরনের কিছু আশা করি
না। সত্যি কথা বলতে কি
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগে যখন জামায়াতে
ইসলামের নেতা-কর্মীরা আনুষ্ঠানিকভাবে
যোগ দিয়েছে তখন থেকে এই
দেশের রাজনীতি নিয়ে আমার চাওয়া পাওয়া
অনেক কমে গেছে। তবে
দেশের মানুষকে কথা দিয়ে সে
কথা রেখে এদেশের মাটিতে
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য আমি
শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। সত্যি
কথা বলতে কি এই
দেশ নিয়ে আমার যে
একটি মাত্র সখ অপূর্ণ ছিল,
সেটি পূর্ণ হয়েছে। এখন আমার আর
কিছু চাওয়ার নেই।
রাজনৈতিক
দলের কাছে চাওয়ার কিছু
না থাকতে পারে, কিন্তু দেশের বুদ্ধিজীবীদের কাছে অবশ্যই আমার
কিছু চাওয়ার আছে। শুধু বুদ্ধিজীবী
নয়, পত্রপত্রিকার কাছেও আমার চাওয়ার আছে।
প্রধান চাওয়াটি হচ্ছে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটি নিয়ে। দোহাই আপনাদের, যুদ্ধাপরাধী কিংবা তাদের দলবল এবং অন্য
সবাইকে নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করবেন না। যখন এই
দেশে যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনের ব্যাপারটি আসবে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ
নিন। আমি বুদ্ধিজীবীদের বলব
সরকারকে কিংবা তাদের দলকে যেভাবে খুশি
সমালোচনা করুন, দেশের উন্নতি নিয়ে যেভাবে খুশি
তামাশা করতে চান তামাশা
করুন, কারও কাছে বেশি
কিছু চাইব না, সবাইকে
অনুরোধ করব তাদের লেখা
শেষে শুধু একবার পরিষ্কার
করে লিখবেন, “এই দেশে সবাই
রাজনীতি করবে, শুধু রাজাকারদের রাজনীতি
করার অধিকার নেই।”
আমার
এখন একটিমাত্র শখ, নির্বাচনের রাতে
আমি নাকে তেল দিয়ে
ঘুমাব। ঘুম থেকে উঠে
দেখব একটি দল নির্বাচনে
জিতে এসেছে। যেটাই জিতুক সেটাকে নিয়ে আমার কোনো ভাবনা
থাকবে না কারণ এই
দেশে সব রাজনৈতিক দলই
হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল।
এটি কি খুব বেশি কিছু চাওয়া হয়ে গেল? নাকি এটি আমার একটি সমস্যা?
বিএনপি আওয়ামী লীগ পত্রিকা শেখ হাসিনা রাজাকার ছাত্রলীগ ছাত্রদল গণতন্ত্র জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলাম আমেরিকান অ্যাম্বেসি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।