“রক্ত
দিয়েই যদি স্বাধীনতার মূল্য
নিরূপণ করা হয় তাহলে,
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। এক
সাগর রক্তের বিনিময়ে এমন স্বাধীনতা অর্জন
পৃথিবীর কয়টা দেশ-জাতি পেরেছে-আমার জানা নেই,
যার মহান নেতা শেখ
মুজিবুর রহমান।”
বৃটেনের
বিখ্যাত সংবাদপত্র New Statesmen এর সম্পাদক কিংসলি
মার্টিন তাঁর স্বনামে প্রকাশিত
এক বিশেষ সম্পাদকীয়তে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন। অথচ, তখনো রমনার
রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পূর্বদিগন্তে বিজয়-নিশান উড়িয়ে "স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" অভ্যুদয় ঘটেনি। ওই রেসকোর্স ময়দান
থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
মুক্তির ও স্বাধীনতা সংগ্রামের
আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, “আমি যদি হুকুম
দেবার নাও পারি, তোমাদের
যার যা কিছু আছে,
তাই নিয়ে শত্রুর মোকামিলা কর।”
ইতিহাসের
কী অপূর্ব মিশেল! সেই রেসকোর্স ময়দানেই জেনারেল
নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকবাহিনীর নব্বই হাজার সৈন্যের নিঃসহায় আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চস্থ
হলো। কিন্তু যৌথবাহিনী কমান্ড ভারতীয় জেনারেল জগতসিং অরোরার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিজয়
হলেও বাঙালির সার্বিক মুক্তি অপূর্ণ থেকে যায় জাতির
পিতা তখনো পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির
কারাগারে বন্দীদশা অবস্থায় থেকে যাওয়ায়। বঙ্গবন্ধুকে
নিয়ে ঘরেবাইরে তখনো উৎকন্ঠা আর
নানা গুজব। কেননা চার জানুয়ারী রাষ্ট্রদ্রোহিতার
অপরাধে অভিযুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে
দেয়া ফাঁসির
রায় কার্যকর করার দিন হিসাবে
চার জানুয়ারী নিদিষ্ট ছিল। এমনকি কবর
খোড়ার খবরও ফাঁস হয়ে
পড়েছিল।
মুজিবনগর
সরকারের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও মুজিব বাহিনীর
সৃষ্ট দ্বন্দ্ব উৎকন্ঠা ও গুজবকে আরো
প্রকট করে তুলছিল। এ
করণে মুজিব বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর
মুক্তির দাবিতে জনসভা করারও ঘোষণা দেয়।প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সয়ং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির
ব্যাপারে আন্তরিক নন- এমন গুজবও
রটে গিয়েছিল চারদিকে। এরকম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে
তাজউদ্দিন আহমেদ ছুটে যান বেগম
ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে - ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের একটি
বাড়িতে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির
বিষয়ে সরকারের সার্বিক তৎপরতা সম্পর্কে বেগম মুজিবকে অবহিত
করেন।
তৎকালীন
জাতিসংঘ মহাসচিব এবং ইউরোপের অধিকাংশ
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি করতে থাকেন।
কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তারা শেখ মুজিবের যদি
কিছু হয়ে যায়, তবে
ফলাফল ভয়াবহ হবে বলেও হুকমি
দেয়। এমন এক টালমাটাল
পরিস্থিতিতে
১৯৭২
এর ৩ জানুয়ারি করাচির
জনসভায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে
মুক্তিদানের রাষ্ট্রীয়
সিদ্ধান্তের কথা ঘোষনা করেন।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় হলে ২২
ডিসেম্বর অস্থায়ী সরকার কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিব নগর থেকে রাজধানী
ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। অস্থায়ী
রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী
ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান গভর্নর হাউসে (বঙ্গভবন) এসে ওঠেন। পদচ্যুত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ গিয়ে ওঠেন তার পুরাণ
ঢাকার আগামসি লেনের বাড়িতে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
তাজউদ্দিন আহমেদ নতুন মন্ত্রিসভা গঠন
করে খন্দকার মোশতাকের স্থলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন আব্দুস সামাদ
আজাদকে। মোশতাকের
বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে
সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য
যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে কনফেডারেশন গঠনের প্রয়াস চালানোর।আগেই জাতিসংঘে প্রতিনিধি দলের নেতারূপে মোশতাককে
বাদ দিয়ে লন্ডনে দায়িত্বরত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে
পাঠানো হয়েছিলো। তারপরও আইনমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে বলা
হলে অগ্রাহ্য করেন মোশতাক। তিনি
অসুস্থতার ভান করে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
হন।
যাহোক
১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে
বিবিসির খবর দেয় যে-
বঙ্গবন্ধু একটি চার্টার্ড বিমানে
করে লন্ডনের পথে রয়েছেন। সেই
খবরে মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা
বয়ে যায়। বিবিসি দ্বিতীয় খবরে বলে, বঙ্গবন্ধুকে
বহনকারী বিমানটি সকাল সাড়ে ৬টায়
লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। সকাল দশটায় দশ
নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ অবিসংবাদিত নেতা
শেখ মুজিবকে বিরল অভিবাদন জানিয়েছেন।
ওদিন সন্ধ্যায় ববঙ্গবন্ধু তাঁর সহধর্মিণী বেগম
ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ৯
জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন বাসায় গিয়ে বেগম মুজিবকে বঙ্গবন্ধুর
স্বদেশে ফেরার সময়সূচি জানান। বঙ্গবন্ধু ৯
জানুয়ারি রাতে লন্ডন ত্যাগ
করে পরদিন দিল্লিতে পৌঁছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
ভারতীয় একটি বিমানে কোলকাতায়
একঘন্টা যাত্রা বিরতি করে বিকাল চারটার
দিকে ঢাকা পৌঁছবেন বলে
খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে
বেগম মুজিব প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনকে অনুরোধ করে বলেন, দিল্লিতে
বিমানে পরিবর্তন করলে বৃটেন মন:ক্ষুন্ন হতে পারে। তাঁর
বৃটিশ বিমানেই ঢাকা আসা উচিত।
ততক্ষণে তাজউদ্দিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডি পি ধরকে
ফোন করে বেগম মুজিবের
পরামর্শ জানিয়ে দেন। সে অনুযায়ী
১০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে বৃটিশ রাজকীয়
বিমান “কমেট” দিল্লির পালাম বিমান বন্দরে অবতরণ করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর মন্ত্রিসভা
বিশাল অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে। সেই লাখ লাখ
ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “এক বিরাট সংকল্প
নিয়ে আমি ফিরে যাচ্ছি
আমার দেশে-বাংলাদেশে। সামনে
যে পথ আমরা রচনা
করবো, তা হবে শান্তির
এবং প্রগতির পথ। কারো জন্যে
কোনো ঘৃণা বুকে নিয়ে
আমি ফিরছি না। মিথ্যার ওপরে
সত্যের জয়,অশুচিতার ওপরে
শুচিতার জয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে
ন্যায়ের জয় এবং সর্বোপরি
অশুভ ও অসত্যের ওপরে
সার্বজনীন সত্যের বিজয়ের প্রেক্ষাপটে আমি ফিরে যাচ্ছি
আমার নিজের দেশে-রক্তস্নাত ওপর
শুচিতায় উদ্ভাসিত স্বাধীন বাংলাদেশে। বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি “সাদাকমেট” বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান থেকে
অবতরণের সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে
প্রিয় নেতাকে অভিবাদন জানাতে মন্তিসভার সদস্যরা আগে থেকেই উন্মুখ।
দাঁড়িয়ে ছিলেন মুজিববাহিনীর চার অধিনায়ক শেখ
ফজলুল হক মিলন - সিরাজুল
আলম খান - আব্দুর রাজ্জাক - তোফায়েল আহমেদ এবং মুক্তিযুদ্ধের খলিফাখ্যাত
চার ছাত্রলীগ তথা স্বাধীন বাংলা
ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম
সিদ্দিকী -আসম আব্দুর রব
- শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস
মাখন। প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ,অর্থমন্ত্রী মনসুর আলী, পদচ্যুত মন্ত্রী
খন্দকার মোশতাক আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম কামরুজ্জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে
বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন। শেখ ফজলুল হক
মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর
রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী,
আসম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ
ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনও বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন। এরপর একটি ডজ
ট্রাক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাত্রা করে রেসকোর্স ময়দান
অভিমুখে। ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রিত ট্রাকটিতে গাদাগাঁদি করে
- দন্ডয়মান
ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বিকাল তিনটায় অবতরণ করেছিলো বিমানটি। ছাত্রলীগ নেতারা ব্যূহের মতো করে মঞ্চের
কাছে নিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুকে। লাখ
লাখ মানুষের উপচে'পড়া ভিড়
ঢেলে যখন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে
উপবিষ্ট, তখন জয়বাংলার গগণবিদারি
শ্লোগানে মুখরিত ময়দানের জনস্রোত। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের
মহানায়ক তোফায়েল আহমেদের কন্ঠ মাইকে ধ্বনিত
প্রতিধ্বনিত হয়ে গর্জে উঠে
শোনায় শেখ মুজিবুর রহমানের
আগমনী বার্তা। উল্লেখ্য উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব খানের পতনের
পর ছাত্রসংগ্রাম
পরিষদের আহবায়ক ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ
২৩ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ
মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করে এক জনসমুদ্রে
দাড়িয়ে। ছাত্রজনতা করতালির মাধ্যমে মুহূর্মুহূ শ্লোগান দিয়ে অভিষিক্ত করে।
তোফায়েল আহমেদ ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স
ময়দানে দাড়িয়ে সেই বঙ্গবন্ধু অভিধায়ই
শেখ মুজিবকে অভিসিক্ত করে বলেন, ‘ভাইসব’
বঙ্গবন্ধু মঞ্চের দিকে আসছেন। কিছুক্ষনের
মধ্যে তিনি ভাষণ দেবেন।
কিন্তু তার আগে বঙ্গবন্ধুর
এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্যে দয়া করে সবাই
বসে পড়ুন। হাত দুটোকে মাটির
ওপর রাখুন। সঙ্গে সঙ্গে নজর রাখুন আশেপাশের
প্রত্যেকের ওপর। খুনীর হাত
যে কোন জায়গা থেকে
উঠে আসতে পারে।কড়া নজর
রাখবেন। তোফায়েল আহমেদের এ বক্তৃতার মধ্যেই
চোখের পলকে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান সভামঞ্চে এসে হাজির। তিনি
দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিথর নিরব হয়ে
থাকলেন। ময়দানে উত্তেজনার উদ্বেল আনন্দ ধ্বনি। বঙ্গবন্ধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বললেন ১৯৭১ সালের ৭
মার্চ আমি বলেছিলাম, “ঘরে
ঘরে দুর্গ গড়ে তুলন, এবারের
সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” আপনারা বাংলাদেশের মানুষ সেই স্বাধীনতা জয়
করে এনেছেন।,,,,,, ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একজন বাঙালির প্রাণ
থাকতে এ স্বাধীনতা নষ্ট
হতে দেবে না।”
পাকিস্তানি
জেলখানায় নিজের বন্দিদশার কথা উল্লেখ করে
বঙ্গবন্ধু বলেন, "আমার ফাঁসি র
হুকুম হয়েহয়েছিলো, আমার সেলের পাশে
আমার কবর খোঁড়া হয়েহয়েছিল,
আমি মুসলমান, আমি জানি মুসলমান
একবারই মরে, তাই আমি
ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে
নতিস্বীকার করবো না। ফাঁসির
মঞ্চে যাবার সময়ও আমি বলবো, আমি
বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা
আমার ভাষা।"
ইন্দিরা
গান্ধীর সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে
জাতির পিতা মুজিব
বলেন, "আমি যখন চাইবো
ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে তার সৈন্য
বাহিনী তখনই প্রত্যাহার করে
নেবেন।"
ভাষণের
একপর্যায়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের “রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি”
উদ্ধৃতি করে বলেন, "এবার
নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সাড়ে সাতকোটি বাঙালি পুড়ে সোনার মানুষ হয়ে উঠেছে। আপনাদের
মুজিব ভাই আহবান জানিয়ে
ছিলেন আর সেই আহবানে
সাড়া দিয়ে আপনারা যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। বাঙালি বীরের জাতি। পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের
পদানত করতে পারবে না।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে
জুলফিকার আলী ভুট্টো আমাকে
অনুরোধ করে বলেছেন, সম্ভব
হলে আমি যেন লুস
ফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে
শিথিল সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি। তাকে বলেছি,
আমার জনসাধারণের নিকট আমি ফিরে
না যাওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে এ
ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো
না। এখন আমি বলতে
চাই , ভুট্টো সাহেব আপনারা সুখে শান্তিতে থাকুন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এখন যদি কেউ
সেই স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চায় তাহলে
এই স্বাধীনতা রক্ষার করার জন্য শেখ
মুজিব সর্বপ্রথম প্রাণ দেবে।"
বঙ্গবন্ধু
জনসভা শেষ করে সদলবলে
ছুটে যান শেরেবাংলা ও
সোহরাওয়ার্দীর মাজারে। মাজার জিয়াররত করে ওখান
থেকে যান শহীদ মিনারে।
ততক্ষণে সন্ধ্যা। ওখান থেকে ৩২
নম্বরের সড়কের ধানমন্ডির বাড়িতে। যে বাড়ি থেকে
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত
রাতে তাঁকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
সেখানে ফেরেন বাবা, মা, ভাইবোন স্ত্রী,
পুত্র-কন্যা মাঝে । এরপর
ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলাপে বসেন। মুজিবনগর সরকারের কর্মকান্ড এবং মুজিব বাহিনীর
মধ্যে বৈরী সম্পর্কের নেপথ্য
ঘটনাগুলো শুনেন। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু
বঙ্গভবনে যান শেখ মনি,
আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে
সঙ্গে নিয়ে। এরপর
১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দিয়ে
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা জারি
করে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপতি পদে আসীন করেন
বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীকে।
উপরাষ্ট্রপতি পদ বিলোপ করে
সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করেন শিল্পমন্ত্রী এবং
তাজউদ্দিন আহমেদকে করেন অর্থমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী
হিসাবে ডঃ কামাল হোসেনকে
নিযুক্ত করেন। ১৯৭২ সালের চার
নভেম্বর গণপরিষদে পাস করা হয়
বাংলাদেশের সংবিধান। প্রথম বিজয় দিবস ১৬
ডিসেম্বর - ১৯৭২ যে সংবিধানের
অধীনে শুরু হয় স্বাধীন
বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনামলের।
এভাবেই
শুরু হয় জাতির পিতার
নেতৃত্বে বাংলাদেশকে "সোনারবাংলা" রূপে গড়ে তোলার
ঐতিহাসিক যাত্রা।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।