ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও
আশুগঞ্জ)আসনের উপ-নির্বাচনের অন্যতম
প্রতিদ্বন্দ্বী উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া ইস্যুতে বিএনপি’র অপরাজনীতির স্বরূপ
উন্মোচিত হয়েছে।সেখানে ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিদের মূল্য দেওয়ার দলীয় কৌশল জনগণের
সামনে প্রকাশ্যে এসেছে।শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতায়
এগিয়ে থাকা উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে
হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে দলটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
বিএনপির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন
তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে গত
১১ ডিসেম্বর(২০২২) তিনি জাতীয় সংসদ
থেকে পদত্যাগ করেন।২৯ ডিসেম্বর তিনি দলে গুরুত্ব
না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি থেকে
পদত্যাগ করেন। এদিকে দল থেকে পদত্যাগের
পর ওই আসন থেকেই
আবারো নির্বাচনের জন্য ১ জানুয়ারি
মনোনয়নপত্র কেনেন তিনি।ওইদিন রাতে কেন্দ্র থেকে
দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে দলের
সব পদ থেকে বহিষ্কার
করা হয়।এই উপনির্বাচনে তার বিপরীতে শক্তিশালী
কোনো প্রার্থী না থাকায় সহজেই
তিনি জয় পাবেন বলে
ধারণা করা হচ্ছে। আগামী
১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত
হবে।
২.
দলীয়
সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরও
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতারা যে আচরণ করেছেন
তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এদিকে বিএনপির পদত্যাগে শূন্য আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এ ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী
করছে না। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ
উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
করায় বিষয়টি অন্যান্য দলের কাছে ইতিবাচক
মনে হয়েছে।১ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদসূত্র অনুসারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা
জিল্লুর রহমানের বক্তব্য- ‘বিকালে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে সাদ মোহাম্মদ রশিদ
সাড়ে আট হাজার টাকার
চালান জমা দিয়ে নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম
কিনেছেন।’ বিএনপি যে সুস্থ ধারার
রাজনীতির বিপক্ষে তা স্পষ্ট হয়েছে
বিএনপি ত্যাগ করে রাজনীতিবিদ উকিল
আব্দুস সাত্তারের এই মনোনয়নপত্র কেনার
ঘটনায়।
উকিল
আব্দুস সাত্তার কুমিল্লা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা
সহসভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়
সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন
না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে জয় লাভ করেন।এরপর
তিনি পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারি), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২
জুন) এবং ২০১৮ সালের
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের
শীষে নির্বাচিত হন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৮ বছর।২০০১ সালে
উকিল আবদুস সাত্তার টেকনোক্র্যাট কোটায় খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী(২০০১-২০০৬)হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির
সেই মেয়াদের বিভিন্ন সময় তিনি চারটি
মন্ত্রণালয়ে (আইন, ভূমি, মৎস্য
এবং বিদ্যুৎ) দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি
এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে
কোন মামলা নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক
ক্যারিয়ার রয়েছে উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার। ৫ বার সংসদ
সদস্য নির্বাচিত এই ব্যক্তি বিএনপি
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির
উপদেষ্টা ছিলেন।তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বার এ্যাসোসিয়েশন
এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও
ছিলেন।পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিএনপি
থেকে পদত্যাগ করে শূন্য হওয়া
আসনের উপ-নির্বাচনে নিজে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্মতি প্রদানের মধ্যেও আছে তাঁর দেশপ্রেমের
প্রকাশ।এজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমাত্র
ছেলে মাইনুল হাসান তুষারকে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা পোষণ
করেছেন।তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের
পিছনে যুক্তিও আছে। কারণ বিগত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল
থেকে দেখা যায়, তিনি
এলাকায় জনগণের আস্থার প্রতীক।সৎ ও সজ্জন বলে
বিএনপি’র আদর্শহীন ও
দুর্নীতির পরিপোষক নেতারা তাঁর শত্রু হয়ে
উঠেছেন।
৩.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
সরাইল বাড়ি উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়ার।তিনি ১৯৭৯ সালেই বিপুল
ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার
মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত হন।তারপর তিন দশকের পথ
চলায় তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা
যেমন পরিপক্ব হয়েছে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চিনেছেন নিবিড়ভাবে। কেবল মানুষ নয়
তিনি প্রকৃতি ও প্রশাসনের এক
অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন।ক্রমান্বয়ে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী
হয়ে দেশের অন্যতম স্বচ্ছ রাজনীতির ধারাকে বেগবান করেন।বিএনপি’র মতো দলের
নেতা হয়েও নিজেকে সততার
কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে মানুষের মাঝে
টিকে থাকা চাট্টিখানেক কথা
নয়।রাজনীতির দুষ্টচক্রকে দূরে ঠেলে নিজেকে
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে
তুলেছেন এই নেতা।কেন্দ্রীয় বিএনপির
নেতা, সরাইল-আশুগঞ্জ এর নির্বাচিত সাংসদ
ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এলাকায় নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে তাঁর। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে
ভূমি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের
অভিযোগ থাকলেও তিনি নিজে যে
নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেন
এটা পরিষ্কার।
তবে
বিএনপি বহিষ্কার করার তিন দিন
আগে ২৯ ডিসেম্বর(২০২২)
প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ
ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন উকিল সাত্তার, যা
৩১ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন তিনি।বিএনপি ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে
উকিল সাত্তার পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি
করেছি।দলের যে কোনো সময়ে
যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা
মানছি।সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সংসদ থেকে পদত্যাগ-
এটাও মাইনা পদত্যাগ করেছি পার্লামেন্ট থেকে।এখন বুঝতে পারছি যে দলে আমাদের
প্রয়োজন নেই; দলের কর্মকাণ্ডে
তা বুঝতে পারছি। বৃদ্ধ হয়ে গেছি… মান
সম্মান থাকতে থাকতে দল থেকে চলে
আসছি।’
উকিল
আবদুস সাত্তারকে ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বদলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।(দৈনিক
সংবাদ, ২১ জানুয়ারি ২০২৩)২১ জানুয়ারি স্থানীয়
এক মতবিনিময় সভায় সরাইলের আওয়ামী
লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির
বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা
উপস্থিত ছিলেন।সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সভায় উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ সেখানে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যান
অংশ নেন।সাত্তার সাহেব যে ভালো মানুষ,
সৎ মানুষ এটা সভায় উল্লেখ
করে তাঁকে বিজয়ী করতে হবে বলে
মতামত ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।সভায় উপস্থিত
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও
জনপ্রতিনিধিরা তাঁর প্রতি সমর্থন
প্রকাশ করেন।
এর আগে ২ জানুয়ারি
আবদুস সাত্তারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।দুই সপ্তাহ
পরেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তবে যেখানে ‘বি্এনপি’
নামক দলের নেতাকর্মী ও
সমর্থকদের ভালোবাসা ও নিরলস প্রচেষ্টা
এবং সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল সেখানে
নির্বাচিত সাবেক এই এমপি’র
বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ প্রকাশ করা
হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক। অবশ্য
৫ জানুয়ারি (২০২৩)প্রকাশিত সংবাদ
থেকে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ছাড়া আরও ১২
জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন
দল প্রার্থী না দেওয়ায় সাত্তারের
সঙ্গে লড়বেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি
মনোনীত মো. আবদুল হামিদ।
তবে ভোটের মাঠে তার অবস্থান
নাজুক। অন্য প্রার্থীদের অবস্থানও
দুর্বল হওয়ায় ‘ওয়াকওভার’ পেতে চলেছেন পাঁচবারের
সাবেক এমপি উকিল আব্দুস
সাত্তার। অর্থাৎ ভোটের লড়াইয়ে তাকে খুব একটা
বেগ পেতে হবে না।১৯
জানুয়ারি (২০২৩) তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির
কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি
আরো বলেছেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন- আপনি পদত্যাগ করে
আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আসলে কি ব্যাপার?
এটা সবাই বুঝেন। সব
কথা বলা যায় না।
পরিস্থিতির কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আবার
নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো
অবকাশ নাই। এ সিদ্ধান্ত
দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে
নিয়েছি।’
এছাড়াও
এই রাজনীতিবিদের বক্তব্য হলো- ‘আমি বিএনপির হাইকমান্ডের
নির্দেশে পদত্যাগ করি। পরে বুঝতে
পারি আমি আমার এলাকার
জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারি
নি। তাই আমি স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে
চাইছি।’ তিনি আরও বলেন,
‘স্বতন্ত্র থেকে আমি শুরু
করেছিলাম, আবার স্বতন্ত্র দিয়েই
আমি শেষ করতে চাই।
এজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা
চাই। আপনারা আবার আমাকে কলার
ছড়া মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত
করুন। আমি যেন আপনাদের
বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারি।’
এভাবেই একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের
প্রজ্ঞামণ্ডিত কথা জনগণকে উদ্দীপিত
করেছে।
৪.
তবে
১ ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
ঐক্যের প্রতীক’ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় এবং
স্থানীয় কিছু নেতাদের অসদাচরণ
থেকে বিএনপি’র রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব
আত্মপ্রকাশ করেছে।উপরন্তু বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড
সামনে এসেছে।
প্রতিষ্ঠার
৪৪ বছর অতিক্রম করে
দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল
বিএনপি সার্বিক বিবেচনায় এখন দিশেহারা, অগোছালো
সংগঠন।স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে গোপনে ষড়যন্ত্র করে দলটি এখন
বুদ্ধিদীপ্ত ও গঠনমূলক রাজনীতি
থেকে যোজন যোজন দূরে
অবস্থান করছে। বিএনপিকে দেখে এখন মনে
হয় বার্ধক্যে ভুগছে।দলটির নেতাদের এখনো যেকোনো সিদ্ধান্ত
নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। দোটানা
ভাব তো আছেই তার
উপর অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেন
তারা। সহজ, সরলভাবে চিন্তা
করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে নেতাদের।রাজনীতির
মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তা
ও ভাবভঙ্গি এখন কাণ্ডারীহীন, লক্ষ্যহীন
যাত্রীর পথ অতিক্রান্ত করার
মতো।২০২০ সালে দলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই সংসদে
গিয়েছিলেন বিএনপির সদস্যরা।সেসময় থেকে ২০২২ অবধি
সংসদে এমন কোনো ভূমিকা
রাখতে পারেননি, যা বিএনপির জন্য ইতিবাচক
হতে পারে। বরং বিএনপির এক
সদস্য সংসদে বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃপায় তিনি সংসদে প্রবেশ
করতে পেরেছেন। আরেক সাংসদ তাঁর
বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ী ও
সন্ত্রাসীদের ‘ক্রসফায়ার’দেওয়ার দাবি তুলে ভয়ঙ্কর
মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে যেতে পেরে ও
সরকারি ভাতা পেয়েই খুশিতে
গদগদ ছিলেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ ১৪ বছর
ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে
অনেক নতুন নতুন ভোটার
যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে এঁদের অনেকেই
এখন খোঁজখবর রাখেন। এঁদের সামনে বিএনপি নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরতে পারেনি।বিএনপির
সাংসদদের বালখিল্য আচরণ জনমনে যথেষ্ট
হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে, এবং তাদের মাঠের
রাজনীতিও তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট
করতে পারছে না।পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামায়াত ২০০৪ সালের ২১
আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা তথা
এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার
নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তাদের
সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০
সালের করোনা মহামারি কিংবা ২০২২ সালে শুরু
হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণকে কোনো ভালো কথা
বলে পাশে থাকার প্রত্যয়
ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি
বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির
নেতা-কর্মীদের।করোনা ব্যাধির দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে থাকা জনসম্পৃক্ততার
অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারত এই
রাজনৈতিক দলটির।কিন্তু মানুষের জন্য দায়বদ্ধ নন
সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কৃষকের
ধান কাটা থেকে শুরু
করে দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে
যুক্ত ছিলেন। জনসম্পৃক্ততার কারণে বেশ কিছু আওয়ামী
লীগ নেতা করোনায় আক্রান্ত
হয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র লক্ষণীয় কোনো
কাজ চোখে পড়ে নি।
বরং মহামারি মোকাবেলায় সরকারের বিপুল প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে কুণ্ঠিত হতে দেখা গেছে
তাদের। সরকারের কোনো কোনো ইস্যুতে
তারা সমালোচনামুখর হয়েছেন, সফল ও সুন্দর
উদ্যোগকে ব্যঙ্গ করেছেন।পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সাফল্যও
তারা স্বীকার করেন না। প্রকৃতপক্ষে
রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার জন্য বিএনপি অনেক
কাজ করে থাকে।আসলে উন্নয়ন
নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ
নেই। দেশের বর্তমান উন্নয়নের চেয়ে তাদের সময়ে
অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে-
এটা বলা কেবল বাতুলতা।সরকারের
দুর্নীতির কথা বলারও সুযোগ
নেই। কারণ দুর্নীতির দায়ে
তাদের শীর্ষ নেতারা উচ্চ আদালত পর্যন্ত
দণ্ডিত হয়েছেন। কাজেই তাদেরকে আবার পুরানো ধারায়
ফিরে যেতে হচ্ছে।গুরুত্বহীন ইস্যুতে
সরকার বিরোধিতা তো আছেই, তার
সঙ্গে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির
উপর তাদেরকে নির্ভর করতে দেখা যাচ্ছে।
বিএনপি’র এই অপরাজনীতির
ধারা থেকে বের হয়ে
এসেছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া।
৫.
বার্ধক্য
উকিল আবদুস সাত্তারকে দমাতে পারেনি। তিনি যেন পুনরায়
সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে সংগ্রাম শুভ
বোধের উন্মীলন ঘটাবে।যে সংগ্রাম তাঁকে যুদ্ধজয়ী করে তুলবে।বিএনপি তাঁর
বহিষ্কারের ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকে
কারণ দেখিয়েছে।কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বিএনপি কি আদৌ সুশৃঙ্খল
একটি দল? বরং বিএনপি’কে ত্যাগ করে
তিনি মানুষের কল্যাণের রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন।সংবাদপত্রের সূত্রে জানা
গেছে, উকিল আবদুস সাত্তার
ভূঁইয়াকে এলাকার স্বার্থে ভোট দিবেন এবং
নির্বাচনে কাজ করবেন ব্যাপক
সংখ্যক সাধারণ মানুষ।এলাকাবাসীর অভিমত হলো- উকিল আবদুস
সাত্তার ভূঁইয়া একজন ভাল মানুষ
ও ভদ্রলোক তাই সাধারণ মানুষ
তাঁর পক্ষে রায় দিবেন।এছাড়া তিনি
কারো ক্ষতি করেননি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ,
সৎ ব্যক্তি।’ তাঁর ছেলে মাইনুল
হাসান তুষার বলেছেন, ‘আগে বাবার নির্বাচনে
শুধু বিএনপির লোকজন মাঠে থাকতেন। এখন
তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ফলে দলমত নির্বিশেষে
সবাই আমার বাবার পক্ষে
আছেন। আমরা এটিকে স্বাগত
জানিয়েছি।’ ১ ফেব্রুয়ারি ভোট
দিয়ে উকিল আবদুস সাত্তারকে
নির্বাচিত করার এলাকাবাসীর প্রতিশ্রুতিতে
আমরা শুভবোধের জয় ঘোষিত হতে
দেখছি।উক্ত আসনের ৩ লক্ষ, ৭৩
হাজার, ১শ’ ৪৮ জন
ভোটার তাঁর পক্ষে থাকবেন-
এই প্রত্যাশা আমাদের।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।