ইনসাইড থট

নবাবদের দিলখুশার বাগানবাড়ি থেকে বঙ্গভবন!

প্রকাশ: ০৮:৩১ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

১৯০৫-২০২৩। বৃটিশ-ভারত শাসনামলে ঢাকার দিলখুশার বাগানবাড়ি থেকে লাটভবন। পাকিস্তান শাসনামলে লাটভবন থেকে গর্ভনর হাউজ। স্বাধীন বাংলাদেশে গভর্নর হাউজ থেকে বঙ্গভবন। অর্থাৎ  ছোটলাট লেফটেন্যান্ট গর্ভনরের বাসভবন থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাসভবন। এ বাসভবনের বাসিন্দা হিসাবে নাম লিখিয়েছেন ছোটলাট লেফটেন্যান্ট গর্ভনর স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ। কটাদিন পরেই বঙ্গভবন বরণ করে নিতে যাচ্ছে  নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীনকে। 

বঙ্গভবন কখনও হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, আবার কখনও আলংকারিক মর্যাদার প্রতীক। ১৯০৫ সালর ২০ জুলাই বৃটিশ পার্লামেন্ট "বঙ্গভঙ্গ আইন পাসের মাধ্যমে বাংলাকে ভাগ করে সৃষ্টি  করেছিল পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি প্রদেশ। যার আয়াতন হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৬৯ বর্গমাইল। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর প্রদেশটির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন শাসনকর্তা লেফটেন্যান্ট গর্ভনর ও তাঁর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজন হয় সুরক্ষিত অফিস ও বাসাবাড়ির। এর প্রেক্ষিতে ভারত ভাইসরয় লর্ড কার্জন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর দিলখুশা বাগানবাড়িটি পছন্দ করেন এবং  বার্ষিক ১১ হাজার টাকায় স্থায়ীভাবে তা লীজ নেন। আর এখানেই নির্মাণ করা হয় লেফটেন্যান্ট গর্ভনরের জন্য বাসভবন। তাঁকে ছোটলাট বলে অভিহিত করা হতো বলে অচিরেই এর নাম হয়ে ওঠে "লাটভবন"।  পরবর্তীতে "গভর্নর হাউজ"। পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গর্ভনর হাউজের নামকরণ করেন "বঙ্গভবন"।

ছোটলাটের বসবাসের জন্য সেই সময়ে ইস্পাতের ফ্রেমের ওপর সেগুনকাঠ দিয়ে বাড়ীটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরাকাঠের বাড়ীর আদলে "মঈনউদ্দীন চিশতী এ্যান্ড ব্রাদার্স" নামের একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান বর্তমান ভবনটির নকশা প্রনয়ন করে  বর্তমান ভবনটি নির্মাণ করে। মূল ভবনের সঙ্গে প্রস্তুরখন্ড সংযুক্ত করা হয়। যাতে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী হরফে পবিত্র কুরআনের দুটো আয়াত খোদাই করা হয়। এক- " প্রতিপালক প্রভু আমার, ইহাকে নিরাপদ শহরে পরিণত কর" এবং অপর আয়াতটিতে লেখা রয়েছে,"শান্তি হউক তোমাদের উপর, তোমরা পবিত্র জীবনযাপন করিয়াছ, সুতরাং চিরকালের জন্য (জান্নাতে) প্রবেশ কর।" 

স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর থেকে বঙ্গভবনের সুউচ্চ গোলাকার চূড়ার সামনে প্রতিদিন সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুটো পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্য অস্তমিত হওয়ার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে তা নামিয়ে ফেলা হয়। একটি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং অন্যটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির পতাকা। বঙ্গভবনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দিত এক একটি দরবার হল। যে হলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এর পূর্বপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে একটি মঞ্চ। 

বঙ্গভবনের পশ্চিমাংশ ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়। তারপরও জমির পরিমাণ ৫৪  একর ৫০ শতাংশ। ১৮৬৬ সালে ইংরেজ ই এফ স্মিথের কাছ থেকে নবাব আবদুল গণি এই জমি কিনেন এবং বড়পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর ব্যবহারের জন্য একটি বাগানবাড়ী তৈরি করেন। যার নামকরণ করেন "দিলখুশা বাগানবাড়ি"। ১৮৭৩ সালে আহসানউল্লাহ বড় একটা দিঘি খনন করেন এবং দিঘিতে শান বাঁধানো ঘাটের ওপর একটা "হাওয়াখানা" তৈরি করেন। এখনও দানা দিঘী নামে যেটা পরিচিত। বর্তমানে বঙ্গভবনের মূলগেটে দাঁড়িয়ে সোজা পূর্বদিকে তাকালে মূলভবনের গেট, ক্রেডিনসিয়াল হল গেট, রাষ্ট্রপতির বাসভবন গেট এবং বাসভবন থেকে পূর্বদিকে বেরিয়ে যাবার গেট একই সমান্তরালে নির্মিত। বঙ্গভবন কমপ্লেক্সে আছে পয়ষট্টিটি বিল্ডিংয়ের ফ্লোর এরিয়া বিয়াল্লিশ হাজার তিনশত পঁচাত্তর বর্গমিটার। মূল ভবনের ফ্লোর এরিয়া নয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি বর্গমিটার। বঙ্গভবন কমপ্লেক্মের অভ্যন্তরে চব্বিশ হাজার বর্গমিটার সুন্দর রাস্তা রয়েছে। সবুজ উন্মুক্ত এলাকা আছে প্রায় আটচল্লিশ একর। বঙ্গভবনের উত্তর পাশের সবুজ চত্বরে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষঙ্গ যেমন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের সম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়। সবুজ চত্বরের পশ্চিমপাশে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রাচীন " মানুক হাউজ" এখন তোষাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই তোষাখানায় অনেক মূল্যবান  সামগ্রী আছে। এসব সামগ্রী বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে প্রাপ্ত। বঙ্গভবন কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে কিচেন বিল্ডিং, মেশিন রূম, স্কোয়াশ কোর্ট বিল্ডিং, বিমান আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকার বিল্ডিং, টেনিসকোর্ট, পিজিআর ও পুলিশ ব্যারাক, ব্যাংক, পোষ্ট অফিস, মসজিদ, অভ্যর্থনা কক্ষ, ইলেকট্রিক সাব স্টেশন, গ্যারেজ, পেট্রোল পাম্প, গণপূর্ত অফিস, নার্সারী ও আরবারি কালচার অফিস, টেলিফোন অফিস ইত্যাদি। মূল বঙ্গভবন কমপ্লেক্সের বাইরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য তিনটি পৃথক আবাসিক এলাকাও আছে। তিন তলা বিশিষ্ট বঙ্গভবনের মূল ভবনটি দেখতে খুবই সুন্দর ও জাঁকালো। গাড়ী থামানোর স্থানে সবসময় ডিউটিরত থাকেন রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা। মূল গেটেও তারা ডিউটিরত থাকেন। গাড়ী থেকে নেমেই বারান্দা, দুপাশে দুটো গ্রান্ডফাদার ঘড়ি। এ দুটো ঘড়ির মালিক ছিলেন নাটোরের জমিদার।  এখনও ঘড়ি দুটো সচল। মূল ভবনটি তিনভাগে বিভক্ত। প্রথমে রাষ্ট্রপতির অফিস, কর্মকর্তাদের অফিস এবং রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের জন্য দুটো সজ্জিত কামরা। এছাড়াও মন্ত্রিসভা কক্ষ ও বিশিষ্ট অতিথিদের বসার স্থান। মধ্যম অংশে দরবার হল। অভ্যর্থনা হল, গ্যালারি কক্ষ, স্টেট ডাইনিং হল ও ক্রেডিনসিয়াল হল। তৃতীয় অংশে রাষ্ট্রপতির বাসভবন। দোতালায় কর্মকর্তাদের বসার স্থান এবং তিন তলায় রাষ্ট্রীয় অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। যা কিচেন কমপ্লেক্সের একটা কামরায় সজ্জিত আছে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত। ব্রিটিশ আমলের কিছু রূপার কাটলারি এখনও আছে। যা দিয়ে এক সাথে সত্তর জনের ডিনারের ব্যবস্থা করা যায়। এসব কাটলারি ও ক্রোকারিজের মধ্যে আছে ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড, ছুরি,ককটেল, স্পুন, ফিশ নাইফ, বাটার নাইফ, পিপার পট, ট্রে, ফ্রুট নাইফ ইত্যাদি। হাতির দাঁতের বাটসহ কাটা চামচ ও বতরদানী এখনও আছে। গভর্নরের মনোগ্রাম সম্বলিত টি ও কফি সেটও রয়েছে। রূপার তলোয়ার অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। গভর্নর হাউজের কাটলারি ও ক্রোকারিজ পলিশ করে রাখেন "সিলভারম্যান" পদে থাকা একজন। বঙ্গভবন মূল ভবনের পশ্চিম পাশে অর্থাৎ গাড়ী বারান্দার পশ্চিম দিকে ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়। 

বিভিন্ন সময় বঙ্গভবনের সংস্কার ও তা সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়। বিদেশ থেকে ঝাড়বাতি ও কার্পেট আর সোফা সেট আনা হয়। দরবার হল লাগোয়া উত্তর পাশে এক্সটেনশন করা হয়। এটাই বঙ্গভবনের উত্তর প্লাজা। বঙ্গভবনের কাঠের দরজার কারুকার্য করা হয় পিতলের পাত দিয়ে। মূল গেটের সামনে একটা ফোয়ারা তৈরি করা হয় এবং বড় বড় অনুষ্ঠানের সময় গাড়ী পার্ক করারও ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গভবনের প্রধান করিডরের জন্য তখনকার সময়েই কোটি টাকা মূল্যের কার্পেট বিছিয়ে দেয়া হয়। স্বাধীনতার আগেই দুটো সিংহ মূর্তি তৎকালীন উত্তরা গভর্নর হাউজ থেকে এনে বর্তমান বঙ্গভবনের গেটের দুপাশে স্থাপন করা হয়।

রাষ্ট্রপতির অফিসে আসা-যাওয়ার সময়ে অধিক আওয়াজ ও শক্তিসম্পন্ন একটা কলিং বেল বাজানো হয়। কার্পেটের পরিবর্তে এখন মেঝেতে টাইলস বসানো। নতুন করে অত্যাধুনিক বাথটাব নির্মাণ করা হয়েছে। মূলগেটে রয়েছে দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা। শাহজালাল দখিনী, চন্দন শাহ ও নওগাজী মাজার (শহীদ গম্বুজ) এর সংস্কার করা হয়েছে। 

বঙ্গভবনের ইতিহাসে চোখ রাখলে বিস্ময়কর নানারকম ঘটনারও সাক্ষাত মেলে। বঙ্গভবনে নিম্নপদস্থ কতগুলো পদ রয়েছে যাতে মোগল, ইংরেজ ও পাকিস্তানি আমলের রীতিনীতিগুলো এখনও পালনীয়। লশকর, খালাশি, মশালচি, চাপরাশি, চোপদার জমাদার ও খেদমতগার - পদগুলো মোগল আমলের জমিদারি ঐতিহ্যেরই সারথি। ব্রিটিশ বা ইংরেজ আমলে সৃষ্টি করা হয় বাটলার, প্যান্ট্রিম্যান, কুক, কুকমেট, মার্কেট ম্যান, টেনিস মার্কার, টেনিস স্পিকার ও স্টুয়ার্ট ইত্যাদি। পাকিস্তান আমলে সৃষ্টি করা "আবদার" নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়- এ পদে নিয়োজিত ব্যক্তির কাজ হলো পানীয় সরবরাহ করা। এখনও উপরোক্ত পদগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে। নতুন পরিবেশ পরিস্থিতিতে কাজের ধরন পাল্টে গেলেও বঙ্গভবনের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মনোরঞ্জণের এ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। বঙ্গভবনের সীমানা আগে আরও বড় ছিল। এর সীমা ছিল বর্তমান গুলিস্তান ভবনের পূর্বপাশের রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমান বঙ্গভবনের পশ্চিমাংশের বিরাট এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছিল "আইউব শিশু পার্ক।" উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশের ছাত্র মতিউর রহমান ও ছাত্রনেতা আসাদুর রহমান আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা "আইউব গেট" এর নাম "আসাদ গেট" এবং "আইউব শিশুপার্ক" এর নাম "মতিউর শিশুপার্ক" রাখে। ২০০০ সালে ওখানে গড়ে ওঠে "মহানগর নাট্যমঞ্চ।" ওখানে একটা প্রাচীন পুকুরের অস্তিত্ব রয়েছে। মীর মুকিমের বাড়ি ছিল ওখানে। ওই পুকুরের পূর্বপাশে দুটো রাস্তা - উত্তর-দক্ষিণ যাতায়াতের জন্য। ওই রাস্তা দুটোর পূর্বপাশে বেশকিছু এলাকাজুড়ে মূল্যবান গাছ এবং তারপরই সীমানা প্রাচীর। বর্তমান বঙ্গভবন মূলগেটের উত্তর বরাবর আগে ছিল পাঁচটি কাঠের বাড়ী- উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। এখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বাস করতেন। গভর্নরের সচিব, সামরিক সচিব, এডিসি এখানেই বাস করতেন। দানা দিঘির পশ্চিম পাশে সচিব ও সামরিক সচিবের জন্য দুটো বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। উত্তর পশ্চিম কোনে নির্মাণ করা হয়েছিল এডিসি ও অন্যান্য কর্মকতার জন্য বাড়ী। ওই কাঠের বাড়ীগুলোর অস্তিত্ব এখন নেই।  বর্তমান বঙ্গভবনের উত্তর পশ্চিম কোনে গভর্নর মালিক ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী লেডী ভিকারুননিসা নূন রমনায় ভিকারুননিসা নুন স্কুলই শুধু নয়, বঙ্গভবনের ভেতরে একটি প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মালী, খালাসী, দর্জি, ক্ষৌরকার, বাটলার ইত্যাদি নিম্নপদস্থদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য। বঙ্গভবনের পূর্ব পাশে রয়েছে চন্দন শাহ'র মাজার।

 বঙ্গভবন কখনও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু আবার কখনও আলংকারিক মর্যাদার কেন্দ্র। যাই হোক, নিশ্চয়ই বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন