ইনসাইড থট

দিল্লির মাতৃভাষা দিবস ও মেডিক্যাল ট্যুরিজম

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে দেশীয় সংস্কৃতির উপস্থাপনা দেখার অনুভূতি অন্যরকম। ভারতের দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে এমনই এক অনুভূতিতে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। রোমের কোলোসিয়াম, জার্মানি-অস্ট্রিয়া-সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে লেক কনস্টেন্সের তীর, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, নিউইয়র্কের মেডিসিনস্কয়ার, এমনকি লন্ডনের টেমস নদীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে বাংলায় কথা বলা মানুষ পেলে চমকে উঠেছি। উপযাচক হয়ে আলাপ করেছি। তাদেরকে বড্ড আপন মনে হয়েছে। আলাপের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকের সঙ্গে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্ব। দিল্লিতে বিশেষ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান।

এই একুশ আমাদের আবেগ, আমাদের অনুভূতির জায়গা। শৈশবে গ্রামের স্কুলে কলাগাছ দিয়ে রাত জেগে শহীদ মিনার তৈরি, মানুষের বাগান থেকে ফুল চুরি করে ভোরে প্রভাতফেরির পর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর স্মৃতি আজও জ্বলজ্বলে। রাজধানীতে পড়ালেখা করতে এসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রথম অভিজ্ঞতা জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি সারাদিন বরাদ্দ ছিল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এবং বাংলা একাডেমি বইমেলার জন্য। এমন একটি দিনে দেশমাতৃকা থেকে হাজার মাইল দূরে দিবসটি উদ্যাপন করতে পারার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে জীবনের অন্যতম ঘটনা।

ঘটনাক্রমে সেদিন আমাদের অবস্থান ছিল দিল্লিতে। প্রিয়তমা স্ত্রীর একটি জটিল রোগের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল সেখানে। তাঁর বুকের বাম পাশে ব্যথা থেকে শুরু সেই দুঃসহ তিনটি সপ্তাহ। ডাক্তারের কাছে যাওয়া, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে একটি আশঙ্কার জানান দেওয়ার পর আমার পরিবারের কি অবস্থা হয়েছিল তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। তিনটি সপ্তাহের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের কেটেছে উদ্বেগ এবং অজানা আতঙ্কে।

দৈনন্দিন সব কাজই হয়েছে অনুভূতিহীন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে। রাস্তা হেঁটেছি যেন গন্তব্যহীন উদ্দেশ্যে। খাদ্য গ্রহণ করেছি ক্ষুধা ও চাহিদাহীন রুটিন কাজে। কথা বলেছি আবেগ-অনুভূতিহীন কণ্ঠে। শীলার মুখের দিকে তাকানো যেত না। ছেলে-মেয়েরা হাসতে ভুলে গিয়েছিল। পৃথিবীর সবকিছু মনে হয়েছে অর্থহীন। 

২৫ বছর আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হৃদয় দেওয়া- নেওয়ার প্রক্রিয়ায়। এর পর আমার ছোট্ট একটি সংসার হয়েছে। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকার পরও সে ছোট্ট সংসারকেই বেছে নিয়েছিল কর্মক্ষেত্র হিসেবে। তিলে তিলে গড়ে তুলেছে সাজানো-গোছানো একটি সংসার। আমার ভূমিকা শুধু তাকে সঙ্গ দেওয়া। ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি, মান-অভিমান বাদ দিলে আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমরা একটি সুখী পরিবার। এর মধ্যে তার অসুস্থতা যেন সবকিছু উলট-পালট করে দিতে চেয়েছে।

বাড্ডা এএমজেড হাসপাতালের তরুণ ডাক্তার সায়েমের চিকিৎসা পদ্ধতি, গভীর আত্মবিশ্বাস আমাদের সাহস যুগিয়েছে। পাশে ছিলেন আরও তিন ভাগ্নে ডাক্তার সামিদ, মনির এবং ফারহান। সিটি স্ক্যানের মারাত্মক ইঙ্গিতেও ডা. সায়েম খুব আত্মবিশ্বাসী। আরও পরীক্ষায় যাওয়ার আগে তিনি মাত্র এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। শুরু হলো তার চিকিৎসা। এর মধ্যে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, আমাদের সম্পাদক এবং নিজের মনের তাগিদে ভারতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেই।

ভারতের হাসপাতাল নির্বাচন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং যাওয়ার সকল প্রস্তুতিতে দারুণভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম সহকর্মী-বন্ধু, বর্তমানের কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, সাংবাদিকতা পেশায় খুব আদরের ছোট ভাই, বর্তমানে দিল্লির প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ। সন্তোষ আমাকে এই বলেন, ‘যাই হয়ে যাক, যত অর্থের প্রয়োজন হয় আমি পাশে আছি।’ তিনিই দিল্লি মেদান্ত হাসপাতালের বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বে নিয়োজিত অমায়িক, সদাহাস্য এবং মনোবল জোগান দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী প্রীতিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন।

যোগাযোগ করি এক সময় বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অন্ধ এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শে আপোসহীন শাবান মাহমুদ সোজাসাপ্টা কথা বলা এবং মাথা উঁচু করে চলা মানুষ। এসব গুণ এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তাকে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা দিয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ ভোটে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এ কারণেই। প্রধানমন্ত্রী তাকে দিল্লির প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব দিয়েছেন।

দিল্লি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে এই দায়িত্ব তিনি সঠিকভাবেই পালন করছেন। শাবান আমাকে সাহস যুগিয়েছেন প্রচ-ভাবে। বলেছেন, ‘ভাবীকে নিয়ে দিল্লিতে আসেন, বাকি দায়িত্ব আমার।’ 

শাবানের কাছে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তিনি দুটি হাসপাতাল থেকে মতামত জোগাড় করে দিয়েছেন। সন্তোষ এবং শাবানের মতামতে শেষ পর্যন্ত ‘মেদান্ত দি মেডিসিটি’ হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেভাবেই শুরু হয় ভিসা জোগাড়ের প্রক্রিয়া। এএমজেড হাসপাতালের তরুণ ডাক্তার সায়েমের চিকিৎসায় শীলার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়। তিনি আরও আত্মবিশ^াসী হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে যে ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে আমার বিশ্বাস তেমন কিছু নয়।’ এর মধ্যে ভিসা পেয়ে যাই।

সময় নষ্ট না করে একদিনের নোটিসে বিমানের টিকিট কেটে রওনা হয়ে যাই দিল্লির পথে। বাসায় দুটি ছেলে-মেয়ে অয়ন-অন্তিপা। আগে কখনো একা থাকেনি। বিপদে তারাও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। আমাদের সাহস জোগায়। খুব আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলে, ‘তোমরা যাও, আমাদের জন্য চিন্তা করো না। আমরা সব কিছু ম্যানেজ করে থাকতে পারব।’ বিকল্প কিছু নেই। তাদের আত্মবিশ^াসের প্রতি ভরসা রেখে চললাম দিল্লি মেদান্ত হাসপাতলের উদ্দেশে। মেদান্ত হাসপাতাল দিল্লি শহর থেকে একটু দূরে হরিয়ানা রাজ্যে গুরুগ্রাম এলাকায়। প্রীতিশ আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন হাসপাতালের ঠিক উল্টোদিকে ‘গাজিবো ইন’ হোটেলে। হোটেল বললে ভুল হবে, অনেকটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউস। ওখানেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। খরচ নাগালের মধ্যেই। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় বিমানবন্দরে গাড়ি অ্যাটেনডেন্স পাঠানো হয়। ফেরার পথে আবার পৌঁছে দেওয়া হয় বিমানবন্দরে।

বিমানবন্দরে আমাদের রিসিভ করলেন অ্যাটেনডেন্স সৌরভ। হোটেলে পৌঁছে দিয়ে একটি সিম কার্ডের ব্যবস্থা করে রাতে চলে যায় সৌরভ। হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ হলে প্রীতিশ আমাদের জন্য গাড়ি পাঠায়। অনেকটা শঙ্কা, কিছু ভরসা নিয়ে দুরু দুরু বুকে পৌঁছে যাই হাসপাতালে। প্রথম ডাক্তার  থোরাসিক সার্জন বেলাল বিন আসাফ। তিনি ঢাকায় করা সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এর মধ্যে শীলার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

তিনি আবারও সিটি স্ক্যান করতে পাঠান। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেওয়ার কথা পরদিন। তিনি বললেন, আপনারা স্ক্যান করে চলে আসেন, আমি হাসপাতালের সার্ভার থেকে রিপোর্ট দেখে নেব। স্ক্যান করার সিরিয়াল পাওয়া গেল দুপুরের পরে। স্ক্যান করে আবারও ডা. বেলালের কাছে। রোগীদের সিরিয়াল ভেঙে তিনি ডেকে নিলেন আমাদের। সার্ভার থেকে রিপোর্ট নিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করলেন সময় নিয়ে। আমাদের তখন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। সুখবর দিলেন ডাক্তার।

আগের চেয়ে ভালো, ওষুধ রেসপন্স করেছে। ঢাকার চিকিৎসার লাইন সঠিক ছিল। আশ^স্ত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার তরুণ ডাক্তার সায়েমের জন্য কিছুটা গর্বও অনুভূত হলো। বুক থেকে নেমে গেল জগদ্দল পাথর। ওষুধ সমন্বয় করার জন্য তিনি পাঠালেন চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ভিবেক সিং-এর কাছে। তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। তাকে আর পাওয়া গেল না। পরদিন তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেল দুপুরের পরে। তখনো সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পাইনি।

তিনিও হাসপাতালের সার্ভারেই স্ক্যান ফিল্ম পরীক্ষা করলেন। তিনিও বললেন ঢাকার চিকিৎসা ঠিক আছে। তিনি আর দুটো ওষুধ যুক্ত করে বললেন, আমরা আরও নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য চার সপ্তাহ পর আবার স্ক্যান করব। অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে হোটেলে ফিরলাম। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতের বেশ কিছু হাসপাতালের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। মেদান্ত একটু আলাদা। গুছানো, পরিচ্ছন্ন, রোগীদের প্রতি যত্নশীল, আধুনিক ও পরিকল্পিত রোগী ব্যবস্থাপনা। দেশী-বিদেশী প্রচুর রোগী রয়েছে সেখানে। সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে কারও তেমন ভোগান্তি নেই।

বিশ্বের অনেক নামি-দামি চিকিৎসক রয়েছেন। তারা খুব যত্ন করে সময় নিয়ে রোগী দেখেন। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি, ভুল রিপোর্টের সম্ভাবনা কম। খরচ বাংলাদেশের বড় কয়েকটি হাসপাতালের চেয়ে বেশি নয়। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা সবাই সন্তুষ্ট। বিশেষ করে প্রীতিশের সার্ভিস অনন্য। এমন অভিজ্ঞতায় দেশ ছেড়ে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার কারণ বুঝা যায়।

বিমানের ফিরতি টিকিটে আমাদের জন্য আরও ২/৩ দিন সময় রয়েছে। শাবান চলে গেছে দিল্লির বাইরে সরকারি কাজে। হোটেলে দেখতে এলেন শীলার ছোটবেলার বান্ধবী ফারাহ নাজিয়া সামি (ঝুমু)। ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ২৫ বছর পর যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ঝুমুর স্বামী আহমেদ সামি বর্তমানে দিল্লিস্থ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর। ছোটবেলার বন্ধুর অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে দুজন ছুটে আসেন আমাদের হোটেলে।

ততক্ষণে আমাদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমেছে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে দুই বন্ধুর পুনর্মিলন আমরা উপভোগ করি দারুণ আড্ডায়। সামি ভাই আমার মতোই আড্ডাবাজ এবং আমুদে মানুষ। বাম ছাত্র রাজনীতি এবং স্কাউট অতীতের সামি ভাই দারুণভাবে মিস করেন বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ আড্ডার পর আমাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা গভীর রাতে বাসায় ফিরেন।  দেশে ফিরতে আমাদের হাতেও দুইদিন সময় ছিল। ঝুমুর বাসায় যেতে আপত্তি জানালাম না। অভিজ্ঞতার জন্য দিল্লি মেট্রোরেলের ইয়েলো লাইনে চড়ে চলে গেলাম তার বাসায়। ঝুমু ছাত্রজীবন থেকেই ভালো গান করেন। তাঁর গানে সামি ভাইয়ের দারুণ উৎসাহ। বাসায় হোম মিউজিক সিস্টেম স্থাপন করে দিয়েছেন। সামি ভাই চাকরির সূত্রে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। দিল্লির আগে পাঁচ বছর ছিলেন ফিজি। এর আগে মালয়েশিয়া। আরও আগে বিভিন্ন দেশ।

বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হস্তশিল্প দিয়ে গোটা বাসা নিপুণ হাতে সাজানো। শুরু হলো আড্ডা। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতি আড্ডার বিষয়বস্তু। একুশের আগের সারারাত নিয়মিত শহীদ মিনারে কাটানো। চেতনায় দীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৩৭ দিন বয়সের মেয়েকে নিয়ে মধ্য রাতে প্রভাতফেরির গল্প। বন্ধুর মন ভালো করার জন্য ঝুমু পরিবেশন করলেন বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান। ভরাট গলায় নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ কবিতা আবৃত্তি করলেন সামি ভাই। ঝুমুর নিজ হাতে রান্না করা দেশীয় খাবারে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম আমরা। দিল্লি ফিরে শাবান মাহমুদ আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশ দূতাবাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। সামি ভাইয়ের পরিবারকেও যুক্ত করে নিলাম। তাদের সেকি উত্তেজনা। এতদিন পর তারা একুশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন, তাও আবার বিদেশের মাটিতে। আমরা গিয়েছি চিকিৎসার জন্য। একুশের সাজসজ্জা নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ঝুমু ‘অ আ ক খ,  শহীদ সালাম রফিক বরকতের নাম লেখা সাদা-কালো প্রিন্ট শাড়ি বের করে দিলেন নিজের আলমারি থেকে। নিজের জন্যও তেমনই একটি পছন্দ করলেন। শাড়ির সঙ্গে কালো রঙের ব্লাউজ, পেটিকোট। এগুলো নিয়ে আমরা চলে এলাম হোটেলে। পরদিন বিকেলে দুই বান্ধবী এবং সামি ভাই একুশের সাজে সজ্জিত হয়ে দূতাবাসে উপস্থিত। ভারতে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হলো একুশের সন্ধ্যা। তিনি তার বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করে শোনালেন দিল্লিতে নিয়োজিত ইউনেস্কো প্রতিনিধি।

এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আলোচনা সভা। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ গণসংগীত এবং সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের নৃত্য দিয়ে শুরু হয় সন্ধ্যার মাল্টি কালচারাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ছাড়াও কিরগিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, জাপান ও হাঙ্গেরীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল এতে অংশগ্রহণ করে। মঞ্চের পিছনের স্ক্রিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, জাতীয় পতাকা হাতে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী বাংলার গণসংগীত। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দিল্লিতে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক, আমন্ত্রিত অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মহান একুশের এই অনুষ্ঠানে বসে মনে হলো হাজার মাইল দূরে যেন এক খ- বাংলাদেশ।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন