ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও
আশুগঞ্জ)আসনের উপ-নির্বাচনের অন্যতম
প্রতিদ্বন্দ্বী উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া ইস্যুতে বিএনপি’র অপরাজনীতির স্বরূপ
উন্মোচিত হয়েছে।সেখানে ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিদের মূল্য দেওয়ার দলীয় কৌশল জনগণের
সামনে প্রকাশ্যে এসেছে।শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতায়
এগিয়ে থাকা উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে
হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে দলটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
বিএনপির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন
তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে গত
১১ ডিসেম্বর(২০২২) তিনি জাতীয় সংসদ
থেকে পদত্যাগ করেন।২৯ ডিসেম্বর তিনি দলে গুরুত্ব
না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি থেকে
পদত্যাগ করেন। এদিকে দল থেকে পদত্যাগের
পর ওই আসন থেকেই
আবারো নির্বাচনের জন্য ১ জানুয়ারি
মনোনয়নপত্র কেনেন তিনি।ওইদিন রাতে কেন্দ্র থেকে
দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে দলের
সব পদ থেকে বহিষ্কার
করা হয়।এই উপনির্বাচনে তার বিপরীতে শক্তিশালী
কোনো প্রার্থী না থাকায় সহজেই
তিনি জয় পাবেন বলে
ধারণা করা হচ্ছে। আগামী
১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত
হবে।
২.
দলীয়
সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরও
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতারা যে আচরণ করেছেন
তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এদিকে বিএনপির পদত্যাগে শূন্য আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এ ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী
করছে না। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ
উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
করায় বিষয়টি অন্যান্য দলের কাছে ইতিবাচক
মনে হয়েছে।১ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদসূত্র অনুসারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা
জিল্লুর রহমানের বক্তব্য- ‘বিকালে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে সাদ মোহাম্মদ রশিদ
সাড়ে আট হাজার টাকার
চালান জমা দিয়ে নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম
কিনেছেন।’ বিএনপি যে সুস্থ ধারার
রাজনীতির বিপক্ষে তা স্পষ্ট হয়েছে
বিএনপি ত্যাগ করে রাজনীতিবিদ উকিল
আব্দুস সাত্তারের এই মনোনয়নপত্র কেনার
ঘটনায়।
উকিল
আব্দুস সাত্তার কুমিল্লা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা
সহসভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়
সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন
না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে জয় লাভ করেন।এরপর
তিনি পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারি), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২
জুন) এবং ২০১৮ সালের
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের
শীষে নির্বাচিত হন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৮ বছর।২০০১ সালে
উকিল আবদুস সাত্তার টেকনোক্র্যাট কোটায় খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী(২০০১-২০০৬)হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির
সেই মেয়াদের বিভিন্ন সময় তিনি চারটি
মন্ত্রণালয়ে (আইন, ভূমি, মৎস্য
এবং বিদ্যুৎ) দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি
এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে
কোন মামলা নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক
ক্যারিয়ার রয়েছে উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার। ৫ বার সংসদ
সদস্য নির্বাচিত এই ব্যক্তি বিএনপি
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির
উপদেষ্টা ছিলেন।তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বার এ্যাসোসিয়েশন
এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও
ছিলেন।পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিএনপি
থেকে পদত্যাগ করে শূন্য হওয়া
আসনের উপ-নির্বাচনে নিজে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্মতি প্রদানের মধ্যেও আছে তাঁর দেশপ্রেমের
প্রকাশ।এজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমাত্র
ছেলে মাইনুল হাসান তুষারকে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা পোষণ
করেছেন।তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের
পিছনে যুক্তিও আছে। কারণ বিগত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল
থেকে দেখা যায়, তিনি
এলাকায় জনগণের আস্থার প্রতীক।সৎ ও সজ্জন বলে
বিএনপি’র আদর্শহীন ও
দুর্নীতির পরিপোষক নেতারা তাঁর শত্রু হয়ে
উঠেছেন।
৩.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
সরাইল বাড়ি উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়ার।তিনি ১৯৭৯ সালেই বিপুল
ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার
মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত হন।তারপর তিন দশকের পথ
চলায় তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা
যেমন পরিপক্ব হয়েছে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চিনেছেন নিবিড়ভাবে। কেবল মানুষ নয়
তিনি প্রকৃতি ও প্রশাসনের এক
অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন।ক্রমান্বয়ে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী
হয়ে দেশের অন্যতম স্বচ্ছ রাজনীতির ধারাকে বেগবান করেন।বিএনপি’র মতো দলের
নেতা হয়েও নিজেকে সততার
কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে মানুষের মাঝে
টিকে থাকা চাট্টিখানেক কথা
নয়।রাজনীতির দুষ্টচক্রকে দূরে ঠেলে নিজেকে
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে
তুলেছেন এই নেতা।কেন্দ্রীয় বিএনপির
নেতা, সরাইল-আশুগঞ্জ এর নির্বাচিত সাংসদ
ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এলাকায় নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে তাঁর। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে
ভূমি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের
অভিযোগ থাকলেও তিনি নিজে যে
নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেন
এটা পরিষ্কার।
তবে
বিএনপি বহিষ্কার করার তিন দিন
আগে ২৯ ডিসেম্বর(২০২২)
প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ
ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন উকিল সাত্তার, যা
৩১ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন তিনি।বিএনপি ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে
উকিল সাত্তার পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি
করেছি।দলের যে কোনো সময়ে
যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা
মানছি।সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সংসদ থেকে পদত্যাগ-
এটাও মাইনা পদত্যাগ করেছি পার্লামেন্ট থেকে।এখন বুঝতে পারছি যে দলে আমাদের
প্রয়োজন নেই; দলের কর্মকাণ্ডে
তা বুঝতে পারছি। বৃদ্ধ হয়ে গেছি… মান
সম্মান থাকতে থাকতে দল থেকে চলে
আসছি।’
উকিল
আবদুস সাত্তারকে ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বদলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।(দৈনিক
সংবাদ, ২১ জানুয়ারি ২০২৩)২১ জানুয়ারি স্থানীয়
এক মতবিনিময় সভায় সরাইলের আওয়ামী
লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির
বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা
উপস্থিত ছিলেন।সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সভায় উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ সেখানে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যান
অংশ নেন।সাত্তার সাহেব যে ভালো মানুষ,
সৎ মানুষ এটা সভায় উল্লেখ
করে তাঁকে বিজয়ী করতে হবে বলে
মতামত ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।সভায় উপস্থিত
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও
জনপ্রতিনিধিরা তাঁর প্রতি সমর্থন
প্রকাশ করেন।
এর আগে ২ জানুয়ারি
আবদুস সাত্তারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।দুই সপ্তাহ
পরেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তবে যেখানে ‘বি্এনপি’
নামক দলের নেতাকর্মী ও
সমর্থকদের ভালোবাসা ও নিরলস প্রচেষ্টা
এবং সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল সেখানে
নির্বাচিত সাবেক এই এমপি’র
বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ প্রকাশ করা
হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক। অবশ্য
৫ জানুয়ারি (২০২৩)প্রকাশিত সংবাদ
থেকে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ছাড়া আরও ১২
জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন
দল প্রার্থী না দেওয়ায় সাত্তারের
সঙ্গে লড়বেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি
মনোনীত মো. আবদুল হামিদ।
তবে ভোটের মাঠে তার অবস্থান
নাজুক। অন্য প্রার্থীদের অবস্থানও
দুর্বল হওয়ায় ‘ওয়াকওভার’ পেতে চলেছেন পাঁচবারের
সাবেক এমপি উকিল আব্দুস
সাত্তার। অর্থাৎ ভোটের লড়াইয়ে তাকে খুব একটা
বেগ পেতে হবে না।১৯
জানুয়ারি (২০২৩) তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির
কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি
আরো বলেছেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন- আপনি পদত্যাগ করে
আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আসলে কি ব্যাপার?
এটা সবাই বুঝেন। সব
কথা বলা যায় না।
পরিস্থিতির কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আবার
নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো
অবকাশ নাই। এ সিদ্ধান্ত
দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে
নিয়েছি।’
এছাড়াও
এই রাজনীতিবিদের বক্তব্য হলো- ‘আমি বিএনপির হাইকমান্ডের
নির্দেশে পদত্যাগ করি। পরে বুঝতে
পারি আমি আমার এলাকার
জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারি
নি। তাই আমি স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে
চাইছি।’ তিনি আরও বলেন,
‘স্বতন্ত্র থেকে আমি শুরু
করেছিলাম, আবার স্বতন্ত্র দিয়েই
আমি শেষ করতে চাই।
এজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা
চাই। আপনারা আবার আমাকে কলার
ছড়া মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত
করুন। আমি যেন আপনাদের
বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারি।’
এভাবেই একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের
প্রজ্ঞামণ্ডিত কথা জনগণকে উদ্দীপিত
করেছে।
৪.
তবে
১ ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
ঐক্যের প্রতীক’ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় এবং
স্থানীয় কিছু নেতাদের অসদাচরণ
থেকে বিএনপি’র রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব
আত্মপ্রকাশ করেছে।উপরন্তু বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড
সামনে এসেছে।
প্রতিষ্ঠার
৪৪ বছর অতিক্রম করে
দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল
বিএনপি সার্বিক বিবেচনায় এখন দিশেহারা, অগোছালো
সংগঠন।স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে গোপনে ষড়যন্ত্র করে দলটি এখন
বুদ্ধিদীপ্ত ও গঠনমূলক রাজনীতি
থেকে যোজন যোজন দূরে
অবস্থান করছে। বিএনপিকে দেখে এখন মনে
হয় বার্ধক্যে ভুগছে।দলটির নেতাদের এখনো যেকোনো সিদ্ধান্ত
নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। দোটানা
ভাব তো আছেই তার
উপর অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেন
তারা। সহজ, সরলভাবে চিন্তা
করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে নেতাদের।রাজনীতির
মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তা
ও ভাবভঙ্গি এখন কাণ্ডারীহীন, লক্ষ্যহীন
যাত্রীর পথ অতিক্রান্ত করার
মতো।২০২০ সালে দলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই সংসদে
গিয়েছিলেন বিএনপির সদস্যরা।সেসময় থেকে ২০২২ অবধি
সংসদে এমন কোনো ভূমিকা
রাখতে পারেননি, যা বিএনপির জন্য ইতিবাচক
হতে পারে। বরং বিএনপির এক
সদস্য সংসদে বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃপায় তিনি সংসদে প্রবেশ
করতে পেরেছেন। আরেক সাংসদ তাঁর
বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ী ও
সন্ত্রাসীদের ‘ক্রসফায়ার’দেওয়ার দাবি তুলে ভয়ঙ্কর
মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে যেতে পেরে ও
সরকারি ভাতা পেয়েই খুশিতে
গদগদ ছিলেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ ১৪ বছর
ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে
অনেক নতুন নতুন ভোটার
যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে এঁদের অনেকেই
এখন খোঁজখবর রাখেন। এঁদের সামনে বিএনপি নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরতে পারেনি।বিএনপির
সাংসদদের বালখিল্য আচরণ জনমনে যথেষ্ট
হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে, এবং তাদের মাঠের
রাজনীতিও তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট
করতে পারছে না।পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামায়াত ২০০৪ সালের ২১
আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা তথা
এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার
নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তাদের
সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০
সালের করোনা মহামারি কিংবা ২০২২ সালে শুরু
হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণকে কোনো ভালো কথা
বলে পাশে থাকার প্রত্যয়
ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি
বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির
নেতা-কর্মীদের।করোনা ব্যাধির দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে থাকা জনসম্পৃক্ততার
অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারত এই
রাজনৈতিক দলটির।কিন্তু মানুষের জন্য দায়বদ্ধ নন
সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কৃষকের
ধান কাটা থেকে শুরু
করে দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে
যুক্ত ছিলেন। জনসম্পৃক্ততার কারণে বেশ কিছু আওয়ামী
লীগ নেতা করোনায় আক্রান্ত
হয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র লক্ষণীয় কোনো
কাজ চোখে পড়ে নি।
বরং মহামারি মোকাবেলায় সরকারের বিপুল প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে কুণ্ঠিত হতে দেখা গেছে
তাদের। সরকারের কোনো কোনো ইস্যুতে
তারা সমালোচনামুখর হয়েছেন, সফল ও সুন্দর
উদ্যোগকে ব্যঙ্গ করেছেন।পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সাফল্যও
তারা স্বীকার করেন না। প্রকৃতপক্ষে
রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার জন্য বিএনপি অনেক
কাজ করে থাকে।আসলে উন্নয়ন
নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ
নেই। দেশের বর্তমান উন্নয়নের চেয়ে তাদের সময়ে
অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে-
এটা বলা কেবল বাতুলতা।সরকারের
দুর্নীতির কথা বলারও সুযোগ
নেই। কারণ দুর্নীতির দায়ে
তাদের শীর্ষ নেতারা উচ্চ আদালত পর্যন্ত
দণ্ডিত হয়েছেন। কাজেই তাদেরকে আবার পুরানো ধারায়
ফিরে যেতে হচ্ছে।গুরুত্বহীন ইস্যুতে
সরকার বিরোধিতা তো আছেই, তার
সঙ্গে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির
উপর তাদেরকে নির্ভর করতে দেখা যাচ্ছে।
বিএনপি’র এই অপরাজনীতির
ধারা থেকে বের হয়ে
এসেছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া।
৫.
বার্ধক্য
উকিল আবদুস সাত্তারকে দমাতে পারেনি। তিনি যেন পুনরায়
সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে সংগ্রাম শুভ
বোধের উন্মীলন ঘটাবে।যে সংগ্রাম তাঁকে যুদ্ধজয়ী করে তুলবে।বিএনপি তাঁর
বহিষ্কারের ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকে
কারণ দেখিয়েছে।কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বিএনপি কি আদৌ সুশৃঙ্খল
একটি দল? বরং বিএনপি’কে ত্যাগ করে
তিনি মানুষের কল্যাণের রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন।সংবাদপত্রের সূত্রে জানা
গেছে, উকিল আবদুস সাত্তার
ভূঁইয়াকে এলাকার স্বার্থে ভোট দিবেন এবং
নির্বাচনে কাজ করবেন ব্যাপক
সংখ্যক সাধারণ মানুষ।এলাকাবাসীর অভিমত হলো- উকিল আবদুস
সাত্তার ভূঁইয়া একজন ভাল মানুষ
ও ভদ্রলোক তাই সাধারণ মানুষ
তাঁর পক্ষে রায় দিবেন।এছাড়া তিনি
কারো ক্ষতি করেননি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ,
সৎ ব্যক্তি।’ তাঁর ছেলে মাইনুল
হাসান তুষার বলেছেন, ‘আগে বাবার নির্বাচনে
শুধু বিএনপির লোকজন মাঠে থাকতেন। এখন
তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ফলে দলমত নির্বিশেষে
সবাই আমার বাবার পক্ষে
আছেন। আমরা এটিকে স্বাগত
জানিয়েছি।’ ১ ফেব্রুয়ারি ভোট
দিয়ে উকিল আবদুস সাত্তারকে
নির্বাচিত করার এলাকাবাসীর প্রতিশ্রুতিতে
আমরা শুভবোধের জয় ঘোষিত হতে
দেখছি।উক্ত আসনের ৩ লক্ষ, ৭৩
হাজার, ১শ’ ৪৮ জন
ভোটার তাঁর পক্ষে থাকবেন-
এই প্রত্যাশা আমাদের।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।