ইনসাইড থট

পৌনে এক শতাব্দীতে আওয়ামী লীগের অর্জন অবিস্মরণীয়

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২


Thumbnail

প্রায় পৌনে এক শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে যে আওয়ামী লীগ, যার নেতৃত্বে অর্জিত বাঙালির ভাষা-স্বাধীনতা, সংবিধান ও দেশ-জাতিগঠনে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন আর তাঁর কন্যার রূপকল্প। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ট্রাজেডির একবুক জ্বালা নিয়ে  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সোনার বাংলা বিনির্মণে সব অর্জন অবিস্মরণীয় ও অকল্পনীয়। বাঙালির জীবনে সে তো রূপকথার গল্পের ন্যায়। পদ্মাবতী খরস্রোতার নদীর বুকে পদ্মাসেতু উৎসব ধ্বনি প্রতিধ্বনির আকাশে-বাতাসে যে অনুরণন, তা তো  আওয়ামী লীগের মহা অর্জন।

সেই আওয়ামী লীগের  ভূমিষ্ঠকালীন বেদনা, মাতৃত্বকালীন প্রসব বেদনার ন্যায় অসহনীয় কষ্টের। আগেই দলের রূপকার করাচী হতে স্টিমারযোগে সোহরাওয়ার্দী পূর্ববাংলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে গতিরোধ করা হয় নারায়ণগঞ্জে। তাকে মানহানিকর অবস্থায় ফিরে যেতে হয় করাচীতে। পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুসলিম লীগের নাম "জাতীয়তাবাদী লীগ" রাখার প্রস্তাব করে  সদস্য পদ থেকেই বহিষ্কৃত হন।

পাকিস্তান প্রস্তাবক সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তিনি। সেই তাঁকেই "ভারতের লেলিয়ে দেওয়া কুকুর" বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান।

মুসলিম লীগের সভাপতি খলীকুজ্জমান চৌধুরী সোহরাওয়ার্দীর অনুসারীদের লীগে প্রবেশ বন্ধ করে দেন।   

পাকিস্তান অভ্যুদয়ের পরের বছর ভাষাসংগ্রাম শুরু হলে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে। উপনির্বাচনে বিজয়ী শামসুল হকের কেড়ে নেওয়া হয় পরিষদ সদস্য পদ। তার আগে দক্ষিণ টাঙ্গাইলের ওই একই আসনে মওলানা ভাসানী বিজয়ী হলেও তাঁর সদস্য পদ কেড়ে নিয়ে নির্বাচনেই অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এরকম এক বৈরী পরিস্থিতিতে দল গঠনে ডাকা হয় "মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন"। ঢাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় খান সাহেব ওসমান আলীর অনুপ্রেরণায় নারায়ণগঞ্জের রহমতগঞ্জ ইনস্টিটিউটে সেখানেও বাধা। তারপর পাইকপাড়া। সেখানেও বিপত্তি। সরকারি পেটোয়া বাহিনীর রক্তচক্ষুর আড়ালে ঢাকা মিউনিসিপাল করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী বশীর হুমায়ুন বললেন, "সম্মেলন করুন আমার  রোজগার্ডেন-এ। সরকারি চোখ ফাঁকি দিয়ে সম্মেলনের দু'দিন আগেই রাতের আঁধারে শওকত আলী গায়ে কম্বল জড়িয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে ভাসানীকে পৌঁছে দেন রোজগার্ডেনে।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুনের ঢাকার স্বামীবাগের বিখ্যাত রোজ গার্ডেন। প্রায় তিন শত কর্মীর ওই সম্মেলনে প্রথমে পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত পরিবেশন করেন মওলানা রাগীব আহসান।

শামসুল হক "মূল দাবি" নামে একটি  প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বলেন, "ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ কেবল মুসলমানের নয়, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবের। ......  মানবতার চূড়ান্ত মুক্তিসংগ্রাম যাতে বিলম্বিত না হয়, সেজন্য জনতাকে তাহাদের সমস্ত ব্যক্তিগত এবং দলগত বিভেদ বিসর্জন দিয়া এক কাতারে সমবেত হইতেই মুসলিম লীগ কর্মী-সম্মেলন আহবান জানাইতেছে। "পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামে দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে স্বাগত জানায় কর্মীরা। সম্মেলন চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের এককালীন সভাপতি অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নবগঠিত দলকে স্বাগত জানিয়ে কয়েক মিনিট বক্তৃতা করে চলে যান।

তখন চলছিল পাকিস্তানে চরমতম রাজনৈতিক সংকট। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রথমে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ববাংলাকে বেছে নেয়া হয় দল গঠনের জন্য। পাকিস্তান প্রস্তাবক  স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দলগঠনের মূল ভরসা। বাংলার প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় সর্বস্ব হারিয়ে করাচীতে আসেন। তাঁর পড়লো পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর আড়চোখ। অথচ সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমের  বঙ্গীয় মুসলিম লীগ ভারতের প্রদেশগুলোর মধ্যে বাংলায় কেবল নিরঙ্কুশ জয় পায়। সোহরাওয়ার্দীকে পূর্ববাংলায় নিষিদ্ধ করলেন যে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন সেই তিনি গণপরিষদের সদস্য হন সোহরাওয়ার্দীরই ছেড়ে দেয়া কলকাতার আসনের উপ-নির্বাচনে। এরপর ১৯৪৯ সালের ৯ জুন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পূর্ববাংলা আসেন। তিনি পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অস্থায়ী আহ্বায়ক দবিরুল ইসলামের হেবিয়াস কপার্স মামলা পরিচালনার কথা বলে। তিনি একান্ত অনুগামী শওকত আলীর পরামর্শে ক্যাপ্টেন শাহজাহানের পুরানো ঢাকায় "নূরজাহান বিল্ডিং" এসে ওঠেন। পুরান ঢাকার ১৫০ মোগলটুলীর মুসলিম লীগের নবীন কর্মীরা দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানান নেতাকে। সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে ইতিপূর্বে টাঙ্গাইলে ফেরা আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে ঢাকায় ঘাটি বাঁধতে বলেন। শাহজাহানের  বাসায় সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানীর মধ্যে দলগঠন নিয়ে শলাপরামর্শ হয়। মওলানা ভাসানী আসামের ধুবড়ী জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকায় আসেন এবং আলী আমজাদ খানের বাসায় ওঠেন। যাহোক বৈঠকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়ার শামসুদ্দীন আহমেদ, ঢাকার শওকত আলী, আলী আমজাদ খান, খন্দকার আব্দুল হামিদ ও ইয়ার মোহাম্মদ খানও ছিলেন। বৈঠকে প্রস্তুতি কমিটি গঠন নিয়ে শুরুতেই বিরোধ হয়। আলী আমজাদ খানকে আহ্বায়ক ও ইয়ার মোহাম্মদ খানকে সম্পাদক করা হলে শওকত আলী ও খন্দকার আব্দুল হামিদ বিরোধিতা করেন। পরে মওলানা ভাসানীকে আহ্বায়ক ও ইয়ার মোহাম্মদ খানকে সম্পাদক করে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। খান সাহেব ওসমান আলীর আশ্বাসের বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কারণে সম্মেলনে যোগ দিতে না পারলেও তাঁরই  দিকনির্দেশনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯৫০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। নিজে সভাপতির আসন অলংকৃত করে অবাঙালি মাহমুদুল হক ওসমানীকে সাধারণ সম্পাদক করেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি করা হয় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে। শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে কারাবন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। পাঁচজন সহ সভাপতি আতাউর রহমান খান, সাখাওয়াত হোসেন,অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ খান, আলী আহমেদ খান ও আব্দুস সালাম খান। যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও আরেকজন ছিলেন  খন্দকার মোশতাক আহমেদ। সহ যুগ্ম সম্পাদক করা হয় এ কে রফিকুল হোসেনকে। পরের দিন আরমানীটোলায় জনসভা করা হলো। কিন্তু সরকারের ঈশারায় সেই ২৪ জুনের জনসভায় বাদশা বাহিনীর দল হামলা চালালো।  ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর দ্বিতীয় জনসভাও আরমানীটোলায়। ওদিন ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান। খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে আরমানীটোলা থেকে  আওয়ামী মুসলিম লীগ বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে গর্ভনর হাউজ অভিমুখে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গ্রেফতার হন ভাসানী, শামসুল হকসহ অনেক নেতা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শেখ মুজিব করাচীতে নেতা সোহরাওয়ার্দীর কাছে চলে গেলেও এসেই গ্রেফতার হন।

১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে ঢাকার ৯০ নবাবপুর একটা রুমে দুইটা টুল একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার নিয়ে অফিস খুলে বসেন। ওখানে দলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। ভবঘুরে মোহাম্মদউল্লাহ (পরে রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোশতাকের উপরাষ্ট্রপতি ) কাজ চাইলে শেখ মুজিব তাকে দপ্তর সম্পাদক করেন।

ছাত্রলীগই কার্যত আওয়ামী লীগের মাতৃসংগঠন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে কোণঠাসা করে রাখার কারণে পুঞ্জীভূত হওয়া ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই দল।

পাকিস্তানি শাসকবর্গ এবং মুসলিম লীগ নতুন দলটির আবির্ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীকে ‘ভারতীয় চর’ বলে প্রচার চালিয়ে বাঙালিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আওয়ামী মুসলিম লীগের ৪০ সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি দলকে দ্রুত একটি শক্তিমান সংগঠনে পরিণত করতে থাকে।

নতুন দলটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার (যার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নুরুল আমিন ও সে সময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন) সন্ত্রাস, গোলযোগ সৃষ্টি এবং দমন-নিপীড়ন চালাতে থাকে। তারা আইনের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে নতুন দলের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। তবুও দলটি বিকশিত হতেই থাকে। প্রতিরোধের মুখে পড়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগ্রামী দল হিসেবে আরও দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। চলতে থাকে তাদের গণমুখী আন্দোলন-সংগ্রাম।

আগেই বলেছি মওলানা ভাসানী ও শামসুল হককে ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর এবং শেখ মুজিবকে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সর্বপর্যায়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে। শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন দাবিতে কারাগারের ভেতর অনশন শুরু করেন। এতে আন্দোলন হয়ে ওঠে আরও বেগবান। একই বছর পুনরায় ভাসানী ও শামসুল হক গ্রেফতার হন। কারাগারে শামসুল হকের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

"প্রথম কাউন্সিল" 
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের ঘোষণায় আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকারসহ পূর্ব বাংলার জন্য লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান, বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ, কৃষকদের মধ্যে কৃষি জমির বণ্টন, তে-ভাগা নীতির বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সমবায় ও যৌথ কৃষি ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং সব দেশি ও বিদেশি মৌলিক শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্তকরণের দাবি জানানো হয়। পাকিস্তানকে সাম্রাজ্যবাদ ও বিদেশি প্রভাবমুক্ত একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার অঙ্গীকারও ছিল এ ঘোষণায়। ১৯৫৩ সালের ১৪-১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিলে পূর্ব-বাংলার আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অন্য দলগুলো নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী মুসলিম লীগ শেরেবাংলা ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টির সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। পরে এই ফ্রন্টে আরও যুক্ত হয় গণতন্ত্রী দল, কমিউনিস্ট পার্টি, নেজামে ইসলাম ও খেলাফতে রব্বানী পার্টি। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ঘোষণায় পূর্ববাংলায় পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি আদায়ের কথা বলা হয়। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ২৩৭ আসনের মধ্যে ২২৭টি আসনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়। এর মধ্যে ১৪৩টি আসন পায় আওয়ামী মুসলিম লীগ। কৃষক-শ্রমিক পার্টি লাভ করে ৪৮টি আসন। মুসলিম লীগ মাত্র ১০টি আসন পায়।

একই বছরে ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানে গঠিত হয় ফজলুল হক মন্ত্রীসভা। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রথমে এতে যোগ না দিলেও পরে আবুল মনসুর আহমেদ, আতাউর রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমানকে মন্ত্রী করা হয়। যুক্তফ্রন্ট তথা আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্য এই নির্বাচনী বিজয় যুগান্তকারী ঘটনা হলেও পরবর্তীতে ফ্রন্ট ও দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

কেন্দ্রীয় সরকার এই সুযোগে ৯২-ক ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে রাজনৈতিক তৎপরতাও নিষিদ্ধ করা হয়। প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করে জেলে নিক্ষেপ করা হয়।

"দ্বিতীয় কাউন্সিল" 
মওলানা ভাসানী ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন পল্টন ময়দানের সমাবেশ এবং ২৩ জুন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পূর্ব বাংলায় পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ আগের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। দলের হৃতমর্যাদা পুনরুদ্ধার  শক্তিশালী সাংগঠনিক বিস্তৃতির জন্য ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর (১৯৫৫) ঢাকার রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি, শেখ মুজিবকে সাধারণ সম্পাদক ও অলি আহাদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নতুন ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়।

এ অধিবেশনেই দলকে অসাম্প্রদায়িক মর্যাদা দেওয়ার জন্য ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভা বাতিলের দাবিতে ১৯৫৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রস্তাব তোলে। প্রাদেশিক পরিষদের ২৯৭ সদস্যের মধ্যে ২০০ জন এতে স্বাক্ষর দেন। বাধ্য হয়ে আবু হোসেন সরকার ১৯৫৬ সালের ৩০ আগস্ট পদত্যাগ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ৬ সেপ্টেম্বর। এর মাত্র কয়েকদিন পর ১২ সেপ্টেম্বর চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পতন১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট চৌধুরী মোহাম্মদ আলী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। কেন্দ্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১২ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় আওয়ামী লীগ ও রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার। বৈদেশিক সিয়াটো চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানীর মধ্যে।

প্রসঙ্গত: সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর দ্বন্দ্বের আগে যুক্তফ্রন্টের দ্বন্দ্ব ও কোন্দল পাকিস্তানের রাজনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, পূর্বপাকিস্তান আইন পরিষদের নেতা হবেন কৃষক-শ্রমিক পার্টি নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নেতা হবেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী টাঙ্গাইল দক্ষিণ আসনের নির্বাচনে জমিদার খুররম খানের বিরুদ্ধে  বিজয়ী হয়েও অকৃতকার্য হওয়ার পরই ঘোষণা করেছিলেন তিনি কোনদিন নির্বাচন করবেন না। সে কথা তিনি রেখেছিলেন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৩ টি আসন পেলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪৮ আসন পাওয়া কৃষক শ্রমিক পার্টির শেরেবাংলাকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সরকার গঠনের সুযোগ দেন সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী নেতৃত্ব।

কিন্তু বিস্ময়করভাবে শেরেবাংলা তার দলের পাঁচজনকে নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আওয়ামী লীগ। ১৫ দিনের মাথায় শেরেবাংলা আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, আব্দুস সালাম খান, খয়রাত হোসেন ও শেখ মুজিবুর রহমানকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আর সেই সময় পাকিস্তানী চক্রান্তে আদমজীতে লাগানো হয় দাঙ্গা। বিহারী-বাঙালী দাঙ্গা। বহু প্রাণ ঝরে পড়ে ওই দাঙ্গায়। মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ৯২- ক ধারা জারি করে শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রের অধীনে নেয়া হয়। পাকিস্তানের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে গা দেন বাঙালী নেতারাও। শেরেবাংলা পূর্বপাকিস্তানের গর্ভনর হয়ে কৃষক-শ্রমিক পাটি ও আওয়ামী লীগকে দিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব আইন পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তাতে সরকারের পতন ঘটে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে আওয়ামী লীগ। মুখ্যমন্ত্রী হন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আতাউর রহমান খান। আবুল মনসুর আহমদ, আব্দুস সালাম খান, খয়রাত হোসেন, হাশিমুদ্দিন আহমেদ, কংগ্রেস দলের মনোরঞ্জন ধর, গণতন্ত্রী দলের মাহমুদ আলী মন্ত্রিসভায় স্থান পান। বেশ কয়েকবার মন্ত্রিসভার পতন ঘটে। একবার আওয়ামী লীগ আরেকবার কৃষক-শ্রমিক পার্টি। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের ২৩ জন আইন পরিষদ সদস্য শেরেবাংলার কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগদান করে মন্ত্রিত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাদগ্রহণ করে আবু হোসেন সরকারকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। শেরেবাংলার সরকারে যোগ দিয়ে এর মধ্যে হাশিমুদ্দিন মন্ত্রী হন, খন্দকার মোশতাক আহমেদ চিফ হুইপ  এবং খালেক নেওয়াজ খান হুইপ হন। সর্বশেষ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে যখন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন সারা পাকিস্তানেও আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ক্ষমতায়। ডাঃ খান সাহেবের রিপাবলিকান পার্টি কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তখন ইস্কান্দার মির্জা। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ কর্তৃক খাজা নাজিমুদ্দিনের পতনের পর বাঙালি মোহাম্মদ আলী, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ফিরোজ খান নুন ও আই আই চুন্দ্রিগর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব করেন। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী ১৩ মাসের অধিক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানী বিরোধ এ সময় চরমে পৌঁছে বৈদেশিক নীতি নিয়ে। ভাসানী সিয়াটো চুক্তি মানছিলেন না। দলের নেতৃত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে তাঁর অনুসারীরা ভাসানীকে উস্কে দিচ্ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে অলি আহাদ উঠে আসার জন্য বিশেষভাবে কলকাঠি নাড়ছিলেন।

এক পর্যায়ে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অলি আহাদ প্রশ্ন তুলেন যে, গঠনতন্ত্রে স্পষ্টত বলা রয়েছে যারা মন্ত্রী হবেন তারা কেউ দলীয় পদে থাকবেন না। মূলত, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছিল। ধারনা করা হচ্ছিল যে মন্ত্রিত্ব রেখে শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে দেবেন, কিন্তু সে ধারণার মৃত্যু ঘটে সঙ্গে সঙ্গেই শেখ মুজিব মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেয়ায়। এরপরই শুরু হয় নতুন চক্রান্ত।

প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর এক ইউনিট ফর্মুলা ও সিয়াটো চুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগে চরম বিরোধ দেখা দেয়। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক ওসমানী পদত্যাগ করেন। প্রকৃতঅর্থে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানী বিরোধের প্রথম সূত্রপাত ঘটে '৫৫ সালে যখন দলকে না জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী মোহাম্মদ আলীর আইনমন্ত্রী হিসাবে যোগদান করেন। শুধু তিনিই নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন শেরেবাংলাও। করাচীতে সাংবাদিকরা নবনিযুক্ত আইনমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীকে প্রশ্ন করেন যে, মন্ত্রীত্বগ্রহণ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও মেনিফেস্টো পরিপন্থী কিনা? সোহরাওয়ার্দী গর্জে উঠে বলেন, "আওয়ামী লীগ আবার কি,সোহরাওয়ার্দী গর্জে উঠে বলেন, "আওয়ামী লীগ আবার কি, আমিই আওয়ামী লীগ, আমিই মেনিফেস্টো আমিই গঠনতন্ত্র। " আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও সোহরাওয়ার্দীর মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কোন নেতা টু-টা শব্দটি উচ্চারণ না করলেও দলীয় নেতৃত্বে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। কাউন্সিলে সিয়াটো চুক্তি বিপক্ষে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হলে সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে পড়ে ৫০০ ভোট, অপরদিকে ৩৫ টি ভোট পড়ে চুক্তির বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগ পদত্যাগ করে বসেন। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বরাবরে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রটি শেখ মুজিবুর রহমানকে দিতে বলা হয়। অলি আহাদ সাধারণ সম্পাদককে না দিয়ে সংবাদ অফিসে চলে যান। জহুর হোসেন চৌধুরীর হাতে তুলে দেন পদত্যাগপত্রটি। যা পরের দিন প্রকাশিত হলে আওয়ামী লীগে অলি আহাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। বৈঠকে অলি আহাদকে বহিষ্কার করা হয়।

১৯৫৩ সালে আব্দুর রহমান বহিষ্কার হলে অলি আহাদ প্রচার সম্পাদক হন। '৫৫ সালের কাউন্সিলে কোরবান আলীর স্থলে অলি আহাদ সাংগঠনিক হন। অলির পক্ষে  ১১ জন নেতা পদত্যাগ করেন। আইন পরিষদের এসব নেতা  সদস্য হলেন শ্রম সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, মহিলা সম্পাদিকা সেলিনা বানু, ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি দবিরুল ইসলাম, প্রথম সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান অন্যতম। আওয়ামী লীগ ভাসানীর পদত্যাগ পদ ফিরিয়ে দিয়ে কাউন্সিল ডেকে আবারও সভাপতি করে। ১৬ জুন অসুস্থ ভাসানী হাসপাতাল থেকে এক বিবৃতিতে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। ১৭ জুন অপর এক বিবৃতিতে ২৫ ও ২৬ জুলাই তিনি ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান ‘গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন’ ডাকেন। দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব ১৩ জুলাই বিবৃতিতে এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের যোগদান না করার আহ্বান জানান। ২৫ জুলাই গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। কেন্দ্র ও প্রদেশের সভাপতি হন ভাসানী এবং কেন্দ্রে সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহমুদুল হক ওসমানীকে। প্রদেশে সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদ আলী।

এরপর আইন পরিষদ অধিবেশনে ঘটে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী হত্যা। স্বভাবতই আসে সামরিক শাসন। প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জাকে হটিয়ে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন তিনি। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারে। আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন : সামরিক শাসন প্রত্যাহারের আগে ১৯৬২ সালের ১ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান একটি শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করেন, যার মধ্যে গণতন্ত্রের লেশমাত্রও ছিল না। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এই প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করার জন্য উভয় প্রদেশে ৪০ হাজার করে ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’ নির্বাচনের বিধান ছিল এই শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমান এবং নূরুল আমীনের মতো মুসলিম লীগ নেতাও আইয়ুবের প্রবর্তিত এই শাসনতন্ত্র বাতিল করে নতুন একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন (নয় নেতার বিবৃতি, ২৫ জুন ১৯৬২)।

১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈরুতে গণতন্ত্রের মানুষ পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রহস্যময় মৃত্যু ঘটে। এরপর আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান ও আবুল মনসুর আহমদসহ দলের প্রবীণ নেতারা  বিরোধিতা করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে শেখ মুজিবের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ৬ মার্চ প্রায় এক হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে মাওলানা তর্কবাগীশকে সভাপতি ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

ঐতিহাসিক ছয় দফা : ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় কনভেনশনে শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন। এতে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানানো হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ছয় দফাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ বলে আখ্যায়িত করে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, ‘শেখ মুজিবের এসব দাবি অস্ত্রের ভাষায় মোকাবিলা করতে হবে। ’

শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ ঢাকার হোটেল ইডেনে আহ্বান করেন সামরিক শাসনোত্তর দলের বৃহত্তম কাউন্সিল অধিবেশন। প্রায় পনেরোশ’ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই অধিবেশনেই ‘বাঙালির বাঁচার দাবি’ হিসেবে ছয় দফা কর্মসূচিকে গ্রহণ করা হয়। এ কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। কাউন্সিল অধিবেশনের পর শেখ মুজিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছয় দফার প্রচারণায় নেমে পড়েন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী সাব্যস্ত করার জন্য সামরিক ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। গর্জে ওঠে ছাত্রজনতা। ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় উনসত্তুরের গণ-অভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ুব খানের। কারাগার হতে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন শেখ মুজিব। ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করেন।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান বসেন প্রেসিডেন্টের গদিতে। অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। যে নির্বাচনে ছয় দফার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে আওয়ামী লীগ। ফলাফলের পর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। জাতীয় পরিষদে মাত্র ৮৮টি আসন লাভকারী পিপলস পার্টির জুলফিকার আলি ভুট্টোর ষড়যন্ত্রের মূল হোতা।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে সাংবাদিকদের কাছে শেখ মুজিব পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী বলে অভিহিত করে গেলেও পাকিস্তানে গিয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করেন। "৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান  ৩ মার্চের অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে ফুঁসে উঠে পূর্বপা২ মার্চ ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

৩ মার্চ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করেন। ডাকসু কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে 'জাতির পিতা" হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের প্রাক্কালে বাংলাদেশ স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণা ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বার্তা প্রেরক হিসাবে এম হান্নান এবং ২৭ মার্চ মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা করেন। ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধের।

যে সরকার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থ মন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদকে নিয়ে গঠিত হয়। চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী, হুইপ আব্দুল মান্নান ও ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করেন।

এছাড়াও শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী ( বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স- বিএলএফ) নূরে আলম সিদ্দিকী, আসম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্ব ছিল স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। নয় মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় তা অর্জিত হয় তা বঙ্গবন্ধুর নামে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। "৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে। কিন্তু ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করে দেশে সংসদীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল করেন- '৭২ সালে। বঙ্গবন্ধু সভাপতি হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন জিল্লুর রহমানকে। '৭৪ সালের কাউন্সিল করে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। এইচ এম কামরুজ্জামানকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক করেন।

এরপর বাকশাল প্রতিষ্ঠার কথা আগেই তুলে ধরেছি। রাষ্ট্রপতি সায়েম কর্তৃক ঘোষিত রাজনৈতিক দলবিধি আইনের আওতায় ১৯৭৭ সালের ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়। রাষ্ট্রপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হলেও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছিলেন। আওয়ামী লীগেরআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক সরদার আমজাদ হোসেন প্রমুখ নেতা কারাগারে বন্দী থাকায় সরকারের কাছে রাজনৈতিক দলবিধি আইনের আওতায় দলের অনুমোদনের জন্য আবেদন পত্র যাবে কার নামে? সেই প্রশ্ন দেয়। সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান নিহত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। মহিলা সম্পাদিকা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আইন মন্ত্রণালয় বরাবরে রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন।

কিন্তু দলীয় মেনিফেস্টোতে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকায় তা অগ্রাহ্য করা হয়। ফলে বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিতে হয় নতুন মেনিফেস্টো ছাপাবার। পীড়াদায়ক হলেও সেদিন আওয়ামী লীগকে "বঙ্গবন্ধুর" নাম বাদ দিয়েই মেনিফেস্টো ছাপিয়ে পুনরায় আবেদন করতে হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। মিজানুর রহমান চৌধুরীর বাড়ির ছাদে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্জীবনের বৈঠক করা হয়।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ও মিজানুর রহমান চৌধুরী যৌথভাবে দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। কাউন্সিলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহবায়ক করা হলেও ১৯৭৮ সালে আবার কাউন্সিল করা হয়। এতে সভাপতি হন আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। মিজানুর রহমান চৌধুরী ও অধ্যাপক ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পাল্টা কমিটি গঠিত হয়। ফলে আওয়ামী লীগ (মালেক) ও আওয়ামী লীগ (মিজান) আত্মপ্রকাশ করে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে, তাঁকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ভূমিকাই প্রথম। আওয়ামী যুবলীগের যখন চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু এবং ছাত্রলীগের সভাপতি যখন ওবায়দুল কাদের। গত ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একথা বলেন।

১৯৮১ সালের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে ভাঙন দেখা দিলে তাঁকেসহ বেশকিছু নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। মহিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাক মিলে আবার বাকশাল পুনর্জীবন করেন। আবদুর রাজ্জাক বহিষ্কার হলে  যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯২ সালের কাউন্সিলে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে জিল্লুর রহমানকে নির্বাচিত হন।

১৯৯৭ সালের কাউন্সিলেও শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা ও আবদুল জলিল এবং ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই কাউন্সিলে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।

২০১৩ সালের কাউন্সিলেও এ দুজনই যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। পরের দুটি কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় আগামী ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল নিয়েও তোরজোড় শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয় এবং সেটা ২১ বছর পর।

২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চরম আন্দোলন করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে চরম নির্যাতন নিপীড়ন ভোগ করতে হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেলেও আইভি রহমান, মোশতাক আহমেদ সেন্টুসহ ২৪ জন নিহত হয়। ২৯ বার বিভিন্ন হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেন সরকারের রোষানলে পড়ে দুবছর কারাবন্দী ছিলেন।  তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটের আসন ছাড়াই দলগতভাবেই টু-থার্ট মেজরিটি নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সংসদে সংবিধান সংশোধন বিল পাস করে সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায়েয় ভিত্তিতে ফেরা সম্ভব হয়েছে বাহাত্তরের সংবিধানে। অর্থাৎ  জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র তার মূলমন্ত্র স্বাধীনতায় প্রবর্তন করেছে, যাতে লেপ্টে রয়েছে এক সাগর শহীদের রক্ত ও  মা-বোনেরা সম্ভ্রম। শেখ হাসিনার সুদক্ষ শাসনে পৃথিবীর বুক দেশ বাংলাদেশ এক  উন্নয়নের রোল মডেল। আইনের শাসনও প্রাতিষ্ঠানিকরূপলাভ করেছে। বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের। ফাঁসিতে ঝুলেছে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। শেখ হাসিনার প্রশংসা পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রনায়কের মুখে। পৃথিবী অবাক তাকিয়ে বাংলাদেশের একেকটি অগ্রগতির দিকে। পদ্মাসেতুর দিকে  বিশ্বব্যাংকের অনুকম্পায় নয়,  পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান আমার টাকায়, আমাদের টাকায়। পদ্মার দুপারের চোখ ২৫ জুনের দিকে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী উৎসবের দিকে। পৃথিবীর চোখে বাংলার বুকে পদ্মাসেতু যেনো "অষ্টম আশ্চর্য"। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়, আর সেই স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের জন্য ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্মে নেয় আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা ও  মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তাঁর নির্দেশিত পথে জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক বাংলাভাষা ভিত্তিক একটি বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের।

ইতিহাসের কী অপূর্ব যোগসূত্র, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু এবং আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীন বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা আজ এক ও অভিন্ন সত্তা।

আওয়ামী লীগের এ জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দলটির স্বপ্নদ্রষ্টা গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। প্রায় সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চাইলে ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে তিনি সমুজ্জ্বল, তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবেই সবার মাথার ওপর। তাঁর ভাষণ জাতিসংঘের স্বীকৃতিতেই আজ বিশ্বের ভাষণ, শোষিতের মুক্তিসংগ্রামের ভাষণ। আওয়ামী লীগ শুভ জন্মদিনে অনিঃশেষ অভিনন্দন তোমায়। তুমি বেঁচে আছো বলেই তো বাংলাদেশের মুখে আজ হাসির ফোয়ারা!


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

চরমপন্থীদের রূখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য দরকার


Thumbnail

বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি এবং চরমপন্থী ডান এবং বাম এরা সবাই এক হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে এক হয়েছে কি হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তাদের কাজকর্ম দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা এক হয়েছে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চরম আঘাত আনার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানি আইএসআই থেকে শুরু করে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সবই তারা পাবে। বিদেশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও তাদের টাকা পয়সা দেবে। দেশেরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের দুকূল রক্ষার জন্য রাখার জন্য টাকা পয়সা দেবে। সুতরাং কোন দিক থেকে তাদের কোন অভাব হবে না। তারা এবার আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। আর এই কারণে তারা এখন ভারত বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এই ভারত বিরোধী স্লোগান তোলার পিছনে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা চরমপন্থী বাম কিংবা ডানরাই আছে এমন না, এর সাথে বাইরের শক্তিও জড়িত।

মনে রাখতে হবে, এই শক্তি যদি কিছুটা শক্তিও ধারণ করে সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। সেজন্য ‍মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা আছে তাদেরকে অবিলম্বে একতাবদ্ধ হতে হবে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারী এবং ধর্মান্ধ ও চরমপন্থীদের প্রতিহত করার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে আমি বলবো আওয়ামী লীগকেই এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হবে, যেমনটি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে দিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টিকেও আমি আহ্বান করবো তারাও যেন এই জোটে এক হয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগকে এখানে বদান্যতা দেখাতে হবে। বাম দলগুলোর কার কত ভোট কিংবা জনসমর্থন এটা মূল বিষয় হওয়ার উচিত নয়। এখানে উচিত চরমপন্থীদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে এক হতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই মুহূর্তে এই দায়িত্ব দার্শনিক রাষ্ট্রনায়নক শেখ হাসিনা যদি আমির হোসেন আমুকে দেন তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ আমু ভাই অত্যন্ত স্পষ্ট কথা বলেন। রাজনীতিতে চলার পথে ভুল ভ্রান্তি থাকবে। তার সমস্ত রাজনৈতিক জীবনে একটি মাত্র ভুল হয়েছে। তবে সেটা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। সুতরাং সেটা আর কোন বিষয় হতে পারে না। আমরা মতে, আমু ভাই ছাড়া হেভিওয়েট কোন নেতা এখন আমির ভাইয়ের মতো সক্ষম নেই। ছাত্রজীবন থেকে আমরা আমু ভাইকে দেখেছি তিনি টকশোতে অত্যন্ত পারদর্শী। আর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত শক্তিকে এক করতে হলে এখানে আমাদের টকশো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমু ভাইয়ের নেতৃত্বে রাশেদ খান মেমন, হাসানুল হক ইনু, শেখ সেলিম সাহেব, মনজুরুল আহসান খান এরা সবাই মিলে যদি এক সাথে থাকেন তাহলে আমরা যেকোন ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে পারব।

আমাদের নিজেদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন আমরা অবশ্যই মিটাতে পারব। একবার না হলেও দুবার বসতে হবে, দুবারে না হলে তিনবার বসতে হবে। কিন্তু নিজেরা বসে মিটমাট করতেই হবে। আমি কোন রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্তের কথা বলছি না। যে যে রাজনৈতিক দল থাকবে। কিন্তু সকলের সামনে একই বিপদ। যদি এই চরমপন্থীরা আবার কোন রকম ভাবে আমাদের আঘাত করে তাহলে সেখানে কে আওয়ামী লীগ, কে জাসদ, কে কমিউনিস্ট পার্টি তারা এই সব বুঝবে না। তারা যাকেই সামনে পাবে তাকেই আঘাত করবে, পুরো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর আঘাত হানবে। এবার উপজেলা নির্বাচনগুলোতে সেরকম ঘটনা ঘটলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ সব চরমপন্থীরা এখন একত্র হচ্ছে। সেজন্য উপজেলা নির্বাচনে আমাদের একটা উপযুক্ত পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সকলে একতাবদ্ধ হয়ে তাকে সমর্থন দিতে হবে। আমাদের আর সময় নষ্ট না করে একতাবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো যদি এক হয় তাহলে দেখা যাবে দেশের ১৮ কোটি জনগণ এক হয়ে গেছে। সুতরাং কার কতটা জোর আছে, কার কতটা জনসমর্থন আছে সেটি বিবেচনা না করে ১৪ দল সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে একত্রিত হতে হবে। এটাই এখন মুখ্য বিষয়। তাহলেই আমরা চরমপন্থীদের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবো। আর আমাদের তো একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আছেনই। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের একত্রিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   চরমপন্থী   মুক্তিযুদ্ধ   জামায়াত-বিএনপি   ভারত বিরোধী আন্দোলন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কেন এই বিতর্ক


Thumbnail

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষক বিষয়ে মাঝামাঝে কেউ কেউ অহেতুক বিতর্ক করেন। অথচ ইতিহাসের বাস্তবতা, সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং মীমাংসিত সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতার ঘোষক।

কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম দাবি করেছেন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এদেশ নাকি আজও স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি নাকি কল্পকাহিনী! কত বড় ধৃষ্টতা! চিন্তা করা যায়? তিনি দাবি করেছেন ২৩ শে মার্চ থেকে ইপিআর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। তাহলে ইপিআরের কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিট করা সম্ভব? স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মেজর হাফিজের এই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ইতিহাসের সত্য পাঠ থেকে তার বক্তব্য খন্ডন করছি। 

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিলো সেটি প্রমাণের জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক রচিত "উইটনেস টু সারেন্ডার " গ্রন্থে তিনি লিখেছেন - " ২৫ শে মার্চ রাতে যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ঐ কণ্ঠের বাণী মনে হয় আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সিদ্দিক সালিক এর মন্তব্যের পর আর প্রমাণের কিছু বাকি থাকে? তারপরও আমরা আরো কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করবো মেজর হাফিজের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। 

আসুন দেখা যাক, ইতিহাস কি বলে? বঙ্গবন্ধু আসলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ইপিআরের সিগন্যাল কোরের সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর শওকত আলি ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসে তার নিজস্ব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইপিআর প্রধানের মাস্ট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটরত অবস্থায় তিনি নাবিস্কো বিস্কুটের একটি টিনের কৌটা সহ রাত সোয়া বারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং নির্মমভাবে নিহত হন। মেজর শওকতের সাথে সে রাতে আটক হওয়া ইপিআরের সিগন্যালম্যান আব্দুল মোত্তালিব ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তার সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মেজর শওকতের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিনা পারভীন। যিনি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সুতরাং মেজর হাফিজের দাবি যে, ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং বায়বীয় তা স্পষ্ট। 

এবার আসা যাক বেতারে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রসঙ্গে। ২৫ শে মার্চ বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে থাকলেও বঙ্গবন্ধু গোপনে তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়। তিনটি ট্রান্সমিটারের একটি বঙ্গবন্ধুর  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে অতি গোপনে স্থাপন করা হয়েছিলো। বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল উল্লাহ্'র সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়টি জানা যায়। বঙ্গবন্ধু ডক্টর নূরুল উল্লাহ্কে তার বাসভবনে ডেকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে ডক্টর নূরুল তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটি ট্রান্সমিটার তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্থাপন করেন। এটির সম্প্রচার ক্ষমতা ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান। ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান রচিত "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। 

আরেকটি ট্রান্সমিটার ছিলো বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হকের কাছে। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ট্রান্সমিটার জোগাড় করার কথা বললে তিনি খুলনা থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার আগে আগে সেটির সাহায্যে আগেই রেকর্ড করে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা শারমিন আহমদ তার রচিত তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন। জনাব মোর্শেদ ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাকেও সে রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ছাড়া পান। 

হাজী গোলাম মোর্শেদ শারমিন আহমদ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- "২৫ শে মার্চ রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটা টেলিফোন আসে। আমি সেটা রিসিভ করি।" ফোনকলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, "আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি, মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন নিয়ে কি করব?" পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু কে জনাব মোর্শেদ বিষয়টি জানালে বঙ্গবন্ধু জনাব মোর্শেদের মাধ্যমে তাকে ট্রান্সমিটারটি ভেঙে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকার এবং ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে তার মহাখালীর সরকারি বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তাকে গুম করা হয়। উল্লেখ্য জনাব নুরুল হক ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের আত্মীয় এবং তার বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়ায়। 

তাছাড়া বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন পত্রিকা, দি গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রায় পঁচিশ টি গণমাধ্যম ফলাও করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চে। উপরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মেজর হাফিজ দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ ইতিহাসে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন মাত্র। 

ঘোষণাটি ছিল এরুপ " আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড দি ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ, জয় বাংলা।"

একই বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, বেতার কেন্দ্রের প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেতার ঘোষক আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন, সুলতানুল আলম সহ আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের আগে আরও ৮ জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর হাফিজের দাবি সঠিক হলে তারা প্রত্যেকেই হবেন স্বাধীনতার ঘোষক! সেক্ষেত্রে জিয়াউর হবেন স্বাধীনতার নবম ঘোষক!! 

জিয়াউর রহমান ২৫ শে মার্চ ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নতুনপাড়া সেনানিবাসের ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করে। শতশত বাঙালি সৈন্য আহত এবং আটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান এই খবর পেয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধ কিংবা আটকে পড়া আহত বাঙালি সৈন্যদের উদ্ধারে এগিয়ে না গিয়ে রাত তিনটার দিকে ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে তার সঙ্গে থাকা প্রায় আড়াইশো সৈন্য, গোলাবারুদ এবং যানবাহন নিয়ে বোয়ালখালী পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পটিয়া চলে যান। চট্টগ্রামের বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা সিরু বাঙালি'র লেখা "যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ণ" গ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ কয়েকজন পটিয়ায় গিয়ে তাকে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৭ শে মার্চ ঠিক সন্ধ্যায় তাদের সাথে তার অধীনে থাকা ফোর্স সহ আসেন এবং বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অবশ্য পরদিন ২৮ শে মার্চ তিনি হঠাৎ করেই বেতার ঘোষণায় নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে দাবি করেন। ঘোষণাটি ছিল- "আই হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেল্ফ প্রভিশনাল হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট  অব বাংলাদেশ।""

এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ বেতারের সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান তাকে টেলিফোন করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী টেলিফোন কলটি রিসিভ করলে জিয়ার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হান্নান সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন। শমসের মোবিন ও তার সাথে একমত পোষণ করেন। পরে রাতে জনাব মোবিন জিয়াউর রহমান কে এই বিষয়ে জানালে তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণায় থাকতে হবে। পরদিন ২৯ শে মার্চ জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাপত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ৩০ শে মার্চ। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের উপর গোলাবারুদ বর্ষণ করলে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর জিয়া এক ঘন্টার নোটিশে ভারতে যাওয়ার কথা বলে রামগড়ে পালিয়ে যান! যার বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তিনি তা না করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন! অথচ তাকেই আজকে স্বাধীনতার মহানায়ক বানানোর কতই না অপচেষ্টা! 

বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একজন সামান্য মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা সমূদ্রসম এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এককভাবে সেই সমূদ্র। জিয়াউর রহমানরা সেই সমূদ্রের কয়েকটি নুড়িপাথর মাত্র, তাকে বড় বানাতে চাইলে বড়জোর কয়েক বালতি পানি পর্যন্ত বিবেচনা করা যায়। এর বেশি নয়। 

যারা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান কিংবা ঘোষক হিসেবে মনে করেন তাদেরকে মস্তিষ্কহীন মনে না করার কোনো কারন দেখি না। মেজর জিয়াউর রহমান  পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচিত ৪৬৭ জনেরও একজন ছিলেন না। তাদের নেতা তো দূরের কথা। জাতীয় পরিষদের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রাদেশিক পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র এই দু'জনের ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবেরও ছিলো না, সরকারের কর্মচারী মেজর জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা!

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যদি ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বীকৃত ভূখন্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং একটি সরকারের সমষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু একাই হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং সরকার। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবরা হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, জনতা এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জিয়াউর রহমান হলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো অংশ নন। দৈবক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভাগ্যক্রমে বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন। এমন বীরউত্তম আছেন আরও ৬৮ জন। জিয়াউর রহমানের তুলনা হতে পারে সেই ৬৮ জনের সাথে। জিয়াউর রহমান এগারো সেক্টর কমান্ডারের একজন। সুতরাং তার তুলনা হতে পারে ঐ এগারো জনের সাথে। সেক্ষেত্রে ও অবদানের বিবেচনায় তার অবস্থান হবে নিচের দিকেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভারতীয় পণ্য বর্জন: রাজনীতির কানাগলিতে প্রবেশ বিএনপির


Thumbnail

যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।

কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।

রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।


ভারতীয় পণ্য   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রির গণহত্যা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত ‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।

আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।

কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর।  পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়।  হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।     

বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায় বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের ২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।


২৫ মার্চ   গণহত্যা দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল এমনটা না, এটা ছিল জেলা বা ওই সময় মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। যেটা আজকের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজ তারই উত্তরসূরি তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক পূর্ণতা পেয়েছে। যা সারা পৃথিবীর জন্য একটা রোল মডেল। জাতিসংঘ এটাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ব্যক্তির নামে এরকম রেজ্যুলেশন নাই। 

স্বাধীনতার পর যে স্বাস্থ্য তা সম্পূর্ণ একটা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পরপর ডাক্তারদের প্রথম শ্রেণির মযার্দা দেন। এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষা ছিলো না, গবেষণারও কোন সুযোগ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তখনই আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএমআসি ছিল নখহীন, দন্তহীন ঘুমন্ত একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নাই। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তারদের গবেষণার কাজের মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজেই খবু আগ্রহী। সবক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে শুধু ডাক্তাররাই মনে হয় এক্ষেত্রে একটু দুর্বল। গবেষণা আমরা এখনও পিছিয়ে। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য যা যা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করতে প্রস্তুত আছেন। এখন আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন