বঙ্গবন্ধু ও ব্যানার্জীর মধ্যে ছিল
পুরনো বন্ধুত্ব। ব্যানার্জীর পুরা নাম শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী। কলকাতায় জন্ম নেয়া একজন
বাংলা ভাষী ভারতীয় কূটনীতিক। ষাটের দশকের শুরুতে ঢাকায় ছিলেন পাঁচ বছর। তিনি তখন
ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের রাজনৈতিক কর্মকর্তা। বন্ধুত্বের শুরুটা ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর।
তাঁর বাসভবন ছিল ইত্তেফাক অফিসের পাশের ভবন চক্রবর্তী ভিলায়। মধ্যরাতের পর দরজায়
কড়া নাড়ার শব্দে তিনি হতচকিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের একটি প্রদেশে কাজ করার জন্য
অধিক সাবধানী চলাচলের নির্দেশনা ছিল কেন্দ্র থেকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দরজা খুললেন।
অনুমান চৌদ্দ বছরের এক অতিশয় বিনয়ী এক বালক সালাম দিয়ে বললো, ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক
মিয়া এখুনি যেতে বলেছেন, যদি না তাঁর কোন সমস্যা থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি পাশের
ইত্তেফাক ভবনে গেলেন। মানিক মিয়ার সাথে ব্যানার্জীর প্রথম সাক্ষাৎ। পাশে বসা দীর্ঘদেহী
ভদ্রলোক চিনতে কোন অসুবিধা হয়নি। তাঁকে অনেকবার দেখেছেন পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায়
ভাষণ দিতে। প্রায় প্রতিদিন দেখেন সংবাদপত্রের পাতায়। তিনি আর কেউ নন। তিনি আমাদের
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মানিক মিয়া ও বঙ্গবন্ধু সেদিন ব্যানার্জীকে
ডেকেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি পৌঁছে
দেয়ার জন্য। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের একটি রূপরেখা ও রোডম্যাপ বর্ণনা
করে ভারত সরকারের কাছে সমর্থনের আবেদন জানিয়েছিলেন। মধ্যরাতে দু'ঘন্টা ব্যাপী এ বৈঠকের
পর এ ইস্যুতে তাঁরা সমসাময়িক কালে আরো দুটি বৈঠক করেন। ২০১১ সালে প্রকাশিত "ইন্ডিয়া,
মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন ও পাকিস্তান" নামের বইতে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী এসব
তথ্য প্রকাশ করেন।
প্রায় নয় বছর দু বন্ধুর মধ্যে আর
দেখা সাক্ষাৎ নেই। আবার দেখা ৯ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে হিথ্রো বিমানবন্দরে। যখন বঙ্গবন্ধু
দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ব্যানার্জী কে দেখেই বঙ্গবন্ধু তাঁকে জড়িয়ে ধরে
বললেন, "ব্যানার্জী, আপনি এখানে ?" ব্যানার্জী তখন লন্ডনে ভারতীয় মিশনে
কর্মরত। ব্যানার্জীকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে
বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হবার নির্দেশ দেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল
অ্যাফেয়ার্স এর পলিসি প্ল্যানিং মন্ত্রী দূর্গা দাস ধর, ইন্টেলিজেন্স প্রধান রামনাথ
কাও, বিদেশ সচিব টি এন কাউল এবং 'র' এর দ্বিতীয় প্রধান কে শংকরণ নায়ার এর সাথে পরামর্শ
করে এ সিদ্ধান্ত নেন। ইন্দিরা গান্ধীকে জানান হয়েছিল যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিচিত
ও বন্ধু। তিনিই বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হবার উপযুক্ত ব্যক্তি। বিমান ভ্রমণকালে বঙ্গবন্ধুর
সাথে কি কি ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে তার একটি দিক নির্দেশনা তিনি ব্যানার্জীকে দিয়েছিলেন।
যেটিকে ব্যানার্জী তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিশন বলে বইতে বর্ণনা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও ব্যানার্জী ছাড়াও সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ভিভিআইপি বিশেষ বিমানে ছিলেন ভারতীয়
দূতাবাসের লন্ডন মিশনের ওপর এক ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ড কামাল হোসেন দম্পতি। একটি ইউটিউব
ব্লগে ব্যানার্জী জানান, ইন্দিরা গান্ধী কখনো বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিব, মুজিবুর
রহমান বা শেখ সাহেব বলতেন না। তিনি সব সময় 'বঙ্গবন্ধু' বলতেন।
বঙ্গবন্ধুর ফেরার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার
একটি বিশেষ বিমানে। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছিল। আধ ঘন্টা ব্যাপী মুজিব-ইন্দিরা টেলিফোন
সংলাপে এমনটাই জানান হয়েছিল। পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্রিটিশ
প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ এর সাথে কথা বলে রয়েল এয়ারফোর্সের একটি মিলিটারি জেট
এর ব্যবস্থা করেন। বিমান পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ইন্দিরা গান্ধী পরে গোপনে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকে
জানান। ব্যানার্জীর আসন ছিল বঙ্গবন্ধুর পাশে। ব্যানার্জী জানালার কাছে, বঙ্গবন্ধু তাঁর
পাশে। প্রথমে অরেঞ্জ জুস পান ও হাসি ঠাট্টা ও খুনসুটি। দুজনেই মুখিয়ে আছেন যাঁর যাঁর
কূটনীতির সফল বাস্তবায়নে। প্রথমেই শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু। দ্বিধাহীনভাবে ফিসফিসিয়ে
বললেন, একটা উপকার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, বিমান থেকে নামার সাথে সাথে ইন্দিরা
গান্ধীর কানে পৌঁছাতে হবে যে তিনি তাঁর পরিকল্পনার অন্তত তিন মাস আগে ৩১ মার্চ ১৯৭২
তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু-ইন্দিরা বৈঠকে তিনি
বিষয়টি তুলবেন। ব্যানার্জী যদি আগে থেকে 'খোড়াখুড়ির' কাজটি করে রাখেন তাহলে আলোচনায়
সুফল মিলবে। ব্যানার্জী বঙ্গবন্ধুকে বললেন, আপনি ছিলেন জেলে। আপনি জানলেন কিভাবে
যে ভারত ৩০ জুন ১৯৭২ আর্মি ফেরত নিবে ? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, এডওয়ার্ড হিথ তাঁকে
বলেছেন। আর্মি ফেরত নিতে দেরি করলে ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দেরি করবে। সেটির
কারণেই এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর কূটনীতি। বিপাকে পড়ে গেলেন ব্যানার্জী। একটু নার্ভাস হলেন।
বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে দিল্লী এয়ারপোর্টে যে ডামাডোল হবে তার মধ্যে তিনি কেমনে জানাবেন
উপর মহলকে।ভাগ্য সহায় ছিল। বিমান থেকে সকলে নেমে যাবার পর সবাই যখন রাষ্ট্রীয় আচারে
ব্যস্ত, তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি পি ধর ব্যানার্জীকে কাছে ডেকে নিয়ে জানতে
চাইলেন, কি কথা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সাথে। তিনি বঙ্গবন্ধু ও এডওয়ার্ড হিথের অভিপ্রায়ের
কথা জানালেন। ডি পি ধর বার্তা দিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে, তাঁর সাথে একটি জরুরি
বৈঠক করার জন্য।
বিমানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হঠাৎ
করে দাঁড়িয়ে গেলেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জীকেও দাঁড়াতে বললেন। দাঁড়ালেন ভিভিআইপি ফ্লাইট
এর অপর তিন যাত্রীও। বঙ্গবন্ধু গাইতে শুরু করলেন, "আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি।" প্রথমবার তিনি রিহার্সেলের মত করে গাইলেন। দ্বিতীয়বার
তিনি গাইলেন বলিষ্ঠ ও অশ্রুসিক্ত আবেগে। ব্যানার্জীকেও সাথে নিলেন গাইতে। ব্যানার্জীও
গাইলেন। এরপর সবাই বসলেন। বঙ্গবন্ধু ফিসফিস করে ব্যানার্জীকে বললেন, তিনি "আমার
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করতে চান।
ব্যানার্জীর মতামত চাইলেন। তিনি সম্মত হলে বঙ্গবন্ধু বললেন, "যদিও ইতিহাসের কোথাও
লিখিত থাকবে না কিন্তু ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমি (ব্যানার্জী) যেন জেনে রাখি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার
সিদ্ধান্ত দুই পুরনো বন্ধুর নেয়া, 'আপনি এবং আমি'- রয়েল এয়ার ফোর্স এর লন্ডন থেকে
ঢাকাগামী ফ্লাইটে।"
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর