সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে লেখা চুরির অভিযোগ এসেছে - এবং সেই চুরি ও দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা লেখকদের পক্ষে বিজ্ঞানী, যিনি ছিলেন সম্পাদক ও লেখক উভয় দায়িত্বে, অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক হাসিনা খান দায় স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নাদিম মাহমুদ নামে একজন গবেষক “প্রথম আলো” পত্রিকাতে উপস্থাপন করেছেন - এবং সেটা ৭১ টিভিতে আলোচিত হয়েছে। আমরা জেনেছি কোনো একজন লেখক এই দুর্জনের কাজটি করেছেন। শুধু তাই নয় নিজে অনুবাদ না করে গুগল ট্রান্সলেশন ব্যবহার করে অনুবাদ করেছেন। এবং সেটা তিনি স্বীকার করেননি। যদিও সমালোচকেরা মনে করছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিষয়টিকে হালকা করে দেখাচ্ছেন। কেবল অধ্যাপক জাফর ইকবাল নন সমাজে অনেকেই আছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে হালকা করে দেখেন। এবং এই হালকা করে দেখার প্রবণতা আমাদের অনেকেরই মাঝে সংক্রমিত হচ্ছে। একটি গবেষণা চুরির বিষয়কে এভাবে হালকা করে দেখার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন- আমরা সবাই কম বেশি ভুল করে থাকি। এভাবে যদি উত্তর দেয়া হয়, তবে হতাশা ছাড়া আশার কিছু থাকে কি? তবুও কিছু মানুষ চেষ্টা করে যান।
আমি জনাব নাদিম মাহমুদ এবং অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক হাসিনা খানকে ধন্যবাদ দিতে চাই। জনাব নাদিম মাহমুদ অনুসন্ধান করে জাতীয় পর্যায়ে সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করেছেন -যখন সুশাসন একটি প্রত্যয় মাত্র এবং লজ্জায় সে মরে যাচ্ছে আমাদের কর্মকান্ড দেখে! আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক জাতিকে যা উপহার দিচ্ছি তা এক নিলজ্জতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সেই সত্য আমাদের বিবেককে যেন নাড়া দেয় - আমরা যেন বলতে পারি গবেষণা চুরি সত্য -মিথ্যা কিংবা ষড়যন্ত্র নয়।
সরকার শুদ্ধাচার নীতি গ্রহণ করেছে। সেখানে যারা পাঠদান করেন সেটাও প্রশ্ন করা যায় - চিকিৎসক -বিজ্ঞানীরা হয়ে গেছেন নীতিবিদ সক্রেটিস, দোকানদার হয়ে গেছেন ডাক্তার, চিকিৎসা ছেড়ে ডাক্তার হয়েছেন আইনজীবী কিংবা সাংসদ। ঠিক এমন সময়ে - অধ্যাপক জাফর ইকবাল সত্য লুকাতে চাননি। অর্থাৎ সত্য যে এখনো বেঁচে আছে সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। সমাজের দাবি তেমনিভাবে শিক্ষক -উপাচার্যরা যেন প্রমাণ করেন উনারা দুর্নীতিকে ফাঁসি দিতে মায়ার জালে আটকে নেই। গবেষণা চুরির একটি মারাত্মক অপরাধ। সেই চুরির অনেক অভিযোগ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, এবং উপাচার্যদের কাছে দিনের পর দিন পড়ে আছে বা থাকে।
শিক্ষকদের চুরির মাথায় পচনের মতো একটি বিষয়। সেই পচন রোধ না করলে আমরা যতই উন্নয়ন করি না কেন সেটা টেকসই হবে না। সেটি ওই মঞ্চের মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। নৈতিকতা হলো সমাজের সিমেন্ট - আর শিক্ষা হলো ওই ভবনের রড বা মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ড যদি শক্ত না হয় কিংবা সিমেন্ট যদি ভেজালের হয় বা কমতি থাকে তবে জাতি হাজার বছর পিছিয়ে পড়বে। স্মার্ট বাংলাদেশ অধরা থেকে যাবে।
এখানে একটি ঘটনার কথা বলি। গবেষণা চুরির একটি অভিযোগ প্রায় এক বছর আগে একটি জার্নাল এর সম্পাদকের কাছে করা হয়। জার্নালের সম্পাদক অভিযোগকারীকে বলেন পত্রিকায় দিতে- তাহলে বিচার করা সহজ হবে। অপরদিকে, অভিযোগকারীকে আরেকটি মহল অনুরোধ করে এটা গুরুত্ব না দিতে। আরেকটি মহল নরম-কোমল একটি হুমকি দিয়ে রাখেন। অভিযোগকারী বিগত ৭ মাস দ্বারে দ্বারে ঘুরছে! অভিযোগকারী অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে এই তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোক, সরকারি দপ্তর অভিযোগ সম্পর্কে জানেন-আমলে নিয়েছেন কেউ কি যদি জানতে চান উত্তরটা বেদনা দায়ক। একটি মাত্র পত্রিকা এই সংবাদটি ছেপেছে। অনেক স্বনামধন্য সম্পাদককে লেখা হয়েছে, টেলিফোন বলা হয়েছে । তাদের কেউই অভিযোগ আমলে নেয় নি। সাংবাদিক নির্ভিকতার প্ৰতীক। সত্যের সন্ধানী, সত্য প্রকাশ অবিচল। কিন্তু সত্য এখন বোতল বন্দি। মিথ্যা এখন বুক ফুলিয়ে চলে।
গবেষণা চুরির বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দেখে ওই সংবাদটি কমেন্ট কলামে শেয়ার করেছি। কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝে ওই পোস্টটি উধাও হয়ে গেছে! দৈনিক মানবজমিনের শিরোনাম ‘গবেষণায় অন্যদের ৯৮ শতাংশ চুরি, আমার ৭২ শতাংশ চুরিতে প্রশ্ন কেন? সূত্রঃ দৈনিক মানবজমিন, ৩ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার’ - এভাবে যদি কেউ বলেন তবে কি বলার আছে? তিনি এই মন্তব্য করে থাকেন, তিনি যদি ভুল পথে চলার বিষয়কে এভাবে স্বীকার করে থাকেন, তবে তাকেও কি আমরা ধন্যবাদ দেব? সত্যের পথে ফিরে আসার জন্য আরেকটু পথ বাকি আছে। যে বেতন সুবিধা নেয়া হচ্ছে সেটাও সংশোধনের প্রয়োজন আছে বৈকি!
অধ্যাপক জাফর ইকবালকে তাই আমার আবারও ধন্যবাদ। মাত্র দুটি প্যারাগ্রাফ চুরি করা হয়েছে বলে যদিও গুরুত্ব কমাতে চেয়েছেন তবুও অকপটে স্বীকার করেছেন যে ঘটনাটি সত্য। তিনি তো বলতে পারতেন ওনাদেরকে না জানিয়ে কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছে! কিংবা এটা অমুক বা তমুক গ্ৰুপের কারসাজি! মানবজমিনের রিপোর্ট পত্রিকায় এসেছে - সেটার কোনো প্রতিবাদ আমরা পাই নি। যেসব শিক্ষকের নাম এসেছে তারা কি জানেন না? এই যদি হয় বাস্তবতা - তাহলে উপাচার্যরা কেন আছেন? কেন প্রশাসন আছে? কেন supervisor বা reviewer আছেন? বিশ্ববিদ্যালয় একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেন কি চুরি বা অনুবাদকে উচ্চতর ডিগ্রী দেয়ার জন্য? যদি আমার চুরিবিদ্যাকে এভাবে বিভিন্ন মহল থেকে আমলে আনার পরিবর্তে সুরক্ষা দেই, চেপে যাই, মানবিকতাকে আনি তবে জাতির ভবিষ্যৎ কি হতে পারে। এভাবে যদি আমরা শর্ট -কাট পদ্ধতিতে উন্নত জাতিতে উন্নীত হতে চাই সেটা কি সম্ভব ?
অভিযোগকারী থিসিসের পরীক্ষকদেরকে কাছে জানতে চেয়েছেন- অধ্যাপক জাফর ইকবাল দায় স্বীকার করেছেন- আপনারা কি করবেন? চেয়েছেন উত্তর পাননি ! শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আদর্শ পুরুষ বা নারী। তিনি সত্যের সন্ধানী ও অনুসারী। তিনি কি তবে শক্তিহীন যে সত্যকে আলিঙ্গন করবার শক্তি ও সাহস নেই ?
আরেকটি পুরনো ঘটনা বলে শেষ করতে চাই। ২০১০ সালে আমার বিভাগের সহকর্মীদের দক্ষতায় একটি গবেষণা কর্মের চুরি সম্পর্কে জানতে পারি। তারা আমার কাছে একটি আবেদন করে। আমি বিভাগের সভাপতি হিসেবে আবেদনটি তত্ত্বাবধায়কের কাছে অগ্রায়ণ করি মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন। পরের দিন ভাইভাতে এসে একজন পরীক্ষক আমাকে বুকে টেনে দিয়ে বলেন - তুমি আমাকে জীবনের শেষ বেলায় একটি অসন্মমানের হাত থেকে বাঁচিয়েছো। অভিযোগকারী ভেবে ছিল ঠিক সেইভাবে এবারও কেউই বুকে টেনে নিয়ে বলবে – “সাবাশ! তুমি আমার মান রক্ষা করেছো। “ কিন্তু তিনি অধ্যাপক জাফর ইকবাল হতে পারেননি।
আমরা আরও অধ্যাপক জাফর ইকবালের অপেক্ষায় আছি! আমরা ওই উপাচার্য মহোদয়দের দিয়ে তাকিয়ে - যারা বিচারহীনতা, ইনডেমনিটির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন - আমাদের আশা উপাচার্যরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর চালু করবেন না।
অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের গ্রন্থের উপর একটি লেখা লিখে ছিলেন। আমাদের এক শিক্ষক তিনি সন্তানকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমরা সেই রকম নৈতিকতার অপেক্ষায় আছি। একদিন আমাদের বিবেক জাগবে!
লেখার পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাই - গবেষণা চুরি সম্পর্কিত একটি বিভ্রান্তিকে দূরীভূত করবার চেষ্টা থেকে। গবেষণা চুরি সম্পর্কে আমাদের একটি ভুল ধারণা আছে। আমরা কেউ কেউ বলি ২০% বা ৩০% গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আছে "Plagiarism (চন্দ্ররেণু বিদ্যা- অমর্ত্য সেনের স্ত্রী নবনিতা সেন এই অনুবাদক জানালেন ইতিহাসের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, চ্যানেল ২৪, ইউটিউবে আছে /২০/১/২০২৩ দেখা) is presenting someone else’s work or ideas as your own, with or without their consent, by incorporating it into your work without full acknowledgement. All published and unpublished material, whether in manuscript, printed or electronic form, is covered under this definition. Plagiarism may be intentional or reckless, or unintentional. Under the regulations for examinations, intentional or reckless plagiarism is a disciplinary offence (https://www.ox.ac.uk/students/academic/guidance/skills/plagiarism). "যথাযথভাবে স্বীকার না করলে কিংবা যথাযথভাবে রেফারেন্স না দিলে চুরি হিসেবে গণ্য হবে। একটি আইডিয়া একটি শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যেতে পারে। যেমন গণতন্ত্র একটি "প্রক্রিয়া" গবেষককে এখানে বলতে হবে এটি কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর আবিষ্কার। তেমনি "নিজেকে জানো" বক্তব্যটি সক্রেটিসের। সেটাকে গবেষণায় ব্যবহার করতে হলে যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে বলতে হবে।
গবেষণা বা পাঠ্য পুস্তক রচনা কঠিন একটি কাজ যেখানে সতর্কতা খুবই জরুরি। গবেষণা সৃষ্টিকে বলা হয় অভিসন্দৰ্ভ। এর মানে হলো - অতীব সুন্দর একটি রচনা। এখানে থাকে সদুর প্রসারী পরিকল্পনা ও নকশা। পিএইচডি তাই অতি মূলবান। আমরা অভিযোগ শুনি পিএইচডি এখন কিছু শিক্ষক মুড়ি মুড়কির মতো বিলোচ্ছেন। অধ্যাপক পদ হয়ে গেছে হাতের মোয়া। যেন তেন কাজ দিয়ে সেটাকে পাওয়া যাচ্ছে। সুড়ঙ্গ পথে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে পদোন্নতি নিচ্ছি। এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের দায়িত্ব আমাদের। দিনে পর দিন ক্লাস হয়না শুনতে আর ভালো লাগে না। পাঠ দানে চুরি, গবেষণা চুরি, পাঠ্য পুস্তকে চুরির দায় প্রতিষ্ঠানের কর্তারা কি দায় এড়াতে পারেন?
গবেষণা চুরি করে পদোন্নতি নেয়া রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ চুরি এবং তার বিচার না করা চুরিকে বৈধতা দেয়া। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আছে ভিক্ষুক, গরীব চাষী, ভূমি হীন, গৃহহীন, অসহায় বিধবা, পাথর ভাঙা শিশুর কষ্ট, খেটে খাওয়া মজুরের পানি করা রক্ত -ঘাম। আমরা যেন রক্ত চোষা নিম্নতর প্রাণী না হই! শিক্ষকদের জাগরণের প্রত্যাশায় জাতি অপেক্ষায়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।