"দিলখুশা" মানে "মনপ্রফল্লু"। ১৮৬৬ সাল।
ঢাকার নওয়াব খাজা আবদুল গণি। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা আহসানউল্লাহ। পিতা পুত্রপ্রেমে এতটাই আবেগাপ্লুত ছিলেন যে, পুত্রের মনোরঞ্জনে একটি বাগানবাড়ি বানাতে চাইলেন। জনৈক স্মিথের কাছ থেকে কিনলেন ঢাকা শহরে ৫৪ একর ৫০
শতাংশ জমি। উর্দুভাষী নওয়াব পুত্রের মনপ্রফুল্ল রাখতে এলাকার নাম দিলেন "দিলখুশা বাগানবাড়ী"। আর সেটাই
কালক্রমে হয়ে উঠলো বঙ্গভবন। "রঙমহল" বলেও এর পরিচিতি ছিল।
১৯০৬ নওয়াব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে বার্ষিক ১১ হাজার টাকায়
লীজ নিলেন ভারত ভাইসরয় বড়লাট লর্ড কার্জন। নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের
শাসনকর্তার বাসভবন রূপে গড়ে তোলা হলো। নাম হলো "ছোটলাট ভবন"। ১৯৪৭ সালে
"গভর্নর হাউজ"। ১৯৭২ সালের
১২ জানুয়ারী "বঙ্গভবন" নামকরণ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ওদিন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করেন এবং সয়ং প্রধানমন্ত্রী হলেন। "গণভবন"-কে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে
পরিণত করলেও অফিস হিসেবেই ব্যবহার করতেন বঙ্গবন্ধু। তা়ঁর বাসভবন ছিল বরাবর ধানমন্ডিস্থ বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটিই। অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি
আবু সাঈদ চৌধুরী পরিবারসহ বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন। সেই থেকে এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন। আলংকারিক রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুও ছিল লম্বা সময় ধরে। যখন দুই যুগেরও বেশি সময় দেশ পরিচালিত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত
সরকার ব্যবস্থার অধীনে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হলে ক্ষমতা ও গুরুত্ব হারায়
বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতি হয়ে যান নিয়মতান্ত্রিক রাষ্টৃপ্রধান মাত্র। ১৯৯১ সাল থেকে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে
লেফটেন্যান্ট গর্ভনর বা গর্ভনররাই ছিলেন
এ দেশের ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। সেই অর্থে ১৯০৬-২০২৩ সময়ের মধ্যে গভর্নর হাউজ বা বঙ্গভবনই
প্রায় নব্বই বছর ক্ষমতার উৎস ছিল। বিগত একশত ষোল বছরে বঙ্গভবনে যাঁরা বাসিন্দারা- তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের। যাদের
মধ্যে অবশ্য বিস্ময়করভাবে একজনও নেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অধিকাংশই খ্রীস্ট ধর্মালম্বী বিভিন্ন গোত্রীয় ইংরেজ। অবশিষ্টরা মুসলিম সূন্নী-ইসলাম ধর্মালম্বী। ১৯৪৭ দেশবিভাগপূর্ব বাংলা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের সর্ববৃহত্তম প্রদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাভাষী
বাঙালী অথবা হিন্দি বা অসমীয় ভাষাভাষী
কোন অবাঙালী-হিন্দু বাংলার গভর্নর বা রাষ্ট্রপতি হতে
পারেননি। যে কারণে ঢাকার
গভর্নর হাউজ তথা বঙ্গভবনের বাসিন্দা হননি কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বঙ্গভবনের যারা বাসিন্দা হয়েছেন, তারা কেউ ইংরেজ বিট্রনী, কেউ উর্দুভাষী পশ্চিম-পাকিস্তানী, কেউবা পূর্ব পাকিস্তানী বাংলাভাষী বাঙালী এবং স্বাধীনত্তোর যাঁরা হয়েছেন তাঁরা সকলেই বাংলাদেশী বাঙালী মুসলমান।
১৯০৫ সালে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ
ও আসাম এবং বাংলা প্রাদেশিক সরকারের হয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর,
নয়তো পূর্ববঙ্গ- তথা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং নয়তো স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
আজকের যে বঙ্গভবন তা
রূপে-রঙে-নামে শুধু নয়, ক্ষমতার উত্থান-পতনের চরিত্রেও তার রঙ বদলেছে। রূপে
ও রঙে পরিবর্ধিত হয়েছে অবকাঠামোগত স্থাপত্য। সর্বপ্রথম ১৯০৬ সালের ১৮ জানুয়ারি এই
বাসভবনে বাসিন্দা হিসাবে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক
সরকারের লেফটেন্যান্ট গভর্নর বামফিল্ড ফুলার সংবর্ধিত হন। সেই থেকে"দিলখুশা বাগানবাড়ি" লোকমুখে পরিচিতিলাভ করে "ছোটলাট ভবন" হিসেবে। এরপর লাটভবনের বাসিন্দা হন স্যার ল্যান্সলট
হেয়ার ও চার্লস স্টুয়ার্ট
বেইলি। তখন প্রবল আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ এর বিরুদ্ধে। এই
তিন শাসকের নামে ঢাকার তিনটি রোড এখনও রয়েছে। বৃটিশ পার্লামেন্ট ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে দুই
বাংলাকে আবার একীভূত করে দেয়। ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী
রূপে যে মর্যাদা পেয়েছিল
তা লুপ্ত হয়ে যায়। তবে বাংলার রাজধানী আবার কলকাতা হলেও ছোটলাট ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। ১৯৪৭ সালে আবার বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয় পূর্ববঙ্গ ও
পশ্চিম বঙ্গ নামে। স্বাধীন পাকিস্তানের প্রদেশ হিসেবে অঙ্গীভূত হয় পূর্ববঙ্গ। পশ্চিম
বঙ্গ অন্তর্ভুক্ত হয় স্বাধীন ভারতে।
পূর্বপাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর হয়ে আসেন স্যার ফ্রেডারিক চার্লমার বোর্ন। ছোটলাট ভবন পরিচিতি লাভ করতে থাকে গর্ভনর হাউজ রূপে। ১৯৫০ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত
স্যার বোর্ন দায়িত্ব
পালন করেন। সেই থেকে গর্ভনর হাউজের বাসিন্দা হন বিচারপতি আবু
সালেহ মোহাম্মদ আকরাম, মালিক ফিরোজ খান নুন (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী), চৌধুরী খালেকুজ্জামান, আব্দুর রহমান সিদ্দিকী (অস্থায়ী), মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি), বিচারপতি স্যার টমাস হার্বার্ট এলিস, বিচারপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, বিচারপতি আমিরউদ্দিন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মোহাম্মদ হামিদ আলী (অস্থায়ী), সুলতানউদ্দিন আহমদ, জাকির হোসেন, লেঃ জেনারেল আজম খান, সৈয়দ হাসিম রেজা, গোলাম ফারুক, আব্দুল মোনয়েম খান, ডঃ মীর্জা নূরুল
হুদা, মেজর জেনারেল মোজাফফর উদ্দিন, ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান,
সাহেবজাদা এম ইয়াকুব খান,
লেঃ জেনারেল টিক্কা খান ও ডাঃ এ
এম মালিক। এ়ঁরা গভর্নর হাউজে বসেই পূর্বপাকিস্তান শাসন বা শোষণ করতেন।
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের
আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর গভর্নর
পদটির অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের অনুগত গভর্নর
ছিলেন ডাঃ আব্দুল মোত্তালিব মালিক। তিনি গর্ভনর হাউজ থেকে পালিয়ে রেডক্রস ভুক্ত নিরাপদ জোন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পরবর্তীতে দালাল আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণকারী
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন
আহমদ ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর রাজধানী
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করে গভর্নর হাউজে ওঠেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার পর ১৯৭২ সালের
১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে
প্রধানমন্ত্রী হন এবং দেশে
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
নতুন রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু
সাঈদ চৌধুরী। কিন্তু তিনি নিজেকে ক্ষমতাহীন মনে করে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ
করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন স্পীকার মোহাম্মদ
উল্লাহ। এই দুই রাষ্ট্রপতিই
বঙ্গভবনে থেকেছেন সপরিবারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সাংবিধানিক
বিপ্লব সংঘটিত করে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেন।
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ উল্লাহ
দু'জনই মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলেও বঙ্গভবন তাঁর আবাসভূমি হয়ে ওঠেনি। বরং তিনি অরক্ষিত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কের বাসভবনেই ছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয়
উচ্ছৃঙ্খল বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অপরাহ্ন
দেড়টায় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার 'বৈদ্যনাথপুর" গ্রামের আম্রকুঞ্জে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি (কারাবন্দী) সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ রাষ্ট্রপতি
(অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণকারী
সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির
দায়িত্বপালন করেন। ১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী কিশোরগঞ্জে
জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ নজরুল ২২ ডিসেম্বর থেকে
১২ জানুয়ারী পর্যন্ত বঙ্গভবনেই ছিলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি থেকে শিল্পমন্ত্রী হন। বাকশাল হলে তিনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯২১ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি করলেও তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে পদত্যাগ করেন ১৯৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। স্পীকার
মোহাম্মদ উল্লাহকে তখন রাষ্ট্রপতি
করা হয়। ১৯২১ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণকারী
মোহাম্মদউল্লাহর স্বাক্ষরেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী দেশে
জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত
সরকার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রপতি হন ১৯১৯
সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ। সিজিএস বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ব্যর্থসামরিক অভ্যুত্থানে ৮১ দিনের মাথায়
খন্দকার মোশতাকের পতন ঘটে। এর আগেই খন্দকার
মোশতাক তোপের মুখে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন খালেদ মোশাররফকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহের ব্যবধানে
রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক সেনাপ্রধান হওয়া জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি
মোশতাকের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনীরাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী,
অন্যতম মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের "চতুর্থস্তম্ভ" বলে অভিহিত এই জাতীয় চারনেতার
হত্যার খবরে দৃশ্যপট পাল্টে যায় এবং নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফের পছন্দে ১৯১৬ সালে রংপুরে জন্মগ্রহণকারী দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। খন্দকার মোশতাককে করা হয় পদচ্যুত। ৭
নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাস থেকে শুরু হয় আরেকটি পাল্টা
সামরিক অভ্যুত্থান- "সিপাহী জনতা ভাই ভাই অফিসারদের রক্ত চাই" হত্যানীতির ভিত্তিতে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের গণবাহিনী
এবং জাসদপন্থী কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এ অভ্যুত্থান সংঘটিত
করে। খালেদ মোশাররফকে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীসহ হত্যা করে জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান জিয়াকে কাঁধে তুলে ট্যাংকবহর সহকারে রাজধানীতে মিছিল করে। তারা রাষ্ট্রপতি পদে বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে অধিষ্ঠিত রেখেই জেনারেল জিয়াকে দিয়ে ১২ দফা বাস্তবায়নের
মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে জাসদীয় গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক
সংস্থা। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায়
জন্মনেয়া জেনারেল জিয়া অভ্যুত্থানকারীদের দাবী অগ্রাহ্য করে উল্টো
মুক্তিদাতা কর্নেল তাহেরকেই ফাঁসিতে
ঝুলিয়ে দেন এবং সামরিক আদালতের মাধ্যমে জাসদের প্রবক্তা সিরাজুল আলম খানসহ শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেন। তন্মধ্যে জাসদ সভাপতি মেজর (অবঃ) এম এ জলিলকে
যাবজ্জীবন, সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রবকে দশ বছর, গণবাহিনী
প্রধান হাসানুল হক ইনুকে সাত
বছর দণ্ডাদেশ
দেয়া হয়। এভাবেই জাসদের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায়
জন্মগ্রহণকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি সায়েমকেও হটিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান
সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি দখল করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে পদচ্যুত করে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির
পদেও আসীন হন। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাপ্রধান তিন
পদে থেকেই। সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জেনারেল জিয়া।
প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু হত্যার সপ্তাহের ব্যবধানে সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর আনুগত্য থাকা সত্ত্বেও খুনীদের পছন্দে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান করেন। একই দিন ২৪ আগস্ট পূর্ণমন্ত্রীর
মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন জেনারেল ওসমানী। তিনি বঙ্গবন্ধু শাসনামলে নৌ চলাচল মন্ত্রীর
পদ হারিয়ে ছিলেন এবং সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বহুল আলোচিত ছিলেন। ৩ নভেম্বর জাতীয়
চার নেতা হত্যাকান্ডের খবরে কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন পদাতিক বাহিনী বঙ্গভবনে দরজা ভেঙে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশের পর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের
দিকে স্টেনগান তাক করে অকথ্য গালিগালাজ করে হত্যায় উদ্যত হলে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জেনারেল ওসমানী তাকে রক্ষা করেন এবং তার অনুরোধেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও বঙ্গভবন থেকেই বিমানে করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ।
বলা বাহুল্য দ্বিধাবিভক্ত ও দিকভ্রান্ত আব্দুল
মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী
লীগ সেই জেনারেল ওসমানীকেই রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়ে দেয়। স্পীকার মালেক উকিল মোশতাক সরকারের প্রতি আস্থা রেখেই স্পীকারদের এক আন্তঃমহাদেশীয় সম্মেলনে
যোগ দেন এবং যোগদান শেষে লন্ডনে সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে তোপের মুখে পড়ে বলেন,"দেশ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।"
বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হয়ে
৬ নভেম্বর জাতীয়
সংসদ বাতিল করেন। খালেদ মোশাররফের সামনে একটি সাংবিধানিক পদ খোলা ছিল
- চাইলে তিনি স্পিকার মালেক উকিলকেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর
আলী ৩ নভেম্বর নিহত
হওয়ার পর স্পীকারই ছিলেন
রাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার। প্রকৃতপক্ষে খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরাতে চাননি। তার মা বরং জাতীয়
চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিলে শামিল হওয়ার খবর শুনে নিজের পতনের পদধ্বনিই শুনতে পেয়েছিলেন।
জেনারেল জিয়া, জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহের
মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর উত্তমেরই লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা। তিনজনই পরিচালিত হচ্ছিলেন অবৈধ পন্থায়। জিয়া ক্ষমতার স্বাদ পেলেও ১৯৮১ সালের ৩০ মে মুক্তিযুদ্ধের
আরেক বীর উত্তমের হাতেই নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন। ফিরে আসছি মূল বিষয়ে। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি সায়েমেরই বিশেষ সহকারী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে উপরাষ্ট্রপতি করেন। জিয়া নিহত হলে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। জেনারেল জিয়া বঙ্গভবনকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্ম নেয়া আব্দুস সাত্তার ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি
নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ
প্রার্থী ডঃ কামাল হোসেনকে
হারিয়ে। তাঁরও সুখ সইলো না। তাঁকেও বঙ্গভবন ছাড়তে হয়। জেনারেল জিয়া কর্তৃক নিযুক্ত সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘুম হারাম করে দিয়ে বঙ্গভবনে নীরব সামরিক অভিযান চালালে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। জেনারেল
এরশাদ সামরিক আইন জারি করে ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি
পদে বসিয়ে দিলেন দূরসম্পর্কের আত্মীয় বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে। ১৯১৫ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী রাষ্ট্রপতি চৌধুরীরও বিদায় ঘটলো অসৌজন্যমূলকভাবে। বঙ্গভবন ত্যাগ করতে হলো তাঁকেও। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান
সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতির পদ দখলে নিলেন।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জন্মনেয়া
এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও দিলেন। যে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর
খুনী কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় হাফেজ্জী হুজুরের
সঙ্গে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয়। জেনারেল এরশাদও বঙ্গভবন ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তা়ঁকে পদত্যাগ
করতে হয় তিনজোটের রূপকথার
আলোকে। উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি এরশাদ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তারপর এরশাদ পদত্যাগ করলে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন অস্থায়ী
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গভবনে থাকতেন পরিবার নিয়ে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের পর সরকার পদ্ধতি
নিয়ে তিনজোটের ঐতিহাসিক রূপরেখা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি, বিরোধী দল আওয়ামী লীগ
তিনজোটের রূপরেখার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোটদান করে দেশে
সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করে। অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৯১
সালের ৮ অক্টোবর সংসদ
সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি হন স্পীকার আব্দুর
রহমান বিশ্বাস। ১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম
আব্দুর রহমান বিশ্বাস প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করা দেশের রাষ্ট্রপতি। তবে ক্ষমতাসীন বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিল পাস করে আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নিতে হয় ক্ষমতাসীন বিএনপিকে।
প্রতিরক্ষা এসময় রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রী) হন সাবেক প্রধান
বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ওই সময় সম্ভাব্য
একটি সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি রহমান বিশ্বাস নস্যাৎ করে দেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমসহ কয়েকজন জিওসিকে জেনারেলকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬
সালের ১২ জুনের সাধারণ
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেন। ১৯৯৬
সালের ৯ অক্টোবর সংসদ
সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ১৯৩০ সালের
১ ফেব্রুয়ারী নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণকারী বিচারপতি
সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি সপরিবারে বঙ্গভবনেই থাকতেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রয়ারি জন্মনেয়া
সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুরত্বের সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনকে
আওয়ামী লীগ "সালসা" নির্বাচন বলে অভিহিত করে। সা- মানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, ল-মানে প্রধান
উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান এবং সা- মানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সাঈদ। বিএনপি-জামাত টু থার্ট মেজররিটি
নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি
হন অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জে
জন্মগ্রহণকারী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে কয়েকটি নীতিগত প্রশ্নে বিএনপির মতদ্বৈততার সৃষ্টি হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির মৃত্যুবার্ষিকীর বানীতে
জিয়াউর রহমানকে "স্বাধীনতার ঘোষক" না বলা, জিয়ার
মাজার জিয়াররত করতে না যাওয়া ইত্যাদি এ দ্বন্দ্বের কারণ।
শেষ পর্যন্ত যে সংসদ কর্তৃক
তিনি নির্বাচিত হন সেই সংসদের
সরকারি দলই অভিশংসনের হুমকিপ্রদান করে এবং বিএনপি সংসদীয় দলের সভায় তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০২০ সালের ৬ জুন রাষ্ট্রপতির
পদ ত্যাগ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এরপর বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। ফলে অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
হন স্পীকার
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি তিনমাস দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গভবনে থাকেননি। বেইলীরোডে স্পিকারের বাসভবনেই থাকতেন।
২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি
হন ডঃ ইয়াজউদ্দীন আহমেদকে।
১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মুন্সিগঞ্জে
জন্মনেয়া ইয়াজউদ্দিন মহাবিতর্কের অবতারণা করেন। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদগ্রহণে বিচারপতি কেম হাসান অস্বীকৃতি জানালে ডঃ ইয়াজউদ্দিন নিজেই
প্রধান উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করেন।
২০০৬ সালের ২২ জুলাই একতরফা
সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও মতলব আঁটলে মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মানে
ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিনকে বাধ্য
করা হয় প্রধান উপদেষ্টা
পদ ছাড়তে। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রধান উপদেষ্টা হন বাংলাদেশ ব্যাংকের
সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনও বাতিল করা হয়। নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। হঠাৎ করেই সামনে নিয়ে আসা হয় "টু মাইনাস থিউরি।"
অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা
জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
সঙ্গে আস্থার সংকটে পড়ে সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ ও সেনাসমর্থিত
ফখরুদ্দিন সরকারের। শুরু হয় দুই নেত্রীর
পৃথক মুক্তির
আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন।
আওয়ামী লীগ একাই টুথার্ট মেজররিটি ছাড়িয়ে যায়।
বিএনপি পায় মোটে ২৯টি আসন।
ইতিমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হয়েছিল, তার আলোকে সংসদে সংবিধান সংশোধন বিলও পাস হয়ে যায়। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুযায়ী বাহাত্তরের মূলনীতিও পুনঃস্থাপিত হয় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে দলের প্রবীন নেতা জিল্লুর রহমানকে। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০ মার্চ লন্ডন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্পীকার অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে জন্ননেয়া আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি দুই মেয়াদই বঙ্গভবনের বাসিন্দা। তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তিনি আগামী ২৪ এপ্রিল তার শপথ নিবেন। ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হোক, আর নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের আলংকারিক শোভাবর্ধনকারী হোক, বঙ্গভবন আমাদপর অনুভূতির স্থল। যার আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে আছে উত্থানপতনের স্মৃতিচিহ্ন আর বঙ্গভবনের প্রাচীন ইতিহাস।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:৩০ পিএম, ২৭ মে, ২০২৩
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু
দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন
করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে
পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ
ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।
তখন স্বাভাবিক নিয়মে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা কাজ করেন, তারা বললেন, ‘স্যার
একটা প্রতিবাদ দিতে হয়।’
তখন আমি বললাম, আমিতো পড়েছি। আমি ভোরবেলাতে যে পত্রিকাগিুলো পড়ি, তার মধ্যে নঈম
নিজাম এবং এখনকার যে বুদ্ধিভিত্তিক কলামিস্ট আমার অনুজপ্রতীম সৈয়দ বোরহান কবিরের লেখাগুলো
পড়ি। তারা একটা রৈখনি নিয়ে এসেছে। একটা প্রতিবাদ, সরকারিভাবে যা লেখা হয়, এটা না, ওটা।
আমি বললাম, ‘তোমরা ওই কমিউনিটি ক্লিনিকটা শেষ কে কবে পরিদর্শন করেছ?
তারা কেউই সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে না। আমি বললাম, নঈম নিজাম এবং সৈয়দ বোরাহান
কবির- এরা কখনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের সাথে তাদের যে পেশাগত সম্পর্ক সেটা জড়িয়ে ফেলে
না। উদাহরণসরূপ বলছি, আমি তখন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক। তখন ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অনুষ্ঠানটি
পরিচালনা করে সৈয়দ বোরহান কবির। আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে বেশ কিছু
বক্তব্য প্রচার করে। কিন্তু আমার সাথে তার যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সে সেটা বিবেচনা না
করে পেশাগত দায়িত্ব থেকে সে এটা করেছে। সেটা নিয়ে তার সাথে আমার কোনোদিন আলাপ হয়নি।
কারণ হচ্ছে, সে তার পেশায় ঠিক আছে, আমি আমার পেশায় ঠিক আছি।
আমার কোনো ভুলভ্রান্তি হলে সেটা উল্লেখ করা তার দায়িত্ব। নঈম নিজামের পত্রিকায়
যেহেতু সংবাদ ছাপা হয়েছে। সুতরাং নঈম নিজামকে আমি আলাদা চোখে দেখি।
তারা বললো, ‘স্যার সিভিল সার্জনের সাথে কথা হয়েছে।’
আমি বললাম, সিভিল সার্জন নয়, একজন বিশ্বস্ত লোককে পাঠাও। তারপর প্রতিবাদ ছাপাতে
হয়, আর্টিকেল লিখতে হয়, আমি দেখবো।
তারপর একজনকে পাঠানো হলো। তিন দিনে রিপোর্ট দিলো। তারপর দেখা গেলো, বাংলাদেশ
প্রতিদিনে যা ছাপা হয়েছে। সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। তখন আমি এইটার ব্যবস্থা গ্রহণ
করলাম, যেন ওটা ঠিকমতো চলে এবং সমস্যাটির সমাধান করলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোনো লেখা
বা নঈম নিজামকে ফোন করার আর কোনো প্রয়োজন পড়লো না। আমি দেখেছি, আমার ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে।
সুতরাং এর দায়-দায়িত্বও আমার। যেহেতু এটা আমার দায়-দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সুতরাং আমি
মনে করেছি, সে আমাকে সহায়তা করেছে। এখন আমার পক্ষে না বিপক্ষে গেলো, সেটা কোনো বিষয়
নয়।
সম্প্রতিককালে দেখলাম, আমাদের একটি মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী এবং তাদের যে কাজের
গাফিলতি সম্পর্কে লিখেছে বলে তারা তার প্রতিবাদ পাঠিয়েছে। প্রতিবাদটি আমি পড়লাম। প্রতিবাদটি
বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। আমার কাছে মনে হলো, অনেক আমলারা কাঁচা হাতের কাজ করে
সেরকম। এই প্রতিবাদটি ছাপানোর আগে, যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলোর সমাধান
করাতো বেশি দরকার। এরা দেশের ভালো করতেছে না খারাপ করতেছে, সেটা বিচার করার সময় এসেছে।
আমারতো কোনো পত্রিকার সাথে কোনো জমি নিয়ে বা কোনো বিরোধ বা কোনো গন্ডগোল নেই, সে আমার
বিরুদ্ধে কেন লিখবে? লিখলে আমিসহ সকলে যে যেখানে দায়িত্বে আছে, সকলের প্রধান দায়িত্ব
হচ্ছে জিনিসটা সঠিক কি না, সেটার চুলচেরা বিচার করা।
দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি নিয়ে লিখেছে, সেটাকে অবশ্যই দেখাশোনা করা, যাতে ওই ভুলটটা
ভবিষ্যতে আর না হয়। নঈম নিজাম কেন, দুনিয়ার কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভুলটা বুঝতে
পারা এবং ভুলটা সঠিক করা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই আমরা
এটা করতে পারি না। সেজন্য সবাইকে বলবো, যে কোনো মিডিয়াতে কোনো কিছু আসলে প্রতিবাদ পাঠানোর
আগে কি লিখেছে, বরং সেটার সমাধান আগে করে তারপর প্রতিবাদ পাঠান।
মন্তব্য করুন
আমি আন্তর্জাতিক বিষয়ে অধ্যায়ন করিনি। তবে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুবই শংকিত! কারণ, বিশ্বে শান্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চললেও দীর্ঘদিন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা , নিপীড়ন , নারী ও শিশু নির্যাতন, মানব পাচার, অভিবাসন করতে গিয়ে প্রাণহানি আমাদেরকে শংকিত করে তুলছে। উন্নত দেশগুলো রাষ্ট্রীয় সীমারেখার দেয়াল তুলে শান্ত হয়নি, বিভিন্ন রকম আন্তর্জাতিক কৌশল অবলম্বন করে তারা দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষদেরকে আরও সুশীল বানাতে চাইছে। গণতন্রের পূজারী উন্নত বিশ্ব তাদের স্বার্থে সুশীল বানানো প্রক্রিয়ায় ধনী দেশগুলোতে সেভাবে চাপ প্ৰয়োগ করে না, যেভাবে দরিদ্র দেশগুলোতে শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেলায় যেভাবে কূটনীতিবিদরা সক্রিয় তাতে আমাদের স্বাধীনতা কি ক্ষুন্ন হচ্ছে না ? এ দায় কি কেবল নিপীড়িত মানুষের ?
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নানা আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছে। কিছুদিন সেই চাপ কমেছিল। কিন্তু আবার নতুন করে চাপে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে? বিরোধী জোটে যারা আছেন তারা বলবেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নির্বাচন করুন , সমস্যা প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে। কিন্তু আমার ভিন্ন রকম উপলব্ধি।
বাংলাদেশের সরকার নির্বাচিত নাকি অনির্বাচিত তাতে কারও কিছু যায় আসে না। যদি নির্বাচন মুখ্য বিষয় হতো তবে আরব রাষ্ট্রে বিরাজমান রাজতন্ত্র অবসানে তারা মনোযোগী হতো। সেখানে কেন গণতন্রের জন্য মনোযোগ দেয়া হয়না তার অনুসন্ধানে যারা লিখেছেন তাদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। এখানে কার্ল মার্কস এর দর্শনের সাফল্য। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটাতে উন্নত দেশগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। তার পরেও আমাদের উপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ গভীর ভাবনার বিষয়। এটি দেশের বিরোধী দলের দেনদরবার বা তদবিরের ফলে হচ্ছে মনে করলে হয়তো ভুল হবে। সুষ্ঠু অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি এক মাত্র ভাবনা ওই সব বিধিনিষেধ আরোপের কারণ ? একটি অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ? আমাদের সমাজে যারা বুদ্ধিজীবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তাদের মনোযোগ এখানে একান্তভাবে কাম্য যাতে সরকার চাপের মুখে কোনো বড়োরকম ভুল না করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বাতিঘর। গতকাল একটি বিবৃতিতে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বলেছে - তারা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সারা বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়ে থাকে সেইভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে। সম্প্রতি একটি পোস্টার আমার নজরে এসেছে। সেখানে লেখা আছে "আমার ভোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে চাই। " ওই পোস্টার নিয়ে দলের লোকদেরসঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা বিদেশী দূতাবাসের আশীর্বাদ পেয়েছেন। এবং আরেকটি মহল মনে করেন - যুক্তরাষ্ট্র যে সব বিধিনিষেধ দিচ্ছে তার লক্ষ্য হলো পর্যাক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কৌশল। এটাকে বিস্তৃত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদের বক্তব্যর অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।
পত্রিকাতে দেখেছি সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করবে , এবং এখন আগের তুলনায় সরকার বিরোধী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে না। অন্ততঃ গত মঙ্গলবার গাবতলীতে সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডাকসুর ভিপি অমানুল্লার জনসভা দেখে আমার ধারণা হয়েছে। ঐদিন ধানমন্ডিতে সভা হয়েছে বটে কিন্তু কিছু মানুষ বাস পোড়ানোর মতো বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার করছে। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের কাছে অনেকেই বলেন আগামী নির্বাচন যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় সেজন্য আন্দোলন করবেন। সেই আন্দোলন যে শান্তিপূর্ণ হবে সেটা ভাবা যায় কি ? আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষই অবলম্বন করবে না যদি তারা কোনোভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়। আমাদের মনে পড়ে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে তাতে আমাদের সামাজিক শান্তি ও অর্থনীতি হুমকিতে পড়েছে।আরেকটি ১/১১ সৃষ্টির যে পায়তারা চলছে তা কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে বলে মনে হয় না।কারণ যেই হারবে সেই দাবি করবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
জনগণের কষ্ট সৃষ্টি করে কেউই ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। ভোট ও ভাতের স্বাধীনতা অর্জনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি অর্জন করতে হয় তবে তা জনগণের কষ্টে পাশে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়েই সম্ভব। বাংলাদেশ আশা করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হয়েই থাকবে। তাদের আরোপিত বিধিনিষেধ কেন সেটা অনুসন্ধানে সময় না দিয়ে আমার সমস্যা নিয়ে আমি ভাবতে ও সমাধানের চেষ্টা করতে চাই। রাজনীতির লক্ষ্য হোক জনগনমুখী - কূটনীতিবিদমুখী নয়।আমাদের আরও সহনশীল হতে হবে এবং সৎ মানুষগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য থাকতে হবে। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবার সুযোগ আছে রাজনীতিবিদেরকে আলোর পথের সন্ধান দিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বক্তব্য তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সে স্বপ্ন আমাদের সকলের। বিদেশী কূটনীতিবিদরা যেভাবে যুক্ত হচ্ছে তা থেকে বের হয়ে আসার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। আমরা বঙ্গবন্ধুর শান্তি পুরস্কার বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি পালন করছি। বঙ্গবন্ধুর শান্তি ভাবনা যেন আমাদের রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনে সেই কামনা করছি। তাহলেই কূটনৈতিক বিজয় অর্জন সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন
‘‘কাটায়ে উঠেছি ধর্ম—আফিম—নেশা/
ধ্বংস করেছি ধর্মযাজকী পেশা,/ ভাঙি মন্দির, ভাঙি
মসজিদ/ ভাঙিয়া গির্জা গাহি সঙ্গীত,/ এক
মানবের একই রক্ত মেশা/
কে শুনিবে আর ভজনালয়ের হ্রেষা!’’
‘‘পূজিছে
গ্রন্থ ভণ্ডের দল মূর্খরা সব
শোন মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।’’
‘‘গাহি
সাম্যের গান— মানুষের চেয়ে
বড় কিছু নাই, নহে
কিছু মহিয়ান। নাই দেশ—কাল—পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে
ঘরে—ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি।’’
‘‘মানবতার
এই মহান যুগে একবার/গণ্ডী কাটিয়া বাহির হইয়া আসিয়া বল যে,/তুমি
ব্রাহ্মণ নও, শূদ্র নও,
হিন্দু নও, মুসলমানও নও,/তুমি মানুষÑ তুমি
ধ্রুব সত্য।’’
উপরের উদ্ধৃতিগুলো স্মরণে রেখে কাজী নজরুল ইসলামের(১৮৯৯—১৯৭৬) ১২৪তম জন্ম—জয়ন্তীতে তাঁর প্রবন্ধে প্রকাশিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা সম্পর্কে আলোকপাত করা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই তাৎপর্যবহ। এদেশ এখনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কিন্তু যে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাঁধে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ছিল তাও সম্পন্ন হয়নি। এজন্য একমাত্র ভরসা রবীন্দ্রনাথ—নজরুল। বিশেষত নজরুলের জীবনব্যাপী(সুস্থ ছিলেন ১৯৪২ পর্যন্ত) সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে বলে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনুপ্রেরণার অজেয় উৎস। কেবল তাঁর কবিতা—গান নয় প্রবন্ধে রয়েছে বিবেক জাগানিয়া অনন্যসব ভাবনাসমূহ। সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ, অর্ধসাপ্তাহিক ধূমকেতু, সাপ্তাহিক লাঙল, গণবাণী, সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য—পত্রিকা প্রভৃতি পত্রিকায়Ñ এ সম্পর্কে নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধ এবং অভিভাষণের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। পরে সেগুলো যুগবাণী, রাজবন্দীর জবানবন্দী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র—মঙ্গল গ্রন্থে প্রবন্ধ সংকলনে স্থান পায়। বলাবাহুল্য তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সমকালীন প্রসঙ্গ নিঃসৃত। আর এই সমসাময়িক প্রসঙ্গের অবতারণার জন্য তাঁর প্রবন্ধসমূহ মূল্যবান হয়ে উঠেছে। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বিশ্ব পরিমণ্ডল ও ভারতবর্ষের সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাস নজরুল—সাহিত্যকে আলোড়িত করেছে। তবে তিনি তাঁর অভিমতসমূহ ব্যক্ত করার সময় সর্বজনীন মানুষের কল্যাণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ সা¤প্রদায়িক বিভেদ ও বিদ্বেষের বিপরীতে তিনি সম্প্রীতির প্রত্যাশায় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। একইসঙ্গে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও তাঁর ভাবনাসমূহ গুরুত্ব বহন করে।
অধ্যাপক
ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ নজরুলের অসাম্প্রদায়িক
চেতনা সম্পর্কে লিখেছেনÑ‘উপনিবেশকে আঁকড়ে রাখার মানসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ সুচতুর
কৌশলে সাপ্রদায়িক বিভেদ
সৃষ্টি করেছিল ভারতবর্ষে ভারতের দুই বৃহৎ ধর্ম—সাপ্রদায় পরস্পর
বিভেদে জড়িয়ে পড়েছে বারবার। এর পশ্চাতে ছিল
একাধিক রাজনৈতিক দলের ইন্ধন। এই
সাম্প্রদায়িক বিভেদ নজরুলকে ব্যথিত করেছে। তাই তিনি সচেতনভাবে
হিন্দু—মুসলিমের মধ্যে সম্প্রদায়—নিরপেক্ষ
স¤প্রীতি প্রত্যাশা করেছেন। সত্য—সুন্দর—কল্যাণের
পূজারি নজরুল চেয়েছেন স¤প্রদায়ের উর্ধ্বে
মানুষের মুক্তি। বস্তুত, সাম্যবাদী চিন্তা তাঁর মানসলোকে সম্প্রদায়—নিরপেক্ষ মানবসত্তার জন্ম দিয়েছেÑহিন্দু
ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক না হয়ে তাঁর
চেতনায় হতে পেরেছে জাতিসত্তার
পরিপূরক দুই শক্তি।’ (উত্তর—ঔপনিবেশিক তত্ত্ব ও নজরুলসাহিত্য, সৃষ্টি
সুখের উল্লাসে, ২য় খণ্ড, পৃ
৩৩৬) সম্প্রদায়ে
সম্প্রদায়ে বিভেদ ও অনৈক্য সম্পর্কে
নজরুল ইতিবাচক চিন্তা করেছেন। সা¤প্রদায়িক কলহের
দুর্বলতা দিয়ে ভারতের মুক্তি সম্ভব নয়। নজরুল এ—কারণেই ভারতীয়দের শক্তির দুর্বলতর সূত্রগুলি ‘যুগবাণী’ ও অন্যান্য পর্বের
সম্পাদকীয় রচনায় বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি জানতেন হিন্দু
মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ শক্তির দুর্বার আঘাতেই ব্রিটিশ শাসনশৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব। নজরুল
আহ্বানও জানিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের।
তিনি
হিন্দু—মুসলমান উভয়ের ইতিহাস—ঐতিহ্য—চিন্তা—চেতনার ভাব বিনিময়ে গুরুত্বারোপ
করেছিলেন। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম
এডুকেশন (মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা, রুদ্র—মঙ্গল) সোসাইটির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সভাপতির ভাষণে নজরুল বলেছেন : ‘ভারত যে আজ
পরাধীন এবং আজো যে
স্বাধীনতার পথে তার যাত্রা
শুরু হয়নি শুধু আয়োজনেরই ঘটা
হচ্ছে এবং ঘটাও ভাঙছে
তার একমাত্র কারণ আমাদের হিন্দু—মুসলমানের পরস্পরের প্রতি হিংসা ও অশ্রদ্ধা।’
হিন্দু—মুসলমানের মিলন কামনার এই
তীব্রতা নজরুলের মানবতাবোধ থেকে উৎসারিত। তাঁর
সাহিত্যচিন্তার অন্যতম স্তম্ভও এটি ছিল। এজন্য
তাঁর ‘আমার সুন্দর’ প্রবন্ধের
একটি অংশ স্মরণীয়Ñ ‘আমার
কেবলই যেন মনে হত
আমি মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছি। জাতি—ধর্ম—ভেদ
আমার কোনদিনই ছিল না, আজও
নেই। আমাকে কোনোদিন তাই কোনো হিন্দু
ঘৃণা করেনি। ব্রাহ্মণেরাও ঘরে ডেকে আমাকে
পাশে বসিয়ে খেয়েছেন ও খাইয়েছেন। এই
আমি আমার যৌবন—সুন্দর,
প্রেম—সুন্দরকে দেখলাম।’
নিজে
মুসলিম হয়েও হিন্দু নারী প্রমীলাকে বিবাহ
করা এবং একাধিক ঘনিষ্ঠ
বন্ধু সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নজরুলের পক্ষে এ ধরনের কথাই
স্বাভাবিক। তিনি সাম্য ও
মানবকল্যাণে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে সর্বপ্রকার বন্ধন
ও অধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। সমাজজীবনের অনাচার অসঙ্গতি তিনি অন্তর দিয়ে
উপলব্ধি করেছিলেনশুধু রাজনৈতিক সূত্র
থেকে তা অর্জন করেননি।
সমাজকে ভেঙে গড়বার স্বপ্ন
ও উদ্যম ছিল তাঁর ক্লান্তিহীন।
‘মোহররম’ প্রবন্ধে মাতম—অভিনয়কে ধিক্কার
দিয়ে সত্যের পক্ষ নিয়ে নির্যাতনের
প্রতিবাদে রক্ত দেবার আহ্বান
জানিয়েছেন নজরুল। প্রথার অন্তরে নিহিত সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। লিখেছেনÑ‘এস ভাই হিন্দু!
এস মুসলমান! এস বৌদ্ধ! এস
ক্রিশ্চিয়ান! আজ আমরা সব
গণ্ডি কাটাইয়া, সব সঙ্কীর্ণতা, সব
মিথ্যা, সব স্বার্থ চিরতরে
পরিহার করিয়া প্রাণ ভরিয়া ভাইকে ভাই বলিয়া ডাকি।’
‘মন্দির
ও মসজিদ’ আর ‘হিন্দু—মুসলমান’
নামে দুটি রচনাতে ভারতবর্ষের
প্রধান দুই সম্প্রদায়ের পরস্পর
বিদ্বেষ এবং হানাহানিকে নজরুল
তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি
সবসময়ই সচেতন ছিলেন। ‘মন্দির ও মসজিদ’—এ
দাঙ্গা নিয়ে তাঁর বেদনাঘন কথা
আছে। মানবতার দিকে যারা ফিরেও
তাকায় না তারা ছোরা
আর লাঠি নিয়ে নিজের
ধর্মস¤প্রদায় রক্ষা করে! নজরুলের মতে,
‘ইহারা ধর্মমাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে
নাই, শাস্ত্রের অ্যালকোহল পান করিয়াছে।’ শাস্ত্রীয়প্রথাকে
নজরুল সবসময়ই মানবতার নিচে স্থান দিয়েছেন।
তাঁর মতে, ‘মারো শালা যবনদের!’
আর ‘মারো শালা কাফেরদের!’
হাঁক ছেড়ে মাতালের চিৎকার দিয়ে তারা নাকি আল্লাহ্র
এবং মা কালীর ‘প্রেস্টিজ’
রক্ষা করে। আর মারণ
আঘাতে লুটিয়ে পড়লে তারা সকলেই আল্লাহ্
বা মা কালীকে না
ডেকে ‘বাবা গো, মা
গো’ বলে চিরকালের বাঙালির
মতো একইভাবে কাতরায়! ‘হিন্দু—মুসলমান’ লেখাতেও রবীন্দ্রনাথের বরাত দিয়ে নজরুল
বলেছেন, ‘যে ন্যাজ বাইরের,
তাকে কাটা যায়, কিন্তু
ভিতরের ন্যাজ কাটবে কে?’ টিকি আর
দাড়ি হচ্ছে মানুষের সেই ন্যাজ। এ
ন্যাজ মাথায় আর মুখে নয়,
গজিয়েছে মনের গভীরে; তা
থেকেই এত বিদ্বেষ। আর,
দাড়ি কামানো খায়রু মিয়া ছুরি খেলে, কিংবা
‘তুর্কিছাঁট—দাড়ির শশধর বাবু’ ছুরি
খেলে প্রথম ক্ষেত্রে মুসলমান আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে
হিন্দু শব নিয়ে কবরস্থান
বা শ্মশানে ছোটে না। দুঃখ
এই, ‘মানুষ আজ পশুতে পরিণত
হয়েছে, তাদের চিরন্তন আত্মীয়তা ভুলেছে। পশুর ন্যাজ গজিয়েছে
ওদের মাথার ওপর, ওদের সারা
মুখে। ওরা মারছে... টিকিকে,
দাড়িকে। বাইরের চিহ্ন নিয়ে এই মূর্খদের মারামারির
কি অবসান নেই!’
আসলে
‘হিন্দু—মুসলমান ঐক্য’ নজরুলের অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল। যৌবনের প্রতি
এই কবির আবেদন, ‘আমার
ধর্ম যেন অন্য ধর্মকে
আঘাত না করে, অন্যের
মর্মবেদনার সৃষ্টি না করে।’ একই
দেশের ফুলে—ফসলে পুষ্ট
দুই স¤প্রদায়ের বিরোধ
অত্যন্ত নিন্দনীয়। অথচ সা¤প্রদায়িক—রাজনৈতিক নেতারা নিজ নিজ স¤প্রদায়কে ‘ধর্মের নামে উগ্র মদ
পান’ করিয়ে অযথা মাতাল করে
তুলে বিরোধ সৃষ্টি করছেন। আর শিক্ষা—বঞ্চিত
সাধারণ মানুষকে করে তুলেছেন নিজেদের
হাতের পুতুল। রাজনৈতিক নেতারা চারপাশে ‘ভাড়াটিয়া মোল্লা মৌলবি পণ্ডিত পুরুত’ জুটিয়ে নিয়ে তাদের দিয়ে আপন আপন স¤প্রদায়ের পক্ষে ওকালতির ব্যবস্থা করেন। নজরুলের কথা, তরুণরা যেন
‘কদর্য’ হানাহানির ঊর্ধ্বে থাকে। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলাম ধর্ম কোনো অন্য
ধর্মাবলম্বীকে আঘাত করিতে আদেশ
দেন নাই। ইসলামের মূলনীতি
সহনশীলতা। পরমত সহনশীলতার অভাবে
অশিক্ষিত প্রচারকদের প্রভাবে আমাদের ধর্ম বিকৃতির চরম
সীমায় গিয়া পৌঁছিয়াছে।’ যুবসমাজের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মানুষকে মানুষের সম্মান দিতে যদি না
পারেন, তবে বৃথাই আপনি
মুসলিম।’ মুসলমানদের ভুল আর পশ্চাদ্পদতা
বিষয়ে লেখকের ওই দুর্ভাবনা এ
যুগের জন্যেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নজরুলের ‘শেষকথা’, ‘আমরা যৌবনের পূজারী,
নব—নব সম্ভাবনার অগ্রদূত...।’ পৃথিবীর অগ্রগামী
পথিকদের সঙ্গে সমতালে পথ চলব। পরস্পর
যাবতীয় বিভেদ ভুলে সঙ্ঘবদ্ধতায় উদ্বুদ্ধ
করবার চেষ্টা করেছেন তিনি।
কাজী
নজরুল ইসলাম লক্ষ করেছেন ভারতবর্ষের
অগ্রগতি বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আভিজাত্যবোধের কারণে। হিন্দু—মুসলমানের ঐক্য সাধনের মাধ্যমে
অগ্রগতি ত্বরান্বিত করায় নজরুল ছিলেন আন্তরিক। হিন্দু—মুসলমান বিরোধের মূলে উভয় স¤প্রদায়ের পারস্পরিক জ্ঞানবিমুখতাকে নজরুল চিহ্নিত করেছেন। সমাজ—অন্তর্গত একটি
স¤প্রদায়ের মানুষ কুসংস্কার, গেঁাড়ামি, বৈষম্য, সংঘাত, দাঙ্গায় সভ্যতা—সমাজ—সময়—রাষ্টে্রর
গতিশীলতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে; নজরুল সেই স¤প্রদায়—অন্তর্গত সকল মানুষকে রক্ষণশীল
কুসংস্কারাচ্ছন্ন জগত থেকে আলোকিত
পৃথিবীতে পদচারণার আহ্বান জানিয়ে বলেছেনÑ ১. আজ বাঙালি
মুসলমানদের মধ্যে, একজনও চিত্রশিল্পী নাই, ভাস্কর নাই,
সঙ্গীতজ্ঞ নাই, বৈজ্ঞানিক নাই,
ইহা অপেক্ষা লজ্জার আর কি আছে?’(তারুণ্যের সাধনা) ২.
দেয়ালের পর দেয়াল তুলে
আমরা ভেদ—বিভেদের জিন্দাখানার
সৃষ্টি করেছি; কত তার নাম
সিয়া, সুন্নি, শেখ, সৈয়দ, মোগল,
পাঠান, হানাফি, শাফি, হাম্বলি, মালেকি, লা—মাজহাবি, ওহাবি
ও আরো কত শত
দল। ... সকল ভেদ—বিভেদের
প্রাচীর নিষ্ঠুর আঘাতে ভেঙ্গে ফেল।’(বাংলার মুসলিম বাঁচাও)
এভাবেই
উভয় স¤প্রদায়ের বিরোধের
প্রাচীর ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন
কবি। নজরুল অন্য ধর্মের কূপমণ্ডুকতা,
কুসংস্কার আর প্রাচীন প্রথার
অবরোধগুলো উন্মোচন করে মানুষের পারস্পরিক
মিলনের মাধ্যমে সম্প্রীতি তৈরি করতে চেয়েছেন।
হিন্দুসমাজের অস্পৃশ্যতা সম্বন্ধে কবির অভিমতÑ ‘হিন্দু
ধর্মের মধ্যে এই ঘূত্মা্করূপ কুষ্ঠ
রোগ যে কখন প্রবেশ
করিল তাহা জানি না,
কিন্তু ইহা যে আমাদের
হিন্দু ভ্রাতৃদের একটা বিরাট জাতির
অস্থিমজ্জায় ঘুণ ধরাইয়া একেবারে
নির্বীর্য করিয়া তুলিয়াছে, ...।’(ছঁুৎমার্গ)
আবার
কবি মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, হিন্দু যেমন আরবি—ফারসি—উর্দু জানে না, তেমনি
সাধারণ মুসলমান বাংলাও ভালো করে আত্মস্থ
করে না, সেখানে আরবি—ফারসি শিক্ষার প্রশ্ন অবান্তর। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকে লিখিত একটি পত্রে নজরুল
জানিয়েছেনÑ ‘হিন্দু—মুসলমানের পরস্পরের অশ্রদ্ধা দূর করতে না
পারলে যে, এ পোড়া
দেশের কিছু হবে না...।’ সা¤প্রদায়িক
সম্প্রীতির জন্য নজরুল সাহিত্য
পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। কোনো স¤প্রদায়ের
সমাজে তিনি মানুষকে বন্দি
করেননি। শৃঙ্খলিত—নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম, হতভাগ্যের জাগরণ, পদানত—শোষিত মানুষের মুক্তি—প্রত্যাশায় তিনি মানুষকে জাতি—ধর্ম—সমাজ মন্দির—মসজিদ ও গ্রন্থের ঊর্ধ্বে
তুলে ধরেছেন, মানবতার সপক্ষে বাজিয়েছেন সাম্যের সুরধ্বনি। ১৯২৬ সালে হিন্দু—মুসলিম দাঙ্গার সময় অসা¤প্রদায়িক
চেতনায় বিশ্বাসী নজরুলের হৃদয়—উৎসারিত বাণী হলোÑ‘যিনি
সকল মানুষের দেবতা, তিনি আজ মন্দিরের
কারাগারে, মসজিদের জিন্দাখানায়, গীর্জার মধ্যে বন্দী। মোল্ল¬া—পুরুত, পাদরী—ভিক্ষু জেল—ওয়ার্ডের মত
তাহাকে পাহারা দিতেছে। আজ শয়তান বসিয়াছে
¯্রষ্টার সিংহাসনে।... মানুষের কল্যাণের জন্য ঐ—সব
ভজনালয়ের সৃষ্টি, ভজনালয়ের মঙ্গলের জন্য মানুষ সৃষ্টি
হয় নাই। আজ যদি
আমাদের মাতলামির দরুন ঐ ভজনালয়ই
মানুষের অকল্যাণের হেতু হইয়া উঠেÑ
যাহার হওয়া উচিত ছিল কল্যাণের।
সেহেতু ভাঙ্গিয়া ফেল ঐ মন্দির—মসজিদ!’(মন্দির ও মসজিদ)
ধর্মের
ব্যাপারে নজরুল ছিলেন উদার। ড. আহমদ শরীফ
লিখেছেনÑ‘নজরুল ইসলাম কোন বিশেষ ধর্মের
অনুসারী ছিলেন বলা যায় না।
তিনি দেশ জাতি ধর্ম
বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান
উদারতায় ভালবাসতে পেরেছেন।’ (বিচিত্র—চিন্তা) এক ধর্মের সত্য—সন্ধানীরা অন্য ধর্মকে ঘৃণা
করতে পারে না বলে
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মুসলমান সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাঁর আন্তরিকতার
প্রকাশ রয়েছে ‘আমার লীগ কংগ্রেস’
প্রবন্ধে। নজরুল তাঁর এক ভাষণে
বলেছিলেন, ‘কেউ বলেন, আমার
বাণী যবন, কেউ বলেন,
কাফের। আমি বলি ও
দুটোর কিছুই নয়’। অসা¤প্রদায়িক চেতনায় উদ্বোধিত নজরুল হিন্দু—মুসলিম মিথকে একইসঙ্গে প্রবন্ধের বক্তব্যে ব্যবহার করেছেন। যেমনÑক) আজ
নারায়ণ আর ক্ষীরোদসাগরে নিদ্রিত
নন। (নবযুগ) খ) ঐ শোনো
মুক্তিপাগল মৃত্যুঞ্জয় ঈশানের মুক্তি—বিষাণ। ঐ শোনো মহামাতা
জগদ্ধাত্রীর শুভ—শঙ্খ! ঐ
শোনো ইসরাফিলের শিঙ্গায় নব সৃষ্টির উল্ল¬াস ঘন রোল!
(নবযুগ)। এ সম্পর্কে
কবি লিখেছেনÑ‘আমি হিন্দু—মুসলমানের
পরিপূর্ণ মিলনে বিশ্বাসী; তাই তাদের এ
সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই
মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি,
বা হিন্দু দেব—দেবীর নাম
নিই। অবশ্য এর জন্য অনেক
জায়গায় আমার কাব্যের সৌন্দর্যহানি
হয়েছে। তবু আমি জেনেশুনেই
তা করেছি।’
বস্তুত
বিশ শতকজুড়ে হিন্দু—মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধবিগ্রহ, মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র্য, ঋণ,
অভাব; অন্যদিকে লোভী মানুষের ব্যাংকে
কোটি কোটি টাকা পাষাণস্তূপের
মতো জমা হয়ে থাকাÑ
এই অসাম্য, এই ভেদজ্ঞান দূর
করতেই নজরুল বাংলা সাহিত্যে আবিভূর্ত হয়েছিলেন; কবিতা ও প্রবন্ধে সাম্য,
কল্যাণ ও ঐক্যের বাণী
শুনিয়েছিলেন। নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার সেই প্রচেষ্টাকে স্মরণে
রেখে, অনুশীলন করে একুশ শতকে
সামনে এগিয়ে যেতে হবে। গড়ে
তুলতে হবে সাম্যবাদী সমাজ।
মন্তব্য করুন
সাম্প্রতিক দুটি অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি। কয়েক দিন আগে ভারতের লাক্ষাদ্বীপে জি২০-এর একটি সাইড কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আগামী সেপ্টেম্বরে জি২০-এর যে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আলোচনার জন্য নানা বিষয়ভিত্তিক প্রস্তাব তৈরির জন্য ভারতজুড়ে ৬৫টি শহরে মোট ২০০টি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে এই বছরজুড়ে। ইউনিভার্সাল হলিস্টিক হেলথের ওপর এমন একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের মনোনয়নে আমার লাক্ষাদ্বীপ যাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।
বাংলাদেশ জি২০-এর সদস্য রাষ্ট্র না হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের যে শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি, তার সূত্র ধরেই এ বছর জি২০-এ অবজারভার কান্ট্রির মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। জি২০-এর বাইরে অবজারভার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই লাক্ষাদ্বীপের এই কনফারেন্সটির মূল অধিবেশনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং সে কারণেই এই কনফারেন্সে আমার বক্তব্য দেওয়া।
বাংলাদেশে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নিয়ে বলতে গিয়ে আমার একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো। সম্মেলনটিতে জি২০ সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও জি৭ভুক্ত বেশ কিছু সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁরা যত না অবাক হয়েছেন বাংলাদেশের প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা জেনে, তার চেয়ে ঢের বেশি অবাক আমি হয়েছি এটি জানতে পেরে যে পৃথিবীর এই নেতৃস্থানীয় উন্নত দেশগুলোর কোনোটিতেই আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো অমন তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এমন সুসংগঠিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য অবকাঠামো নেই। আর লাক্ষাদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তাঁরা যতটা না বিস্মিত হয়েছেন, তার চেয়েও ঢের বেশি বিস্মিত তাঁদের মনে হচ্ছিল এটি জানতে পেরে যে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পাশাপাশি বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে ইনসুলিনসহ ২০টি কমন ওষুধ, কিন্তু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কথা বিবেচনায় এনে তুলে নেওয়া হয়েছে যাবতীয় অ্যান্টিবায়োটিক।
লাক্ষাদ্বীপে আমার প্রেজেন্টেশনের পর বেশির ভাগ ডেলিগেট আমাদের ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নিয়ে যে মন্তব্যটি আমার কাছে করেছেন, তার অনুরণন আমি শুনতে পেলাম এই কয়েক দিন আগে ঢাকায় একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে যোগদানের সুযোগ পেয়ে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই ইভেন্টটির আলোচ্য বিষয়বস্তু ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কিভাবে আমরা বাংলাদেশে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজকে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারি।
ইভেন্টটির প্রথম সেশনে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর বিশেষ অতিথির আসনটি অলংকৃত করেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইট অনারেবল হেলেন ক্লার্ক, যিনি বর্তমানে চ্যাথাম হাউস কমিশন নামে ইউনিভার্সাল হেলথকেয়ার সংক্রান্ত বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় থিংকট্যাংকের কো-চেয়ারের গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। প্রাণবন্ত আলোচনার শেষ পর্যায়ে তিনি জানালেন যে তাঁর বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০৩০ সালে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে গোলটি অর্জন করতে যাচ্ছে এবং অবশ্যই এই বিশাল অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মূল ব্যাকবোনের ভূমিকাটি পালন করছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে সফল উদাহরণ। এই ক্লিনিকগুলো স্থাপনের জমি আসে ব্যক্তিগত কন্ট্রিবিউশিন থেকে আর ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি আর মানবসম্পদ সরবরাহ করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্যকে এ দেশের নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যার মস্তিষ্কপ্রসূত কনসেপ্ট এই কমিউনিটি ক্লিনিক, যা মানুষের এই মৌলিক অধিকারটির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে। জোট সরকারের শাসনামলে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তখন দিনে চরত গরু। রাতে বসত মদ আর জুয়ার আসর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পেলে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। একে একে চালু করা হয় বিএনপির সময় বন্ধ করে দেওয়া ক্লিনিকগুলো আর পাশাপাশি স্থাপন করা হয় আরো নতুন নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক। ওই সময়টায় সরকারের মাঠ পর্যায়ের একজন তরুণ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিকের এই ধ্বংসযজ্ঞ এবং অতঃপর নব-উত্থান আমার নিজ চোখে দেখা। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই মৌলিক কনসেপ্ট, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এবার বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত একটি রেজল্যুশন পাস হয়েছে। এই রেজল্যুশনটিতে জাতিসংঘ বিশ্বের তাবৎ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের মডেল অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। কয়েক দিন আগেই শ্রদ্ধেয়া প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি মৌলিক কনসেপ্ট আশ্রয়ণ প্রকল্প তাঁর মেধাস্বত্ব হিসেবে কপিরাইট পেয়েছে। আর মাস ঘুরতে না ঘুরতে এবার তাঁর আরেকটি মৌলিক কনসেপ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক পেল বিশ্বস্বীকৃতি। অজস্র ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। আপনি জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি, আপনি জাতির গৌরব।
লেখক : অধ্যাপক ও ডিভিশন প্রধান ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্যসচিব সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
আমেরিকার South Asia Perspectives পত্রিকায় ২৮ মে(২০২৩) প্রকাশিত মিথ্যাচারে পূর্ণ Jon Danilowicz এর U.S. Visa Policy: What Next? শিরোনামে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে দেখা যাবে এক সময়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এই সাবেক কর্মকর্তা কী কৌশলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে বিরোধী শিবিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।তিনি যেভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো তুলে ধরেছেন এবং বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতাকে এড়িয়ে গেছেন তা সৎ লেখকের কাজ নয়। তিনি যেন কোনো লবিস্ট কর্তৃক নিযুক্ত লেখক। যার নুন খান তার গুণগান করেন। এ ধারার জন ড্যানিলভিচ মার্কা লেখক ও বক্তারা পৃথিবীর অনেক জায়গায় বসে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রের কথা ব্যক্ত করার পরিবর্তে মিথ্যাভাষণে সরকার বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। এদের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।
যে বিষয়টির সাথে আমি নিজে জড়িত, সে বিষয়টি নিয়ে একটু অবতারণা করছি। বেশ কিছু দিন আগে- প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন করে এবং তাতে বলা হয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এমন জরাজীর্ণ অবস্থায়, যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে যাবে। যারা সেবা গ্রহীতা, তারা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা মৃত্যুবরণ করতে পারে- এ ধরনের একটি সংবাদ তারা প্রকাশ করে।
আমি আন্তর্জাতিক বিষয়ে অধ্যায়ন করিনি। তবে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুবই শংকিত! কারণ, বিশ্বে শান্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চললেও দীর্ঘদিন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধ, মানুষ হত্যা , নিপীড়ন , নারী ও শিশু নির্যাতন, মানব পাচার, অভিবাসন করতে গিয়ে প্রাণহানি আমাদেরকে শংকিত করে তুলছে।